স্বপঞ্জয় চৌধুরী
অক্ষরে অক্ষরে শিল্প নির্মাণ এই স্লোগানকে সামনে রেখে যাত্রা শুরু করেছিল শিল্প সাহিত্যের কাগজ ঘুংঘুর। ঘুংঘুর একটি নদীর নাম। যার সুধা তরঙ্গে রচিত হচ্ছে অনবদ্য শিল্পের পসরা। দেখতে দেখতে এটি অষ্টাদশ সংখ্যা পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে। গতানুগতিক সাহিত্যের ছোটকাগজের বলয় ভেঙে ঘুংঘুর এত বছর যাবৎ বুনে আসছে কিছু অভাবিত শিল্পের নকশী কাঁথা। এই নকশী কাঁথার মাঠে সবসময়ই প্রাধান্য পাচ্ছে তরুণ লেখকেরা। প্রবীণ লেখকদের পাশাপাশি তরুণ কিংবা নবীন লেখকদের ভালো লেখাগুলো প্রকাশের ক্ষেত্রে ঘুংঘুর সবসময় আপসহীন ভূমিকা পালন করে আসছে। গোষ্ঠী কেন্দ্রিক ও রংচটা বিজ্ঞাপনের বালাইমুক্ত এই পত্রিকায় দেখা যায়- শিল্পের প্রকৃত শুভ্রতা ও একগুচ্ছ অভাবিত চিন্তার প্রতিচ্ছবি। ছোট কাগজ কারও মনকে জোগাতে নয় জাগাতে চায়। সাহিত্যের ছোটকাগজ সমন্ধীয় এই অমর উক্তিটি ঘুংঘুরের বেলায় শতভাগ প্রাসঙ্গিক।
ঘুংঘুর অষ্টাদশ সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছে নিউইয়র্ক বইমেলাকে সামনে রেখে। বরাবরের মতো এর সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন কবি, গল্পকার ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত চিকিৎসক হুমায়ূন কবির। এ সংখ্যার অতিথি সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন কবি ও লেখক আজফার হোসেন। সম্পাদনা পর্ষদে ছিলেন ফকির ইলিয়াস ও মিলন আশরাফ। নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে বরাবরের মতো এ সংখ্যায়ও দায়িত্ব পালন করেছেন কবি ও গল্পকার খালেদ চৌধুরী। এ সংখ্যার অনিন্দ্য সুন্দর প্রচ্ছদটি করেছেন ইকবাল আনোয়ার।
কোভিড-১৯ বৈশ্বিক দুর্যোগে মানুষ যখন দিশেহারা। তখন সাহিত্যচর্চার ধারা অব্যাহত রাখা সত্যিই একটি দুরূহ কাজ। ঘুংঘুর সকল প্রতিকূলতার কথা মাথায় রেখে প্রকাশ পেয়েছে স্বমহিমায়। সম্পাদকের খেরোখাতায় সম্পাদক অত্যন্ত সাবলীলতার সঙ্গে পুরো মহামারিকালীন সময়ের সীমাবদ্ধতা ও তাকে অতিক্রম করে ঘুংঘুর প্রকাশের নির্মল নেপথ্য গল্পটি নান্দনিক ভাষাকল্পে তুলে ধরেছেন। অতিথি সম্পাদক এর ভাষ্যে উঠে এসেছে ঔপনিবেশিক জ্ঞান/ক্ষমতা, সাংস্কৃতিক সংগ্রাম ও সৃজনশীলতা বিষয়কি একটি অনবদ্য নিবন্ধ। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা ও সাহিত্যের ওপর তাত্ত্বিক আলোচনা করেছেন গোলাম ফারুক খান ‘সুকান্ত ভট্টাচার্য : সেই নির্ঘুম বাতিওয়ালা’ নামক প্রবন্ধে। জীবনানন্দের কবিস্বভাব ও কবিভাষা : বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি এই শিরোনামে একটি তথ্যবহুল প্রবন্ধ লিখেছেন প্রাবন্ধিক মোহাম্মদ আজম। বাংলাদেশের ছোটগল্পে বাঁক পরিবর্তনের আভাস শিরোনামে প্রবন্ধ লিখেছেন অনুপম হাসান। বাংলা ছোটগল্পের ভাষা ও বিবর্তনের আভাস পাওয়া যায় উক্ত প্রবন্ধে। প্রাবন্ধিক আহমদ মাযহার লিখেছেন ‘দূরস্বদেশে’ বাংলা সাহিত্য চর্চা ও বাংলা বইয়ের সংস্কৃতি এই শিরোনামে একটি চমকপ্রদ প্রবন্ধ। বিশ্বসাহিত্য সমালোচনা অংশে ‘গিলগামেশ মহাকাব্য : বিষাদের জন্ম, স্তব্ধতার উদয়’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেছেন প্রাবন্ধিক ও বক্তা ফারুক ওয়াসিফ। তাঁর এই আলোচনায় উঠে এসেছে গিলগামেশ এর ভাববাদী ও দর্শনতত্ত্বের অমর কিছু বাণী ও সম্প্রচার। ঘুংঘুরের এ সংখ্যার জন্য নয়টি গল্প নির্বাচন করা হয়েছে। প্রতিটি গল্পই আলাদা আলাদা প্রেক্ষাপট ও নান্দনিকতার বিচারে পৃথক সত্তার অধিকারী। গদ্য আলেখ্যতে গুচ্ছ গুচ্ছ শিরোনামে শিল্পানুভূতি প্রকাশ করেছেন গদ্যশিল্পী মাসুদ খান। সাহিত্যভুবনের সকল শাখার সুচিন্তিত ও নন্দনতাত্ত্বিকতায় পূর্ণ এ সংখ্যাটিতে আছে হরেক রকম সাহিত্য ও শিল্পগুণসম্পন্ন সৃষ্টিকর্মের স্বাদ- যা নিঃসন্দেহে পাঠকের বোধে তাড়না ও ভাবোদয়ের সৃষ্টি করবে।
বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২১ , ৭ মাঘ ১৪২৭, ৭ জমাদিউস সানি ১৪৪২
স্বপঞ্জয় চৌধুরী
অক্ষরে অক্ষরে শিল্প নির্মাণ এই স্লোগানকে সামনে রেখে যাত্রা শুরু করেছিল শিল্প সাহিত্যের কাগজ ঘুংঘুর। ঘুংঘুর একটি নদীর নাম। যার সুধা তরঙ্গে রচিত হচ্ছে অনবদ্য শিল্পের পসরা। দেখতে দেখতে এটি অষ্টাদশ সংখ্যা পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে। গতানুগতিক সাহিত্যের ছোটকাগজের বলয় ভেঙে ঘুংঘুর এত বছর যাবৎ বুনে আসছে কিছু অভাবিত শিল্পের নকশী কাঁথা। এই নকশী কাঁথার মাঠে সবসময়ই প্রাধান্য পাচ্ছে তরুণ লেখকেরা। প্রবীণ লেখকদের পাশাপাশি তরুণ কিংবা নবীন লেখকদের ভালো লেখাগুলো প্রকাশের ক্ষেত্রে ঘুংঘুর সবসময় আপসহীন ভূমিকা পালন করে আসছে। গোষ্ঠী কেন্দ্রিক ও রংচটা বিজ্ঞাপনের বালাইমুক্ত এই পত্রিকায় দেখা যায়- শিল্পের প্রকৃত শুভ্রতা ও একগুচ্ছ অভাবিত চিন্তার প্রতিচ্ছবি। ছোট কাগজ কারও মনকে জোগাতে নয় জাগাতে চায়। সাহিত্যের ছোটকাগজ সমন্ধীয় এই অমর উক্তিটি ঘুংঘুরের বেলায় শতভাগ প্রাসঙ্গিক।
ঘুংঘুর অষ্টাদশ সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছে নিউইয়র্ক বইমেলাকে সামনে রেখে। বরাবরের মতো এর সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন কবি, গল্পকার ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত চিকিৎসক হুমায়ূন কবির। এ সংখ্যার অতিথি সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন কবি ও লেখক আজফার হোসেন। সম্পাদনা পর্ষদে ছিলেন ফকির ইলিয়াস ও মিলন আশরাফ। নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে বরাবরের মতো এ সংখ্যায়ও দায়িত্ব পালন করেছেন কবি ও গল্পকার খালেদ চৌধুরী। এ সংখ্যার অনিন্দ্য সুন্দর প্রচ্ছদটি করেছেন ইকবাল আনোয়ার।
কোভিড-১৯ বৈশ্বিক দুর্যোগে মানুষ যখন দিশেহারা। তখন সাহিত্যচর্চার ধারা অব্যাহত রাখা সত্যিই একটি দুরূহ কাজ। ঘুংঘুর সকল প্রতিকূলতার কথা মাথায় রেখে প্রকাশ পেয়েছে স্বমহিমায়। সম্পাদকের খেরোখাতায় সম্পাদক অত্যন্ত সাবলীলতার সঙ্গে পুরো মহামারিকালীন সময়ের সীমাবদ্ধতা ও তাকে অতিক্রম করে ঘুংঘুর প্রকাশের নির্মল নেপথ্য গল্পটি নান্দনিক ভাষাকল্পে তুলে ধরেছেন। অতিথি সম্পাদক এর ভাষ্যে উঠে এসেছে ঔপনিবেশিক জ্ঞান/ক্ষমতা, সাংস্কৃতিক সংগ্রাম ও সৃজনশীলতা বিষয়কি একটি অনবদ্য নিবন্ধ। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা ও সাহিত্যের ওপর তাত্ত্বিক আলোচনা করেছেন গোলাম ফারুক খান ‘সুকান্ত ভট্টাচার্য : সেই নির্ঘুম বাতিওয়ালা’ নামক প্রবন্ধে। জীবনানন্দের কবিস্বভাব ও কবিভাষা : বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি এই শিরোনামে একটি তথ্যবহুল প্রবন্ধ লিখেছেন প্রাবন্ধিক মোহাম্মদ আজম। বাংলাদেশের ছোটগল্পে বাঁক পরিবর্তনের আভাস শিরোনামে প্রবন্ধ লিখেছেন অনুপম হাসান। বাংলা ছোটগল্পের ভাষা ও বিবর্তনের আভাস পাওয়া যায় উক্ত প্রবন্ধে। প্রাবন্ধিক আহমদ মাযহার লিখেছেন ‘দূরস্বদেশে’ বাংলা সাহিত্য চর্চা ও বাংলা বইয়ের সংস্কৃতি এই শিরোনামে একটি চমকপ্রদ প্রবন্ধ। বিশ্বসাহিত্য সমালোচনা অংশে ‘গিলগামেশ মহাকাব্য : বিষাদের জন্ম, স্তব্ধতার উদয়’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেছেন প্রাবন্ধিক ও বক্তা ফারুক ওয়াসিফ। তাঁর এই আলোচনায় উঠে এসেছে গিলগামেশ এর ভাববাদী ও দর্শনতত্ত্বের অমর কিছু বাণী ও সম্প্রচার। ঘুংঘুরের এ সংখ্যার জন্য নয়টি গল্প নির্বাচন করা হয়েছে। প্রতিটি গল্পই আলাদা আলাদা প্রেক্ষাপট ও নান্দনিকতার বিচারে পৃথক সত্তার অধিকারী। গদ্য আলেখ্যতে গুচ্ছ গুচ্ছ শিরোনামে শিল্পানুভূতি প্রকাশ করেছেন গদ্যশিল্পী মাসুদ খান। সাহিত্যভুবনের সকল শাখার সুচিন্তিত ও নন্দনতাত্ত্বিকতায় পূর্ণ এ সংখ্যাটিতে আছে হরেক রকম সাহিত্য ও শিল্পগুণসম্পন্ন সৃষ্টিকর্মের স্বাদ- যা নিঃসন্দেহে পাঠকের বোধে তাড়না ও ভাবোদয়ের সৃষ্টি করবে।