মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন তাপস

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে তার পদত্যাগ দাবি করেছেন একই সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। তিনি বলছেন, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লাভ নিচ্ছেন মেয়র তাপস, অন্যদিকে টাকার অভাবে করপোরেশনের কর্মচারীরাই মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না। ফলে শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।

গতকাল রাজধানীর হাইকোর্ট কদম ফোয়ারার সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে সাঈদ খোকন এসব কথা বলেন। ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এ ডিএসসিসির উচ্ছেদ অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবিতে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

সাঈদ খোকন বলেন, মেয়র তাপস দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শত শত কোটি টাকা তার নিজ মালিকানাধীন মধুমতি ব্যাংকে স্থানান্তরিত করেছেন। এসব টাকা তিনি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লাভ হিসেবে গ্রহণ করছেন। অন্যদিকে অর্থের অভাবে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে। করপোরেশনের গরিব কর্মচারীরা মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মধ্যদিয়ে মেয়র তাপস সিটি করপোরেশন আইন ২০০৯, দ্বিতীয় ভাগের দ্বিতীয় অধ্যায়ের অনুচ্ছেদ ৯(২)(জ) অনুযায়ী মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। ডিএসসিসির সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, তাপস মেয়র হিসেবে দ্বায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে গলাবাজি করে চলেছেন। কিন্তু আমি তাকে বলব, রাঘব বোয়ালের মুখে চুনোপুটির গল্প মানায় না। দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়তে হলে সর্বপ্রথম নিজেকে দুনীতিমুক্ত করুন। তারপর চুনোপুটির দিকে নজর দিন।

তিনি আরও বলেন, ফুলবাড়িয়া মার্কেটে সিটি করপোরেশন যে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে, সেটা নিয়ে আমি আগেও বলেছি এটা সম্পূর্ণ অবৈধ। কারণ, মহামান্য আদালতের নির্দেশে ব্যবসায়ীদের বৈধকরণের আবেদন নিষ্পত্তির লক্ষ্যে আমরা করপোরেশনের বোর্ড সভায় সর্বসম্মতিক্রমে মার্কেটগুলোর নকশা সংশোধন করেছি। একইসঙ্গে বকেয়া ভাড়া আদায়সাপেক্ষে বৈধ ব্যবসা পরিচালনার অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ নকশা সংশোধন করে এবং রাজস্ব বিভাগ সাত-আট বছরের বকেয়া ভাড়া আদায় করে ব্যবসায়ীদের বৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনার অনুমতি দেয়।

সাবেক মেয়র ফুলবাড়িয়া মার্কেটে সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযানকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে বলেন, আমরা আশ্চর্যের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, বিনা নোটিশে দক্ষিণ সিটি অবৈধ উচ্ছেদের মাধ্যমে বুলডোজার দিয়ে এসব হাজার হাজার বৈধ দোকান গুঁড়িয়ে দিল এবং এর ফলে হাজার হাজার দোকান মালিক ও কর্মচারী সপরিবারে পথে বসে গেল। আমি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র হিসেবে এই অবৈধ উচ্ছেদের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

সাঈদ খোকন আরও বলেন, আমি ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র হিসেবে দ্বায়িত্ব নেয়ার পর ৫ বছর মেয়াদে সফলতার সঙ্গে দ্বায়িত্ব পালন করেছি। আমার এই পাঁচ বছর মেয়াদে যা কিছু করেছি তার বিবরণ তুলে না ধরে আজ শুধু একটি দিক তুলে ধরতে চাই। তা হলো নগরীর ভৌত-অবকাঠামো ও নাগরিক সেবা নিশ্চিতসহ আমার অন্যতম লক্ষ্য ছিল নগরীতে কর্মসংস্থান এবং ব্যাবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরির মধ্যদিয়ে নগর অর্থনীতিকে গতিশীল রাখা। লক্ষ্য ছিল এর মাধ্যমে নাগরিকদের জীবনমানের সামগ্রিক উন্নয়ন সাধন করা, যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের অন্যতম প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার। এরই ধারাবাহিকতায় আমি কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। ফুলবাড়িয়াসহ গুলিস্থান এলাকার বিভিন্ন দোকানদার ভাইদের বৈধতা দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করার সুযোগ দেয়া ছিল এই লক্ষ্যে অন্যতম একটি পদক্ষেপ। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমি আবারও বলতে চাই, উচ্ছেদের মাধ্যমে যেসব ব্যবসায়ী-কর্মচারী করোনার এই দুঃসময়ে নিঃস্ব হয়েছেন, পথে বসে গেছেন, তাদের পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি। মানববন্ধনে কয়েকশ’ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

রবিবার, ১০ জানুয়ারী ২০২১ , ২৬ পৌষ ১৪২৭, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

সাঈদ খোকনের দাবি

মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন তাপস

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে তার পদত্যাগ দাবি করেছেন একই সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। তিনি বলছেন, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লাভ নিচ্ছেন মেয়র তাপস, অন্যদিকে টাকার অভাবে করপোরেশনের কর্মচারীরাই মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না। ফলে শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।

গতকাল রাজধানীর হাইকোর্ট কদম ফোয়ারার সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে সাঈদ খোকন এসব কথা বলেন। ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এ ডিএসসিসির উচ্ছেদ অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবিতে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

সাঈদ খোকন বলেন, মেয়র তাপস দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শত শত কোটি টাকা তার নিজ মালিকানাধীন মধুমতি ব্যাংকে স্থানান্তরিত করেছেন। এসব টাকা তিনি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লাভ হিসেবে গ্রহণ করছেন। অন্যদিকে অর্থের অভাবে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে। করপোরেশনের গরিব কর্মচারীরা মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মধ্যদিয়ে মেয়র তাপস সিটি করপোরেশন আইন ২০০৯, দ্বিতীয় ভাগের দ্বিতীয় অধ্যায়ের অনুচ্ছেদ ৯(২)(জ) অনুযায়ী মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। ডিএসসিসির সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, তাপস মেয়র হিসেবে দ্বায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে গলাবাজি করে চলেছেন। কিন্তু আমি তাকে বলব, রাঘব বোয়ালের মুখে চুনোপুটির গল্প মানায় না। দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়তে হলে সর্বপ্রথম নিজেকে দুনীতিমুক্ত করুন। তারপর চুনোপুটির দিকে নজর দিন।

তিনি আরও বলেন, ফুলবাড়িয়া মার্কেটে সিটি করপোরেশন যে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে, সেটা নিয়ে আমি আগেও বলেছি এটা সম্পূর্ণ অবৈধ। কারণ, মহামান্য আদালতের নির্দেশে ব্যবসায়ীদের বৈধকরণের আবেদন নিষ্পত্তির লক্ষ্যে আমরা করপোরেশনের বোর্ড সভায় সর্বসম্মতিক্রমে মার্কেটগুলোর নকশা সংশোধন করেছি। একইসঙ্গে বকেয়া ভাড়া আদায়সাপেক্ষে বৈধ ব্যবসা পরিচালনার অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ নকশা সংশোধন করে এবং রাজস্ব বিভাগ সাত-আট বছরের বকেয়া ভাড়া আদায় করে ব্যবসায়ীদের বৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনার অনুমতি দেয়।

সাবেক মেয়র ফুলবাড়িয়া মার্কেটে সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযানকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে বলেন, আমরা আশ্চর্যের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, বিনা নোটিশে দক্ষিণ সিটি অবৈধ উচ্ছেদের মাধ্যমে বুলডোজার দিয়ে এসব হাজার হাজার বৈধ দোকান গুঁড়িয়ে দিল এবং এর ফলে হাজার হাজার দোকান মালিক ও কর্মচারী সপরিবারে পথে বসে গেল। আমি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র হিসেবে এই অবৈধ উচ্ছেদের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

সাঈদ খোকন আরও বলেন, আমি ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র হিসেবে দ্বায়িত্ব নেয়ার পর ৫ বছর মেয়াদে সফলতার সঙ্গে দ্বায়িত্ব পালন করেছি। আমার এই পাঁচ বছর মেয়াদে যা কিছু করেছি তার বিবরণ তুলে না ধরে আজ শুধু একটি দিক তুলে ধরতে চাই। তা হলো নগরীর ভৌত-অবকাঠামো ও নাগরিক সেবা নিশ্চিতসহ আমার অন্যতম লক্ষ্য ছিল নগরীতে কর্মসংস্থান এবং ব্যাবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরির মধ্যদিয়ে নগর অর্থনীতিকে গতিশীল রাখা। লক্ষ্য ছিল এর মাধ্যমে নাগরিকদের জীবনমানের সামগ্রিক উন্নয়ন সাধন করা, যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের অন্যতম প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার। এরই ধারাবাহিকতায় আমি কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। ফুলবাড়িয়াসহ গুলিস্থান এলাকার বিভিন্ন দোকানদার ভাইদের বৈধতা দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করার সুযোগ দেয়া ছিল এই লক্ষ্যে অন্যতম একটি পদক্ষেপ। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী-কর্মচারীদের পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমি আবারও বলতে চাই, উচ্ছেদের মাধ্যমে যেসব ব্যবসায়ী-কর্মচারী করোনার এই দুঃসময়ে নিঃস্ব হয়েছেন, পথে বসে গেছেন, তাদের পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি। মানববন্ধনে কয়েকশ’ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।