নিম্নআয়ের মানুষের দুর্ভোগ চরমে
দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রা কিছুটা কমে গেছে। শীতে কাঁপছে উত্তরাঞ্চল। গত মঙ্গলবারের তুলনায় বুধবার ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমেছে। বিভিন্ন স্থানে ঘন কুয়াশায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। মানুষের চলাফেরায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে নিম্নআয়ের ও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ।
গতকাল দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে বদলগাছিতে ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী দুই দিনে আরও কিছুটা কমে তা ৬ ডিগ্রি পর্যন্ত নেমে যেতে পারে। দেশে উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, দিনাজপুর, সৈয়দপুর ও কুড়িগ্রাম অঞ্চলের উপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকতে পারে এবং আরও বিস্তার লাভ করতে পারে। আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝিতে শৈত্যপ্রবাহ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘বুধবারের তুলনায় তাপমাত্রা আরও কিছুটা নামতে পারে আগামী দুই দিন। শীতের আমেজ থাকবে আরও বেশ কিছুদিন।’
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান করছে। মৌসুমী লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এর প্রভাবে অস্থায়ীভাবে আকাশ মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারদেশে হালকা থেকে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। উত্তরাঞ্চলে দুপুর পর্যন্ত এই কুয়াশা থাকতে পারে।
গতকাল দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল নওগাঁর বদলগাছীতে ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত মঙ্গলবার বদলগাছিতেই ছিল ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ঢাকায় রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ময়মনসিংহে গতকাল ছিল ১২ দশমিক ২, মঙ্গলবার যা ছিল ১৪ দশমিক ৭। চট্টগ্রামে কমেছে ৫ ডিগ্রি, গতকাল সেখানে ১২ দশমিক ৫, মঙ্গলবার যা ছিল ১৮ দশমিক ২। সিলেটে প্রায় একই আছে, গতকাল সেখানে ১৫ দশমিক ৪, মঙ্গলবার যা ছিল ১৫ দশমিক ৫। রাজশাহীতে কমেছে প্রায় ৫ ডিগ্রি, গতকাল সেখানে ৯ দশমিক ৮, মঙ্গলবার যা ছিল ১৪ দশমিক ৫। রংপুরে কমেছে ৫ ডিগ্রি, গতকাল ১১ দশমিক ২, মঙ্গলবার যা ছিল ১৬ দশমিক ১। খুলনায় প্রায় একই আছে, গতকাল ১৬, মঙ্গলবার যা ছিল ১৬ দশমিক ৫। বরিশালে কমেছে দুই ডিগ্রি, গতকাল ১৩ দশমিক ৮, মঙ্গলবার যা ছিল ১৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, তীব্র শীতে হিমালয় নিকটবর্তী লালমনিরহাটের জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। গত ২ দিন ধরে দেখা মিলছে না সূর্যের। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম, ভোগান্তিতে আছে নিম্নআয়ের মানুষ। আবারও কনকনে ঠাণ্ডা আর ঘন কুয়াশায় তিস্তা, ধরলা ও সানিয়াজান নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের কয়েক লাখ শীতার্ত মানুষের কষ্ট বেড়েছে বহুগুণ। পরিবারগুলোতে শীতের পোশাক না থাকায় খড়কুটোর আগুনই ভরসা করে চলছে শীতার্ত দুস্থ মানুষ।
সারাদিনেও সূর্যের দেখা না পাওয়ায় বেড়েছে ঠাণ্ডার তীব্রতা। এতে কাবু হয়ে পড়েছে তিস্তা-ধরলাপাড়ের শিশু, বৃদ্ধ সবাই। তিস্তা-ধরলাপাড়ের মানুষজন খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। গত মঙ্গলবার লালমনিরহাটের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ইনচার্জ সুবল চন্দ্র রায়।
পৌষের শেষ সপ্তাহ থেকে শীতের তীব্রতা বাড়ায় খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা নিচ্ছেন তারা। ঠাণ্ডার কারণে কাজের সন্ধানে ঘরের বাইরে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন খেটে-খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষ। ঠাণ্ডার তীব্রতার কারণে হাট-বাজারেও লোকসমাগম অনেকটাই কম।
তিস্তাপাড়ের রুদ্রেশ্বর গ্রামের আফাজ আলী জানান, ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। এই এলাকায় বেশিরভাগ মানুষ দিনমজুর ও জেলে। ঠাণ্ডায় কাজকর্ম না পেয়ে তাদের কষ্ট বেড়ে যায়।
হাতীবান্ধা উপজেলার ফকিরপাড়ার রিকশাচালক অনীল চন্দ্র বলেন, বিকেল ৩টা এখন পর্যন্ত কোন ভাড়া পাইনি। ডাউয়াবাড়ি গ্রামের মনির মিয়া বলেন, অনেক কষ্টে রাত কাটিয়েছি। গায়ে কাপড় নাই তাই বাহিরে বের হতে পারি নাই।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের দিনমজুর সবুর আলী বলেন, এই ঠাণ্ডার মধ্যে কাজকাম করতে পারি না, আমি গরিব মানুষ পরিষদে কম্বল আসে সবাই পায় আমি পাই না।
চরবেষ্টিত আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী বলেন, আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা দুর্গম।
পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, দহগ্রাম ইউনিয়নের পাশেই হিমালয় তাই এই এলাকায় প্রচুর শীত আর কনকনে ঠাণ্ডা।
লালমনিরহাট জেলা সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় বলেন, হাসপাতালে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। গত দুই দিনে শীতের তীব্রতা বেশি হওয়ায় সদর হাসপাতালসহ ৫টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী সংখ্যা বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৭৩ জন শীতজনিত রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। ভর্তি হয়েছে ৮৯ জন।
বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২১ , ৩০ পৌষ ১৪২৭, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২
নিম্নআয়ের মানুষের দুর্ভোগ চরমে
দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রা কিছুটা কমে গেছে। শীতে কাঁপছে উত্তরাঞ্চল। গত মঙ্গলবারের তুলনায় বুধবার ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমেছে। বিভিন্ন স্থানে ঘন কুয়াশায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। মানুষের চলাফেরায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে নিম্নআয়ের ও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ।
গতকাল দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে বদলগাছিতে ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী দুই দিনে আরও কিছুটা কমে তা ৬ ডিগ্রি পর্যন্ত নেমে যেতে পারে। দেশে উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, দিনাজপুর, সৈয়দপুর ও কুড়িগ্রাম অঞ্চলের উপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকতে পারে এবং আরও বিস্তার লাভ করতে পারে। আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝিতে শৈত্যপ্রবাহ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘বুধবারের তুলনায় তাপমাত্রা আরও কিছুটা নামতে পারে আগামী দুই দিন। শীতের আমেজ থাকবে আরও বেশ কিছুদিন।’
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান করছে। মৌসুমী লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এর প্রভাবে অস্থায়ীভাবে আকাশ মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারদেশে হালকা থেকে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। উত্তরাঞ্চলে দুপুর পর্যন্ত এই কুয়াশা থাকতে পারে।
গতকাল দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল নওগাঁর বদলগাছীতে ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত মঙ্গলবার বদলগাছিতেই ছিল ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ঢাকায় রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ময়মনসিংহে গতকাল ছিল ১২ দশমিক ২, মঙ্গলবার যা ছিল ১৪ দশমিক ৭। চট্টগ্রামে কমেছে ৫ ডিগ্রি, গতকাল সেখানে ১২ দশমিক ৫, মঙ্গলবার যা ছিল ১৮ দশমিক ২। সিলেটে প্রায় একই আছে, গতকাল সেখানে ১৫ দশমিক ৪, মঙ্গলবার যা ছিল ১৫ দশমিক ৫। রাজশাহীতে কমেছে প্রায় ৫ ডিগ্রি, গতকাল সেখানে ৯ দশমিক ৮, মঙ্গলবার যা ছিল ১৪ দশমিক ৫। রংপুরে কমেছে ৫ ডিগ্রি, গতকাল ১১ দশমিক ২, মঙ্গলবার যা ছিল ১৬ দশমিক ১। খুলনায় প্রায় একই আছে, গতকাল ১৬, মঙ্গলবার যা ছিল ১৬ দশমিক ৫। বরিশালে কমেছে দুই ডিগ্রি, গতকাল ১৩ দশমিক ৮, মঙ্গলবার যা ছিল ১৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, তীব্র শীতে হিমালয় নিকটবর্তী লালমনিরহাটের জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। গত ২ দিন ধরে দেখা মিলছে না সূর্যের। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম, ভোগান্তিতে আছে নিম্নআয়ের মানুষ। আবারও কনকনে ঠাণ্ডা আর ঘন কুয়াশায় তিস্তা, ধরলা ও সানিয়াজান নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের কয়েক লাখ শীতার্ত মানুষের কষ্ট বেড়েছে বহুগুণ। পরিবারগুলোতে শীতের পোশাক না থাকায় খড়কুটোর আগুনই ভরসা করে চলছে শীতার্ত দুস্থ মানুষ।
সারাদিনেও সূর্যের দেখা না পাওয়ায় বেড়েছে ঠাণ্ডার তীব্রতা। এতে কাবু হয়ে পড়েছে তিস্তা-ধরলাপাড়ের শিশু, বৃদ্ধ সবাই। তিস্তা-ধরলাপাড়ের মানুষজন খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। গত মঙ্গলবার লালমনিরহাটের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ইনচার্জ সুবল চন্দ্র রায়।
পৌষের শেষ সপ্তাহ থেকে শীতের তীব্রতা বাড়ায় খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা নিচ্ছেন তারা। ঠাণ্ডার কারণে কাজের সন্ধানে ঘরের বাইরে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন খেটে-খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষ। ঠাণ্ডার তীব্রতার কারণে হাট-বাজারেও লোকসমাগম অনেকটাই কম।
তিস্তাপাড়ের রুদ্রেশ্বর গ্রামের আফাজ আলী জানান, ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। এই এলাকায় বেশিরভাগ মানুষ দিনমজুর ও জেলে। ঠাণ্ডায় কাজকর্ম না পেয়ে তাদের কষ্ট বেড়ে যায়।
হাতীবান্ধা উপজেলার ফকিরপাড়ার রিকশাচালক অনীল চন্দ্র বলেন, বিকেল ৩টা এখন পর্যন্ত কোন ভাড়া পাইনি। ডাউয়াবাড়ি গ্রামের মনির মিয়া বলেন, অনেক কষ্টে রাত কাটিয়েছি। গায়ে কাপড় নাই তাই বাহিরে বের হতে পারি নাই।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের দিনমজুর সবুর আলী বলেন, এই ঠাণ্ডার মধ্যে কাজকাম করতে পারি না, আমি গরিব মানুষ পরিষদে কম্বল আসে সবাই পায় আমি পাই না।
চরবেষ্টিত আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী বলেন, আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা দুর্গম।
পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, দহগ্রাম ইউনিয়নের পাশেই হিমালয় তাই এই এলাকায় প্রচুর শীত আর কনকনে ঠাণ্ডা।
লালমনিরহাট জেলা সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় বলেন, হাসপাতালে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। গত দুই দিনে শীতের তীব্রতা বেশি হওয়ায় সদর হাসপাতালসহ ৫টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী সংখ্যা বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৭৩ জন শীতজনিত রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। ভর্তি হয়েছে ৮৯ জন।