বেসরকারি টিকা আমদানি-বিক্রির নীতিমালা হচ্ছে

বেসরকারি উদ্যোগে করোনার টিকা আমদানি, বিক্রি, তার দাম এবং কীভাবে টিকা প্রয়োগ হবে সে সর্ম্পকে একটি নীতিমালা তৈরি করছে সরকার। টিকার নিরাপত্তায় থাকবে পুলিশ বা আনসার। ‘কোভ্যাক্স’ সুবিধার আওতায় ‘ফাইজার-বায়োএনটেক’র আট লাখ ডোজ টিকাও দেশে আসছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল সচিবালয়ে করোনাভাইরাস টিকার প্রয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে আয়োজিত এক সভা শেষে সাংবাদিকদের ওই তথ্য জানান।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও করোনার টিকা এনে তা দিতে (প্রয়োগ) পারবে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নীতিমালার মধ্যে সবকিছু থাকবে। তারা কিভাবে দিবে, কিভাবে হিসাব রাখবে, কি দামে দিবে- এ বিষয়গুলো ঠিক করে দেবেন। এটাও ঠিক করে দেয়া হবে হাসপাতালের মাধ্যমে, কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মাধ্যমে ভ্যাকসিন দেয়া যাবে।’

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র তিন কোটি ডোজ টিকার মধ্যে ৫০ লাখ ডোজ ২৫ জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে। টিকা প্রয়োগ শুরু হবে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে।

সরকারকে এই টিকা সরবরাহ করবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। প্রতিষ্ঠানটি ফেব্রুয়ারি থেকে বেসরকারিভাবেও করোনার টিকা বিক্রি শুরু করবে বলে সম্প্রতি আন্তজার্তিক একটি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। ‘বেক্সিমকো’ ফেব্রুয়ারিতেই বাজারে করোনার টিকা বিক্রি করতে চায় বলে প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) রাব্বুর রেজা জানিয়েছেন।

রাব্বু রেজা জানিয়েছেন, বেসরকারি পর্যায়ে টিকার প্রতি ডোজের দাম পড়বে এক হাজার ১২৫ টাকার (১৩.২৭ ডলার) মতো।

তিনি আরও জানিয়েছেন, তাদের প্রতিষ্ঠান সরকারি টিকাদান কর্মসূচির বাইরে বেসরকারিভাবে বাজারে বিক্রির জন্য ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে প্রায় ৩০ লাখ ডোজ কোভিশিল্ড (অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা) টিকা কিনছে। এর প্রতি ডোজের জন্য সেরাম ইনস্টিটিউটকে আট ডলার করে পরিশোধ করবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। সরকারকে দেয়ার জন্য বেক্সিমকো সেরাম থেকে যে টিকা আনছে, এটির দাম পড়ছে চার ডলার।

টিকার নিরাপত্তায় পুলিশ বা আনসার

করোনার টিকা রাখার স্টোরেজের নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশ বা আনসার এর নিরাপত্তায় থাকবে। এটাও বলেছি টিকা যেখানে রাখা হবে সেখানে ফ্রিজটা যেন সঠিকভাবে চালু থাকে। বিদ্যুৎ যেন ঠিকমতো থাকে সেদিকেও নজর রাখা হবে।’

বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশে অন্তত ১৪-১৫ কোটি ভ্যাকসিন ডোজ রাখার ব্যবস্থা সরকারের হাতে রয়েছে। কাজেই দেশে ৪-৫ কোটি ভ্যাকসিন চলে এলে সেগুলো সঠিকভাবে প্রয়োগে কোন সমস্যা হবে না।

দেশের সব সরকারি হাসপাতাল থেকেই ভ্যাকসিন প্রদান করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, জেলা পর্যায়ের প্রতিটি হাসপাতালে সংরক্ষিত কোল্ড রুমে প্রায় চার লাখ ২৫ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি প্রতিটি হাসপাতালে ৫-১০টি আইস ফ্রিজার আছে যেখানে অন্তত ৭১ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন রাখা যাবে।

টিকা কর্মসূচি বাস্তবায়নে ৭,৩৪৪টি দল

দেশজুড়ে করোনার টিকা দেয়ার সাত হাজার ৩৪৪টি দল তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, প্রতিটি দলে দু’জন টিকাদান কর্মী এবং চার জন স্বেচ্ছাসেবক মিলিয়ে ছয়জন সদস্য থাকবেন। একটি দল প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ জন মানুষকে টিকা দিতে পারবে।

সারাদেশে টিকাদান কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুটি মনিটরিং সেল তৈরি করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘মনিটরিং সেল শীঘ্রই কার্যক্রম শুরু করবে। ভ্যাকসিন সারাদেশে কি অবস্থায় আছে, কোন প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা, তাদের পরামর্শ দেয়ার কাজ করবে। প্রাইভেট সেক্টরকেও মনিটরিং করবে।’

বাংলাদেশে থাকা বিদেশি নাগরিকদেরও টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘এই বিষয়ে সিন্ধান্ত আসবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা টিকা দেব।’

৪ লাখ মানুষের জন্য ফাইজারের ৮ লাখ টিকা আসছে

ফাইজারের টিকার জন্য ‘কোভ্যাক্স’ থেকে যে চিঠি দেয়া হয়েছিল তার জবাব পাঠানো হয়েছে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘কোভ্যাক্স থেকে ফাইজারের টিকা পেতে আবেদন করতে বলা হয়েছিল। আমরা সে আবেদন করেছি। আমরা হিসাব করে দেখেছি, প্রায় ৪ লাখ লোককে দেয়ার জন্য ৮ লাখ ডোজ টিকা পাওয়া যাবে।’

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার আওতায় অপেক্ষাকৃত গরিব দেশগুলোতে গ্যাভি (গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন) এবং ইউরোপিয়ান কমিশনের সহযোগিতায় গঠিত ‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনস গ্লোবাল অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটি’র (কোভ্যাক্স) আওতায় আট কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বিশ্বের ১৮০টি দেশ গ্যাভিতে যুক্ত হয়েছে। কোভ্যাক্স সুবিধার অধীন প্রতিটা দেশের ঝুঁকিপূর্ণ ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর জন্য ভ্যাকসিনের নিশ্চয়তা দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২১ , ১ মাঘ ১৪২৭, ১ জমাদিউস সানি ১৪৪২

বেসরকারি টিকা আমদানি-বিক্রির নীতিমালা হচ্ছে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

বেসরকারি উদ্যোগে করোনার টিকা আমদানি, বিক্রি, তার দাম এবং কীভাবে টিকা প্রয়োগ হবে সে সর্ম্পকে একটি নীতিমালা তৈরি করছে সরকার। টিকার নিরাপত্তায় থাকবে পুলিশ বা আনসার। ‘কোভ্যাক্স’ সুবিধার আওতায় ‘ফাইজার-বায়োএনটেক’র আট লাখ ডোজ টিকাও দেশে আসছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গতকাল সচিবালয়ে করোনাভাইরাস টিকার প্রয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে আয়োজিত এক সভা শেষে সাংবাদিকদের ওই তথ্য জানান।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও করোনার টিকা এনে তা দিতে (প্রয়োগ) পারবে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নীতিমালার মধ্যে সবকিছু থাকবে। তারা কিভাবে দিবে, কিভাবে হিসাব রাখবে, কি দামে দিবে- এ বিষয়গুলো ঠিক করে দেবেন। এটাও ঠিক করে দেয়া হবে হাসপাতালের মাধ্যমে, কোন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মাধ্যমে ভ্যাকসিন দেয়া যাবে।’

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’র তিন কোটি ডোজ টিকার মধ্যে ৫০ লাখ ডোজ ২৫ জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে। টিকা প্রয়োগ শুরু হবে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে।

সরকারকে এই টিকা সরবরাহ করবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। প্রতিষ্ঠানটি ফেব্রুয়ারি থেকে বেসরকারিভাবেও করোনার টিকা বিক্রি শুরু করবে বলে সম্প্রতি আন্তজার্তিক একটি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। ‘বেক্সিমকো’ ফেব্রুয়ারিতেই বাজারে করোনার টিকা বিক্রি করতে চায় বলে প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) রাব্বুর রেজা জানিয়েছেন।

রাব্বু রেজা জানিয়েছেন, বেসরকারি পর্যায়ে টিকার প্রতি ডোজের দাম পড়বে এক হাজার ১২৫ টাকার (১৩.২৭ ডলার) মতো।

তিনি আরও জানিয়েছেন, তাদের প্রতিষ্ঠান সরকারি টিকাদান কর্মসূচির বাইরে বেসরকারিভাবে বাজারে বিক্রির জন্য ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে প্রায় ৩০ লাখ ডোজ কোভিশিল্ড (অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা) টিকা কিনছে। এর প্রতি ডোজের জন্য সেরাম ইনস্টিটিউটকে আট ডলার করে পরিশোধ করবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। সরকারকে দেয়ার জন্য বেক্সিমকো সেরাম থেকে যে টিকা আনছে, এটির দাম পড়ছে চার ডলার।

টিকার নিরাপত্তায় পুলিশ বা আনসার

করোনার টিকা রাখার স্টোরেজের নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশ বা আনসার এর নিরাপত্তায় থাকবে। এটাও বলেছি টিকা যেখানে রাখা হবে সেখানে ফ্রিজটা যেন সঠিকভাবে চালু থাকে। বিদ্যুৎ যেন ঠিকমতো থাকে সেদিকেও নজর রাখা হবে।’

বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশে অন্তত ১৪-১৫ কোটি ভ্যাকসিন ডোজ রাখার ব্যবস্থা সরকারের হাতে রয়েছে। কাজেই দেশে ৪-৫ কোটি ভ্যাকসিন চলে এলে সেগুলো সঠিকভাবে প্রয়োগে কোন সমস্যা হবে না।

দেশের সব সরকারি হাসপাতাল থেকেই ভ্যাকসিন প্রদান করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, জেলা পর্যায়ের প্রতিটি হাসপাতালে সংরক্ষিত কোল্ড রুমে প্রায় চার লাখ ২৫ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি প্রতিটি হাসপাতালে ৫-১০টি আইস ফ্রিজার আছে যেখানে অন্তত ৭১ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন রাখা যাবে।

টিকা কর্মসূচি বাস্তবায়নে ৭,৩৪৪টি দল

দেশজুড়ে করোনার টিকা দেয়ার সাত হাজার ৩৪৪টি দল তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, প্রতিটি দলে দু’জন টিকাদান কর্মী এবং চার জন স্বেচ্ছাসেবক মিলিয়ে ছয়জন সদস্য থাকবেন। একটি দল প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ জন মানুষকে টিকা দিতে পারবে।

সারাদেশে টিকাদান কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুটি মনিটরিং সেল তৈরি করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘মনিটরিং সেল শীঘ্রই কার্যক্রম শুরু করবে। ভ্যাকসিন সারাদেশে কি অবস্থায় আছে, কোন প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা, তাদের পরামর্শ দেয়ার কাজ করবে। প্রাইভেট সেক্টরকেও মনিটরিং করবে।’

বাংলাদেশে থাকা বিদেশি নাগরিকদেরও টিকা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘এই বিষয়ে সিন্ধান্ত আসবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা টিকা দেব।’

৪ লাখ মানুষের জন্য ফাইজারের ৮ লাখ টিকা আসছে

ফাইজারের টিকার জন্য ‘কোভ্যাক্স’ থেকে যে চিঠি দেয়া হয়েছিল তার জবাব পাঠানো হয়েছে জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘কোভ্যাক্স থেকে ফাইজারের টিকা পেতে আবেদন করতে বলা হয়েছিল। আমরা সে আবেদন করেছি। আমরা হিসাব করে দেখেছি, প্রায় ৪ লাখ লোককে দেয়ার জন্য ৮ লাখ ডোজ টিকা পাওয়া যাবে।’

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার আওতায় অপেক্ষাকৃত গরিব দেশগুলোতে গ্যাভি (গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন) এবং ইউরোপিয়ান কমিশনের সহযোগিতায় গঠিত ‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনস গ্লোবাল অ্যাকসেস ফ্যাসিলিটি’র (কোভ্যাক্স) আওতায় আট কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বিশ্বের ১৮০টি দেশ গ্যাভিতে যুক্ত হয়েছে। কোভ্যাক্স সুবিধার অধীন প্রতিটা দেশের ঝুঁকিপূর্ণ ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর জন্য ভ্যাকসিনের নিশ্চয়তা দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।