চট্টগ্রামে শীর্ষ সন্ত্রাসী নুরু গ্রেফতার

চট্টগ্রাম মহানগরীর আকবরশাহ এলাকায় পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী নুরে আলম প্রকাশ নুরুকে অবশেষে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল সন্ত্রাসী নুরুকে গ্রেফতারের তথ্যটি পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এর আগে একটি অস্ত্র মামলায় রায় ঘোষণার দেড় বছর পর পুলিশের হাতে পৌঁছাল নাছিয়া ঘোনা এলাকার আলোচিত নুরে আলম ওরফে নরুর সাজা পরোয়ানা। চট্টগ্রামের পূর্ব ফিরোজশাহ কলোনির নাছিয়া ঘোনা এলাকায় সব অপকর্মের ‘হোতা’ নুরুর বিরুদ্ধে পাহাড় কাটা, কাঠ পাচার, মাদক বিক্রিসহ নানা অভিযোগে ২৮টি মামলার খবর পুলিশের কাছে থাকলেও সাজার কোন পরোয়ানা ছিল না। গত ৬ জানুয়ারি বিকেলে সাজা পরোয়ানা পুলিশের হাতে আসে বলে জানান আকবর শাহ থানার ওসি জহির হোসেন।

পুলিশ জানায়, একটি অস্ত্র মামলায় ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-৬ এর বিচারক মুহাম্মদ ছালামত উল্লাহ আসামি নুরুকে ১০ বছর ও ৭ বছর করে মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেন। কিন্তু রায় ঘোষণার দেড় বছর পরও আদালতের রায়ের অনুলিপি বা সাজা পরোয়ানা থানায় পৌঁছেনি।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৬ জুলাই নুরে আলম ওরফে নুরুকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে আকবর থানা পুলিশ। পুলিশ বাদী হয়ে এ ঘটনায় একটি মামলা করে। এ মামলায় ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-৬ এর বিচারক মুহাম্মদ ছালামত উল্লাহ আসামি নুরুকে ১০ বছর ও ৭ বছর করে মোট ১৭ বছরের কারাদ- দেয়।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৬ জুলাই গভীর রাতে আকবর শাহ থানার পূর্ব ফিরোজ শাহ কলোনি এলাকা থেকে নুরুকে একটি দেশীয় এলজি ও চার রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি একনলা বন্দুক ও ছুরি উদ্ধার করে। এ ঘটনায় এসআই সেলিম মিয়া বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় নুরুর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করেন। এসআই মো. মনির মামলাটির তদন্ত করে একই বছরের ৭ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জমা দেয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করে তা বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠায়। পরের বছরের ৪ আগস্ট আদালত অভিযোগ গঠন করে মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত করে।

১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই বিচারক অস্ত্র আইনের ১৯ (ক) ধারায় ১০ বছর ও ৭ বছর করে কারাদণ্ড দেন। রায় ঘোষণার সময় নুরু পলাতক ছিলেন। গত ২৬ ডিসেম্বর নুরুকে ধরতে নাছিয়া ঘোনায় অভিযানে গেলে সেখানে পুলিশের ওপর হামলা করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে নুরুর এক সহযোগীকে গ্রেফতার করলেও পালিয়ে যান তিনি। এরপর ৩১ ডিসেম্বর ভোরে অভিযান চালিয়ে নুরুর ১২ সহযোগীকে গ্রেফতার করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর ৪ জানুয়ারি তৃতীয় দফায় নাছিয়া ঘোনায় অভিযান চালিয়েও তাকে ধরতে পারেনি পুলিশ।

অভিযোগ রয়েছে, নুরুর পরিবারের সদস্যরা নাছিয়া ঘোনা এলাকায় ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ করেন। নুরুর মতো তার ভাই জানে আলমও সেখানে পাহাড় কেটে বসতি গড়ে তুলেছেন। নুরুর স্ত্রী, তার ভাই জানে আলমের স্ত্রী ও বোন রুবি তাদের অনুসারী পরিবারের নারীদের নিয়ে পুলিশের ওপর ইট ছোড়ে বলে জানান স্থানীয় কয়েকজন। নুরুর স্ত্রী ও বোন সেখানে ‘ইয়াবা কারবার নিয়ন্ত্রণ করছেন’ বলেও অভিযোগ রয়েছে।

আকবর শাহ থানার ওসি জহির হোসেন জানান, নুরুর বিরুদ্ধে আকবর শাহ ও খুলশী থানায় হওয়া ২৮টি মামলার তথ্য তাদের কাছে আছে। বিভিন্ন ধরনের ছয়টি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।

রবিবার, ১০ জানুয়ারী ২০২১ , ২৬ পৌষ ১৪২৭, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

চট্টগ্রামে শীর্ষ সন্ত্রাসী নুরু গ্রেফতার

চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রাম মহানগরীর আকবরশাহ এলাকায় পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী নুরে আলম প্রকাশ নুরুকে অবশেষে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল সন্ত্রাসী নুরুকে গ্রেফতারের তথ্যটি পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এর আগে একটি অস্ত্র মামলায় রায় ঘোষণার দেড় বছর পর পুলিশের হাতে পৌঁছাল নাছিয়া ঘোনা এলাকার আলোচিত নুরে আলম ওরফে নরুর সাজা পরোয়ানা। চট্টগ্রামের পূর্ব ফিরোজশাহ কলোনির নাছিয়া ঘোনা এলাকায় সব অপকর্মের ‘হোতা’ নুরুর বিরুদ্ধে পাহাড় কাটা, কাঠ পাচার, মাদক বিক্রিসহ নানা অভিযোগে ২৮টি মামলার খবর পুলিশের কাছে থাকলেও সাজার কোন পরোয়ানা ছিল না। গত ৬ জানুয়ারি বিকেলে সাজা পরোয়ানা পুলিশের হাতে আসে বলে জানান আকবর শাহ থানার ওসি জহির হোসেন।

পুলিশ জানায়, একটি অস্ত্র মামলায় ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-৬ এর বিচারক মুহাম্মদ ছালামত উল্লাহ আসামি নুরুকে ১০ বছর ও ৭ বছর করে মোট ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেন। কিন্তু রায় ঘোষণার দেড় বছর পরও আদালতের রায়ের অনুলিপি বা সাজা পরোয়ানা থানায় পৌঁছেনি।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৬ জুলাই নুরে আলম ওরফে নুরুকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে আকবর থানা পুলিশ। পুলিশ বাদী হয়ে এ ঘটনায় একটি মামলা করে। এ মামলায় ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-৬ এর বিচারক মুহাম্মদ ছালামত উল্লাহ আসামি নুরুকে ১০ বছর ও ৭ বছর করে মোট ১৭ বছরের কারাদ- দেয়।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৬ জুলাই গভীর রাতে আকবর শাহ থানার পূর্ব ফিরোজ শাহ কলোনি এলাকা থেকে নুরুকে একটি দেশীয় এলজি ও চার রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি একনলা বন্দুক ও ছুরি উদ্ধার করে। এ ঘটনায় এসআই সেলিম মিয়া বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় নুরুর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা করেন। এসআই মো. মনির মামলাটির তদন্ত করে একই বছরের ৭ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জমা দেয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করে তা বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠায়। পরের বছরের ৪ আগস্ট আদালত অভিযোগ গঠন করে মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত করে।

১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই বিচারক অস্ত্র আইনের ১৯ (ক) ধারায় ১০ বছর ও ৭ বছর করে কারাদণ্ড দেন। রায় ঘোষণার সময় নুরু পলাতক ছিলেন। গত ২৬ ডিসেম্বর নুরুকে ধরতে নাছিয়া ঘোনায় অভিযানে গেলে সেখানে পুলিশের ওপর হামলা করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে নুরুর এক সহযোগীকে গ্রেফতার করলেও পালিয়ে যান তিনি। এরপর ৩১ ডিসেম্বর ভোরে অভিযান চালিয়ে নুরুর ১২ সহযোগীকে গ্রেফতার করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর ৪ জানুয়ারি তৃতীয় দফায় নাছিয়া ঘোনায় অভিযান চালিয়েও তাকে ধরতে পারেনি পুলিশ।

অভিযোগ রয়েছে, নুরুর পরিবারের সদস্যরা নাছিয়া ঘোনা এলাকায় ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ করেন। নুরুর মতো তার ভাই জানে আলমও সেখানে পাহাড় কেটে বসতি গড়ে তুলেছেন। নুরুর স্ত্রী, তার ভাই জানে আলমের স্ত্রী ও বোন রুবি তাদের অনুসারী পরিবারের নারীদের নিয়ে পুলিশের ওপর ইট ছোড়ে বলে জানান স্থানীয় কয়েকজন। নুরুর স্ত্রী ও বোন সেখানে ‘ইয়াবা কারবার নিয়ন্ত্রণ করছেন’ বলেও অভিযোগ রয়েছে।

আকবর শাহ থানার ওসি জহির হোসেন জানান, নুরুর বিরুদ্ধে আকবর শাহ ও খুলশী থানায় হওয়া ২৮টি মামলার তথ্য তাদের কাছে আছে। বিভিন্ন ধরনের ছয়টি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।