সারাদেশে ভেটেরিনারি সার্জন ও টিকার অভাব

টিকার চাহিদা ১২৫ কোটি টিকার অভাব হবে না : ডিজি

চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলায় ৩০ হাজার খামারি কয়েক কোটি হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছে, টিকা ও ভেটেরিনারি সার্জনের অভাবে তাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। জেলা থেকে বার বার চাহিদা জানিয়েও টিকা পাওয়া যাচ্ছে না। দেশে টিকার চাহিদা আছে ১২৫ কোটি। অথচ দেশে উৎপাদন হচ্ছে ২৮ কোটি। প্রয়োজনীয় টিকা না দেয়ায় হাঁস-মুরগি মারা যাচ্ছে। হাঁস-মুরগি বাঁচাতে বাজার থেকে ওষুধ কেনার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তবে টিকার অভাব নেই বলে দাবি করেছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ডিজি। প্রাণিসম্পদ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে এ সব তথ্য জানা গেছে।

চট্টগ্রাম বিভাগের প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বয়লার মুরগির খামার ১৪ হাজার ৭৬৮টি, লেয়ার মুরগি (ডিম দেয়া) ২ হাজার ৮৪৮টি, সোনালি মুরগির খামার ২ হাজার ৫১টি, তার্কিশ মুরগির খামার ১ হাজার ১৫২টি, কবুতর খামার ৮ হাজার ৪৭৫টি, কোয়েল পাখির খামার ৬৯২টি হাঁসের খামার আছে ১৮৮১টি।

এ সব খামারে ২ কোটি ১৪ লাখ ৪২ হাজার ৫৮০টি হাঁস-মুরগি, কোয়েল পাখি ও কবুতর আছে। এর মধ্যে উন্নত জাতের মুরগি আছে ১ কোটি ৫০ লাখ ৮৮ হাজার ৫৫০টি। সেখানে চাহিদা অনুযায়ী ১ লাখ টিকার চাহিদা জানিয়ে চিঠি পাঠালে দেয়া হয় ৪০ হাজার। এ টিকা কোন কোন এলাকার খামারিকে দেয়া হলেও অনেক খামারিকে টিকা দেয়া সম্ভব হয় না। তারা সরকারিভাবে না পেয়ে বাজার থেকে কিনে ব্যবহার করছে। শুধু টিকার সংকটই নয়, টিকা দেয়ার ভেটেরিনারি সার্জনেরও সংকট রয়েছে।

প্রাণিসম্পদ বিভাগের সিনিয়র কর্মকর্তাদের মতে, শীতে মুরগির রানিক্ষেতসহ নানা ধরনের রোগ বেশি হয়। জেলা পর্যায়ে ভেটেরিনারি সার্জনসহ অন্যান্য জনবলের অভাবের খোঁজখবর নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলায় ভেটেরিনারি সার্জনের অর্ধশত পদ শূন্য রয়েছে।

জেলাগুলো হলোÑ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবন, খাগড়াছড়ি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, বাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর।

লক্ষ্মীপুর প্রাণিসম্পদ বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরে ভেটেরিনারি সার্জনের অভাব রয়েছে। ৫টি উপজেলার মধ্যে ৪টি পদ শূন্য। গত দুই বছর ধরে এ অবস্থা চলছে। জেলায় গ্রাম-গঞ্জে মুরগি ও হাঁসের খামারে চাহিদা মতো টিকা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। খামারিরা বিপাকে আছেন।

এ নিয়ে জেলা ও বিভাগ থেকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানানোর পরও রহস্যজনক কারণে ভেটেরিনারি সার্জন পদায়ন করা হচ্ছে না বলে জেলা থেকে অভিযোগ রয়েছে।

প্রাণিসম্পদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদকে জানান, দেশে এখনও বার্ড ফ্লু শনাক্ত না হলেও শীতজনিত কারণে হাঁস-মুরগির নানা রোগ হচ্ছে। এ সব রোগ থেকে হাঁস-মুরগির টিকার চাহিদা আছে ১২৫ কোটি। বিভিন্ন জেলা ও বিভাগ থেকে প্রতিদিন চাহিদা জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু দেশে টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা আছে মাত্র ২৮ কোটি। এ কারণে অনেক খামারিকে টিকা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর দেশে বার্ড ফ্লুর টিকা উৎপাদন করা হয় না। এ টিকা বেসরকারিভাবে আমদানি করা হয়। দুইটি প্রতিষ্ঠান ১০ কোটি করে টিকা আমদানি করে। গত ১২ জানুয়ারি আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে বার্ড ফ্লুর টিকা আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

ভেটেরিনারি বিশেষজ্ঞরা বলেন, চাহিদা মতো সরকারিভাবে টিকা উৎপাদন বাড়াতে নতুন করে ভ্যাকসিন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। সাভার, মহাখালী ও কুমিল্লায় ভ্যাকসিন (টিকা) উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বড় বড় খামারিদের চাহিদা অনুযায়ী প্রাইভেট কোম্পানি থেকে টিকা নেয়। আর শীতে হাঁস-মুরগিসহ অন্যান্য খামারির খামারে রানিক্ষেত রোগ, পক্স, কলেরাসহ নানা রোগ হচ্ছে। এ সব রোগে হাঁস-মুরগি আক্রান্ত হওয়ার আগেই টিকা দিলে ভালো হয়।

এ সম্পর্কে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ডিজি ডা. আবদুল জব্বার শিকদারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, দেশে দুই লাখ মুরগির খামার আছে। টিকার সংকট নেই। শীঘ্রই ৮৬ জন ভেটেরিনারি সার্জন নিয়োগ দেয়া হবে। তখন ভেটেরিনারি সার্জনের সংকট থাকবে না। বার্ড ফ্লু বাংলাদেশে এখনও আসেনি। ভারতের কয়েকটি রাজ্যে দেখা দিয়েছে। মন্ত্রণালয় ভালোভাবে কাজ করছে। আশা করি অসুবিধা হবে না।

আরও খবর
ভাতার টাকা সরাসরি উপকারভোগীদের মোবাইলে পাঠানো হবে : প্রধানমন্ত্রী
৬৫ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু কর্নারের বই
আগামী বছর ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেন চালু হবে : রেলমন্ত্রী
রং-বেরঙের ঘুড়িতে বর্ণিল হয়ে উঠে ঢাকার আকাশ
জয়পুরহাটে কিশোরী ধর্ষণ মামলায় ৪০ বছর জেল
মামলা দ্রুত বিচার আদালতে নেয়ার দাবি
পিকে হালদারের ৬২ সহযোগীর খোঁজ পেয়েছে দুদক
স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলন করতে হচ্ছে মির্জা ফখরুল
প্রতি ওয়ার্ডে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করব : রেজাউল
অগ্রাধিকার পাবে জলাবদ্ধতা নিরসন শাহাদাত
সন্ত্রাস রুখতে গাবের লাঠি আর ঝাড়ু প্রস্তুত রেখেছে কাদের মির্জার সমর্থকরা
রোহিঙ্গা শিবিরে আগুন : ৫ শতাধিক ঘর পুড়ে ছাই

শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২১ , ১ মাঘ ১৪২৭, ১ জমাদিউস সানি ১৪৪২

সারাদেশে ভেটেরিনারি সার্জন ও টিকার অভাব

টিকার চাহিদা ১২৫ কোটি টিকার অভাব হবে না : ডিজি

বাকী বিল্লাহ

চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলায় ৩০ হাজার খামারি কয়েক কোটি হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছে, টিকা ও ভেটেরিনারি সার্জনের অভাবে তাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। জেলা থেকে বার বার চাহিদা জানিয়েও টিকা পাওয়া যাচ্ছে না। দেশে টিকার চাহিদা আছে ১২৫ কোটি। অথচ দেশে উৎপাদন হচ্ছে ২৮ কোটি। প্রয়োজনীয় টিকা না দেয়ায় হাঁস-মুরগি মারা যাচ্ছে। হাঁস-মুরগি বাঁচাতে বাজার থেকে ওষুধ কেনার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তবে টিকার অভাব নেই বলে দাবি করেছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ডিজি। প্রাণিসম্পদ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে এ সব তথ্য জানা গেছে।

চট্টগ্রাম বিভাগের প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বয়লার মুরগির খামার ১৪ হাজার ৭৬৮টি, লেয়ার মুরগি (ডিম দেয়া) ২ হাজার ৮৪৮টি, সোনালি মুরগির খামার ২ হাজার ৫১টি, তার্কিশ মুরগির খামার ১ হাজার ১৫২টি, কবুতর খামার ৮ হাজার ৪৭৫টি, কোয়েল পাখির খামার ৬৯২টি হাঁসের খামার আছে ১৮৮১টি।

এ সব খামারে ২ কোটি ১৪ লাখ ৪২ হাজার ৫৮০টি হাঁস-মুরগি, কোয়েল পাখি ও কবুতর আছে। এর মধ্যে উন্নত জাতের মুরগি আছে ১ কোটি ৫০ লাখ ৮৮ হাজার ৫৫০টি। সেখানে চাহিদা অনুযায়ী ১ লাখ টিকার চাহিদা জানিয়ে চিঠি পাঠালে দেয়া হয় ৪০ হাজার। এ টিকা কোন কোন এলাকার খামারিকে দেয়া হলেও অনেক খামারিকে টিকা দেয়া সম্ভব হয় না। তারা সরকারিভাবে না পেয়ে বাজার থেকে কিনে ব্যবহার করছে। শুধু টিকার সংকটই নয়, টিকা দেয়ার ভেটেরিনারি সার্জনেরও সংকট রয়েছে।

প্রাণিসম্পদ বিভাগের সিনিয়র কর্মকর্তাদের মতে, শীতে মুরগির রানিক্ষেতসহ নানা ধরনের রোগ বেশি হয়। জেলা পর্যায়ে ভেটেরিনারি সার্জনসহ অন্যান্য জনবলের অভাবের খোঁজখবর নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলায় ভেটেরিনারি সার্জনের অর্ধশত পদ শূন্য রয়েছে।

জেলাগুলো হলোÑ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবন, খাগড়াছড়ি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, বাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর।

লক্ষ্মীপুর প্রাণিসম্পদ বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরে ভেটেরিনারি সার্জনের অভাব রয়েছে। ৫টি উপজেলার মধ্যে ৪টি পদ শূন্য। গত দুই বছর ধরে এ অবস্থা চলছে। জেলায় গ্রাম-গঞ্জে মুরগি ও হাঁসের খামারে চাহিদা মতো টিকা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। খামারিরা বিপাকে আছেন।

এ নিয়ে জেলা ও বিভাগ থেকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানানোর পরও রহস্যজনক কারণে ভেটেরিনারি সার্জন পদায়ন করা হচ্ছে না বলে জেলা থেকে অভিযোগ রয়েছে।

প্রাণিসম্পদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা গতকাল সন্ধ্যায় সংবাদকে জানান, দেশে এখনও বার্ড ফ্লু শনাক্ত না হলেও শীতজনিত কারণে হাঁস-মুরগির নানা রোগ হচ্ছে। এ সব রোগ থেকে হাঁস-মুরগির টিকার চাহিদা আছে ১২৫ কোটি। বিভিন্ন জেলা ও বিভাগ থেকে প্রতিদিন চাহিদা জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু দেশে টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা আছে মাত্র ২৮ কোটি। এ কারণে অনেক খামারিকে টিকা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর দেশে বার্ড ফ্লুর টিকা উৎপাদন করা হয় না। এ টিকা বেসরকারিভাবে আমদানি করা হয়। দুইটি প্রতিষ্ঠান ১০ কোটি করে টিকা আমদানি করে। গত ১২ জানুয়ারি আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে বার্ড ফ্লুর টিকা আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

ভেটেরিনারি বিশেষজ্ঞরা বলেন, চাহিদা মতো সরকারিভাবে টিকা উৎপাদন বাড়াতে নতুন করে ভ্যাকসিন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। সাভার, মহাখালী ও কুমিল্লায় ভ্যাকসিন (টিকা) উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বড় বড় খামারিদের চাহিদা অনুযায়ী প্রাইভেট কোম্পানি থেকে টিকা নেয়। আর শীতে হাঁস-মুরগিসহ অন্যান্য খামারির খামারে রানিক্ষেত রোগ, পক্স, কলেরাসহ নানা রোগ হচ্ছে। এ সব রোগে হাঁস-মুরগি আক্রান্ত হওয়ার আগেই টিকা দিলে ভালো হয়।

এ সম্পর্কে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ডিজি ডা. আবদুল জব্বার শিকদারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, দেশে দুই লাখ মুরগির খামার আছে। টিকার সংকট নেই। শীঘ্রই ৮৬ জন ভেটেরিনারি সার্জন নিয়োগ দেয়া হবে। তখন ভেটেরিনারি সার্জনের সংকট থাকবে না। বার্ড ফ্লু বাংলাদেশে এখনও আসেনি। ভারতের কয়েকটি রাজ্যে দেখা দিয়েছে। মন্ত্রণালয় ভালোভাবে কাজ করছে। আশা করি অসুবিধা হবে না।