আরও উত্তাপ ছড়ানোর আগেই তাপস-খোকন দ্বন্দ্ব নিরসনের উদ্যোগ

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন এবং বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের মধ্যে সম্প্রতি শুরু হওয়া দ্বন্দ্বকে সাময়িক মতপার্থক্য হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে উভয়ের চলমান দ্বন্দ্ব বড় ধরনের উত্তাপ ছাড়ানোর আগেই মীমাংসা হয়ে গেছে। তবে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ক্ষমতাসীন দলের দুই নেতার একে-অপরের দিকে ছোড়া তীর ইস্যু হিসেবে নিয়ে বিএনপি দুদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

সম্প্রতি ডিএসসিসি’র আওতাধীন বিভিন্ন মার্কেটে অবৈধ দোকান উচ্ছেদে অভিযান, সদ্য সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মামলা, পিবিআইকে তদন্তে আদালতের নির্দেশ- সব মিলে বিব্রত পরিস্থিতে পরেন সাঈদ খোকন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের এক প্রতিবাদী মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে গত শনিবার বর্তমান মেয়র শেখ তাপসের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সাঈদ খোকন বলেন, ‘আইন অনুযায়ী তাপস মেয়র পদে থাকার যোগ্যাতা হারিয়েছেন।’ তবে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে মানহানী মামলা করা হতে পারে বলে জানান শেখ তাপস। এরপর সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে দুটি মামলাও হয়।

এসব ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারাও উভয়ের অভিযোগ আমলে নিয়ে ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি প্রসঙ্গে জ্বালাময়ী বক্তব্য দেয়া শুরু করেন।

তবে গতকাল মেয়র তাপস জানান, তাকে না জানিয়ে অতি উৎসাহীরা এসব মামলা দায়ের করেছে, যা ওঠিয়ে নেয়া হবে। হঠাৎ করে বর্তমান মেয়রের এমন বক্তব্য সাঈদ খোকনের সঙ্গে চলমান দ্বন্দ্ব নিরসনের ইঙ্গিত বলে মনে করছেন রাজনীতি সচেতন মানুষরা। এখন সাঈদ খোকনের পরবর্তি পদক্ষেপ কি হবে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

সর্বশেষ ডিএসসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে ফজলে নূর তাপসের কাছে মনোনয়ন দৌড়ে হেরে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন তাপসের ছেড়ে দেয়া ঢাকা-১০ আসনেও নৌকার মনোনয়ন বঞ্চিত হন। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদই হয় তার সান্ত্বনা।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন এবং বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। দায়িত্ব পালনকালে কিছু বিষয়ে তাদের মতপার্থক্য থাকতেই পারে। সময়ের ব্যবধানে সব সমস্যার সমাধান হবে। সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘মামলা হোক, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস তা চাননি বলে জানতে পেরেছি। মামলা প্রত্যাহার করবেন বলেও আমি সংবাদ পেয়েছি।’

দুই মেয়রের দ্বন্দ্ব নিয়ে আওয়ামী লীগের সমালোচনায় বিএনপি- এ প্রসঙ্গে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপি সব কিছুতেই ইস্যু খোঁজে। বিএনপির অযৌক্তিক কোন ইস্যু অথবা নেতিবাচক মন্তব্য দলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না। আওয়ামী লীগ ঐতিহ্যবাহী একটি বৃহৎ দল। দুই মেয়রের মতপার্থক্য দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে না।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, পুরান ঢাকায় সাঈদ খোকনের বলয় ভাঙতে স্থানীয় অপর একটি অংশ দীর্ঘদিন যাবত তৎপর ছিল। ডিএসসিসি’র অধীনস্থ মার্কেটগুলোতে নিজেদের দখল প্রতিষ্ঠা করতে না পেরে খোকন সমর্থকদের উৎখাতে সক্রিয় ছিল তারা। যারা এখন বর্তমান মেয়রের বলয়ে প্রবেশের সুযোগ খুঁজছে।

গত ৮ ডিসেম্বর ডিএসসিসির ফুলাবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এর অবৈধ দোকান উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলে বর্তমান মেয়র এবং সাবেক মেয়রের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। অভিযানে নকশা বহির্ভূত স্থাপনার অভিযোগে ৯১১টি দোকান উচ্ছেদ করা হয়। এই উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্ব দেন বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

তবে দোকানগুলো বৈধ দাবি করে সে সময় সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে এগুলোর বৈধতা দেয়া হয়েছে।’ কিন্তু বর্তমান মেয়র ফজলে নূর তাপসের দাবি দোকানগুলোর কোন বৈধতা নেই। সেগুলো রাস্তা ও মার্কেটের ভিতরের, লিফটের ও সিঁড়ির জায়গা দখল করে বানানো হয়েছে।

মার্কেটের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনকে দেয়া টাকার বিনিময়ে ওইসব দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তারা কাগজপত্র দেখান, যেখানে পাঁচটা পে অর্ডারের মাধ্যমে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা দেয়া হয় সিটি করপোরেশনকে। এসব পে-অর্ডার আদালতে দাখিল করে সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে মামলা করে ব্যবসায়ীরা। পরে সাঈদ খোকনসহ নগরভবনের আরও দুই কর্মকর্তাসহ মোট সাতজনের বিরুদ্ধে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। এরপরই সাবেক এবং বর্তমান দুই মেয়রের দ্বন্দ্ব সামনে চলে আসে।

বুধবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২১ , ২৯ পৌষ ১৪২৭, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

আরও উত্তাপ ছড়ানোর আগেই তাপস-খোকন দ্বন্দ্ব নিরসনের উদ্যোগ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন এবং বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের মধ্যে সম্প্রতি শুরু হওয়া দ্বন্দ্বকে সাময়িক মতপার্থক্য হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে উভয়ের চলমান দ্বন্দ্ব বড় ধরনের উত্তাপ ছাড়ানোর আগেই মীমাংসা হয়ে গেছে। তবে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ক্ষমতাসীন দলের দুই নেতার একে-অপরের দিকে ছোড়া তীর ইস্যু হিসেবে নিয়ে বিএনপি দুদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

সম্প্রতি ডিএসসিসি’র আওতাধীন বিভিন্ন মার্কেটে অবৈধ দোকান উচ্ছেদে অভিযান, সদ্য সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মামলা, পিবিআইকে তদন্তে আদালতের নির্দেশ- সব মিলে বিব্রত পরিস্থিতে পরেন সাঈদ খোকন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের এক প্রতিবাদী মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে গত শনিবার বর্তমান মেয়র শেখ তাপসের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সাঈদ খোকন বলেন, ‘আইন অনুযায়ী তাপস মেয়র পদে থাকার যোগ্যাতা হারিয়েছেন।’ তবে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে মানহানী মামলা করা হতে পারে বলে জানান শেখ তাপস। এরপর সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে দুটি মামলাও হয়।

এসব ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারাও উভয়ের অভিযোগ আমলে নিয়ে ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি প্রসঙ্গে জ্বালাময়ী বক্তব্য দেয়া শুরু করেন।

তবে গতকাল মেয়র তাপস জানান, তাকে না জানিয়ে অতি উৎসাহীরা এসব মামলা দায়ের করেছে, যা ওঠিয়ে নেয়া হবে। হঠাৎ করে বর্তমান মেয়রের এমন বক্তব্য সাঈদ খোকনের সঙ্গে চলমান দ্বন্দ্ব নিরসনের ইঙ্গিত বলে মনে করছেন রাজনীতি সচেতন মানুষরা। এখন সাঈদ খোকনের পরবর্তি পদক্ষেপ কি হবে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

সর্বশেষ ডিএসসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে ফজলে নূর তাপসের কাছে মনোনয়ন দৌড়ে হেরে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন তাপসের ছেড়ে দেয়া ঢাকা-১০ আসনেও নৌকার মনোনয়ন বঞ্চিত হন। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদই হয় তার সান্ত্বনা।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন এবং বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। দায়িত্ব পালনকালে কিছু বিষয়ে তাদের মতপার্থক্য থাকতেই পারে। সময়ের ব্যবধানে সব সমস্যার সমাধান হবে। সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘মামলা হোক, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস তা চাননি বলে জানতে পেরেছি। মামলা প্রত্যাহার করবেন বলেও আমি সংবাদ পেয়েছি।’

দুই মেয়রের দ্বন্দ্ব নিয়ে আওয়ামী লীগের সমালোচনায় বিএনপি- এ প্রসঙ্গে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপি সব কিছুতেই ইস্যু খোঁজে। বিএনপির অযৌক্তিক কোন ইস্যু অথবা নেতিবাচক মন্তব্য দলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না। আওয়ামী লীগ ঐতিহ্যবাহী একটি বৃহৎ দল। দুই মেয়রের মতপার্থক্য দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে না।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, পুরান ঢাকায় সাঈদ খোকনের বলয় ভাঙতে স্থানীয় অপর একটি অংশ দীর্ঘদিন যাবত তৎপর ছিল। ডিএসসিসি’র অধীনস্থ মার্কেটগুলোতে নিজেদের দখল প্রতিষ্ঠা করতে না পেরে খোকন সমর্থকদের উৎখাতে সক্রিয় ছিল তারা। যারা এখন বর্তমান মেয়রের বলয়ে প্রবেশের সুযোগ খুঁজছে।

গত ৮ ডিসেম্বর ডিএসসিসির ফুলাবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ এর অবৈধ দোকান উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলে বর্তমান মেয়র এবং সাবেক মেয়রের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। অভিযানে নকশা বহির্ভূত স্থাপনার অভিযোগে ৯১১টি দোকান উচ্ছেদ করা হয়। এই উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্ব দেন বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।

তবে দোকানগুলো বৈধ দাবি করে সে সময় সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে এগুলোর বৈধতা দেয়া হয়েছে।’ কিন্তু বর্তমান মেয়র ফজলে নূর তাপসের দাবি দোকানগুলোর কোন বৈধতা নেই। সেগুলো রাস্তা ও মার্কেটের ভিতরের, লিফটের ও সিঁড়ির জায়গা দখল করে বানানো হয়েছে।

মার্কেটের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনকে দেয়া টাকার বিনিময়ে ওইসব দোকান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তারা কাগজপত্র দেখান, যেখানে পাঁচটা পে অর্ডারের মাধ্যমে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা দেয়া হয় সিটি করপোরেশনকে। এসব পে-অর্ডার আদালতে দাখিল করে সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে মামলা করে ব্যবসায়ীরা। পরে সাঈদ খোকনসহ নগরভবনের আরও দুই কর্মকর্তাসহ মোট সাতজনের বিরুদ্ধে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। এরপরই সাবেক এবং বর্তমান দুই মেয়রের দ্বন্দ্ব সামনে চলে আসে।