পদ্মানদীর পানি দ্রুতহারে কমতে থাকার কারণে নাব্যতা সঙ্কট এবং নদীর মাঝে জেগে ওঠা ছোট-বড় অসংখ্য ডুবোচরের কারণে ফরিদপুরের সিএন্ডবি ঘাট নৌ-বন্দরে ভিড়তে পারছে না পণ্যবাহী জাহাজ, কার্গো ও ট্রলার। ফলে অচল হতে বসেছে জেলার একমাত্র নৌ-বন্দর হিসাবে পরিচিত সিএন্ডবি ঘাট। গত একমাস ধরে পানি কমার কারনে নৌ-বন্দরে আসতে বেগ পেতে হচ্ছে পণ্যবাহী নৌযানগুলো। ডুবোচর সৃষ্টি হওয়ায় বড় আকারের কোন জাহাজ ও কার্গো ভিড়তে পারছে না ঘাটে। সিএ্যান্ডবি ঘাট থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে চরভদ্রাসন উপজেলার এমপি ডাঙ্গী, জাকেরের সূরা এলাকায় জাহাজগুলো থামতে বাধ্য হচ্ছে। আর এসব জাহাজের পণ্যগুলো সেখান থেকে ছোট কার্গো ও ট্রলারে করে সিএন্ডবি ঘাট নৌ-বন্দরে আনা হচ্ছে। যার কারণে মালামাল লোড-আনলোডে খরচ পড়ছে বেশি। ফলে পণ্যবাহী নৌযানের মালিকগণ ও পণ্য আমদানিকারকেরা চরম বিপাকে পড়েছেন। তাছাড়া নৌ-বন্দর এলাকার প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক বেকার হতে বসেছে। এছাড়া দিনের পর দিন অরক্ষিত স্থানে জাহাজ, কার্গোগুলো থাকায় পড়তে হচ্ছে ডাকাতের কবলে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ফরিদপুরের সিঅ্যান্ডবি ঘাট নৌ বন্দরে ভেরার জন্য পণ্যবাহী এসব নৌযান অপেক্ষা করছে। কিন্তু পদ্মা নদীতে পর্যাপ্ত নাব্যতা না থাকায় নৌযানগুলো বন্দরে ভিড়তে পারছে না। বন্দর হতে ৪ কিলোমিটার দূরে আটকা পড়ে আছে পণ্যবাহী নৌযান গুলো। দেশের বিভিন্ন বন্দর হতে নৌ পথে বোরো মৌসুমের সার, গম, সিমেন্ট, কয়লা, বালু সহ নানান পণ্য নিয়ে এসব নৌযান ফরিদপুর বন্দরের অদূরে গদাধরডাঙ্গিসহ চরভদ্রাসনের হাজিগঞ্জ, এমপি ডাঙ্গী ও জাকেরের সুরা এলাকায় পণ্যসমেত অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছে।
নারায়নগঞ্জ থেকে সিমেন্ট নিয়ে ঘাটে এসেছেন শেখ ফরিদ-৩ নামের কার্গোর চালক মো. আলাউদ্দিন শেখ। তিনি জানান, বন্দর পর্যন্ত পৌঁছতে হলে যে পরিমাণ পানি থাকা প্রয়োজন সেই পানি এখন নেই বলে ডুবো চরে বেশ কয়েকবার আটকা পড়েছি। ফলে তেল খরচ বেশি লেগেছে। যেভাবে পানি কমছে তাতে ফেরত যেতে পারবো কিনা জানিনা। আরেক নৌযানের চালক শাহজাহান জানান, অন্তত পক্ষে ১০ হাত গভীর পানি থাকা প্রয়োজন ছিলো কিন্তু সেখানে কোথাও বা দুই-তিন হাত পানি রয়েছে। এভাবে অরক্ষিত স্থানে পন্যসহ কার্গো ভেড়ানোর ফলে তারা স্টাফসহ নিরাপত্তাহীনতায়ও রয়েছেন। এখন পণ্য খালাসে নানারকম হয়রানি ছাড়াও পরিবহন খরচ বেড়ে যাবে বলে জানান তিনি।
বন্দরের নৌযান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. হেলালউদ্দিন বলেন, দক্ষিণবঙ্গসহ বৃহত্তর ফরিদপুরের ব্যবসায়িক পণ্য আনা নেয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ নৌবন্দর। বছরের ৫ মাসের মতো সময় এখানে পানি কম থাকে বিধায় বন্দরে পণ্য খালাসে জটিলতা সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি গত একমাস যাবত পদ্মার বুকে যেই অসংখ্য ডুবোচরের সৃষ্টি হয়েছে সেজন্য বন্দরমুখি পণ্যবাহী বেশকিছু জাহাজ আটকা পড়েছে।
নৌবন্দর যে ইউনিয়নের অবস্থিত সেই ডিক্রিরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, নাব্যতা না থাকায় বন্দরটি অচল হতে বসেছে। বন্দরটিকে ঘিরে হাজার হাজার শ্রমিক-ব্যবসায়ীর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছিল। বন্দরটি অচল হলে শ্রমিকেরা কাজ হারাবে, ফলে চুরি-ছিনতাই বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে দ্রুতই ড্রেজার দিয়ে বালু কাটা হলে ঘাটটি সচল থাকবে।
বিআইডাব্লিউটিএ’র (আরিচা ঘাট) উপ-পরিচালক মাসুদ পারভেজ বলেন, নাব্যতা সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা ড্রেজার দিয়ে বালু কাটার কাজ শুরু করবো। যদিও আমাদের একটু সময় লাগতে পারে। স্থানীয়ভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু কেটে ক্যানেল তৈরির বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করছি।
রবিবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২১ , ১০ মাঘ ১৪২৭, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪২
কে এম রুবেল, ফরিদপুর
পদ্মানদীর পানি দ্রুতহারে কমতে থাকার কারণে নাব্যতা সঙ্কট এবং নদীর মাঝে জেগে ওঠা ছোট-বড় অসংখ্য ডুবোচরের কারণে ফরিদপুরের সিএন্ডবি ঘাট নৌ-বন্দরে ভিড়তে পারছে না পণ্যবাহী জাহাজ, কার্গো ও ট্রলার। ফলে অচল হতে বসেছে জেলার একমাত্র নৌ-বন্দর হিসাবে পরিচিত সিএন্ডবি ঘাট। গত একমাস ধরে পানি কমার কারনে নৌ-বন্দরে আসতে বেগ পেতে হচ্ছে পণ্যবাহী নৌযানগুলো। ডুবোচর সৃষ্টি হওয়ায় বড় আকারের কোন জাহাজ ও কার্গো ভিড়তে পারছে না ঘাটে। সিএ্যান্ডবি ঘাট থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে চরভদ্রাসন উপজেলার এমপি ডাঙ্গী, জাকেরের সূরা এলাকায় জাহাজগুলো থামতে বাধ্য হচ্ছে। আর এসব জাহাজের পণ্যগুলো সেখান থেকে ছোট কার্গো ও ট্রলারে করে সিএন্ডবি ঘাট নৌ-বন্দরে আনা হচ্ছে। যার কারণে মালামাল লোড-আনলোডে খরচ পড়ছে বেশি। ফলে পণ্যবাহী নৌযানের মালিকগণ ও পণ্য আমদানিকারকেরা চরম বিপাকে পড়েছেন। তাছাড়া নৌ-বন্দর এলাকার প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক বেকার হতে বসেছে। এছাড়া দিনের পর দিন অরক্ষিত স্থানে জাহাজ, কার্গোগুলো থাকায় পড়তে হচ্ছে ডাকাতের কবলে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ফরিদপুরের সিঅ্যান্ডবি ঘাট নৌ বন্দরে ভেরার জন্য পণ্যবাহী এসব নৌযান অপেক্ষা করছে। কিন্তু পদ্মা নদীতে পর্যাপ্ত নাব্যতা না থাকায় নৌযানগুলো বন্দরে ভিড়তে পারছে না। বন্দর হতে ৪ কিলোমিটার দূরে আটকা পড়ে আছে পণ্যবাহী নৌযান গুলো। দেশের বিভিন্ন বন্দর হতে নৌ পথে বোরো মৌসুমের সার, গম, সিমেন্ট, কয়লা, বালু সহ নানান পণ্য নিয়ে এসব নৌযান ফরিদপুর বন্দরের অদূরে গদাধরডাঙ্গিসহ চরভদ্রাসনের হাজিগঞ্জ, এমপি ডাঙ্গী ও জাকেরের সুরা এলাকায় পণ্যসমেত অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছে।
নারায়নগঞ্জ থেকে সিমেন্ট নিয়ে ঘাটে এসেছেন শেখ ফরিদ-৩ নামের কার্গোর চালক মো. আলাউদ্দিন শেখ। তিনি জানান, বন্দর পর্যন্ত পৌঁছতে হলে যে পরিমাণ পানি থাকা প্রয়োজন সেই পানি এখন নেই বলে ডুবো চরে বেশ কয়েকবার আটকা পড়েছি। ফলে তেল খরচ বেশি লেগেছে। যেভাবে পানি কমছে তাতে ফেরত যেতে পারবো কিনা জানিনা। আরেক নৌযানের চালক শাহজাহান জানান, অন্তত পক্ষে ১০ হাত গভীর পানি থাকা প্রয়োজন ছিলো কিন্তু সেখানে কোথাও বা দুই-তিন হাত পানি রয়েছে। এভাবে অরক্ষিত স্থানে পন্যসহ কার্গো ভেড়ানোর ফলে তারা স্টাফসহ নিরাপত্তাহীনতায়ও রয়েছেন। এখন পণ্য খালাসে নানারকম হয়রানি ছাড়াও পরিবহন খরচ বেড়ে যাবে বলে জানান তিনি।
বন্দরের নৌযান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. হেলালউদ্দিন বলেন, দক্ষিণবঙ্গসহ বৃহত্তর ফরিদপুরের ব্যবসায়িক পণ্য আনা নেয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ নৌবন্দর। বছরের ৫ মাসের মতো সময় এখানে পানি কম থাকে বিধায় বন্দরে পণ্য খালাসে জটিলতা সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি গত একমাস যাবত পদ্মার বুকে যেই অসংখ্য ডুবোচরের সৃষ্টি হয়েছে সেজন্য বন্দরমুখি পণ্যবাহী বেশকিছু জাহাজ আটকা পড়েছে।
নৌবন্দর যে ইউনিয়নের অবস্থিত সেই ডিক্রিরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, নাব্যতা না থাকায় বন্দরটি অচল হতে বসেছে। বন্দরটিকে ঘিরে হাজার হাজার শ্রমিক-ব্যবসায়ীর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছিল। বন্দরটি অচল হলে শ্রমিকেরা কাজ হারাবে, ফলে চুরি-ছিনতাই বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে দ্রুতই ড্রেজার দিয়ে বালু কাটা হলে ঘাটটি সচল থাকবে।
বিআইডাব্লিউটিএ’র (আরিচা ঘাট) উপ-পরিচালক মাসুদ পারভেজ বলেন, নাব্যতা সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা ড্রেজার দিয়ে বালু কাটার কাজ শুরু করবো। যদিও আমাদের একটু সময় লাগতে পারে। স্থানীয়ভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু কেটে ক্যানেল তৈরির বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করছি।