ভোক্তাপর্যায়ে এলপি গ্যাস সুলভ ও নিরাপদে পৌঁছাতে ১৪ দফা সুপারিশ

ভোক্তা পর্যায়ে সুলভ ও নিরাপদে এলপি গ্যাস পৌঁছানো নিশ্চিতকরণে ১৪ দফা সুপারিশ প্রস্তুত করেছে বিইআরসি’র কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি (টিইসি)। সুপারিশে টিইসি বলেছে, সাধারণভাবে সব ক্ষেত্রের জন্য এলপিজি’র (অটোগ্যাসসহ) মিশ্রণে প্রোপেন ৩০% থেকে ৪০% এবং করেসপন্ডিং বিউটেন ৭০% থেকে ৬০% এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যেতে পারে। প্রোপেনের অধিক হিটিং ভ্যালু এবং আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য বিবেচনায় মূল্যহার নির্ধারণে প্রোপেন এবং বিউটেনের অনুপাত ৪০:৬০ বিবেচনা করা যেতে পারে।

সৌদি আরামকো কর্তৃক মাসভিত্তিক ঘোষিত এলপিজি’র সৌদি কন্ট্রাক্ট প্রাইস (সৌদি সিপি) বিবেচনায় কমিশন কর্তৃক সারাদেশে এলপিজির অভিন্ন মূল্যহার নির্ধারণে কমিটি একটি ফর্মূলাও দিয়েছে। এলপি গ্যাসের বাজার নিয়ন্ত্রণে মূল্যহার বেধে দেয়ার অংশ হিসেবে আজ গণশুনানি করবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

কমিশনের চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিলের সভাপতিত্বে কমিশন সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ আবু ফারুক, সদস্য (গ্যাস) মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী, সদস্য (বিদ্যুৎ) মোহাম্মদ বজলুর রহমান এবং সদস্য (পেট্রোলিয়াম) মো. কামরুজ্জামান শুনানি গ্রহণ করবেন। মূল্য পুনঃনির্ধারণে ইতোমধ্যে এ খাতের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের প্রস্তাব কিছুদিন আগে কমিশনে জমা দিয়েছে। এসব প্রস্তাব, সংশ্লিষ্ট দলিলাদি এবং প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে বিইআরসি’র কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি (টিইসি)। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ওই প্রতিবেদনে ১৪ দফা সুপারিশ করা হয়।

টিইসি’র ফর্মূলা অনুযায়ী, ভোক্তা পর্যায়ে এলপিজি’র মূল্যহার হবে ইমপোর্ট পার্টি প্রাইস (আইপিপি), মজুদকরণ ও বোতলজাতকরণ ব্যয়, বিতরণ ব্যয় (স্থানীয় পরিবহনসহ), ডিলার’স ও রিটেইল ব্যয় এবং মূসকের সমষ্টি। যেখানে আইপিপি হবে সৌদি সিপি, ওশান ফ্রেইট ও ট্রেডারের প্রিমিয়ামের সমষ্টি।

ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যহার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী মাসের সৌদি সিপি’র ভিত্তিতে পরবর্তী মাসের (ট্যারিফ মাস) জন্য ভোক্তা পর্যায়ে এলপিজি’র মূল্যহার মাসভিত্তিতে পরিবর্তন করা যেতে পারে বলেও সুপারিশে উল্লেখ করেছে টিইসি।

টিইসি আরও বলেছে, সৌদি সিপি বিবেচনায় আইপিপি এবং মজুদকরণ ও বোতলজাতকরণ ব্যয়ের ৫০% (সিলিন্ডারের অবচয় ব্যতীত ব্যয়ের) বাল্ক পরিবহন, মূসক এবং স্টেশন চার্জের ভিত্তিতে নিম্নোক্ত ফর্মূলা অনুযায়ী কমিশন কর্তৃক সারাদেশে অটোগ্যাসের অভিন্ন মূল্য নির্ধারণ করা যেতে পারে।

এক্ষেত্রে অটোগ্যাসের মূল্যহার হবে আইপিপি, মজুদকরণ ও বোতলজাতকরণ ব্যয় (সিলিন্ডারের অবচয় ব্যতীত ব্যয়ের ৫০%), বাল্ক পরিবহন ব্যয়, মূসক এবং স্টেশন চার্জের সমষ্টি।

ব্যয় কমাতে ছোট জাহাজের পরিবর্তে মাঝারি জাহাজে করে এলপিজি আমদানির পরামর্শ দিয়েছে টিইসি। এলপিজির মূল্যহার নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে আরও কিছু সুপারিশ করে প্রয়োজনে ভর্তুকির সুপারিশও করেছে কমিটি।

মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মাসে সৌদি আরামকোর মূল্যহার অনুসারে প্রতি মেট্রিক টন প্রোপেনের দাম ছিল ৫৫০ মার্কিন ডলার এবং বিউটেনের দাম ছিল ৫৩০ মার্কিন ডলার। গত বছর জানুয়ারিতে এই মূল্যহার ছিল যথাক্রমে ৫৬৫ এবং ৫৯০ মার্কিন ডলার।

বিইআরসি’র পরিচালক (গ্যাস) সিএফকে মুসাদ্দেক আহমদকে আহ্বায়ক এবং উপপরিচালক (ট্যারিফ) কামরুজ্জামানকে সদস্য সচিব করে গঠিত সাত সদস্যের ওই কারিগারি মূল্যায়ন কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন বিইআরসি’র পরিচালক (পেট্রোলিয়াম) ড. মো. দিদারুল আলম, উপপরিচালক (অর্থ ও হিসাব) মো. শরিফুল ইসলাম শাহীন, উপপরিচালক (গ্যাস) মো. নুরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক (গ্যাস-২) নাজিয়া হক ও সহকারী পরিচালক (ট্যারিফ-২) রাজু আহমেদ।

লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম পুনঃনির্ধারণে আজ রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশনে বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে বিইআরসির গণশুনানি। সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়ী-ভোক্তা সংগঠনসহ রাজনীতিক, সমাজকর্মী, অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এ শুনানিতে নিজ নিজ অভিমত ব্যক্ত করার সুযোগ পাবেন।

বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২১ , ৩০ পৌষ ১৪২৭, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২

বিইআরসিতে গণশুনানি আজ

ভোক্তাপর্যায়ে এলপি গ্যাস সুলভ ও নিরাপদে পৌঁছাতে ১৪ দফা সুপারিশ

ফয়েজ আহমেদ তুষার

ভোক্তা পর্যায়ে সুলভ ও নিরাপদে এলপি গ্যাস পৌঁছানো নিশ্চিতকরণে ১৪ দফা সুপারিশ প্রস্তুত করেছে বিইআরসি’র কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি (টিইসি)। সুপারিশে টিইসি বলেছে, সাধারণভাবে সব ক্ষেত্রের জন্য এলপিজি’র (অটোগ্যাসসহ) মিশ্রণে প্রোপেন ৩০% থেকে ৪০% এবং করেসপন্ডিং বিউটেন ৭০% থেকে ৬০% এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যেতে পারে। প্রোপেনের অধিক হিটিং ভ্যালু এবং আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য বিবেচনায় মূল্যহার নির্ধারণে প্রোপেন এবং বিউটেনের অনুপাত ৪০:৬০ বিবেচনা করা যেতে পারে।

সৌদি আরামকো কর্তৃক মাসভিত্তিক ঘোষিত এলপিজি’র সৌদি কন্ট্রাক্ট প্রাইস (সৌদি সিপি) বিবেচনায় কমিশন কর্তৃক সারাদেশে এলপিজির অভিন্ন মূল্যহার নির্ধারণে কমিটি একটি ফর্মূলাও দিয়েছে। এলপি গ্যাসের বাজার নিয়ন্ত্রণে মূল্যহার বেধে দেয়ার অংশ হিসেবে আজ গণশুনানি করবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

কমিশনের চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিলের সভাপতিত্বে কমিশন সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ আবু ফারুক, সদস্য (গ্যাস) মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী, সদস্য (বিদ্যুৎ) মোহাম্মদ বজলুর রহমান এবং সদস্য (পেট্রোলিয়াম) মো. কামরুজ্জামান শুনানি গ্রহণ করবেন। মূল্য পুনঃনির্ধারণে ইতোমধ্যে এ খাতের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের প্রস্তাব কিছুদিন আগে কমিশনে জমা দিয়েছে। এসব প্রস্তাব, সংশ্লিষ্ট দলিলাদি এবং প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে বিইআরসি’র কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি (টিইসি)। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ওই প্রতিবেদনে ১৪ দফা সুপারিশ করা হয়।

টিইসি’র ফর্মূলা অনুযায়ী, ভোক্তা পর্যায়ে এলপিজি’র মূল্যহার হবে ইমপোর্ট পার্টি প্রাইস (আইপিপি), মজুদকরণ ও বোতলজাতকরণ ব্যয়, বিতরণ ব্যয় (স্থানীয় পরিবহনসহ), ডিলার’স ও রিটেইল ব্যয় এবং মূসকের সমষ্টি। যেখানে আইপিপি হবে সৌদি সিপি, ওশান ফ্রেইট ও ট্রেডারের প্রিমিয়ামের সমষ্টি।

ভোক্তা পর্যায়ে মূল্যহার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী মাসের সৌদি সিপি’র ভিত্তিতে পরবর্তী মাসের (ট্যারিফ মাস) জন্য ভোক্তা পর্যায়ে এলপিজি’র মূল্যহার মাসভিত্তিতে পরিবর্তন করা যেতে পারে বলেও সুপারিশে উল্লেখ করেছে টিইসি।

টিইসি আরও বলেছে, সৌদি সিপি বিবেচনায় আইপিপি এবং মজুদকরণ ও বোতলজাতকরণ ব্যয়ের ৫০% (সিলিন্ডারের অবচয় ব্যতীত ব্যয়ের) বাল্ক পরিবহন, মূসক এবং স্টেশন চার্জের ভিত্তিতে নিম্নোক্ত ফর্মূলা অনুযায়ী কমিশন কর্তৃক সারাদেশে অটোগ্যাসের অভিন্ন মূল্য নির্ধারণ করা যেতে পারে।

এক্ষেত্রে অটোগ্যাসের মূল্যহার হবে আইপিপি, মজুদকরণ ও বোতলজাতকরণ ব্যয় (সিলিন্ডারের অবচয় ব্যতীত ব্যয়ের ৫০%), বাল্ক পরিবহন ব্যয়, মূসক এবং স্টেশন চার্জের সমষ্টি।

ব্যয় কমাতে ছোট জাহাজের পরিবর্তে মাঝারি জাহাজে করে এলপিজি আমদানির পরামর্শ দিয়েছে টিইসি। এলপিজির মূল্যহার নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে আরও কিছু সুপারিশ করে প্রয়োজনে ভর্তুকির সুপারিশও করেছে কমিটি।

মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মাসে সৌদি আরামকোর মূল্যহার অনুসারে প্রতি মেট্রিক টন প্রোপেনের দাম ছিল ৫৫০ মার্কিন ডলার এবং বিউটেনের দাম ছিল ৫৩০ মার্কিন ডলার। গত বছর জানুয়ারিতে এই মূল্যহার ছিল যথাক্রমে ৫৬৫ এবং ৫৯০ মার্কিন ডলার।

বিইআরসি’র পরিচালক (গ্যাস) সিএফকে মুসাদ্দেক আহমদকে আহ্বায়ক এবং উপপরিচালক (ট্যারিফ) কামরুজ্জামানকে সদস্য সচিব করে গঠিত সাত সদস্যের ওই কারিগারি মূল্যায়ন কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন বিইআরসি’র পরিচালক (পেট্রোলিয়াম) ড. মো. দিদারুল আলম, উপপরিচালক (অর্থ ও হিসাব) মো. শরিফুল ইসলাম শাহীন, উপপরিচালক (গ্যাস) মো. নুরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক (গ্যাস-২) নাজিয়া হক ও সহকারী পরিচালক (ট্যারিফ-২) রাজু আহমেদ।

লিকুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম পুনঃনির্ধারণে আজ রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশনে বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে বিইআরসির গণশুনানি। সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়ী-ভোক্তা সংগঠনসহ রাজনীতিক, সমাজকর্মী, অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ এ শুনানিতে নিজ নিজ অভিমত ব্যক্ত করার সুযোগ পাবেন।