বাইডেনের শপথ ঘিরে

ট্রাম্প সমর্থকরা আবারও বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে হামলা চালাতে পারে

ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকরা গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালায়। এমন নজিরবিহীন হামলার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে আর দেখা যায়নি। এদিকে, ওই সহিংসতার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার আরও হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)।

সংস্থাটি বলছে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে আরও হামলার ঘটনা ঘটতে পারে। এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে, সশস্ত্র কিছু গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের সবটিতে হামলার পরিকল্পনা করছে। আগামী ২০ জানুয়ারি জো বাইডেনের শপথ গ্রহণের আগে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য এবং ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে এসব গ্রুপ। প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের শপথ গ্রহণ ক্যাপিটল ভবনের বাইরে হবে। এক বিবৃতিতে জো বাইডেন বলেন, ক্যাপিটল ভবনের বাইরে শপথ নিতে তিনি মোটেও ভয় পাচ্ছেন না। তিনি এবং কমলা হ্যারিস দুজনই ক্যাপিটল ভবনের বাইরে শপথ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এদিকে, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বলেছেন, ক্যাপিটল ভবনে হামলার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। গত বুধবার ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে ব্যাপক তা-ব চালায় উগ্র ট্রাম্প সমর্থকরা। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালাতে হয় পুলিশকে। এই ঘটনায় এক পুলিশ সদস্যসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। ট্রাম্পের উসকানিতেই এ হামলা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ক্যাপিটলে তা-বের ঘটনায় ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান উভয় দলই নিন্দা জানিয়েছে।

অপরদিকে বাইডেনের শপথ গ্রহণকে কেন্দ্র করে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয় বরং, সারাবিশ্বে মানুষের মধ্যে কৌতূহল, সংশয় ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের ক্ষমতা গ্রহণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করবেন।

গত নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর থেকেই ট্রাম্প নতুন করে তার পরিচয় দিয়ে চলেছেন। প্রথমে নির্বাচনের ফলাফল মেনে না নেয়া, পরবর্তীতে বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচনের ফলাফলের বিরুদ্ধে মামলা এবং সবশেষে নিজের সমর্থকদের উসকে দিয়ে ক্যাপিটল ভবনে সহিংসতা ছড়ালেন।

অনেকের মনে এখন একটাই প্রশ্ন যে, আগামী ২০ জানুয়ারি কী হতে যাচ্ছে? সেদিন কি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর ঘটবে? ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা যদি অভিষেক অনুষ্ঠানে আবার ঝামেলা করার চেষ্টা করে তবে সেদিনের জন্য কী ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে?

নিরাপত্তা বাহিনী বলছে, শপথ গ্রহণের আগের কয়েকদিন থেকেই নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। শপথ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ন্যাশনাল গার্ডের প্রায় প্রায় ১৫ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হবে। প্রতিবারই প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি বেশ আলাদা। ক্যাপিটল হিলে হামলার পর এর নিরাপত্তার গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে।

তবে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ব্যক্তিদের জন্য এবার বাড়তি নিরাপত্তার কী কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সেগুলো এখনও পরিষ্কার নয়। বাইডেন যখন শপথ গ্রহণ করবেন তখনও ওয়াশিংটন ডিসিতে জরুরি অবস্থা বহাল থাকবে। ক্যাপিটল হিলে সহিংসতার কারণেই রাজধানীর মেয়র সেখানে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন।

নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে বিদায়ী প্রেসিডেন্টের উপস্থিতি একটি সৌজন্যের বিষয়। এর আগে তিনজন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ছাড়া সবাই নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এবারও প্রচলিত সৌজন্যের ব্যতিক্রম ঘটছে বলে মনে হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন এ অনুষ্ঠানে তিনি থাকবেন না।

এক টুইট বার্তায় গত শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, যারা জানতে চেয়েছেন তাদের জন্য বলছি ২০ জানুয়ারির অভিষেক অনুষ্ঠানে আমি যাচ্ছি না। এর আগে এই বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জানান, নির্বাচনের ফলাফল মেনে না নিলেও তিনি জো বাইডেনের হাতে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

তার কয়েকজন সমর্থক বিষয়টিকে আরও এক ধাপ নিয়ে গেছেন। তারা পরিকল্পনা করছেন জো বাইডেনের শপথ গ্রহণের সময়, পাশাপাশি ঠিক একই সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য ভার্চুয়াল অভিষেক অনুষ্ঠান আয়োজনের। ফেসবুকে এরকম একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের কথাও ঘোষণা করা হয়েছে এবং ইতোমধ্যেই তাতে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ জানিয়েছেন যে ট্রাম্পের সমর্থনে তারা অনলাইনের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

বুধবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২১ , ২৯ পৌষ ১৪২৭, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

বাইডেনের শপথ ঘিরে

ট্রাম্প সমর্থকরা আবারও বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে হামলা চালাতে পারে

image

গত সপ্তাহে ট্রাম্পের উগ্রপন্থি সমর্থকদের ক্যাপিটল হিলে ভয়াবহ সহিংসতার দৃশ্য -এপি

ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকরা গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালায়। এমন নজিরবিহীন হামলার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে আর দেখা যায়নি। এদিকে, ওই সহিংসতার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার আরও হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)।

সংস্থাটি বলছে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে আরও হামলার ঘটনা ঘটতে পারে। এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে, সশস্ত্র কিছু গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের সবটিতে হামলার পরিকল্পনা করছে। আগামী ২০ জানুয়ারি জো বাইডেনের শপথ গ্রহণের আগে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য এবং ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে এসব গ্রুপ। প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের শপথ গ্রহণ ক্যাপিটল ভবনের বাইরে হবে। এক বিবৃতিতে জো বাইডেন বলেন, ক্যাপিটল ভবনের বাইরে শপথ নিতে তিনি মোটেও ভয় পাচ্ছেন না। তিনি এবং কমলা হ্যারিস দুজনই ক্যাপিটল ভবনের বাইরে শপথ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এদিকে, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বলেছেন, ক্যাপিটল ভবনে হামলার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। গত বুধবার ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে ব্যাপক তা-ব চালায় উগ্র ট্রাম্প সমর্থকরা। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালাতে হয় পুলিশকে। এই ঘটনায় এক পুলিশ সদস্যসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। ট্রাম্পের উসকানিতেই এ হামলা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ক্যাপিটলে তা-বের ঘটনায় ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান উভয় দলই নিন্দা জানিয়েছে।

অপরদিকে বাইডেনের শপথ গ্রহণকে কেন্দ্র করে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয় বরং, সারাবিশ্বে মানুষের মধ্যে কৌতূহল, সংশয় ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের ক্ষমতা গ্রহণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে হোয়াইট হাউজে প্রবেশ করবেন।

গত নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর থেকেই ট্রাম্প নতুন করে তার পরিচয় দিয়ে চলেছেন। প্রথমে নির্বাচনের ফলাফল মেনে না নেয়া, পরবর্তীতে বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচনের ফলাফলের বিরুদ্ধে মামলা এবং সবশেষে নিজের সমর্থকদের উসকে দিয়ে ক্যাপিটল ভবনে সহিংসতা ছড়ালেন।

অনেকের মনে এখন একটাই প্রশ্ন যে, আগামী ২০ জানুয়ারি কী হতে যাচ্ছে? সেদিন কি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর ঘটবে? ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা যদি অভিষেক অনুষ্ঠানে আবার ঝামেলা করার চেষ্টা করে তবে সেদিনের জন্য কী ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে?

নিরাপত্তা বাহিনী বলছে, শপথ গ্রহণের আগের কয়েকদিন থেকেই নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। শপথ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ন্যাশনাল গার্ডের প্রায় প্রায় ১৫ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হবে। প্রতিবারই প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি বেশ আলাদা। ক্যাপিটল হিলে হামলার পর এর নিরাপত্তার গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে।

তবে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ব্যক্তিদের জন্য এবার বাড়তি নিরাপত্তার কী কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সেগুলো এখনও পরিষ্কার নয়। বাইডেন যখন শপথ গ্রহণ করবেন তখনও ওয়াশিংটন ডিসিতে জরুরি অবস্থা বহাল থাকবে। ক্যাপিটল হিলে সহিংসতার কারণেই রাজধানীর মেয়র সেখানে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন।

নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে বিদায়ী প্রেসিডেন্টের উপস্থিতি একটি সৌজন্যের বিষয়। এর আগে তিনজন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ছাড়া সবাই নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এবারও প্রচলিত সৌজন্যের ব্যতিক্রম ঘটছে বলে মনে হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন এ অনুষ্ঠানে তিনি থাকবেন না।

এক টুইট বার্তায় গত শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, যারা জানতে চেয়েছেন তাদের জন্য বলছি ২০ জানুয়ারির অভিষেক অনুষ্ঠানে আমি যাচ্ছি না। এর আগে এই বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জানান, নির্বাচনের ফলাফল মেনে না নিলেও তিনি জো বাইডেনের হাতে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

তার কয়েকজন সমর্থক বিষয়টিকে আরও এক ধাপ নিয়ে গেছেন। তারা পরিকল্পনা করছেন জো বাইডেনের শপথ গ্রহণের সময়, পাশাপাশি ঠিক একই সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য ভার্চুয়াল অভিষেক অনুষ্ঠান আয়োজনের। ফেসবুকে এরকম একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের কথাও ঘোষণা করা হয়েছে এবং ইতোমধ্যেই তাতে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ জানিয়েছেন যে ট্রাম্পের সমর্থনে তারা অনলাইনের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।