মাঘ মাসের শুরুতেই শুরু হয়েছে দেশব্যাপী শৈত্যপ্রবাহ। মানুষের জীবন এখন জবুথবু। গরম পোষাক ও খাদ্যের অভাবে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবীরা। প্রাণীকুলও কাপছে প্রচণ্ড হিমে। দিনেও দেখা মিলছে না সূর্য্যরে। শৈত্যপ্রবাহে জনজীবনের দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরেছেন আমাদের প্রতিনিধিরা :
পঞ্চগড়
উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে মাঘ মাসের শুরুতে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এতে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। গোটা জেলা কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। তীব্র শীতের কারণে দিনমজুর লোকজন ঘর থেকে বের হতে না পারায় কাজে যোগ দিতে পারছেন না। ফলে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। তারা দ্রুত সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সহায়তা চেয়েছেন।
জেলার বিভিন্ন জায়গায় খড়কুটো জ্বালিয়ে অনেকেই শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। এদিকে বেলা ২টা এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সূর্যের মুখ দেখা যায়নি শীতের তীব্রতা রয়েছে। গত শনিবার ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশা থাকায় পঞ্চগড়ের বিভিন্ন সড়কগুলোতে হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহনগুলো চলাচল করছে। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ জানিয়েছেন, পঞ্চগড়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ এবং বেশ কয়েকদিন থেকে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে।
বড়াইগ্রাম
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় আকষ্মিক শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। ঘনকুয়াশায় সকাল ১১টা পর্যন্ত আচ্ছন্ন হয়ে আছে প্রকৃতি। শনিবার সকালে মহাসড়কগুলোতে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গিয়েছে। পুরাতন কাপড়ের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। স্বল্প আয়ের লোকজন খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। স্থানীয় ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসাধীন শিশু, বয়োবৃদ্ধ নারী পুরুষসহ সর্দি, কাশি, জ্বর ও শ্বাস কষ্টের রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গিয়েছে। এদিকে দিনমজুর, রিক্সাচালক, ভিক্ষুক তীব্র শীতে উপার্জনের জন্য ঘর থেকে বাইরে বের হতে পারছে না। বাজারে চায়ের ও ডিমের দোকানগুলোতে লোকজন চা পান ও ডিম খেয়ে জুবুসুবু হয়ে সময় কাটাচ্ছে। শীত বস্ত্রের অভাবে ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ এখন চরমে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, উপজেলায় দুই ট্রিপে প্রায় আড়াইহাজার শীতবস্ত্র এসেছিল, সেগুলো অসহায়দের মাঝে তাৎক্ষণিক ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে, বরাদ্দ এলে তাৎক্ষণিক দিয়ে দেবো। উপজেলা চেয়ারম্যান ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ইতোমধ্যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কয়েকশ’ শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আজকের নির্বাচন পার হলে শীঘ্রই আবারও অসহায়দের মাঝে, কম্বল বিতরণ করব। বনপাড়া পৌর মেয়র কে এম জাকির হোসেন জানান, আমার পৌর এলাকায় ইতোমধ্যে ৫ শতাধিক অসহায় মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে এবং এখনও এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
ভূরুঙ্গামারী
ঘনকুয়াশা আর কনকনে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপন। শীতের তীব্রতায় বিপাকে পড়েছেন নিম্নœ আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। শীতের কবল থেকে বাঁচতে নিজেকে গৃহবন্দী করে রাখছেন অনেকেই।
গত ৫ দিন যাবত ভূরুঙ্গামারীতে রোদের দেখা মেলেনি। কুয়াশার সাদা চাদরে ঢাকা ছিল চারিদিক। বিকেল হলেই কুয়াশা পড়তে শুরু করে। রাত বাড়ার সাথে সাথে কুয়াশার মাত্রা বাড়তে থাকে আর তাপমাত্রা কমে যায় ব্যাপক হারে। ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলায় হেড লাইট জ্বালিয়ে চালাতে হচ্ছে যানবাহন। শীতের কারণে দুর্ভোগে বেড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষসহ ছিন্নমূল ও চরাঞ্চলের মানুষের। শীতের কবল থেকে বাঁচতে তারা ভিড় করছেন ফুটপাতে কমদামি গরম কাপড়ের দোকানে। যাদের সামর্থ্য নেই তারা খড়-কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। রিকশা চালক মো. জালাল জানান, ঠাণ্ডার কারণে মানুষজন ঘর থেকে বের না হওয়ায় যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে। চা বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম জানান, শীতের কারণে সন্ধ্যায় দোকানে আগের মতো খরিদ্দার আসে না। উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, শৈত্যপ্রবাহ দীর্ঘস্থায়ী হলে বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অপরদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির বিভাগে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্যা ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু সাজ্জাদ মোহাম্মদ সায়েম জানান, শীতজনিত রোগ যেমন-সর্দি-কাশি, জ্বর ও এ্যাজমা রোগী আগের চেয়ে বেশি আসছেন।
যার অধিকাংশই শিশু ও বয়স্ক নাগরিক। কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার রাজারহাট কুড়িগ্রামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ সরকার জানান, কুড়িগ্রামের সর্বনিম্নœ আগামী ৪-৫ দিন আবহাওয়া একই রকম থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আকাশ মেঘ মুক্ত হলে সূর্য দেখা যেতে পারে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মা জানান, প্রথম ধাপে দশ ইউনিয়নের জন্য বরাদ্দ ৪ হাজার ৬শ’ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপে বরাদ্দ আরও ২ হাজার কম্বল আগামী এক-দুই দিনের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
রবিবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২১ , ৩ মাঘ ১৪২৭, ৩ জমাদিউস সানি ১৪৪২
সংবাদ জাতীয় ডেস্ক
মাঘ মাসের শুরুতেই শুরু হয়েছে দেশব্যাপী শৈত্যপ্রবাহ। মানুষের জীবন এখন জবুথবু। গরম পোষাক ও খাদ্যের অভাবে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবীরা। প্রাণীকুলও কাপছে প্রচণ্ড হিমে। দিনেও দেখা মিলছে না সূর্য্যরে। শৈত্যপ্রবাহে জনজীবনের দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরেছেন আমাদের প্রতিনিধিরা :
পঞ্চগড়
উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে মাঘ মাসের শুরুতে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এতে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। গোটা জেলা কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। তীব্র শীতের কারণে দিনমজুর লোকজন ঘর থেকে বের হতে না পারায় কাজে যোগ দিতে পারছেন না। ফলে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। তারা দ্রুত সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সহায়তা চেয়েছেন।
জেলার বিভিন্ন জায়গায় খড়কুটো জ্বালিয়ে অনেকেই শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। এদিকে বেলা ২টা এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সূর্যের মুখ দেখা যায়নি শীতের তীব্রতা রয়েছে। গত শনিবার ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশা থাকায় পঞ্চগড়ের বিভিন্ন সড়কগুলোতে হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহনগুলো চলাচল করছে। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ জানিয়েছেন, পঞ্চগড়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ এবং বেশ কয়েকদিন থেকে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে।
বড়াইগ্রাম
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় আকষ্মিক শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। ঘনকুয়াশায় সকাল ১১টা পর্যন্ত আচ্ছন্ন হয়ে আছে প্রকৃতি। শনিবার সকালে মহাসড়কগুলোতে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গিয়েছে। পুরাতন কাপড়ের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। স্বল্প আয়ের লোকজন খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। স্থানীয় ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসাধীন শিশু, বয়োবৃদ্ধ নারী পুরুষসহ সর্দি, কাশি, জ্বর ও শ্বাস কষ্টের রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গিয়েছে। এদিকে দিনমজুর, রিক্সাচালক, ভিক্ষুক তীব্র শীতে উপার্জনের জন্য ঘর থেকে বাইরে বের হতে পারছে না। বাজারে চায়ের ও ডিমের দোকানগুলোতে লোকজন চা পান ও ডিম খেয়ে জুবুসুবু হয়ে সময় কাটাচ্ছে। শীত বস্ত্রের অভাবে ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ এখন চরমে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, উপজেলায় দুই ট্রিপে প্রায় আড়াইহাজার শীতবস্ত্র এসেছিল, সেগুলো অসহায়দের মাঝে তাৎক্ষণিক ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে, বরাদ্দ এলে তাৎক্ষণিক দিয়ে দেবো। উপজেলা চেয়ারম্যান ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ইতোমধ্যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কয়েকশ’ শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আজকের নির্বাচন পার হলে শীঘ্রই আবারও অসহায়দের মাঝে, কম্বল বিতরণ করব। বনপাড়া পৌর মেয়র কে এম জাকির হোসেন জানান, আমার পৌর এলাকায় ইতোমধ্যে ৫ শতাধিক অসহায় মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে এবং এখনও এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
ভূরুঙ্গামারী
ঘনকুয়াশা আর কনকনে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপন। শীতের তীব্রতায় বিপাকে পড়েছেন নিম্নœ আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। শীতের কবল থেকে বাঁচতে নিজেকে গৃহবন্দী করে রাখছেন অনেকেই।
গত ৫ দিন যাবত ভূরুঙ্গামারীতে রোদের দেখা মেলেনি। কুয়াশার সাদা চাদরে ঢাকা ছিল চারিদিক। বিকেল হলেই কুয়াশা পড়তে শুরু করে। রাত বাড়ার সাথে সাথে কুয়াশার মাত্রা বাড়তে থাকে আর তাপমাত্রা কমে যায় ব্যাপক হারে। ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলায় হেড লাইট জ্বালিয়ে চালাতে হচ্ছে যানবাহন। শীতের কারণে দুর্ভোগে বেড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষসহ ছিন্নমূল ও চরাঞ্চলের মানুষের। শীতের কবল থেকে বাঁচতে তারা ভিড় করছেন ফুটপাতে কমদামি গরম কাপড়ের দোকানে। যাদের সামর্থ্য নেই তারা খড়-কুটা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। রিকশা চালক মো. জালাল জানান, ঠাণ্ডার কারণে মানুষজন ঘর থেকে বের না হওয়ায় যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে। চা বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম জানান, শীতের কারণে সন্ধ্যায় দোকানে আগের মতো খরিদ্দার আসে না। উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, শৈত্যপ্রবাহ দীর্ঘস্থায়ী হলে বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অপরদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির বিভাগে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্যা ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু সাজ্জাদ মোহাম্মদ সায়েম জানান, শীতজনিত রোগ যেমন-সর্দি-কাশি, জ্বর ও এ্যাজমা রোগী আগের চেয়ে বেশি আসছেন।
যার অধিকাংশই শিশু ও বয়স্ক নাগরিক। কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার রাজারহাট কুড়িগ্রামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ সরকার জানান, কুড়িগ্রামের সর্বনিম্নœ আগামী ৪-৫ দিন আবহাওয়া একই রকম থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আকাশ মেঘ মুক্ত হলে সূর্য দেখা যেতে পারে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মা জানান, প্রথম ধাপে দশ ইউনিয়নের জন্য বরাদ্দ ৪ হাজার ৬শ’ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপে বরাদ্দ আরও ২ হাজার কম্বল আগামী এক-দুই দিনের মধ্যে বিতরণ করা হবে।