রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্র্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা। দীর্ঘদিন ধরে উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ ক্যাম্পাসে আসেন না। তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ। সে কারণেই শিক্ষক, কর্মচারীরা তার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু এবারও উপাচার্য কলিম উল্লাহ পেছনের ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থিত তার বাসভবনে এসে আবার সে পথেই গোপনে চলে গেলেন। ঘটনাটি ঘটেছে রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে।
এ ঘটনায় শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘ এক বছর ধরে উপাচার্য ক্যাম্পাসে আসেন না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়েছে।
‘তার নিয়োগ বাণিজ্য, অনিয়ম, সেচ্ছাচারিতার কাছে জিম্মি আমরা সবাই,’ অভিযোগ অধ্যাপক মতিউর রহমানের।
এর আগে গত শুক্রবার সকালে এক বছর পর উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রবেশপথে না এসে পেছনের গেট দিয়ে বাসায় ঢোকেন। ‘আমরা খবর পেয়ে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য তার বাস ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিলাম। কখন যে তিনি তার বাসার পেছনের গেট দিয়ে পালিয়ে গেছেন আমরা বুঝতেই পারিনি,’ বলেন অধ্যাপক রহমান।
গতকালও একই ঘটনা ঘটেছে। ইউজিসির একটি তদন্তকারী দল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছেন জানতে পেরে উপাচার্য গতকাল দুপুরের দিকে একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনের গেট দিয়ে তার বাসভবনে আসেন। খবর পেয়ে শতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী তার বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয় তার সঙ্গে দেখা করার জন্য। দুপুর ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপাচার্যের জন্য অপেক্ষা করেন তারা। কিন্তু তার দেখা পাননি।
‘উনি আজও গোপনে পেছনের গেট দিয়ে বাসায় ঢুকেছেন। আমরা খবর পেয়ে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য দুপুর থেকে সন্ধা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। পরে জানতে পারলাম উনি বাসার পেছনের দরজার দিয়ে আবারও পলায়ন করেছেন,’ বললেন ক্ষুদ্ধ অধ্যাপক রহমান।
শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধিকার সুরক্ষা পরিষদের সদস্য ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘রোববার দুপুর পৌনে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই লালবাগ এলাকায় জনতা ব্যাংকে উপাচার্যের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। উনাকে বললাম আপনার সঙ্গে অধিকার সুরক্ষা পরিষদের নেতারা দেখা করতে চান। উপাচার্য বললেন ক্যাম্পাসে নয় তার বাসায় দেখা করবেন, কথা বলবেন। তার কথা অনুযায়ী দুপুর ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আমরা অবস্থান নিয়ে অপেক্ষা করলাম উনি আর বাসায় আসলেন না।’
উপাচার্যের বাসার কর্মচারী ও নাম প্রকাশে অনিশ্চুক তার ঘনিষ্ঠ এক কর্মকর্তা জানান, উপাচার্য দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা থেকে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেট ব্যবহার না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে তার বাসভবনের পেছনের ফটক দিয়ে বাসায় এসে দু’ঘণ্টা অবস্থান করে আবারও পেছনের গেট দিয়ে বেরিয়ে চলে যান। ‘যাওয়ার সময় বলেন বাইরে অপেক্ষমানদের বলা যাবে না। আমি বাসায় নেই।’
এদিকে বিকেলে ইউজিসির তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল সচিব ফেরদৌস জামানের নেতৃত্বে মাইক্রেবাসে ক্যাম্পাসে এসে উপাচার্যের খোঁজ করলেও তার সঙ্গে দেখা না পাওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
আর ক্ষুদ্ধ অধ্যাপক রহমান বলেন, ‘একজন উপাচার্য অত্যন্ত সম্মানীয় ব্যক্তি, এমন একজন মানুষ যিনি মিথ্যাচার করেন আমরা মনে করি তিনি উপাচার্যের মতো সম্মানীয় পদে থাকার নৈতিকতা হারিয়েছেন। তারপরও আমরা অবিরত চেষ্টা করে যাব। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাটি মাননীয় রাষ্ট্রপতি ও আচার্য মহোদয় এবং প্রধানমন্ত্রী দেখবেন।’
‘একজন মানুষতো রাষ্ট্রের চেয়ে বড় হতে পারে না। উনি রাষ্ট্রের সব আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিনের পর দিন বাইরে থাকেন, মিথ্যাচার করেন। আমরা উচ্চ পর্যায়ে হস্তক্ষেপ কামনা করছি,’ দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক রহমানের।
সোমবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২১ , ৪ মাঘ ১৪২৭, ৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২
লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর
রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্র্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা। দীর্ঘদিন ধরে উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ ক্যাম্পাসে আসেন না। তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ। সে কারণেই শিক্ষক, কর্মচারীরা তার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু এবারও উপাচার্য কলিম উল্লাহ পেছনের ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থিত তার বাসভবনে এসে আবার সে পথেই গোপনে চলে গেলেন। ঘটনাটি ঘটেছে রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে।
এ ঘটনায় শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মতিউর রহমান অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘ এক বছর ধরে উপাচার্য ক্যাম্পাসে আসেন না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়েছে।
‘তার নিয়োগ বাণিজ্য, অনিয়ম, সেচ্ছাচারিতার কাছে জিম্মি আমরা সবাই,’ অভিযোগ অধ্যাপক মতিউর রহমানের।
এর আগে গত শুক্রবার সকালে এক বছর পর উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রবেশপথে না এসে পেছনের গেট দিয়ে বাসায় ঢোকেন। ‘আমরা খবর পেয়ে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য তার বাস ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিলাম। কখন যে তিনি তার বাসার পেছনের গেট দিয়ে পালিয়ে গেছেন আমরা বুঝতেই পারিনি,’ বলেন অধ্যাপক রহমান।
গতকালও একই ঘটনা ঘটেছে। ইউজিসির একটি তদন্তকারী দল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছেন জানতে পেরে উপাচার্য গতকাল দুপুরের দিকে একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনের গেট দিয়ে তার বাসভবনে আসেন। খবর পেয়ে শতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী তার বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয় তার সঙ্গে দেখা করার জন্য। দুপুর ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপাচার্যের জন্য অপেক্ষা করেন তারা। কিন্তু তার দেখা পাননি।
‘উনি আজও গোপনে পেছনের গেট দিয়ে বাসায় ঢুকেছেন। আমরা খবর পেয়ে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য দুপুর থেকে সন্ধা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। পরে জানতে পারলাম উনি বাসার পেছনের দরজার দিয়ে আবারও পলায়ন করেছেন,’ বললেন ক্ষুদ্ধ অধ্যাপক রহমান।
শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধিকার সুরক্ষা পরিষদের সদস্য ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘রোববার দুপুর পৌনে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই লালবাগ এলাকায় জনতা ব্যাংকে উপাচার্যের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। উনাকে বললাম আপনার সঙ্গে অধিকার সুরক্ষা পরিষদের নেতারা দেখা করতে চান। উপাচার্য বললেন ক্যাম্পাসে নয় তার বাসায় দেখা করবেন, কথা বলবেন। তার কথা অনুযায়ী দুপুর ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আমরা অবস্থান নিয়ে অপেক্ষা করলাম উনি আর বাসায় আসলেন না।’
উপাচার্যের বাসার কর্মচারী ও নাম প্রকাশে অনিশ্চুক তার ঘনিষ্ঠ এক কর্মকর্তা জানান, উপাচার্য দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা থেকে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেট ব্যবহার না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে তার বাসভবনের পেছনের ফটক দিয়ে বাসায় এসে দু’ঘণ্টা অবস্থান করে আবারও পেছনের গেট দিয়ে বেরিয়ে চলে যান। ‘যাওয়ার সময় বলেন বাইরে অপেক্ষমানদের বলা যাবে না। আমি বাসায় নেই।’
এদিকে বিকেলে ইউজিসির তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল সচিব ফেরদৌস জামানের নেতৃত্বে মাইক্রেবাসে ক্যাম্পাসে এসে উপাচার্যের খোঁজ করলেও তার সঙ্গে দেখা না পাওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
আর ক্ষুদ্ধ অধ্যাপক রহমান বলেন, ‘একজন উপাচার্য অত্যন্ত সম্মানীয় ব্যক্তি, এমন একজন মানুষ যিনি মিথ্যাচার করেন আমরা মনে করি তিনি উপাচার্যের মতো সম্মানীয় পদে থাকার নৈতিকতা হারিয়েছেন। তারপরও আমরা অবিরত চেষ্টা করে যাব। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাটি মাননীয় রাষ্ট্রপতি ও আচার্য মহোদয় এবং প্রধানমন্ত্রী দেখবেন।’
‘একজন মানুষতো রাষ্ট্রের চেয়ে বড় হতে পারে না। উনি রাষ্ট্রের সব আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিনের পর দিন বাইরে থাকেন, মিথ্যাচার করেন। আমরা উচ্চ পর্যায়ে হস্তক্ষেপ কামনা করছি,’ দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক রহমানের।