মহানায়কের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন

মোহাম্মদ শাহজাহান

১০ জানুয়ারি বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি চিরস্মরণীয় দিন। আনন্দে উদ্বেলিত হওয়ার দিন। মুক্তির দিন। অপূর্ণ স্বাধীনতা পূর্ণতা প্রাপ্তির দিন। ওইদিনকে বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে আনন্দের দিন বলা হলেও অত্যুক্তি হবে না। পাকিস্তানের বন্দীদশা থেকে লন্ডনে পৌঁছে স্বাধীনতার জনক শেখ মুজিব বলেন, ‘এক মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা এ মুক্তি অর্জন করেছি।’

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলায় প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। এমন স্মরণীয়-বরণীয় প্রত্যাবর্তন বিশ্ব ইতিহাসে খুব একটা দেখা যায় না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তিনি দেশে ফিরে না এলে স্বাধীনতাযুদ্ধে সহায়তাদানকারী ভারতীয় সৈন্যরা কবে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যেতেন, তার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারত না। বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন বলেই দেশ মুক্ত হওয়ার ৩ মাসের আগেই ভারতীয় সৈন্যরা স্বদেশে ফিরে যান। তিনি এসেছিলেন বলেই, অতি অল্প সময়ের মধ্যে পৃথিবীর প্রায় সব দেশ স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে।

’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করে। শত্রুর হাতে বন্দী বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তখন কোথায়, তিনি কেমন আছেন, তা পাকিস্তান সরকার ছাড়া আর কারও জানা ছিল না।

পাকিস্তানি কারাগারে বন্দী বাঙালির মহান নেতা শেখ মুজিব তখনও জানতে পারেননি, ১৬ ডিসেম্বর তার বাংলা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছে।’ শেখ মুজিবকে ২৫ মার্চ ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে ১ এপ্রিল পর্যন্ত সেনানিবাসে রাখা হয়। এরপর করাচি হয়ে মিয়াওয়ালি জেলে আটক রাখা হয় তাকে। আগস্টে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে শেখ মুজিবের বিচার শুরু হয়। বিচারে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলো শেখ মুজিবকে। বিশ্ব জনমতের চাপে এবং অন্য একটি কারণে শেখ মুজিবের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেনি পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ আরও অনেক বিশ্ব নেতা শেখ মুজিবের বিচার প্রহসনের প্রতিবাদ জানিয়ে তার জীবন রক্ষার দাবি জানান। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাঙালি নেতাকে হত্যা না করার বিশেষ কারণটি হলোÑ পাকিস্তানিরা জানত, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুজিবের ফাঁসির খবর জানলে সেখানে আটকে থাকা পাকিস্তানি লক্ষাধিক সেনা সদস্যের একজনকেও বাঙালিরা জীবিত রাখবে না।’ শুধু এ চিন্তা ও আশঙ্কা থেকেই ওরা শেখ মুজিবকে হত্যা করতে সাহস পায়নি।

২৬ ডিসেম্বর মিয়াওয়ালি জেলখানা থেকে মুজিবকে সিহালা রেস্ট হাউজে আনা হয়। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ওই রেস্ট হাউজে গিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ২৭ ডিসেম্বর ড. কামাল হোসেনকে আনা হয় ওই রেস্ট হাউজে। পরে জানা গেছে, জেলে শেখ মুজিবের সেলের পাশে কবর খোঁড়া হয়েছিল। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে জেলের ডিআইজি শেখ আবদুর রশিদ শেখ মুজিবকে জেলখানা থেকে নিজ বাসস্থানে নিয়ে যান। ডিআইজির বাসভবন থেকেই ভুট্টোর নির্দেশে মুজিবকে রেস্ট হাউজে স্থানান্তর করা হয়। আসলে বাংলাদেশে আত্মসমর্পণ করা পাকিস্তানের ৯৩ হাজার সেনা অফিসার ও জোয়ানকে ফেরত নেয়ার তাগিদ থেকেই মুজিবকে দ্রুততার সঙ্গে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় ভুট্টো। ৩ জানুয়ারি ১৯৭২ করাচির নিশতার পার্কের জনসভায় ভুট্টো ঘোষণা করেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে নিঃশর্ত মুক্তিদান করা হবে।’ ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান ত্যাগ করার পূর্ব পর্যন্ত ভুট্টোর প্রাণপণ চেষ্টা ছিল শেখ মুজিবের কাছ থেকে একটি প্রতিশ্রুতি আদায় করা। সেই প্রতিশ্রুতিটি হলো- ‘বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি জোড়াতালির সম্পর্ক বজায় রাখা।’ কিন্তু ভুট্টোর শত আবেদন-নিবেদনে সাড়া দেননি মুজিব। শেখ মুজিবের এক কথাÑ ‘আগে আমাকে আমার জনগণের কাছে যেতে দাও। বাংলাদেশে না গিয়ে এ ব্যাপারে আমি কোন কথাই বলতে পারব না।’

মুজিব নেতৃত্বের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে সংযত রাখা এবং মৃত্যুর মুখেও সিদ্ধান্তে অটল থাকা। পাকিস্তানি জান্তা শত প্রলোভন এবং ফাঁসির ভয় দেখিয়েও বন্দী জীবনের ৯ মাসে শেখ মুজিবের কাছ থেকে কোন কথা আদায় করতে পারেনি। জেলে আটক অবস্থায় প্রহরীদের সালামের জবাব দেয়া ছাড়া কোন কথাই তিনি বলেননি ওই দুঃসহ বন্দী জীবনে। ৭ জানুয়ারি মধ্য রাতের পর শেখ মুজিবকে বহনকারী বিশেষ বিমানটি পিন্ডি ত্যাগ করে। সঙ্গে স্ত্রী ও কন্যাসহ ড. কামাল হোসেন। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ফারুক চৌধুরী তার লেখা ‘স্মরণে বঙ্গবন্ধু’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুকে বিদায় জানান ভুট্টো। অবশেষে ভুট্টো হাতখরচ হিসেবেই যেন বঙ্গবন্ধুকে ৫০ হাজার ডলার দিতে চাইলেন। টাকাটা আমার বিশেষ বিমানের খরচের জন্যই রেখে দিন, বললেন বঙ্গবন্ধু।’ (পৃ. ৩৬)। ভুট্টোর টাকা গ্রহণ করেননি বঙ্গবন্ধু।

১০ জানুয়ারি ঢাকায় রেসকোর্স ময়দানে দশ লাখ মানুষ জাতির পিতাকে সংবর্ধনা জানান। এ ময়দানেই প্রায় ১০ মাস আগে (৭ মার্চ ১৯৭১) তিনি বাংলার মানুষকে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধে প্রবল প্রতাপশালী দুর্ধর্ষ পাকিস্তানি শত্রুর বিরুদ্ধে বাংলার মানুষ প্রাণপণ লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়। মুজিব নেতৃত্বের আরও একটা বৈশিষ্ট্য যে, ‘১৯৭১ সালে বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষকে এক কাতারে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। ৯ মাসের যুদ্ধে অল্পসংখ্যক কুলাঙ্গার রাজাকার ছাড়া প্রায় শতভাগ মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেন।’ তাছাড়া বঙ্গবন্ধু ’৭১ সালে শত্রুর কারাগারে বন্দী থাকলেও মুক্তিযোদ্ধারা তার নামেই যুদ্ধ করেছেন এবং হাসতে হাসতে জয় বাংলা বলে জীবন দিয়েছেন। অনুপস্থিত সেনাপতির এমন সেনাপতিত্ব ইতিহাসে আরেকটি নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত।

৩ জানুয়ারি ২০২১

[লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে গবেষক; সম্পাদক, সাপ্তাহিক বাংলাবার্তা]

bandhu.ch77@yahoo.com

রবিবার, ১০ জানুয়ারী ২০২১ , ২৬ পৌষ ১৪২৭, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

মহানায়কের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন

মোহাম্মদ শাহজাহান

image

১০ জানুয়ারি বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি চিরস্মরণীয় দিন। আনন্দে উদ্বেলিত হওয়ার দিন। মুক্তির দিন। অপূর্ণ স্বাধীনতা পূর্ণতা প্রাপ্তির দিন। ওইদিনকে বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে আনন্দের দিন বলা হলেও অত্যুক্তি হবে না। পাকিস্তানের বন্দীদশা থেকে লন্ডনে পৌঁছে স্বাধীনতার জনক শেখ মুজিব বলেন, ‘এক মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা এ মুক্তি অর্জন করেছি।’

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তার স্বপ্নের স্বাধীন বাংলায় প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। এমন স্মরণীয়-বরণীয় প্রত্যাবর্তন বিশ্ব ইতিহাসে খুব একটা দেখা যায় না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তিনি দেশে ফিরে না এলে স্বাধীনতাযুদ্ধে সহায়তাদানকারী ভারতীয় সৈন্যরা কবে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যেতেন, তার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারত না। বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন বলেই দেশ মুক্ত হওয়ার ৩ মাসের আগেই ভারতীয় সৈন্যরা স্বদেশে ফিরে যান। তিনি এসেছিলেন বলেই, অতি অল্প সময়ের মধ্যে পৃথিবীর প্রায় সব দেশ স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে।

’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করে। শত্রুর হাতে বন্দী বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তখন কোথায়, তিনি কেমন আছেন, তা পাকিস্তান সরকার ছাড়া আর কারও জানা ছিল না।

পাকিস্তানি কারাগারে বন্দী বাঙালির মহান নেতা শেখ মুজিব তখনও জানতে পারেননি, ১৬ ডিসেম্বর তার বাংলা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছে।’ শেখ মুজিবকে ২৫ মার্চ ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে ১ এপ্রিল পর্যন্ত সেনানিবাসে রাখা হয়। এরপর করাচি হয়ে মিয়াওয়ালি জেলে আটক রাখা হয় তাকে। আগস্টে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে শেখ মুজিবের বিচার শুরু হয়। বিচারে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলো শেখ মুজিবকে। বিশ্ব জনমতের চাপে এবং অন্য একটি কারণে শেখ মুজিবের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেনি পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ আরও অনেক বিশ্ব নেতা শেখ মুজিবের বিচার প্রহসনের প্রতিবাদ জানিয়ে তার জীবন রক্ষার দাবি জানান। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাঙালি নেতাকে হত্যা না করার বিশেষ কারণটি হলোÑ পাকিস্তানিরা জানত, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুজিবের ফাঁসির খবর জানলে সেখানে আটকে থাকা পাকিস্তানি লক্ষাধিক সেনা সদস্যের একজনকেও বাঙালিরা জীবিত রাখবে না।’ শুধু এ চিন্তা ও আশঙ্কা থেকেই ওরা শেখ মুজিবকে হত্যা করতে সাহস পায়নি।

২৬ ডিসেম্বর মিয়াওয়ালি জেলখানা থেকে মুজিবকে সিহালা রেস্ট হাউজে আনা হয়। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ওই রেস্ট হাউজে গিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ২৭ ডিসেম্বর ড. কামাল হোসেনকে আনা হয় ওই রেস্ট হাউজে। পরে জানা গেছে, জেলে শেখ মুজিবের সেলের পাশে কবর খোঁড়া হয়েছিল। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে জেলের ডিআইজি শেখ আবদুর রশিদ শেখ মুজিবকে জেলখানা থেকে নিজ বাসস্থানে নিয়ে যান। ডিআইজির বাসভবন থেকেই ভুট্টোর নির্দেশে মুজিবকে রেস্ট হাউজে স্থানান্তর করা হয়। আসলে বাংলাদেশে আত্মসমর্পণ করা পাকিস্তানের ৯৩ হাজার সেনা অফিসার ও জোয়ানকে ফেরত নেয়ার তাগিদ থেকেই মুজিবকে দ্রুততার সঙ্গে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় ভুট্টো। ৩ জানুয়ারি ১৯৭২ করাচির নিশতার পার্কের জনসভায় ভুট্টো ঘোষণা করেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে নিঃশর্ত মুক্তিদান করা হবে।’ ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান ত্যাগ করার পূর্ব পর্যন্ত ভুট্টোর প্রাণপণ চেষ্টা ছিল শেখ মুজিবের কাছ থেকে একটি প্রতিশ্রুতি আদায় করা। সেই প্রতিশ্রুতিটি হলো- ‘বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি জোড়াতালির সম্পর্ক বজায় রাখা।’ কিন্তু ভুট্টোর শত আবেদন-নিবেদনে সাড়া দেননি মুজিব। শেখ মুজিবের এক কথাÑ ‘আগে আমাকে আমার জনগণের কাছে যেতে দাও। বাংলাদেশে না গিয়ে এ ব্যাপারে আমি কোন কথাই বলতে পারব না।’

মুজিব নেতৃত্বের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে সংযত রাখা এবং মৃত্যুর মুখেও সিদ্ধান্তে অটল থাকা। পাকিস্তানি জান্তা শত প্রলোভন এবং ফাঁসির ভয় দেখিয়েও বন্দী জীবনের ৯ মাসে শেখ মুজিবের কাছ থেকে কোন কথা আদায় করতে পারেনি। জেলে আটক অবস্থায় প্রহরীদের সালামের জবাব দেয়া ছাড়া কোন কথাই তিনি বলেননি ওই দুঃসহ বন্দী জীবনে। ৭ জানুয়ারি মধ্য রাতের পর শেখ মুজিবকে বহনকারী বিশেষ বিমানটি পিন্ডি ত্যাগ করে। সঙ্গে স্ত্রী ও কন্যাসহ ড. কামাল হোসেন। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ফারুক চৌধুরী তার লেখা ‘স্মরণে বঙ্গবন্ধু’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধুকে বিদায় জানান ভুট্টো। অবশেষে ভুট্টো হাতখরচ হিসেবেই যেন বঙ্গবন্ধুকে ৫০ হাজার ডলার দিতে চাইলেন। টাকাটা আমার বিশেষ বিমানের খরচের জন্যই রেখে দিন, বললেন বঙ্গবন্ধু।’ (পৃ. ৩৬)। ভুট্টোর টাকা গ্রহণ করেননি বঙ্গবন্ধু।

১০ জানুয়ারি ঢাকায় রেসকোর্স ময়দানে দশ লাখ মানুষ জাতির পিতাকে সংবর্ধনা জানান। এ ময়দানেই প্রায় ১০ মাস আগে (৭ মার্চ ১৯৭১) তিনি বাংলার মানুষকে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধে প্রবল প্রতাপশালী দুর্ধর্ষ পাকিস্তানি শত্রুর বিরুদ্ধে বাংলার মানুষ প্রাণপণ লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়। মুজিব নেতৃত্বের আরও একটা বৈশিষ্ট্য যে, ‘১৯৭১ সালে বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষকে এক কাতারে দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। ৯ মাসের যুদ্ধে অল্পসংখ্যক কুলাঙ্গার রাজাকার ছাড়া প্রায় শতভাগ মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেন।’ তাছাড়া বঙ্গবন্ধু ’৭১ সালে শত্রুর কারাগারে বন্দী থাকলেও মুক্তিযোদ্ধারা তার নামেই যুদ্ধ করেছেন এবং হাসতে হাসতে জয় বাংলা বলে জীবন দিয়েছেন। অনুপস্থিত সেনাপতির এমন সেনাপতিত্ব ইতিহাসে আরেকটি নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত।

৩ জানুয়ারি ২০২১

[লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে গবেষক; সম্পাদক, সাপ্তাহিক বাংলাবার্তা]

bandhu.ch77@yahoo.com