হাঁস-মুরগির ঠাণ্ডাজনিত রোগ ‘ইনফেকশাস করাইজা’

নওগাঁয় অজ্ঞাত রোগে হাজার মুরগির মৃত্যু

দেশের কিছু এলাকায় হাঁস-মুরগির ঠাণ্ডাজনিত রোগের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ রোগের নাম ইনফেকশাস করাইজা। মারা যাওয়া মুরগির ময়নাতদন্ত ও নমুনা পরীক্ষা করে ভেটেরিনারি বিশেষজ্ঞরা এ রোগ নিশ্চিত করেছেন। তবে বাংলাদেশে এখনও বার্ড ফ্লু রোগ সংক্রমণের খবর জানা যায়নি।

এছাড়া নওগাঁর নিয়ামতপুরে অজ্ঞাত রোগে এক ব্যক্তির খামারে এক হাজার ব্রয়লার মুরগি মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় দিশেহারা ওই খামারি।

লক্ষèীপুর সদর উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকতা ডা. মো. জোবায়ের হোসেন জানিয়েছেন, জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন বশিকপুর গ্রামের করমদ্দিন পাটওয়ারি বাড়িতে ভেটেরিনারি ডাক্তারদের উপস্থিতিতে আক্রান্ত একটি মুরগি মারা গেছে। পরে ওই মুরগি জেলা সদরে নিয়ে ময়নাতদন্ত ও আলামত পরীক্ষা করে ইনফেকশাস করাইজা রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয় নিশ্চিত করেছে। এরপর গত শুক্রবার ওই বাড়িতে ফ্রি মেডিকেল সার্ভিস ও হাঁস-মুরগি ও কবুতরকে টিকা দেয়া হয়েছে।

ভেটেরিনারি চিকিৎসকদের মতে, ইনফেকশাস করাইজা ঠাণ্ডাজনিত শ্বাসতন্ত্রের একটি মারাত্মক রোগ। সাধারণত শীতের সময় এ রোগ বেশি হয়। এ রোগে আক্রান্ত হলে হাঁস-মুরগির মুখ ফুলে যায়। গলা ও শ্বাসতন্ত্রে সমস্যা হয়।

স্থানীয় ক্ষুদ্র এক খামারির পরিবার থেকে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন বশিকপুর গ্রামের বাড়ি ১৮টি মুরগি মারা গেছে। আক্রান্ত হওয়ার ৪/৫ দিনের মধ্যে কয়েকটি মুরগি মারা গেছে। তার মতে, বশিকপুরে অনেক বাড়িতে এ রোগে বহু মুরগি মারা গেছে। অনেক বাড়িতে হঁস-মুরগি শূন্য হয়ে পড়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বার বার রোগে আক্রান্ত হয়ে হাঁস-মুরগি মারা গেলেও ভেটেরিনারি চিকিৎসক পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি সংবাদে এ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশের পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ভেটেরিনারি চিকিৎসকরা সেখানে যান। তাদের সামনে একটি মুরগি মারা গেছে।

লক্ষ্মীপুর জেলার প্রধান প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আয়ুব মিয়া রানা সংবাদকে মুঠোফোনে বলেন, হাঁস-মুরগির মারা যাওয়া ঠেকাতে আক্রান্ত এলাকায় ফ্রি মেডিকেল টিম ও টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। জেলা ও উপজেলার ভেটেরিনারি সার্জনরা এলাকা ভিত্তিক খোঁজখবর নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন।

অপর এক তথ্যে চিকিৎসকরা জানান, ইনফেকশাস করাইজায় আক্রান্ত মুরগি থেকে সুস্থ মুরগি আলাদা করে রাখতে হয়। আক্রান্ত খামার কয়েকদিন পরিত্যক্ত রাখতে হয়। এরপর জীবাণুনাশক স্প্রে করে নতুন মুরগির বাচ্চা সেখানে রাখতে হবে। মুরগির ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। খামারে কার্যকর জীবাণুনাশক ব্যবহার করা দরকার।

এ দিকে প্রাণিসম্পদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। দুপুর দুইটার মধ্যে জেলা ও উপজেলা সরজমিনে পরিদর্শন করে বিস্তারিত প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও কন্ট্রোল রুমে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করতে বলা হয়েছে।

নেয়ামতপুর প্রতিনিধি জানান, নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলায় অজ্ঞাত রোগে খামারে এক হাজার ব্রয়লার মুরগি মারা গেছে। রোগ নির্ণয় করতে না পারায় খামারে মুরগির মারা যাওয়া থামছে না।

উপজেলার খামারি মিজানুর রহমান খোকন সংবাদ প্রতিনিধিকে জানান, ২০০৭ সালে ৩শ ব্রয়লার মুরগি নিয়ে খামার শুরু করেন। এখন তার খামারে দুই হাজার মুরগি। কিন্তু চলতি মাসের প্রথম দিকে অজ্ঞাত রোগে তার এক হাজার মুরগি মারা গেছে।

স্থানীয় উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. ফিরোজ আহমেদ জানান, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগ ধরতে পারিনি। পরীক্ষা করার মতো যন্ত্রপাতিও নেই। তাই খামারিকে জয়পুরহাট ল্যাবে নিয়ে পরীক্ষা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

রবিবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২১ , ৩ মাঘ ১৪২৭, ৩ জমাদিউস সানি ১৪৪২

হাঁস-মুরগির ঠাণ্ডাজনিত রোগ ‘ইনফেকশাস করাইজা’

নওগাঁয় অজ্ঞাত রোগে হাজার মুরগির মৃত্যু

বাকী বিল্লাহ

image

নওগাঁর নিয়ামতপুরে অজানা রোগে মৃত ব্রয়লার মুরগি -সংবাদ

দেশের কিছু এলাকায় হাঁস-মুরগির ঠাণ্ডাজনিত রোগের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ রোগের নাম ইনফেকশাস করাইজা। মারা যাওয়া মুরগির ময়নাতদন্ত ও নমুনা পরীক্ষা করে ভেটেরিনারি বিশেষজ্ঞরা এ রোগ নিশ্চিত করেছেন। তবে বাংলাদেশে এখনও বার্ড ফ্লু রোগ সংক্রমণের খবর জানা যায়নি।

এছাড়া নওগাঁর নিয়ামতপুরে অজ্ঞাত রোগে এক ব্যক্তির খামারে এক হাজার ব্রয়লার মুরগি মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় দিশেহারা ওই খামারি।

লক্ষèীপুর সদর উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকতা ডা. মো. জোবায়ের হোসেন জানিয়েছেন, জেলার চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন বশিকপুর গ্রামের করমদ্দিন পাটওয়ারি বাড়িতে ভেটেরিনারি ডাক্তারদের উপস্থিতিতে আক্রান্ত একটি মুরগি মারা গেছে। পরে ওই মুরগি জেলা সদরে নিয়ে ময়নাতদন্ত ও আলামত পরীক্ষা করে ইনফেকশাস করাইজা রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয় নিশ্চিত করেছে। এরপর গত শুক্রবার ওই বাড়িতে ফ্রি মেডিকেল সার্ভিস ও হাঁস-মুরগি ও কবুতরকে টিকা দেয়া হয়েছে।

ভেটেরিনারি চিকিৎসকদের মতে, ইনফেকশাস করাইজা ঠাণ্ডাজনিত শ্বাসতন্ত্রের একটি মারাত্মক রোগ। সাধারণত শীতের সময় এ রোগ বেশি হয়। এ রোগে আক্রান্ত হলে হাঁস-মুরগির মুখ ফুলে যায়। গলা ও শ্বাসতন্ত্রে সমস্যা হয়।

স্থানীয় ক্ষুদ্র এক খামারির পরিবার থেকে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানাধীন বশিকপুর গ্রামের বাড়ি ১৮টি মুরগি মারা গেছে। আক্রান্ত হওয়ার ৪/৫ দিনের মধ্যে কয়েকটি মুরগি মারা গেছে। তার মতে, বশিকপুরে অনেক বাড়িতে এ রোগে বহু মুরগি মারা গেছে। অনেক বাড়িতে হঁস-মুরগি শূন্য হয়ে পড়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বার বার রোগে আক্রান্ত হয়ে হাঁস-মুরগি মারা গেলেও ভেটেরিনারি চিকিৎসক পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি সংবাদে এ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশের পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ভেটেরিনারি চিকিৎসকরা সেখানে যান। তাদের সামনে একটি মুরগি মারা গেছে।

লক্ষ্মীপুর জেলার প্রধান প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আয়ুব মিয়া রানা সংবাদকে মুঠোফোনে বলেন, হাঁস-মুরগির মারা যাওয়া ঠেকাতে আক্রান্ত এলাকায় ফ্রি মেডিকেল টিম ও টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। জেলা ও উপজেলার ভেটেরিনারি সার্জনরা এলাকা ভিত্তিক খোঁজখবর নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন।

অপর এক তথ্যে চিকিৎসকরা জানান, ইনফেকশাস করাইজায় আক্রান্ত মুরগি থেকে সুস্থ মুরগি আলাদা করে রাখতে হয়। আক্রান্ত খামার কয়েকদিন পরিত্যক্ত রাখতে হয়। এরপর জীবাণুনাশক স্প্রে করে নতুন মুরগির বাচ্চা সেখানে রাখতে হবে। মুরগির ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। খামারে কার্যকর জীবাণুনাশক ব্যবহার করা দরকার।

এ দিকে প্রাণিসম্পদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। দুপুর দুইটার মধ্যে জেলা ও উপজেলা সরজমিনে পরিদর্শন করে বিস্তারিত প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও কন্ট্রোল রুমে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করতে বলা হয়েছে।

নেয়ামতপুর প্রতিনিধি জানান, নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলায় অজ্ঞাত রোগে খামারে এক হাজার ব্রয়লার মুরগি মারা গেছে। রোগ নির্ণয় করতে না পারায় খামারে মুরগির মারা যাওয়া থামছে না।

উপজেলার খামারি মিজানুর রহমান খোকন সংবাদ প্রতিনিধিকে জানান, ২০০৭ সালে ৩শ ব্রয়লার মুরগি নিয়ে খামার শুরু করেন। এখন তার খামারে দুই হাজার মুরগি। কিন্তু চলতি মাসের প্রথম দিকে অজ্ঞাত রোগে তার এক হাজার মুরগি মারা গেছে।

স্থানীয় উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. ফিরোজ আহমেদ জানান, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগ ধরতে পারিনি। পরীক্ষা করার মতো যন্ত্রপাতিও নেই। তাই খামারিকে জয়পুরহাট ল্যাবে নিয়ে পরীক্ষা করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।