২৭টি ফ্ল্যাট কর্মচারীদের অবৈধ দখলে

রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় ডাক বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ২৭টি আবাসিক বাসা অবৈধভাবে কর্মচারীরা দখলে রেখেছে। গত প্রায় ৩ বছর ধরে দুর্নীতিবাজ কর্মচারীরা বাসাগুলো দখলে রেখেছে। এসব বাসার কোন ভাড়া পরিশোধ করা হচ্ছে না। দখলদারদের মধ্যে গ্রেপ্তারকৃত পোস্টম্যান ও ডাক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা মো. আমজাদ আলী খানও রয়েছেন। সম্প্রতি জালিয়াতির মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি এখন কারাগারে আছেন। বাসা দখলদারদের উচ্ছেদ করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে বাসা বরাদ্দ দেয়ার জন্য পোস্টাল কলোনি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ডাক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত জানানোর পরও দখলদাররা বাসা ছাড়ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে ডাক বিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. সিরাজ উদ্দিন গতকাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে সংবাদকে জানান, পোস্টাল কলোনিতে কিছু অবৈধ দখলদার আছে। তাদের নোটিশ দেয়া হয়েছে। শীঘ্রই উচ্ছেদ করা হবে।

পোস্টাল কলোনি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. রবিউল ইসলাম জোয়ারদার বাবলু সংবাদকে জানান, মতিঝিল টিএন্ডটি কলোনিসংলগ্ন পোস্টাল কলোনিতে ৪শ’র বেশি বাসা রয়েছে। সেখানে ডাক বিভাগের অফিসারদের বাসা ছাড়াও ঢাকায় বসবাসকারী ডাক বিভাগের কর্মচারীদের জন্য বাসা রয়েছে। ডাক বিভাগের ঊর্ধ্বতন ইউনিট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বরাদ্দ নিয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বসবাস করতে হয়। প্রতিটি বাসা এইচ, ও, জি, এফ, ই, ডিসহ বিভিন্ন টাইপের।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, ৪ তলাবিশিষ্ট ২৭টি ভবনের ২০১৮ সালে ২০ তলাবিশিষ্ট বহুতল ভবন তৈরি করার জন্য সবাইকে বাসা ছেড়ে দিতে নির্দেশ দেয়া হয়। তখন অনেকেই বাসা ছেড়ে দেয়। সেই সময় ১১টি ৪ তলা ভবন ভাঙা হয়। সেখানে নতুন করে কর্মচারীদের জন্য ২০ তলা ভবন তৈরি করা হচ্ছে।

খালি করার পর ২৭টি ফ্ল্যাট কর্মচারী নেতা মো. আমজাদ আলী খানের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ জোর করে দখলে নিয়ে বসবাস করছেন। শুধু তাই না তারা ওই সব বাসার সরকারি পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল পরিশোধ করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। দখলদার কর্মচারীরা বাসা না ছাড়ার কারণে সেগুলো সংস্কার করা যাচ্ছে না। এমনকি তারা বাসা ছাড়তে বললে উল্টো হুমকি দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি তারা প্রভাববিস্তার করার চেষ্টা করছেন।

জানা গেছে, পোস্টাল কলোনির জি-১৪/২ নম্বর বাসা দখল করে সেখানে গ্রেপ্তারকৃত আমজাদ নিজেই ওয়েলফেয়ার নাম দিয়ে নিজেকে স্বঘোষিত নেতা সেজে সেখানে আড্ডা জমাত। সেখানে বিভিন্ন অপকর্ম হতো বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে ২০১৮ সালে পোস্ট অফিসের ডিজি ও মেট্রো সার্কেলের পোস্টমাস্টার জেনারেল বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এরপরও রহস্যজনক কারণে দখলকৃত বাসা থেকে অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছে না।

সম্প্রতি ডাক বিভাগের মানিঅর্ডার জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অপকর্মে আমজাদ আলী খানসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার ও নকল মানিঅর্ডার ফরম উদ্ধারের পর জিপিও কর্তৃপক্ষ নড়েচলে বসেছেন।

সরেজমিনে মতিঝিল পোস্টাল কলোনিতে গিয়ে দেখা গেছে, তিনটি ২০ তলা ভবন তৈরির কাজ চলছে। ২০১৮ সাল থেকে এ নির্মাণ কাজ চলছে। ৬৫০ বর্গফুটের ২টি ভবনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সেখানে নতুন করে কর্মচারীদের জন্য বাসা বরাদ্দ দেয়া হবে। কিন্তু এখনই সেখানে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কোন নেতা আবার বাসা দখল করে নিজেদের পছন্দের লোকজনকে ঢুকায় তা নিয়ে সাধারণ কর্মচারীরা আতঙ্কে আছেন।

ডাক বিভাগের সিনিয়র পোস্টমাস্টার খন্দকার শাহনূর সাব্বির বলেন, বহুতল ভবন তৈরি করার জন্য কলোনিতে বসবাসকারীদের বাসা ছাড়তে বললে বৈধরা বাসা ছেড়ে দেন। আর খালি বাসা পেয়ে অবৈধ দখলদাররা জোর করে দখলে নেয়। এখনও তারা দখলে আছেন।

অভিযোগ রয়েছে, বাসা বরাদ্দ নিয়ে পোস্টাল কলোনিতে দীর্ঘদিন ধরে কোন নিয়ম কানুন মানা হচ্ছে না। যার প্রভাব বেশি সেই তার দল ভারি করতে পছন্দের লোকজনকে বাসা দখল করে দেয়। এ নিয়ে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এদিকে অভিযুক্ত এফ-৫/৭ বাসিন্দা কর্মচারী সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে, তিনি বলেন, আগে সে পোস্টাল কলোনিতে একটি বাসায় থাকত। কর্তৃপক্ষ চিঠি দেয়ার পর তিনি বাসা ছেড়ে দিয়েছেন। এখন টিএন্ডটি কলোনিতে থাকেন। তবে তার এ বক্তব্য সঠিক নয় বলে পোস্টাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন থেকে জানা গেছে।

এ সম্পর্কে পোস্টাল কলোনি প্রকল্প পরিচালক মো. আনজীর আহম্মদ মুঠোফোনে বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পুরাতন ভবনগুলোর সব বাসা খালি করা হবে। এ লক্ষ্যে কাজ চলছে। আর নতুন কোয়ার্টার নির্মাণ কাজ চলছে। সেখানে ৬৫০,

১০০০, ১২৫০ ও ১৫০০ স্কয়ার ফিটের বাসা নির্মাণ করা হচ্ছে। ওই সব বাসা পদমর্যাদা অনুযায়ী বরাদ্দ দেয়া হবে বলে তিনি জানান।

আরও খবর
সময়োচিত পদক্ষেপে করোনাকালেও বিশ্বমন্দা এড়াতে পেরেছে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী
ইশরাত নিশাত স্মরণে ‘এক জীবনের থিয়েটার’ অনুষ্ঠান
বরগুনার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মনোজ্ঞ প্রকাশনা
কুষ্টিয়ার এসপিকে হাইকোর্টে তলব
প্রধানমন্ত্রীর সুদক্ষ নেতৃত্বে করোনা বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ অর্থমন্ত্রী
মাদকের এডিসহ বরখাস্ত ৫
রাজশাহীতে বিয়ের শর্তে চিকিৎসকের জামিন
ঘাতক চালক রিমান্ডে
কারাগারে নয়, বই হাতে সংশোধনে পাঠালেন আদালত
খেলার মাঠ ও বিনোদনকেন্দ্রের উদ্যোগ নেয়া হবে রেজাউল
হতদরিদ্রদের আবাসন সমস্যা সমাধানে অগ্রাধিকার দেব শাহাদাত
সব ছিনিয়ে নিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দিত ওরা
সবুজ শাকের ডগায় বেঁচে থাকার স্বপ্ন

বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারী ২০২১ , ৭ মাঘ ১৪২৭, ৭ জমাদিউস সানি ১৪৪২

ডাক বিভাগের মতিঝিল পোস্টাল কলোনি

২৭টি ফ্ল্যাট কর্মচারীদের অবৈধ দখলে

বাকী বিল্লাহ

রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় ডাক বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ২৭টি আবাসিক বাসা অবৈধভাবে কর্মচারীরা দখলে রেখেছে। গত প্রায় ৩ বছর ধরে দুর্নীতিবাজ কর্মচারীরা বাসাগুলো দখলে রেখেছে। এসব বাসার কোন ভাড়া পরিশোধ করা হচ্ছে না। দখলদারদের মধ্যে গ্রেপ্তারকৃত পোস্টম্যান ও ডাক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা মো. আমজাদ আলী খানও রয়েছেন। সম্প্রতি জালিয়াতির মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি এখন কারাগারে আছেন। বাসা দখলদারদের উচ্ছেদ করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে বাসা বরাদ্দ দেয়ার জন্য পোস্টাল কলোনি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ডাক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত জানানোর পরও দখলদাররা বাসা ছাড়ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে ডাক বিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. সিরাজ উদ্দিন গতকাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে সংবাদকে জানান, পোস্টাল কলোনিতে কিছু অবৈধ দখলদার আছে। তাদের নোটিশ দেয়া হয়েছে। শীঘ্রই উচ্ছেদ করা হবে।

পোস্টাল কলোনি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. রবিউল ইসলাম জোয়ারদার বাবলু সংবাদকে জানান, মতিঝিল টিএন্ডটি কলোনিসংলগ্ন পোস্টাল কলোনিতে ৪শ’র বেশি বাসা রয়েছে। সেখানে ডাক বিভাগের অফিসারদের বাসা ছাড়াও ঢাকায় বসবাসকারী ডাক বিভাগের কর্মচারীদের জন্য বাসা রয়েছে। ডাক বিভাগের ঊর্ধ্বতন ইউনিট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বরাদ্দ নিয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বসবাস করতে হয়। প্রতিটি বাসা এইচ, ও, জি, এফ, ই, ডিসহ বিভিন্ন টাইপের।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, ৪ তলাবিশিষ্ট ২৭টি ভবনের ২০১৮ সালে ২০ তলাবিশিষ্ট বহুতল ভবন তৈরি করার জন্য সবাইকে বাসা ছেড়ে দিতে নির্দেশ দেয়া হয়। তখন অনেকেই বাসা ছেড়ে দেয়। সেই সময় ১১টি ৪ তলা ভবন ভাঙা হয়। সেখানে নতুন করে কর্মচারীদের জন্য ২০ তলা ভবন তৈরি করা হচ্ছে।

খালি করার পর ২৭টি ফ্ল্যাট কর্মচারী নেতা মো. আমজাদ আলী খানের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ জোর করে দখলে নিয়ে বসবাস করছেন। শুধু তাই না তারা ওই সব বাসার সরকারি পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল পরিশোধ করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। দখলদার কর্মচারীরা বাসা না ছাড়ার কারণে সেগুলো সংস্কার করা যাচ্ছে না। এমনকি তারা বাসা ছাড়তে বললে উল্টো হুমকি দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি তারা প্রভাববিস্তার করার চেষ্টা করছেন।

জানা গেছে, পোস্টাল কলোনির জি-১৪/২ নম্বর বাসা দখল করে সেখানে গ্রেপ্তারকৃত আমজাদ নিজেই ওয়েলফেয়ার নাম দিয়ে নিজেকে স্বঘোষিত নেতা সেজে সেখানে আড্ডা জমাত। সেখানে বিভিন্ন অপকর্ম হতো বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে ২০১৮ সালে পোস্ট অফিসের ডিজি ও মেট্রো সার্কেলের পোস্টমাস্টার জেনারেল বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এরপরও রহস্যজনক কারণে দখলকৃত বাসা থেকে অবৈধ দখলদারকে উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছে না।

সম্প্রতি ডাক বিভাগের মানিঅর্ডার জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অপকর্মে আমজাদ আলী খানসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার ও নকল মানিঅর্ডার ফরম উদ্ধারের পর জিপিও কর্তৃপক্ষ নড়েচলে বসেছেন।

সরেজমিনে মতিঝিল পোস্টাল কলোনিতে গিয়ে দেখা গেছে, তিনটি ২০ তলা ভবন তৈরির কাজ চলছে। ২০১৮ সাল থেকে এ নির্মাণ কাজ চলছে। ৬৫০ বর্গফুটের ২টি ভবনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সেখানে নতুন করে কর্মচারীদের জন্য বাসা বরাদ্দ দেয়া হবে। কিন্তু এখনই সেখানে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কোন নেতা আবার বাসা দখল করে নিজেদের পছন্দের লোকজনকে ঢুকায় তা নিয়ে সাধারণ কর্মচারীরা আতঙ্কে আছেন।

ডাক বিভাগের সিনিয়র পোস্টমাস্টার খন্দকার শাহনূর সাব্বির বলেন, বহুতল ভবন তৈরি করার জন্য কলোনিতে বসবাসকারীদের বাসা ছাড়তে বললে বৈধরা বাসা ছেড়ে দেন। আর খালি বাসা পেয়ে অবৈধ দখলদাররা জোর করে দখলে নেয়। এখনও তারা দখলে আছেন।

অভিযোগ রয়েছে, বাসা বরাদ্দ নিয়ে পোস্টাল কলোনিতে দীর্ঘদিন ধরে কোন নিয়ম কানুন মানা হচ্ছে না। যার প্রভাব বেশি সেই তার দল ভারি করতে পছন্দের লোকজনকে বাসা দখল করে দেয়। এ নিয়ে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এদিকে অভিযুক্ত এফ-৫/৭ বাসিন্দা কর্মচারী সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করলে, তিনি বলেন, আগে সে পোস্টাল কলোনিতে একটি বাসায় থাকত। কর্তৃপক্ষ চিঠি দেয়ার পর তিনি বাসা ছেড়ে দিয়েছেন। এখন টিএন্ডটি কলোনিতে থাকেন। তবে তার এ বক্তব্য সঠিক নয় বলে পোস্টাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন থেকে জানা গেছে।

এ সম্পর্কে পোস্টাল কলোনি প্রকল্প পরিচালক মো. আনজীর আহম্মদ মুঠোফোনে বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পুরাতন ভবনগুলোর সব বাসা খালি করা হবে। এ লক্ষ্যে কাজ চলছে। আর নতুন কোয়ার্টার নির্মাণ কাজ চলছে। সেখানে ৬৫০,

১০০০, ১২৫০ ও ১৫০০ স্কয়ার ফিটের বাসা নির্মাণ করা হচ্ছে। ওই সব বাসা পদমর্যাদা অনুযায়ী বরাদ্দ দেয়া হবে বলে তিনি জানান।