দেশে করোনা পরিস্থিতি

৯ মাস পর শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে

নয় মাস নয় দিন পর দেশে করোনা শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে নেমেছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় গতকাল দেশে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। এর আগে গত বছরের ৫ এপ্রিলও দেশে ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকালের তথ্য অনুযায়ী, আগের ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের ১৯৯টি ল্যাবরেটরিতে ১৬ হাজার ৬০৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৮১৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ হিসাবে শনাক্তের হার দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। ওইদিন করোনায় দেশে আরও ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে দেশে করোনা সংক্রমণ নিচের দিকে নামা অব্যাহত থাকবে। মানুষ উদাসীন জীবনযাপন করলে, মাস্ক না পরলে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা না করলে এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করলে যেকোন সময় দেশে করোনা সংক্রমণ আবার বাড়তে পারে। করোনার টিকা (ভ্যাকসিন) না আসা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই সংক্রমণ প্রতিরোধের মূল উপায় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তারা বলেন, বাসা থেকে বের হলেই সবাইকে মাস্ক পরতে হবে, সাবান-পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত-মুখ পরিষ্কার করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশে গতকাল পর্যন্ত মোট ৩৪ লাখ ১৮ হাজার ১১৪টি নমুনা পরীক্ষায় পাঁচ লাখ ২৫ হাজার ৭২৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। করোনায় মোট সাত হাজার ৮৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ হিসােব মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ৮৮৩ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাতে সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে চার লাখ ৭০ হাজার ৪০৫ জন হয়েছে। এ হিসােব শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ। গত ২৯ ডিসেম্বর দেশে মৃত্যুর সংখ্যা সাত হাজার ছাড়িয়ে যায়। এরমধ্যে ৩০ জুন এক দিনে সর্বোচ্চ ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ।

বাংলাদেশে করোনার প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ, এর ১০ দিন পর করোনায় প্রথম একজনের মৃত্যুর তথ্য জানায় সরকার। আর গত ২০ ডিসেম্বর দেশে শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা পাঁচ লাখ পেরিয়ে যায়। এরমধ্যে গত ২ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ চার হাজার ১৯ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়।

সংক্রমণের শুরুর দিকে দেশে রোগী শনাক্তের হার কম থাকলেও গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। মে মাসে শেষের দিক থেকে সংক্রমণ শনাক্তের হার ২০ শতাংশের কাছাকাছি ছিল, কিন্তু জুন ও জুলাইয়ে সংক্রমণ চূড়ায় পৌঁছে। ওই সময় শনাক্তের হার ২৪/২৫ শতাংশের কাছাকাছি উঠে। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সেটি ২০ শতাংশের ওপর ছিল। আগস্টের শেষের দিকে সংক্রমণ শনাক্তের হার ও সংখ্যা কমতে থাকে।

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্ত হয়। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশ বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ২৭তম এবং মৃত্যুর সংখ্যায় ৩৭তম অবস্থানে রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকালের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগের গত একদিনে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ১১ জন পুরুষ ও পাঁচজন নারী। তাদের মধ্যে সবাই হাসপাতালে মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ৯ জনের বয়স ৬০ বছরের বেশি, ৫ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে এবং ২ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ছিল। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ৯ জন ঢাকা বিভাগের, ৫ জন চট্টগ্রাম বিভাগের এবং ১ জন করে মোট ২ জন বরিশাল ও সিলেট বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।

শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২১ , ১ মাঘ ১৪২৭, ১ জমাদিউস সানি ১৪৪২

দেশে করোনা পরিস্থিতি

৯ মাস পর শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

নয় মাস নয় দিন পর দেশে করোনা শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে নেমেছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় গতকাল দেশে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। এর আগে গত বছরের ৫ এপ্রিলও দেশে ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকালের তথ্য অনুযায়ী, আগের ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের ১৯৯টি ল্যাবরেটরিতে ১৬ হাজার ৬০৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৮১৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ হিসাবে শনাক্তের হার দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। ওইদিন করোনায় দেশে আরও ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে দেশে করোনা সংক্রমণ নিচের দিকে নামা অব্যাহত থাকবে। মানুষ উদাসীন জীবনযাপন করলে, মাস্ক না পরলে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা না করলে এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করলে যেকোন সময় দেশে করোনা সংক্রমণ আবার বাড়তে পারে। করোনার টিকা (ভ্যাকসিন) না আসা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই সংক্রমণ প্রতিরোধের মূল উপায় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তারা বলেন, বাসা থেকে বের হলেই সবাইকে মাস্ক পরতে হবে, সাবান-পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত-মুখ পরিষ্কার করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশে গতকাল পর্যন্ত মোট ৩৪ লাখ ১৮ হাজার ১১৪টি নমুনা পরীক্ষায় পাঁচ লাখ ২৫ হাজার ৭২৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। করোনায় মোট সাত হাজার ৮৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ হিসােব মৃত্যুহার ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ৮৮৩ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাতে সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে চার লাখ ৭০ হাজার ৪০৫ জন হয়েছে। এ হিসােব শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ। গত ২৯ ডিসেম্বর দেশে মৃত্যুর সংখ্যা সাত হাজার ছাড়িয়ে যায়। এরমধ্যে ৩০ জুন এক দিনে সর্বোচ্চ ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ।

বাংলাদেশে করোনার প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ, এর ১০ দিন পর করোনায় প্রথম একজনের মৃত্যুর তথ্য জানায় সরকার। আর গত ২০ ডিসেম্বর দেশে শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা পাঁচ লাখ পেরিয়ে যায়। এরমধ্যে গত ২ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ চার হাজার ১৯ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়।

সংক্রমণের শুরুর দিকে দেশে রোগী শনাক্তের হার কম থাকলেও গত মে মাসের মাঝামাঝি থেকে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। মে মাসে শেষের দিক থেকে সংক্রমণ শনাক্তের হার ২০ শতাংশের কাছাকাছি ছিল, কিন্তু জুন ও জুলাইয়ে সংক্রমণ চূড়ায় পৌঁছে। ওই সময় শনাক্তের হার ২৪/২৫ শতাংশের কাছাকাছি উঠে। আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সেটি ২০ শতাংশের ওপর ছিল। আগস্টের শেষের দিকে সংক্রমণ শনাক্তের হার ও সংখ্যা কমতে থাকে।

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শনাক্ত হয়। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশ বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ২৭তম এবং মৃত্যুর সংখ্যায় ৩৭তম অবস্থানে রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গতকালের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগের গত একদিনে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ১১ জন পুরুষ ও পাঁচজন নারী। তাদের মধ্যে সবাই হাসপাতালে মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ৯ জনের বয়স ৬০ বছরের বেশি, ৫ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে এবং ২ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ছিল। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ৯ জন ঢাকা বিভাগের, ৫ জন চট্টগ্রাম বিভাগের এবং ১ জন করে মোট ২ জন বরিশাল ও সিলেট বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।