বাইডেনের জন্য আরও বেশি বিপজ্জনক বিশ্ব রেখে গেছেন ট্রাম্প

অ্যাঞ্জেলা ডিওয়ান ও জেমস গ্রিফিথস

ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনা এই কথাই আবার মনে করিয়ে দেয় যে, ট্রাম্পের শাসনামলে আমেরিকা গভীরভাবে বিভক্ত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে বিশ্বের ওপরও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভক্তির একই প্রভাব রেখেছেন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও গত বুধবার ট্রাম্প যখন জো বাইডেনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করলেন, তখন তিনি তার উত্তরসূরির কাছে চার বছর আগের তুলনায় অনেক অনেক বেশি বিপজ্জনক বিশ্ব রেখে গেছেন।

ট্রাম্প ২০১৮ সালে ইরানের সঙ্গে করা পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে আসেন। আরও পাঁচটি দেশের সঙ্গে মিলে ওবামা প্রশাসন সেই চুক্তি করেছিল। চুক্তিতে বলা হয়েছিল, ইরান ৩০০ কেজি পর্যন্ত কম-পরিশোধিত ইউরেনিয়াম উৎপাদন করতে পারবে। পরমাণু বোমা বানাতে প্রয়োজন ইউরেনিয়ামের ৯০ শতাংশ পরিশোধন। চুক্তি অনুযায়ী ইরানকে দেয়া হয়েছিল ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ পরিশোধনের অধিকার। চুক্তিতে স্বাক্ষর করার আগে দেশটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করত ২০ শতাংশ। এর পরিবর্তে ইরানের ওপর থেকে অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেয়া হয়। চুক্তি বাতিলের পর ইরানের এখন ২.৪ টন কম পরিশোধিত ইউরেনিয়াম আছে। দেশটি আবার আগের মতো ২০ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে।

চুক্তি থেকে সরে গিয়ে ট্রাম্প অর্থনৈতিক চাপ বাড়ালেও ইরানকে পরমাণু বা ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি থেকে পিছু হটানো যায়নি। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক কর্মসূচি পরিচালক জুস্ট হিল্টারম্যান বলেছেন, ‘জিনকে আবার বোতলে ভরা অত্যন্ত কঠিন হবে।’

বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনায় ইরান সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। দেশটি ইতোমধ্যে বলে দিয়েছে যে, তারা চুক্তির শর্ত পুনর্বিবেচনা করবে না, যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক অবরোধ শিথিল করলেই শুধু তারা চুক্তি মানতে শুরু করবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইরানের সঙ্গে চুক্তি থেকে সরে আসায় মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতা বেড়েছে।

২০১৯ সালে মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করেছে ইরান। ২০২০ সালে ইরানি কমান্ডার কাশেম সোলায়মানি ইরাকে অবস্থানকালে মার্কিন ড্রোন হামলায় মারা গেছেন। এর ফলে দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে ওঠে, যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়।

ট্রাম্পের মেয়াদকালকে তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার দরকষাকষির অবস্থানকেই শক্তিশালী করেছে। একইভাবে পিয়ংইয়ংও তার অবস্থান শক্ত করেছে। গত সপ্তাহে ক্ষমতাসীন দলের সম্মেলনে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন নতুন পারমাণবিক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির উচ্চাভিলাষী তালিকা পেশ করেছেন।

উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ট্রাম্প শুরু করেছিলেন হুমকি-ধমকি দিয়ে। কিমকে ‘পুচকে রকেট মানব’ বলে ট্রাম্প পারমাণবিক বোমার ‘বিগ বাটন’ চেপে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন পিয়ংইয়ংকে। তবে এক সময় তিনি কিমের সঙ্গে বৈঠকেও বসেছেন। এরপর উত্তর কোরিয়ার মিসাইল পরীক্ষায় বিরতি ঘটলেও কিমের সঙ্গে ট্রাম্পের রঙ্গ তামাশা আদতে ব্যর্থ হয়েছে। দুজনের মধ্যে হওয়া তিনটি বৈঠকে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে কোন কাজেই আসেনি।

ওয়াশিংটন আর সিউলের সঙ্গে পিয়ংইয়ংয়ের সম্পর্কে অবনতি ঘটার পর উত্তর কোরিয়া পরমাণু ও মিসাইল ভাণ্ডার আরও সমৃদ্ধ করেছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্স ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) তথ্য অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়ার কাছে এখন ৩০ থেকে ৪০টি পরমাণু বোমা আছে। অথচ ২০১৬ সালে ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার আগে সংখ্যাটা ছিল ১০।

এশিয়ায় ওয়াশিংটনের সবচেয়ে বড় দুই মিত্র দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান পিইয়ংইয়ংয়ের মিসাইল ও সম্ভাব্য পরমাণু বোমার হুমকির মুখে পড়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ গুয়ামের আমেরিকান সামরিক ঘাঁটিও এই আওতায় পড়েছে। উত্তর কোরিয়া নিয়ে বাইডেন কী করবেনÑসেটা এখনই অনুমান করা যাচ্ছে না।

বুলেটিন অব অ্যাটোমিক সায়েন্টিস্টে বলা হয়েছে, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের যে সীমানা গত অর্ধ শতাব্দী ধরে বিশ্বকে পারমাণবিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছে সেটা ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছে।

স্নায়ুযুদ্ধের সময় পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ঐতিহাসিক চুক্তি করে। ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (আইএনএফ) নামের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে আসেন ট্রাম্প। দু’দেশের মধ্যে হওয়া অবশিষ্ট একটি চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি। বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের ঠিক ১৬ দিন পর। আইএনএফ চুক্তি বাতিলের পর বিশ্ব আরও বেশি বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। রাশিয়া ১৯৯২ সালে স্বাক্ষরিত ‘মুক্ত আকাশ’ চুক্তি থেকে সরে আসার প্রক্রিয়া শুরুরও ঘোষণা দিয়েছে। এই চুক্তির আওতায় কোন দেশের নজরদারি বিমান চুক্তিভুক্ত দেশগুলোর আকাশে বিনা বাধায় উড়তে পারে। আইএনএফ এবং ওপেন স্কাইজ- দুটো চুক্তির সমাপ্তিই সামরিক দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিপদ বাড়াবে।

গুজব রটানো ও সাইবার হামলায় রাশিয়ার শক্তিও চিন্তার বিষয়। ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়া যে হস্তক্ষেপ করেছিল সেটা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা নিশ্চিত করার পর দেশটির এই শক্তি বেশ বোঝা গেছে।

আমেরিকার শত্রুরা তাদের অভ্যন্তরীণ দমন-পীড়নমূলক কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেয়ার কাজে ক্যাপিটলের সহিংসতাকে ব্যবহার করছে। মার্কিন গণতন্ত্রকে কপট হিসেবে চিহ্নিত করছে। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত পত্রিকা গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদক হু শিজিন দাঙ্গার পর টুইট বার্তায় লিখেছেন, এই ঘটনার পর চীনের মানুষ কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে ভক্তি করতে পারে?

চীনা আগ্রাসনে লাগাম টানতে পারেনি ট্রাম্প প্রশাসন। কয়েক দশকের মধ্যে ভারতের সঙ্গে হিমালয় সীমান্তে চীনের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাত হয়েছে। তাইওয়ানের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বারবারই হুমকি দিচ্ছে চীন। পূর্ব চীন সাগরে জাপান নিয়ন্ত্রিত দ্বীপ নিয়ে বিরোধ চলছেই। জাতীয় নিরাপত্তা আইন করে হংকংয়ের নাগরিকদের স্বাধীনতা খর্ব করেছে। উইঘুরে লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার। ট্রাম্প প্রশাসন এসবের বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারেনি। তার সময় চীনের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কের সবচেয়ে বেশি অবনতি হয়েছে।

গত মাসের শেষের দিকে বাইডেন বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে এমন এক বিশ্বের বিশ্বাস ও আস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে যেটা আমাদের সঙ্গে বা আমাদের ছাড়া কাজ করার পথ খুঁজছে।’

জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল সায়ান্স অ্যান্ড টেকনলোজি পলিসির শ্যারন স্কোয়াশনি বলেছেন, বাইডেনকে কূটনৈতিক পুনর্নির্মাণের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। রাশিয়া ও চিনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে দাঁড় করানোর পরিবর্তে দেশ দুটির সঙ্গে কাজ করতে বাইডেনকে পররাষ্ট্রনীতিতে বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগাতে হবে। সিনিয়র বুশ ও ক্লিন্টন প্রশাসনে কাজ করা শ্যারন মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র সুপার পাওয়ার হতে পারে তবে তার একার পক্ষে পারমাণবিক অস্ত্রের ঝুঁকি কমানো সম্ভব হবে না। রাশিয়া ও চিনের সহযোগিতা লাগবেই।

(সংক্ষেপিত)

সিএনএন

শুক্রবার, ২২ জানুয়ারী ২০২১ , ৮ মাঘ ১৪২৭, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪২

বাইডেনের জন্য আরও বেশি বিপজ্জনক বিশ্ব রেখে গেছেন ট্রাম্প

অ্যাঞ্জেলা ডিওয়ান ও জেমস গ্রিফিথস

image

ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনা এই কথাই আবার মনে করিয়ে দেয় যে, ট্রাম্পের শাসনামলে আমেরিকা গভীরভাবে বিভক্ত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে বিশ্বের ওপরও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভক্তির একই প্রভাব রেখেছেন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও গত বুধবার ট্রাম্প যখন জো বাইডেনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করলেন, তখন তিনি তার উত্তরসূরির কাছে চার বছর আগের তুলনায় অনেক অনেক বেশি বিপজ্জনক বিশ্ব রেখে গেছেন।

ট্রাম্প ২০১৮ সালে ইরানের সঙ্গে করা পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে আসেন। আরও পাঁচটি দেশের সঙ্গে মিলে ওবামা প্রশাসন সেই চুক্তি করেছিল। চুক্তিতে বলা হয়েছিল, ইরান ৩০০ কেজি পর্যন্ত কম-পরিশোধিত ইউরেনিয়াম উৎপাদন করতে পারবে। পরমাণু বোমা বানাতে প্রয়োজন ইউরেনিয়ামের ৯০ শতাংশ পরিশোধন। চুক্তি অনুযায়ী ইরানকে দেয়া হয়েছিল ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ পরিশোধনের অধিকার। চুক্তিতে স্বাক্ষর করার আগে দেশটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করত ২০ শতাংশ। এর পরিবর্তে ইরানের ওপর থেকে অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেয়া হয়। চুক্তি বাতিলের পর ইরানের এখন ২.৪ টন কম পরিশোধিত ইউরেনিয়াম আছে। দেশটি আবার আগের মতো ২০ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে।

চুক্তি থেকে সরে গিয়ে ট্রাম্প অর্থনৈতিক চাপ বাড়ালেও ইরানকে পরমাণু বা ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি থেকে পিছু হটানো যায়নি। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক কর্মসূচি পরিচালক জুস্ট হিল্টারম্যান বলেছেন, ‘জিনকে আবার বোতলে ভরা অত্যন্ত কঠিন হবে।’

বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনায় ইরান সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। দেশটি ইতোমধ্যে বলে দিয়েছে যে, তারা চুক্তির শর্ত পুনর্বিবেচনা করবে না, যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক অবরোধ শিথিল করলেই শুধু তারা চুক্তি মানতে শুরু করবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইরানের সঙ্গে চুক্তি থেকে সরে আসায় মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতা বেড়েছে।

২০১৯ সালে মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করেছে ইরান। ২০২০ সালে ইরানি কমান্ডার কাশেম সোলায়মানি ইরাকে অবস্থানকালে মার্কিন ড্রোন হামলায় মারা গেছেন। এর ফলে দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে ওঠে, যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়।

ট্রাম্পের মেয়াদকালকে তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার দরকষাকষির অবস্থানকেই শক্তিশালী করেছে। একইভাবে পিয়ংইয়ংও তার অবস্থান শক্ত করেছে। গত সপ্তাহে ক্ষমতাসীন দলের সম্মেলনে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন নতুন পারমাণবিক অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির উচ্চাভিলাষী তালিকা পেশ করেছেন।

উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ট্রাম্প শুরু করেছিলেন হুমকি-ধমকি দিয়ে। কিমকে ‘পুচকে রকেট মানব’ বলে ট্রাম্প পারমাণবিক বোমার ‘বিগ বাটন’ চেপে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন পিয়ংইয়ংকে। তবে এক সময় তিনি কিমের সঙ্গে বৈঠকেও বসেছেন। এরপর উত্তর কোরিয়ার মিসাইল পরীক্ষায় বিরতি ঘটলেও কিমের সঙ্গে ট্রাম্পের রঙ্গ তামাশা আদতে ব্যর্থ হয়েছে। দুজনের মধ্যে হওয়া তিনটি বৈঠকে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে কোন কাজেই আসেনি।

ওয়াশিংটন আর সিউলের সঙ্গে পিয়ংইয়ংয়ের সম্পর্কে অবনতি ঘটার পর উত্তর কোরিয়া পরমাণু ও মিসাইল ভাণ্ডার আরও সমৃদ্ধ করেছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্স ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) তথ্য অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়ার কাছে এখন ৩০ থেকে ৪০টি পরমাণু বোমা আছে। অথচ ২০১৬ সালে ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার আগে সংখ্যাটা ছিল ১০।

এশিয়ায় ওয়াশিংটনের সবচেয়ে বড় দুই মিত্র দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান পিইয়ংইয়ংয়ের মিসাইল ও সম্ভাব্য পরমাণু বোমার হুমকির মুখে পড়েছে। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ গুয়ামের আমেরিকান সামরিক ঘাঁটিও এই আওতায় পড়েছে। উত্তর কোরিয়া নিয়ে বাইডেন কী করবেনÑসেটা এখনই অনুমান করা যাচ্ছে না।

বুলেটিন অব অ্যাটোমিক সায়েন্টিস্টে বলা হয়েছে, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের যে সীমানা গত অর্ধ শতাব্দী ধরে বিশ্বকে পারমাণবিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছে সেটা ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছে।

স্নায়ুযুদ্ধের সময় পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ঐতিহাসিক চুক্তি করে। ইন্টারমিডিয়েট-রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস (আইএনএফ) নামের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে আসেন ট্রাম্প। দু’দেশের মধ্যে হওয়া অবশিষ্ট একটি চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি। বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের ঠিক ১৬ দিন পর। আইএনএফ চুক্তি বাতিলের পর বিশ্ব আরও বেশি বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। রাশিয়া ১৯৯২ সালে স্বাক্ষরিত ‘মুক্ত আকাশ’ চুক্তি থেকে সরে আসার প্রক্রিয়া শুরুরও ঘোষণা দিয়েছে। এই চুক্তির আওতায় কোন দেশের নজরদারি বিমান চুক্তিভুক্ত দেশগুলোর আকাশে বিনা বাধায় উড়তে পারে। আইএনএফ এবং ওপেন স্কাইজ- দুটো চুক্তির সমাপ্তিই সামরিক দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিপদ বাড়াবে।

গুজব রটানো ও সাইবার হামলায় রাশিয়ার শক্তিও চিন্তার বিষয়। ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়া যে হস্তক্ষেপ করেছিল সেটা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা নিশ্চিত করার পর দেশটির এই শক্তি বেশ বোঝা গেছে।

আমেরিকার শত্রুরা তাদের অভ্যন্তরীণ দমন-পীড়নমূলক কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেয়ার কাজে ক্যাপিটলের সহিংসতাকে ব্যবহার করছে। মার্কিন গণতন্ত্রকে কপট হিসেবে চিহ্নিত করছে। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত পত্রিকা গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদক হু শিজিন দাঙ্গার পর টুইট বার্তায় লিখেছেন, এই ঘটনার পর চীনের মানুষ কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে ভক্তি করতে পারে?

চীনা আগ্রাসনে লাগাম টানতে পারেনি ট্রাম্প প্রশাসন। কয়েক দশকের মধ্যে ভারতের সঙ্গে হিমালয় সীমান্তে চীনের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাত হয়েছে। তাইওয়ানের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বারবারই হুমকি দিচ্ছে চীন। পূর্ব চীন সাগরে জাপান নিয়ন্ত্রিত দ্বীপ নিয়ে বিরোধ চলছেই। জাতীয় নিরাপত্তা আইন করে হংকংয়ের নাগরিকদের স্বাধীনতা খর্ব করেছে। উইঘুরে লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার। ট্রাম্প প্রশাসন এসবের বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারেনি। তার সময় চীনের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কের সবচেয়ে বেশি অবনতি হয়েছে।

গত মাসের শেষের দিকে বাইডেন বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে এমন এক বিশ্বের বিশ্বাস ও আস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে যেটা আমাদের সঙ্গে বা আমাদের ছাড়া কাজ করার পথ খুঁজছে।’

জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল সায়ান্স অ্যান্ড টেকনলোজি পলিসির শ্যারন স্কোয়াশনি বলেছেন, বাইডেনকে কূটনৈতিক পুনর্নির্মাণের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। রাশিয়া ও চিনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে দাঁড় করানোর পরিবর্তে দেশ দুটির সঙ্গে কাজ করতে বাইডেনকে পররাষ্ট্রনীতিতে বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগাতে হবে। সিনিয়র বুশ ও ক্লিন্টন প্রশাসনে কাজ করা শ্যারন মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র সুপার পাওয়ার হতে পারে তবে তার একার পক্ষে পারমাণবিক অস্ত্রের ঝুঁকি কমানো সম্ভব হবে না। রাশিয়া ও চিনের সহযোগিতা লাগবেই।

(সংক্ষেপিত)

সিএনএন