সানোফি বাংলাদেশকে কিনে নিল বেক্সিমকো

অধিকাংশ শেয়ার কিনে নিয়ে বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি সানোফির বাংলাদেশ ইউনিটের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। সম্প্রতি বেক্সিমকো ফার্মার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেডের যে ৫৪ দশমিক ৬ শতাংশ শেয়ার সানোফি গ্রুপের হাতে ছিল, তা কিনে নিতে চুক্তি করেছে তারা। সানোফি বাংলাদেশের বাকি ৪৫ দশমিক ৪ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে ২৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ আছে বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয় এবং ১৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের হাতে।

লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জকে বেক্সিমকো ফার্মা জানিয়েছে, সানোফি বাংলাদেশের এই শেয়ার অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ভিত্তিমূল্য ধরা হয়েছে ৩৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন পাউন্ড। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ ইনভেস্টমেন্ট বিভাগের ছাড়পত্র এবং ক্রয়-বিক্রয়ের অর্থ লেনদেনের অনুমতি পেলেই সানোফির সঙ্গে চূড়ান্ত ক্রয় চুক্তি করবে বেক্সিমকো, সেজন্য ৩ থেকে ৯ মাস সময় লাগতে পারে বলে জানানো হয়েছে তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

যে কটি বহুজাতিক কোম্পানি বাংলাদেশে কারখানা করে ওষুধ উৎপাদন এবং বাজারজাত করে আসছিল, তাদের মধ্যে সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেড একটি। ২০১৯ সালে বিশ্ববাজারে ৩৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য বিক্রি করা ফরাসি কোম্পানি সানোফি বাংলাদেশে ব্যবসা করে আসছে ছয় দশকের বেশি সময় ধরে। কিন্তু হঠাৎ করেই তারা ব্যবসা গুটিয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা জানায়। ২০১৯ সালের অক্টোবরে সানোফির এক বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা মনে করি, বাংলাদেশে ব্যবসার সম্ভাবনা পুরোপুরিভাবে কাজে লাগানোর মতো অবস্থানে সানোফি নেই। এ অবস্থার পরিবর্তনে সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেডে থাকা আমাদের শেয়ার হস্তান্তরের জন্য অংশীদার খুঁজছি আমরা। তাদের সেই ঘোষণার ১৫ মাস পর সানোফির হাতে থাকা ৫৪ দশমিক ৬ শতাংশ শেয়ার বেক্সিমকোর কাছে বিক্রির জন্য চুক্তি করার খবর এল।

বেক্সিমকো ফার্মা জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে তাদের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান। সানোফি বাংলাদেশের একজন প্রতিনিধি এবং ফ্রান্স থেকে সানোফি গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।

টঙ্গীতে এ কোম্পানির একটি ওষুধ তৈরির কারখানা রয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের বিভিন্ন ভ্যাকসিন, ইনসুলিন ও কেমোথেরাপির নানা ওষুধ সানোফি বাংলাদেশে আমদানি করে। হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, টিউমার চিকিৎসা, চর্মরোগ এবং সিএনএসে সানোফির ওষুধ বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়।

চুক্তির আওতায় টঙ্গীতে সানোফির কারখানার কাছে ২৫ একর জায়গাজুড়ে একটি সেফালোস্পিরিন এন্টিবায়োটিক তৈরির কারখানাসহ অন্যান্য ওষুধ তৈরির কারখানার মালিকানাও বেক্সিমকো পাবে। সানোফির ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশে বিপণনের ক্ষেত্রেও অগ্রাধিকার নিশ্চিত হবে এ চুক্তির মাধ্যমে।

বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান বলেন, এটা আমাদের কোম্পানির ইতিহাসে দ্বিতীয় অধিগ্রহণ। এর আগে ২০১৮ সালে বেক্সিমকো ফার্মা নুভিস্তা ফার্মা (আগের অরগানন বাংলাদেশ) লিমিটেড অধিগ্রহণ করে। এই অধিগ্রহণ সানোফির শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে এমন সব জায়গায় বেক্সিমকোর অবস্থান মজবুত করবে, যা ভবিষ্যতে কোম্পানির টেকসই প্রবৃদ্ধির ভিত হিসেবে কাজ করবে।

শনিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২১ , ৯ মাঘ ১৪২৭, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪২

সানোফি বাংলাদেশকে কিনে নিল বেক্সিমকো

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবশেক

image

অধিকাংশ শেয়ার কিনে নিয়ে বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি সানোফির বাংলাদেশ ইউনিটের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে দেশের শীর্ষস্থানীয় ওষুধ প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড। সম্প্রতি বেক্সিমকো ফার্মার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেডের যে ৫৪ দশমিক ৬ শতাংশ শেয়ার সানোফি গ্রুপের হাতে ছিল, তা কিনে নিতে চুক্তি করেছে তারা। সানোফি বাংলাদেশের বাকি ৪৫ দশমিক ৪ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে ২৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ আছে বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয় এবং ১৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের হাতে।

লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জকে বেক্সিমকো ফার্মা জানিয়েছে, সানোফি বাংলাদেশের এই শেয়ার অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ভিত্তিমূল্য ধরা হয়েছে ৩৫ দশমিক ৫ মিলিয়ন পাউন্ড। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ ইনভেস্টমেন্ট বিভাগের ছাড়পত্র এবং ক্রয়-বিক্রয়ের অর্থ লেনদেনের অনুমতি পেলেই সানোফির সঙ্গে চূড়ান্ত ক্রয় চুক্তি করবে বেক্সিমকো, সেজন্য ৩ থেকে ৯ মাস সময় লাগতে পারে বলে জানানো হয়েছে তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

যে কটি বহুজাতিক কোম্পানি বাংলাদেশে কারখানা করে ওষুধ উৎপাদন এবং বাজারজাত করে আসছিল, তাদের মধ্যে সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেড একটি। ২০১৯ সালে বিশ্ববাজারে ৩৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য বিক্রি করা ফরাসি কোম্পানি সানোফি বাংলাদেশে ব্যবসা করে আসছে ছয় দশকের বেশি সময় ধরে। কিন্তু হঠাৎ করেই তারা ব্যবসা গুটিয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা জানায়। ২০১৯ সালের অক্টোবরে সানোফির এক বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা মনে করি, বাংলাদেশে ব্যবসার সম্ভাবনা পুরোপুরিভাবে কাজে লাগানোর মতো অবস্থানে সানোফি নেই। এ অবস্থার পরিবর্তনে সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেডে থাকা আমাদের শেয়ার হস্তান্তরের জন্য অংশীদার খুঁজছি আমরা। তাদের সেই ঘোষণার ১৫ মাস পর সানোফির হাতে থাকা ৫৪ দশমিক ৬ শতাংশ শেয়ার বেক্সিমকোর কাছে বিক্রির জন্য চুক্তি করার খবর এল।

বেক্সিমকো ফার্মা জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে তাদের পক্ষে চুক্তিতে সই করেন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান। সানোফি বাংলাদেশের একজন প্রতিনিধি এবং ফ্রান্স থেকে সানোফি গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।

টঙ্গীতে এ কোম্পানির একটি ওষুধ তৈরির কারখানা রয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের বিভিন্ন ভ্যাকসিন, ইনসুলিন ও কেমোথেরাপির নানা ওষুধ সানোফি বাংলাদেশে আমদানি করে। হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, টিউমার চিকিৎসা, চর্মরোগ এবং সিএনএসে সানোফির ওষুধ বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়।

চুক্তির আওতায় টঙ্গীতে সানোফির কারখানার কাছে ২৫ একর জায়গাজুড়ে একটি সেফালোস্পিরিন এন্টিবায়োটিক তৈরির কারখানাসহ অন্যান্য ওষুধ তৈরির কারখানার মালিকানাও বেক্সিমকো পাবে। সানোফির ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশে বিপণনের ক্ষেত্রেও অগ্রাধিকার নিশ্চিত হবে এ চুক্তির মাধ্যমে।

বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান বলেন, এটা আমাদের কোম্পানির ইতিহাসে দ্বিতীয় অধিগ্রহণ। এর আগে ২০১৮ সালে বেক্সিমকো ফার্মা নুভিস্তা ফার্মা (আগের অরগানন বাংলাদেশ) লিমিটেড অধিগ্রহণ করে। এই অধিগ্রহণ সানোফির শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে এমন সব জায়গায় বেক্সিমকোর অবস্থান মজবুত করবে, যা ভবিষ্যতে কোম্পানির টেকসই প্রবৃদ্ধির ভিত হিসেবে কাজ করবে।