একুশে বইমেলা ভার্চুয়াল নয়, প্রতিবারের মতো হবে

তারিখ নির্ধারণ করবেন প্রধানমন্ত্রী

অমর একুশে বইমেলা নিয়ে অনিশ্চয়তার অবসান হয়েছে। বইমেলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়েছে ভার্চুয়ালি নয়, আগের মতোই চিরাচরিতভাবে বইমেলা হবে। তবে অমর একুশে গ্রন্থমেলার নির্দিষ্ট সময়সূচি এখনও ঠিক করা হয়নি।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় বাংলা একাডেমির শহীদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে বইমেলার তারিখ নির্ধারণের বৈঠক হয়। বৈঠকে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা ও প্রকাশকদের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। এরপর বেলা ২টায় বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ জানান, ভার্চুয়ালি নয়, আগের মতোই বইমেলা হবে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে শারীরিক উপস্থিতিতে বইমেলা হবে।’ তবে ২০২১ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলার তারিখ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।

তিনি বলেন, ২০ ফেব্রুয়ারি, ১৭ মার্চ ও ২৭ মার্চ প্রস্তাবিত তিনটি তারিখ প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হবে। তিনি যে তারিখ নির্ধারণ করবেন সে তারিখেই মেলা অনুষ্ঠিত হবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মেলা শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। ফেব্রুয়ারিতে করোনার ভ্যাকসিন দেশে এলে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করছি। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে মেলা আরও পেছাতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. বদরুল আরেফীন ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী।

হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের জন্য আমরা প্রস্তাবিত তিনটি তারিখ পাঠাব। তিনি সিদ্ধান্ত জানাবেন। আমরা মেলা স্থগিত করেছি, বাতিল করিনি। প্রস্তাবিত তিন তারিখের পর মেলা হলে ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কার বিষয়ে তিনি বলেন, রোজার পর মেলা হলে আবহাওয়াকে মাথায় রেখেই মেলার অবকাঠামো তৈরি করা হবে।’

ভার্চুয়াল বইমেলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি আবারও স্পষ্ট করে বলছি বইমেলা হবে। চিরাচরিতভাবেই বইমেলা হবে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু রকমারি, বইধার, কানামাছি যেমন ই-কমার্সযুগে প্রবেশ করেছে বাংলা একাডেমি তেমন নিজস্ব একটি অনলাইন প্লাটফর্ম (মঞ্চ) তৈরি করবে। এর মাধ্যমে বাংলা একাডেমির বই অনলাইনেও পাওয়া যাবে। এর কার্যক্রম চলছে। ’ এ বিষয়টির সঙ্গে অমর একুশে গ্রন্থমেলার কোন সম্পর্ক নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনের পর বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত মেলা আয়োজনের প্রস্তাব করেছি। বাংলা একাডেমি ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে এসব বিষয়ে আগেই অবগত করেছি। এ বিষয়ে লিখিত বক্তব্যও পাঠিয়েছিলাম। যেকোন তারিখে মেলায় অংশ নেয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত। তবে আমরা আশা করছি, ৭ মার্চের পর যেন মেলা অনুষ্ঠিত না হয়। এরপর রোজা ও ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা থেকে যায়।

বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি ঢাকা মহানগর সভাপতি মাজহারুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আমরা শুনেছি। আমরা আশা করব, প্রধানমন্ত্রী মার্চের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাবেন। মার্চের পর বৈরী আবহাওয়ায় মেলা আয়োজন করা সম্ভব নয়।

গত ১০ ডিসেম্বর বইমেলার আয়োজক বাংলা একাডেমির নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে ২০২১ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলা সাময়িকভাবে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেইসঙ্গে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় ভার্চুুয়ালি বইমেলার আয়োজনেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই এর তীব্র সমালোচনা করেন বিভিন্ন সাহিত্যিক ও প্রকাশনা খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। বাংলা একাডেমির এ সিদ্ধান্তকে ‘একতরফা’ ও ‘স্বেচ্ছাচারী’ বলে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেন প্রকাশকরা। এ পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ ডিসেম্বর সকালে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রকাশকদের দুই সংগঠন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি এবং বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নেতারা।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ভার্চুুয়ালি নয়, শারীরিক উপস্থিতিতেই আয়োজিত হবে ২০২১ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলা। তবে প্রথা অনুযায়ী, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এবারের বইমেলা শুরু হচ্ছে না। এজন্য বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে প্রকাশকদের কাছ থেকে প্রস্তাব চাওয়া হয়। এরপর ১৫ ডিসেম্বর শারীরিক উপস্থিতিতে ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা আয়োজনের জন্য বাংলা একাডেমিকে লিখিত প্রস্তাব দেয় প্রকাশকদের সংগঠনগুলো।

সোমবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২১ , ৪ মাঘ ১৪২৭, ৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২

একুশে বইমেলা ভার্চুয়াল নয়, প্রতিবারের মতো হবে

তারিখ নির্ধারণ করবেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

অমর একুশে বইমেলা নিয়ে অনিশ্চয়তার অবসান হয়েছে। বইমেলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়েছে ভার্চুয়ালি নয়, আগের মতোই চিরাচরিতভাবে বইমেলা হবে। তবে অমর একুশে গ্রন্থমেলার নির্দিষ্ট সময়সূচি এখনও ঠিক করা হয়নি।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় বাংলা একাডেমির শহীদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে বইমেলার তারিখ নির্ধারণের বৈঠক হয়। বৈঠকে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা ও প্রকাশকদের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। এরপর বেলা ২টায় বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ জানান, ভার্চুয়ালি নয়, আগের মতোই বইমেলা হবে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে শারীরিক উপস্থিতিতে বইমেলা হবে।’ তবে ২০২১ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলার তারিখ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।

তিনি বলেন, ২০ ফেব্রুয়ারি, ১৭ মার্চ ও ২৭ মার্চ প্রস্তাবিত তিনটি তারিখ প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হবে। তিনি যে তারিখ নির্ধারণ করবেন সে তারিখেই মেলা অনুষ্ঠিত হবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মেলা শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। ফেব্রুয়ারিতে করোনার ভ্যাকসিন দেশে এলে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করছি। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে মেলা আরও পেছাতে পারে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. বদরুল আরেফীন ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী।

হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের জন্য আমরা প্রস্তাবিত তিনটি তারিখ পাঠাব। তিনি সিদ্ধান্ত জানাবেন। আমরা মেলা স্থগিত করেছি, বাতিল করিনি। প্রস্তাবিত তিন তারিখের পর মেলা হলে ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কার বিষয়ে তিনি বলেন, রোজার পর মেলা হলে আবহাওয়াকে মাথায় রেখেই মেলার অবকাঠামো তৈরি করা হবে।’

ভার্চুয়াল বইমেলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি আবারও স্পষ্ট করে বলছি বইমেলা হবে। চিরাচরিতভাবেই বইমেলা হবে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু রকমারি, বইধার, কানামাছি যেমন ই-কমার্সযুগে প্রবেশ করেছে বাংলা একাডেমি তেমন নিজস্ব একটি অনলাইন প্লাটফর্ম (মঞ্চ) তৈরি করবে। এর মাধ্যমে বাংলা একাডেমির বই অনলাইনেও পাওয়া যাবে। এর কার্যক্রম চলছে। ’ এ বিষয়টির সঙ্গে অমর একুশে গ্রন্থমেলার কোন সম্পর্ক নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনের পর বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত মেলা আয়োজনের প্রস্তাব করেছি। বাংলা একাডেমি ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে এসব বিষয়ে আগেই অবগত করেছি। এ বিষয়ে লিখিত বক্তব্যও পাঠিয়েছিলাম। যেকোন তারিখে মেলায় অংশ নেয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত। তবে আমরা আশা করছি, ৭ মার্চের পর যেন মেলা অনুষ্ঠিত না হয়। এরপর রোজা ও ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা থেকে যায়।

বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি ঢাকা মহানগর সভাপতি মাজহারুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আমরা শুনেছি। আমরা আশা করব, প্রধানমন্ত্রী মার্চের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাবেন। মার্চের পর বৈরী আবহাওয়ায় মেলা আয়োজন করা সম্ভব নয়।

গত ১০ ডিসেম্বর বইমেলার আয়োজক বাংলা একাডেমির নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে ২০২১ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলা সাময়িকভাবে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেইসঙ্গে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় ভার্চুুয়ালি বইমেলার আয়োজনেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই এর তীব্র সমালোচনা করেন বিভিন্ন সাহিত্যিক ও প্রকাশনা খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। বাংলা একাডেমির এ সিদ্ধান্তকে ‘একতরফা’ ও ‘স্বেচ্ছাচারী’ বলে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেন প্রকাশকরা। এ পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ ডিসেম্বর সকালে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রকাশকদের দুই সংগঠন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি এবং বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নেতারা।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ভার্চুুয়ালি নয়, শারীরিক উপস্থিতিতেই আয়োজিত হবে ২০২১ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলা। তবে প্রথা অনুযায়ী, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এবারের বইমেলা শুরু হচ্ছে না। এজন্য বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে প্রকাশকদের কাছ থেকে প্রস্তাব চাওয়া হয়। এরপর ১৫ ডিসেম্বর শারীরিক উপস্থিতিতে ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা আয়োজনের জন্য বাংলা একাডেমিকে লিখিত প্রস্তাব দেয় প্রকাশকদের সংগঠনগুলো।