যাচাই-বাছাই বন্ধসহ ৭ দফা দাবিতে গোপালগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধারা বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও স্মরকলিপি প্রদান করেছেন।
গতকাল দুপুরে মুক্তিযোদ্ধারা শহরের পৌর পার্কে সমাবেশ করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মো. মজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশ মুক্তিযোদ্ধা মোশাররফ হোসেন, প্রফুল্ল কুমার, মতিয়ার রহমান, নূরে আলম, ইব্রাহিম খলিল, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নজরুল ইসলাম, আবদুর রাজ্জাকসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মো. মজিবুর রহমান ৭ দফা দাবি পেশ করেন। দাবিগুলোর মধ্যে বলা হয়েছে- আগামী ৩০ জানুয়ারি গোপালগঞ্জের ৫ উপজেলার প্রায় ২ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ডাকা হয়েছে। এ অবাঞ্ছিত ও অনাকাক্সিক্ষত যাচাই-বাছাই বন্ধ করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের জিডিটাল সদনসহ আইডি কার্ড দিতে হবে।
জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে সব জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদে একটি নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করতে হবে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের গৃহ নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। অনাকাক্সিক্ষতভাবে ভাতা বন্ধ না রেখে সব মুক্তিযোদ্ধার ভাতা চালু রাখতে হবে। জামুকা ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সব অনিয়ম ও মুক্তিযোদ্ধা হয়রানি বন্ধ করতে হবে। জামুকা ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকরি দিতে হবে।
সমাবেশ শেষে শহরে মুক্তিযোদ্ধারা একটি বিক্ষাভ মিছিল বের করেন। মিছিল শেষে মুক্তিযোদ্ধারা জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি পেশ করেন।
মুক্তিযোদ্ধা অহিদুজ্জামান বলেন, ২০০৩,২০০৫ ও ২০১৭ সালে ৩ দফা যাচাই-বাছাইয়ের পর থেকে আমরা ২ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ১৫ বছর ধরে ভাতা পেয়ে আসছি। নতুন করে আমাদের যাচাই বাছাইয়ের চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়া আগের ৩টি যাচাই বাছাইতে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করেছেন। অনেকে রোগাক্রান্ত হয়ে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। তাই নতুন যাচাই-বছাইয়ে জীবিত ৩ জন সহযোদ্ধা নিয়ে যাচাই-বাছাই কমিটিতে হাজির হওয়া অত্যন্ত কঠিন ও কষ্টসাধ্য। তাই এই যাচাই-বাছাই বন্ধ করতে হবে।
মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম বলেন, ভাতার আশায় সেদিন মুক্তিযুদ্ধ করিনি। দেশ মাতৃকাকে স্বাধীন করতে অস্ত্র হাতে নিয়েছিলাম। তারপর ৩ বার আমাদের যাচাই-বাছাই হয়েছে। সেখানে সব প্রক্রিয়া সম্মন্ন করা হয়। আমাদের সবুজ তালিকা ও মুক্তি বার্তায় নাম আছে। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরিত সনদ আমাদের প্রত্যেকের কাছে রয়েছে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের বেসামরিক গেজেটে আমাদের তালিকা রয়েছে।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের যাচাইয়েও আমরা উত্তীর্ণ হয়েছি। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকার) ঠেলাঠেলিতে লাল তালিকায় আমরা অন্তর্ভুক্ত হতে পারিনি। তাই আগামী ৩০ জানুয়ারি নতুন করে যাচাই-বছাই বোর্ডে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাদের ডেকেছেন।
মুন্সি গোলাম হোসেন বলেন, নতুন যাচাই-বাছাইয়ে ৩ জন সহযোদ্ধাকে হাজির করতে বলা হয়েছে। এটি খুবই কঠিন কাজ। ইতোমধ্যে অধিকাংশ সহযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়া জীবিতরা সয়সের ভারে ন্যুব্জ। অনেকে রোগাক্রান্ত হয়ে স্মৃতিশক্তি হারিয়েছেন। তাই এই কঠিন কাজ থেকে আমাদের অব্যাহতি দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান মোল্লা বলেন, আগের ৩টি যাচাই বাছাইয়ে সহযোদ্ধাদের স্বাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর আমরা ২০১৭ সালের সর্বশেষ যাচাই-বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হই। এখান আমাদের এই অবাঞ্ছিত ও অনাকাক্সিক্ষত যাচাই-বাছাই থেকে অব্যহতি দেয়া হোক।
জানা গেছে, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) অনুমোদন ছাড়া যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধা গেজেট ভুক্ত হয়েছে, তাদের তালিকা আগামী ৩০ জানুয়ারি যাচাই-বাছাই করার জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছে। তবে কোন বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম ভারতীয় তালিকা বা লাল মুক্তিবার্তা বা মন্ত্রণালয়ের স্বীকৃত ৩৩ ধরনের প্রমাণে অন্তর্ভুক্ত থাকলে তিনি যাচাই-বাছাইয়ের আওতা বহির্ভূত থাকবেন বলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুর রহমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল নতুন যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশনা দিয়েছে। আমাকে ওই নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। যাচাই-বাছাই বন্ধ করার ক্ষমতা আমার নেই।
বৃহস্পতিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২১ , ৩০ পৌষ ১৪২৭, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪২
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, গোপালগঞ্জ
যাচাই-বাছাই বন্ধসহ ৭ দফা দাবিতে গোপালগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধারা বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও স্মরকলিপি প্রদান করেছেন।
গতকাল দুপুরে মুক্তিযোদ্ধারা শহরের পৌর পার্কে সমাবেশ করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মো. মজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশ মুক্তিযোদ্ধা মোশাররফ হোসেন, প্রফুল্ল কুমার, মতিয়ার রহমান, নূরে আলম, ইব্রাহিম খলিল, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নজরুল ইসলাম, আবদুর রাজ্জাকসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ মো. মজিবুর রহমান ৭ দফা দাবি পেশ করেন। দাবিগুলোর মধ্যে বলা হয়েছে- আগামী ৩০ জানুয়ারি গোপালগঞ্জের ৫ উপজেলার প্রায় ২ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ডাকা হয়েছে। এ অবাঞ্ছিত ও অনাকাক্সিক্ষত যাচাই-বাছাই বন্ধ করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের জিডিটাল সদনসহ আইডি কার্ড দিতে হবে।
জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে সব জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদে একটি নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করতে হবে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের গৃহ নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। অনাকাক্সিক্ষতভাবে ভাতা বন্ধ না রেখে সব মুক্তিযোদ্ধার ভাতা চালু রাখতে হবে। জামুকা ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সব অনিয়ম ও মুক্তিযোদ্ধা হয়রানি বন্ধ করতে হবে। জামুকা ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকরি দিতে হবে।
সমাবেশ শেষে শহরে মুক্তিযোদ্ধারা একটি বিক্ষাভ মিছিল বের করেন। মিছিল শেষে মুক্তিযোদ্ধারা জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি পেশ করেন।
মুক্তিযোদ্ধা অহিদুজ্জামান বলেন, ২০০৩,২০০৫ ও ২০১৭ সালে ৩ দফা যাচাই-বাছাইয়ের পর থেকে আমরা ২ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ১৫ বছর ধরে ভাতা পেয়ে আসছি। নতুন করে আমাদের যাচাই বাছাইয়ের চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়া আগের ৩টি যাচাই বাছাইতে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করেছেন। অনেকে রোগাক্রান্ত হয়ে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। তাই নতুন যাচাই-বছাইয়ে জীবিত ৩ জন সহযোদ্ধা নিয়ে যাচাই-বাছাই কমিটিতে হাজির হওয়া অত্যন্ত কঠিন ও কষ্টসাধ্য। তাই এই যাচাই-বাছাই বন্ধ করতে হবে।
মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম বলেন, ভাতার আশায় সেদিন মুক্তিযুদ্ধ করিনি। দেশ মাতৃকাকে স্বাধীন করতে অস্ত্র হাতে নিয়েছিলাম। তারপর ৩ বার আমাদের যাচাই-বাছাই হয়েছে। সেখানে সব প্রক্রিয়া সম্মন্ন করা হয়। আমাদের সবুজ তালিকা ও মুক্তি বার্তায় নাম আছে। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরিত সনদ আমাদের প্রত্যেকের কাছে রয়েছে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের বেসামরিক গেজেটে আমাদের তালিকা রয়েছে।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের যাচাইয়েও আমরা উত্তীর্ণ হয়েছি। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকার) ঠেলাঠেলিতে লাল তালিকায় আমরা অন্তর্ভুক্ত হতে পারিনি। তাই আগামী ৩০ জানুয়ারি নতুন করে যাচাই-বছাই বোর্ডে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাদের ডেকেছেন।
মুন্সি গোলাম হোসেন বলেন, নতুন যাচাই-বাছাইয়ে ৩ জন সহযোদ্ধাকে হাজির করতে বলা হয়েছে। এটি খুবই কঠিন কাজ। ইতোমধ্যে অধিকাংশ সহযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়া জীবিতরা সয়সের ভারে ন্যুব্জ। অনেকে রোগাক্রান্ত হয়ে স্মৃতিশক্তি হারিয়েছেন। তাই এই কঠিন কাজ থেকে আমাদের অব্যাহতি দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান মোল্লা বলেন, আগের ৩টি যাচাই বাছাইয়ে সহযোদ্ধাদের স্বাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর আমরা ২০১৭ সালের সর্বশেষ যাচাই-বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হই। এখান আমাদের এই অবাঞ্ছিত ও অনাকাক্সিক্ষত যাচাই-বাছাই থেকে অব্যহতি দেয়া হোক।
জানা গেছে, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) অনুমোদন ছাড়া যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধা গেজেট ভুক্ত হয়েছে, তাদের তালিকা আগামী ৩০ জানুয়ারি যাচাই-বাছাই করার জন্য মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছে। তবে কোন বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম ভারতীয় তালিকা বা লাল মুক্তিবার্তা বা মন্ত্রণালয়ের স্বীকৃত ৩৩ ধরনের প্রমাণে অন্তর্ভুক্ত থাকলে তিনি যাচাই-বাছাইয়ের আওতা বহির্ভূত থাকবেন বলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুর রহমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল নতুন যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশনা দিয়েছে। আমাকে ওই নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। যাচাই-বাছাই বন্ধ করার ক্ষমতা আমার নেই।