হামলা হামলা ভয়ভীতির কারণে ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে আগাচ্ছে বরগুনা পৌরসভা নির্বাচন। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা মেয়র পদে সরকার দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে হলেও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যেও সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের সামনেই প্রকাশ করছে উত্তেজনাভাব। এ পর্যন্ত দুটি মামলা হয়েছে বরগুনা থানায়। একটি স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকের বিরুদ্ধে সরকার দলীয় সমর্থক ঘরে ঢুকে মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে। অন্যটি দু’জন মুহলা কাউন্সিলর প্রার্থী একে অপরের বিরুদ্ধে। এদিকে বরগুনা পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে মেয়র, কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে বৃহস্পতিবার বরগুনা সদর থানা প্রাঙ্গণে। সভায় পুলিশ সুপারসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন। সভায় পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় তুলেছেন প্রার্থীরা। মেয়র থেকে শুরু করে কাউন্সিলর প্রার্থীরা একে অপরকে দুষেছেন। এ স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. শাহাদাত হোসেন বক্তব্য রাখেন।
তিনি নৌকার মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান মহারাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলেন, ‘আমি নির্বাচনে ভীত-সন্ত্রস্ত। আমার প্রচার মাইকের ব্যাটারি ফেলে দিয়েছেন নৌকার কর্মীরা। এ নির্বাচনে আমার জীবন বিপন্ন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আমি যে কোন মুহূর্তে হামলার শিকার হতে পারি। আমার নিরাপত্তা নেই। প্রার্থীদের মধ্যে সর্বশেষ বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ। তিনি বলেন, ‘কালো টাকা ব্যবহার করে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. শাহাদাত হোসেন ভোট কেনার পাঁয়তারা করে আসছেন। গতকাল ৬ নম্বর ওয়ার্ডে মারামারি হয়েছে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে।
সেখানে পৌর মেয়র শাহাদাত হামলাকারী প্রার্থীর পক্ষে থানায় এসেছেন। ‘গতকাল রাত ১টার দিকে আশ্রয়ণ থেকে একের পর এক আমার কাছে ফোন এসেছে। নৌকা সমর্থন করার কারণে আমার লোকজনকে মারধর করে ঘর ভাংচুর করা হয়েছে। ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে আশ্রয়ণে গিয়ে আমার লোকজনের ওপর হামলা করে আহত করেছে। সভার শুরুতে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর রইসুল আলম রিপন তার ওয়ার্ডের প্রতিদ্বন্দ্বী মোশাররফ হোসেন খানের বিরুদ্ধে তার (রিপনের) সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ তোলেন।
বিশেষ করে মোশাররফ হোসেন খানের ছেলে মুরাদ খান যিনি পুলিশে চাকরি করতেন, মাদকসহ ধরা পড়ে বরখাস্ত হয়েছিলেন, সেই মুরাদ খানের নাকি সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ক্লাসমেট। রইসুল আলম রিপনের বক্তব্যের জবাবে মোশাররফ খান পাল্টা রিপনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, ‘রিপন আমাকে উদ্দেশ করে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। রিপনের ছেলে জন ছেলেপান নিয়ে আমাকে ধাওয়া করেছেন। আমি ভয়ে বাসায় ঢুকে পড়ি। তিনি এর প্রতিকার চান। এরপর চার নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্রার্থী শহিদুল ইসলাম নান্না প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আকতারুজ্জামান লিমন পরস্পরে পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। একই ওয়ার্ডের অপর কাউন্সিলর প্রার্থী গৌরাঙ্গ সিকদার শিবুও নান্নার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেন। একইভাবে ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী কবিরুরু রহমানও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থির নিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারুক হোসেন সিকদার ও একই ওয়ার্ডের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মাসুদ এ সময় প্রকাশ্য বিবাদে জড়িয়ে একে অপরের উদ্দেশে অভিযোগ ছুড়ে দেন। মাসুদকে ‘গাঁজাখোর’ উল্লেখ করলে ফারুককেও তিনি ‘ধর্ষক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-বরগুনা পুলিশ সুপার (এসপি) মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা নির্বাচন অফিসার দিলীপ কুমার হাওলাদার।
রবিবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২১ , ৩ মাঘ ১৪২৭, ৩ জমাদিউস সানি ১৪৪২
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, বরগুনা
হামলা হামলা ভয়ভীতির কারণে ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে আগাচ্ছে বরগুনা পৌরসভা নির্বাচন। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা মেয়র পদে সরকার দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে হলেও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যেও সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের সামনেই প্রকাশ করছে উত্তেজনাভাব। এ পর্যন্ত দুটি মামলা হয়েছে বরগুনা থানায়। একটি স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকের বিরুদ্ধে সরকার দলীয় সমর্থক ঘরে ঢুকে মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে। অন্যটি দু’জন মুহলা কাউন্সিলর প্রার্থী একে অপরের বিরুদ্ধে। এদিকে বরগুনা পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে মেয়র, কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে বৃহস্পতিবার বরগুনা সদর থানা প্রাঙ্গণে। সভায় পুলিশ সুপারসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন। সভায় পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় তুলেছেন প্রার্থীরা। মেয়র থেকে শুরু করে কাউন্সিলর প্রার্থীরা একে অপরকে দুষেছেন। এ স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. শাহাদাত হোসেন বক্তব্য রাখেন।
তিনি নৌকার মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান মহারাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলেন, ‘আমি নির্বাচনে ভীত-সন্ত্রস্ত। আমার প্রচার মাইকের ব্যাটারি ফেলে দিয়েছেন নৌকার কর্মীরা। এ নির্বাচনে আমার জীবন বিপন্ন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আমি যে কোন মুহূর্তে হামলার শিকার হতে পারি। আমার নিরাপত্তা নেই। প্রার্থীদের মধ্যে সর্বশেষ বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ। তিনি বলেন, ‘কালো টাকা ব্যবহার করে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. শাহাদাত হোসেন ভোট কেনার পাঁয়তারা করে আসছেন। গতকাল ৬ নম্বর ওয়ার্ডে মারামারি হয়েছে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে।
সেখানে পৌর মেয়র শাহাদাত হামলাকারী প্রার্থীর পক্ষে থানায় এসেছেন। ‘গতকাল রাত ১টার দিকে আশ্রয়ণ থেকে একের পর এক আমার কাছে ফোন এসেছে। নৌকা সমর্থন করার কারণে আমার লোকজনকে মারধর করে ঘর ভাংচুর করা হয়েছে। ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে আশ্রয়ণে গিয়ে আমার লোকজনের ওপর হামলা করে আহত করেছে। সভার শুরুতে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর রইসুল আলম রিপন তার ওয়ার্ডের প্রতিদ্বন্দ্বী মোশাররফ হোসেন খানের বিরুদ্ধে তার (রিপনের) সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ তোলেন।
বিশেষ করে মোশাররফ হোসেন খানের ছেলে মুরাদ খান যিনি পুলিশে চাকরি করতেন, মাদকসহ ধরা পড়ে বরখাস্ত হয়েছিলেন, সেই মুরাদ খানের নাকি সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ক্লাসমেট। রইসুল আলম রিপনের বক্তব্যের জবাবে মোশাররফ খান পাল্টা রিপনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, ‘রিপন আমাকে উদ্দেশ করে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। রিপনের ছেলে জন ছেলেপান নিয়ে আমাকে ধাওয়া করেছেন। আমি ভয়ে বাসায় ঢুকে পড়ি। তিনি এর প্রতিকার চান। এরপর চার নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্রার্থী শহিদুল ইসলাম নান্না প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আকতারুজ্জামান লিমন পরস্পরে পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। একই ওয়ার্ডের অপর কাউন্সিলর প্রার্থী গৌরাঙ্গ সিকদার শিবুও নান্নার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেন। একইভাবে ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী কবিরুরু রহমানও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থির নিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফারুক হোসেন সিকদার ও একই ওয়ার্ডের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মাসুদ এ সময় প্রকাশ্য বিবাদে জড়িয়ে একে অপরের উদ্দেশে অভিযোগ ছুড়ে দেন। মাসুদকে ‘গাঁজাখোর’ উল্লেখ করলে ফারুককেও তিনি ‘ধর্ষক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-বরগুনা পুলিশ সুপার (এসপি) মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা নির্বাচন অফিসার দিলীপ কুমার হাওলাদার।