প্রতি বছরের মতো এবারও পুরান ঢাকায় ঐতিহ্যবাহী ‘সাকরাইন ঘুড়ি উৎসব’ পালিত হয়েছে। ‘এসো ওড়াই ঘুড়ি, ঐতিহ্য লালন করি’- স্লোগানে আয়োজিত এই উৎসব ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডে একযোগে আয়োজন করা হয়। গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শত শত রং-বেরঙের ঘুড়ি আকাশে শোভা পায়। বাংলাদেশের প্রাচীন উৎসবগুলোর মধ্যে সাকরাইন অন্যতম। এটি ঘুড়ি উৎসব বা পৌষ সংক্রান্তি নামেও পরিচিত। পৌষ মাসের শেষে ও মাঘ মাসের প্রথম দিনে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব উদ?যাপন করা হয়। গতকাল সূত্রাপুর এলাকায় এ উৎসব ছিল। আজ শাঁখারীবাজার এলাকায় এ উৎসব উদযাপন করা হবে।
সরজমিনে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া, মুগদা, ধুপখোলা, দয়াগঞ্জ, নারিন্দা, সূত্রাপুর, বাংলাবাজার, লক্ষ্মীবাজার, কলতাবাজার, ধোলাই খাল, শাঁখারি বাজার, রায়সাহেব বাজার, নবাবপুর, বংশাল, নাজিরাবাজার, তাঁতীবাজার এবং লালবাগ এলাকার মানুষ সাকরাইন উৎসবে দিনব্যাপী ঘুড়ি উড়িয়েছেন। আয়োজন করেন বিভিন্ন মুখরোচক ঐতিহ্যবাহী খাবারের। নানা রং আর বাহারি ঘুড়িতে বর্ণিল হয়ে ওঠে পুরান ঢাকার আকাশ।
এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, ভোরের কুয়াশার রেশ কাটতে না কাটতেই ছাদে ছাদে শুরু হয় ঘুড়ি ওড়ানো ও ঘুড়ির কাটাকাটি খেলা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে উৎসবের জৌলুশ। বিভিন্ন বাড়ির ছাদে বাজছে আধুনিক সাউন্ড সিস্টেমে দেশি-বিদেশি গান। স্থানীয় লোকজন জানান, সন্ধ্যায় ছিল আগুন নিয়ে খেলা, আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানো। এছাড়া সাকরাইন উপলক্ষে বিভিন্ন মন্দিরে হয় ‘বুড়ো-বুড়ি’ পূজা।
এদিন সকালে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার ধুপখোলা মাঠে ঢাকা সাংবাদিক ফোরাম আয়োজিত ঘুড়ি/সাকরাইন উৎসবের উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। এ সময় বাংলার সংস্কৃতিগুলো ধরে রাখার আহ্বান জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ঘুড়ি উৎসব পুরান ঢাকার ঐতিহ্যের পাশাপাশি দেশের ঐতিহ্য। আমাদের আবহমান সংস্কৃতির অংশ হচ্ছে ঘুড়ি উৎসব। কিন্তু আকাশ সংস্কৃতির হিংস্র থাবায় আমাদের অনেক সংস্কৃতি এখন হুমকির মুখে। আমাদের দেশে আগে বিয়ে ও গায়ে হলুদ উৎসবে দেশের গান গাওয়া হতো। আমাদের ছেলে-মেয়েরা বাংলার সাজসজ্জা নিয়েই হাজির হতো। কিন্তু ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। এখন এসব উৎসবে বাংলা গান না হয়ে হিন্দি গান হয় এবং সেখানে সাজগোজও ইন্ডিয়ান সিরিয়াল দেখে বদলে যাচ্ছে। এগুলো আমাদের সংস্কৃতিতে প্রচণ্ড আঘাত আনছে। তাই আমাদের সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে হবে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ঘুড়ি উৎসব সংস্কৃতিরই একটি অংশ। সেটা ধরে রাখার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমি প্রায় টেলিভিশনে দেখতাম পুরান ঢাকায় ঘুড়ি উৎসব হয়। সেখানে উৎসব মুখর পরিবেশে রং-বেরঙের ঘুড়ি উড়ানো হয়। সেটি শুধু টেলিভিশনেই দেখেছি, এবার আসার সৌভাগ্য হয়েছে। ছোট বেলায় ঘুড়ি উড়াতাম, এখন তো আর ঘুড়ি উড়ানো যাচ্ছে না। তাই ঘুড়ি উৎসবে আসার সুযোগটা মিস করেনি। সেজন্য আমি অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে এখানে এসেছি। এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ এমপি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফি, দপ্তর সস্পাদক রিয়াজ উদ্দিন ইলিয়াস, ঢাকা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি শামীম সিদ্দিকী, সেক্রেটারি আক্তার হোসেন, সহ-সভাপতি লাবণ্য ভূঁইয়া, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক মহাসচিব ও ঢাকা সাংবাদিক ফোরামে উপদেষ্টা আবদুল জলিল ভূঁইয়া, সাংবাদিক নেতা শাকিল আহমেদসহ অন্যরা।
অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) উদ্যোগে লালবাগের শহীদ আবদুল আলিম ঈদগাহ মাঠে ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করেন ২৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক। উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী। সকাল ১০টায় কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক ঘুড়ি ওড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন। বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে ঘুড়ি ওড়ানো উৎসব। এতে নানা বয়সী মানুষ অংশ নেন। উৎসবকে সামনে রেখে গত এক সপ্তাহ ধরে পুরান ঢাকার অধিকাংশ গলিতে আর খোলা ছাদে ঘুড়ির সুতায় মাঞ্জা দেয়ার ধুম পড়ে। এছাড়া মুগদা স্টেডিয়ামে সকাল ১০ থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত একই অনুষ্ঠানের পৃথক ভেন্যু হিসেবে সাকরাইন ঘুড়ি উৎসব পালিত হয়। উৎসব শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন ডিএসসিসির ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিএম সিরাজুল ইসলাম।
শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২১ , ১ মাঘ ১৪২৭, ১ জমাদিউস সানি ১৪৪২
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
প্রতি বছরের মতো এবারও পুরান ঢাকায় ঐতিহ্যবাহী ‘সাকরাইন ঘুড়ি উৎসব’ পালিত হয়েছে। ‘এসো ওড়াই ঘুড়ি, ঐতিহ্য লালন করি’- স্লোগানে আয়োজিত এই উৎসব ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডে একযোগে আয়োজন করা হয়। গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শত শত রং-বেরঙের ঘুড়ি আকাশে শোভা পায়। বাংলাদেশের প্রাচীন উৎসবগুলোর মধ্যে সাকরাইন অন্যতম। এটি ঘুড়ি উৎসব বা পৌষ সংক্রান্তি নামেও পরিচিত। পৌষ মাসের শেষে ও মাঘ মাসের প্রথম দিনে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব উদ?যাপন করা হয়। গতকাল সূত্রাপুর এলাকায় এ উৎসব ছিল। আজ শাঁখারীবাজার এলাকায় এ উৎসব উদযাপন করা হবে।
সরজমিনে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া, মুগদা, ধুপখোলা, দয়াগঞ্জ, নারিন্দা, সূত্রাপুর, বাংলাবাজার, লক্ষ্মীবাজার, কলতাবাজার, ধোলাই খাল, শাঁখারি বাজার, রায়সাহেব বাজার, নবাবপুর, বংশাল, নাজিরাবাজার, তাঁতীবাজার এবং লালবাগ এলাকার মানুষ সাকরাইন উৎসবে দিনব্যাপী ঘুড়ি উড়িয়েছেন। আয়োজন করেন বিভিন্ন মুখরোচক ঐতিহ্যবাহী খাবারের। নানা রং আর বাহারি ঘুড়িতে বর্ণিল হয়ে ওঠে পুরান ঢাকার আকাশ।
এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, ভোরের কুয়াশার রেশ কাটতে না কাটতেই ছাদে ছাদে শুরু হয় ঘুড়ি ওড়ানো ও ঘুড়ির কাটাকাটি খেলা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে উৎসবের জৌলুশ। বিভিন্ন বাড়ির ছাদে বাজছে আধুনিক সাউন্ড সিস্টেমে দেশি-বিদেশি গান। স্থানীয় লোকজন জানান, সন্ধ্যায় ছিল আগুন নিয়ে খেলা, আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানো। এছাড়া সাকরাইন উপলক্ষে বিভিন্ন মন্দিরে হয় ‘বুড়ো-বুড়ি’ পূজা।
এদিন সকালে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার ধুপখোলা মাঠে ঢাকা সাংবাদিক ফোরাম আয়োজিত ঘুড়ি/সাকরাইন উৎসবের উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। এ সময় বাংলার সংস্কৃতিগুলো ধরে রাখার আহ্বান জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ঘুড়ি উৎসব পুরান ঢাকার ঐতিহ্যের পাশাপাশি দেশের ঐতিহ্য। আমাদের আবহমান সংস্কৃতির অংশ হচ্ছে ঘুড়ি উৎসব। কিন্তু আকাশ সংস্কৃতির হিংস্র থাবায় আমাদের অনেক সংস্কৃতি এখন হুমকির মুখে। আমাদের দেশে আগে বিয়ে ও গায়ে হলুদ উৎসবে দেশের গান গাওয়া হতো। আমাদের ছেলে-মেয়েরা বাংলার সাজসজ্জা নিয়েই হাজির হতো। কিন্তু ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। এখন এসব উৎসবে বাংলা গান না হয়ে হিন্দি গান হয় এবং সেখানে সাজগোজও ইন্ডিয়ান সিরিয়াল দেখে বদলে যাচ্ছে। এগুলো আমাদের সংস্কৃতিতে প্রচণ্ড আঘাত আনছে। তাই আমাদের সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে হবে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ঘুড়ি উৎসব সংস্কৃতিরই একটি অংশ। সেটা ধরে রাখার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমি প্রায় টেলিভিশনে দেখতাম পুরান ঢাকায় ঘুড়ি উৎসব হয়। সেখানে উৎসব মুখর পরিবেশে রং-বেরঙের ঘুড়ি উড়ানো হয়। সেটি শুধু টেলিভিশনেই দেখেছি, এবার আসার সৌভাগ্য হয়েছে। ছোট বেলায় ঘুড়ি উড়াতাম, এখন তো আর ঘুড়ি উড়ানো যাচ্ছে না। তাই ঘুড়ি উৎসবে আসার সুযোগটা মিস করেনি। সেজন্য আমি অত্যন্ত উৎসাহ নিয়ে এখানে এসেছি। এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ এমপি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফি, দপ্তর সস্পাদক রিয়াজ উদ্দিন ইলিয়াস, ঢাকা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি শামীম সিদ্দিকী, সেক্রেটারি আক্তার হোসেন, সহ-সভাপতি লাবণ্য ভূঁইয়া, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক মহাসচিব ও ঢাকা সাংবাদিক ফোরামে উপদেষ্টা আবদুল জলিল ভূঁইয়া, সাংবাদিক নেতা শাকিল আহমেদসহ অন্যরা।
অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) উদ্যোগে লালবাগের শহীদ আবদুল আলিম ঈদগাহ মাঠে ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করেন ২৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক। উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী। সকাল ১০টায় কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক ঘুড়ি ওড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন। বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে ঘুড়ি ওড়ানো উৎসব। এতে নানা বয়সী মানুষ অংশ নেন। উৎসবকে সামনে রেখে গত এক সপ্তাহ ধরে পুরান ঢাকার অধিকাংশ গলিতে আর খোলা ছাদে ঘুড়ির সুতায় মাঞ্জা দেয়ার ধুম পড়ে। এছাড়া মুগদা স্টেডিয়ামে সকাল ১০ থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত একই অনুষ্ঠানের পৃথক ভেন্যু হিসেবে সাকরাইন ঘুড়ি উৎসব পালিত হয়। উৎসব শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন ডিএসসিসির ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিএম সিরাজুল ইসলাম।