আহরণ নিষিদ্ধ মৌসুমে

বনকর্তাদের যোগসাজশে সুন্দরবনে কাঁকড়া নিধন

হুমকিতে প্রাকৃতিক সম্পদ

আহরণ নিষিদ্ধ মৌসুমেও নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সুন্দরবনজুড়ে কাঁকড়া নিধন চালাচ্ছে এক শ্রেণীর অসাধু জেলেরা। যার ফলে প্রাকৃতিক এ সম্পদ হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, এক শ্রেণীর অসাধু বন কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাজশে মহাজন নামধারী স্বার্থন্বেষী একাধিক মহল এমন সুযোগ কাজে লাগিয়ে কাঁকড়া নিধন করে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছেন এ সম্পদকে। তবে, মৎস্য বিভাগ, বন বিভাগ ও প্রশাসন সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে প্রাকৃতিক এ সম্পদ রক্ষা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া আহরণ অব্যাহত থাকলে উৎপাদন ব্যবস্থা চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি গভীর সঙ্কটের মুখে পড়বে প্রাকৃতিক এই সম্পদ। তাই কাঁকড়া সম্পদ রক্ষায় সম্মিলিত ভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা খুবই জরুরী। ততে, চলতি প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া আহরণ, মজুদ ও বিকিকিনি বন্ধ থাকলেও পূর্ব সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা থেকে কাঁকড়া আহরণ অব্যাহত রেখেছেন এক শ্রেণীর অসাধু জেলে চক্র। অভিযোগ উঠেছে, কাঁকড়া আহরণ নিষিদ্ধ মৌসুমেও শুটকি পল্লী দুবলা টহল ফাঁড়ির (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা প্রলাদ চন্দ্র রায়, রামপাল ও মংলা এলাকার প্রায় অর্ধশত জেলেদের কাছ থেকে প্রতি গোনে (১৫ দিনে) দুই হাজার টাকা করে উৎকোচ নিয়ে চারু ব্যবহারের মাধ্যমে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা হতে কাঁকড়া আহরণে জেলেদের সহয়তা করে যাচ্ছেন। এছাড়া পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ কার্যালয়ের সম্মুখে স্থানীয় শরণখোলা বাজারে একাধিক ব্যবসায়ী প্রতি দিন সুন্দরবনের ৮-১০ মণ কাঁকড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় চালান করে আসলেও নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বনরক্ষীরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বনের নদ-নদী ও জলাভূমিতে বেড়ে ওঠা সব ধরনের কাঁকড়া আহরণ চলতি বছরের ১,জানুয়ারি থেকে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আহরণ নিষিদ্ধ করে বন বিভাগ। তাদের মতে, চলতি বছরের ‘জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাস সুন্দরবনের নদ-নদী ও জলাভূমিতে বেড়ে ওঠা দেশের রপ্তানি পণ্য শিলা কাঁকড়াসহ সব ধরনের কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম। এ সময়ের মধ্যে মা কাঁকড়ার ডিম থেকে প্রচুর পরিমাণ কাঁকড়া জন্ম নেয়। মা কাঁকড়া রক্ষার জন্যই প্রতিবছরের এই সময়ে সুন্দরবন থেকে জেলেদের কাঁকড়া আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হয়ে যায়। কাঁকড়া আহরণের সবচেয়ে বড় ভাণ্ডার সুন্দরবন। মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁকড়া নদী বা খালে বেড়ে উঠলেও এর প্রজনন হয় সাগরের মোহনা বা গভীর সাগরে। তাই এই সময় কাকড়া ডিম দেয়ার উদ্দেশ্যে গভীর সাগরের দিকে ছুটতে থাকে। তাছাড়া প্রজনন মৌসুমে পানি থেকে সাগরের পানি গরম এবং নদীর পানির থেকে সাগরের পানির লবণাক্ততা বেশি হয়ে থাকে। এসব কারণে নদী খাল থেকে কাঁকড়া সাগর মোহনায় ছুটতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কাঁকড়া সাগরে ছুটে যাওয়ার মুহূর্তে যাতে তাদের কেউ ধরতে না পারে সেজন্য কাঁকড়ার অভায়ারণ্য সুন্দরনের মা কাঁকড়া রক্ষায় প্রতিবছর এই নিষেধাজ্ঞা দেয় বন বিভাগ। এছাড়া মা কাঁকড়া যখন ডিম দেয় তখন তাদের ধরা খুবই সহজ। ওই মুহূর্তে তারা ক্ষুধার্থ ও দুর্বল থাকে। তাদের সামনে যে কোন খাবার দেয়া হলে তা দ্রুত খাওয়ার জন্য এগিয়ে আসে। যার ফলে প্রজনন মৌমুমে খুব সহজেই জেলেরা কাঁকড়া শিকার করতে পারেন। তবে এ বিষয়ে শরণখোলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মি. বিনয় কুমার রায় বলেন, প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া নিধন পুরোপুরি বন্ধ করা না গেলে উৎপাদন চরম ভাবে ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি এ সম্পদ হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে, কাঁকড়ার প্রজননসহ প্রাকৃতিক এ সম্পদ রক্ষায় সম্মিলিত পদক্ষেপ জরুরী। তবে, জানতে চাইলে দুবলা ফাঁড়ির কর্মকর্তা বলেন , সুন্দরবনজুড়ে কাকড়া আহরন পুরোপুরি বন্ধ। সেক্ষেত্রে কাউকে কোন সহয়তা করা হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে, পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের (ডি.এফ.ও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, প্রজনন মৌসুমে কোন জেলেকে কাঁকড়া আহরণে অনুমতি দেন না বন-বিভাগ। কিছু অসাধু জেলে বেশি লাভের আশায় এমন কাজ করতে পারে । তবে, যারাই এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকুক না কেন খোঁজ-খবর নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সোমবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২১ , ১১ মাঘ ১৪২৭, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪২

আহরণ নিষিদ্ধ মৌসুমে

বনকর্তাদের যোগসাজশে সুন্দরবনে কাঁকড়া নিধন

হুমকিতে প্রাকৃতিক সম্পদ

এমাদুল হক (শামীম), শরণখোলা (বাগেরহাট)

image

আহরণ নিষিদ্ধ মৌসুমেও নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সুন্দরবনজুড়ে কাঁকড়া নিধন চালাচ্ছে এক শ্রেণীর অসাধু জেলেরা। যার ফলে প্রাকৃতিক এ সম্পদ হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, এক শ্রেণীর অসাধু বন কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাজশে মহাজন নামধারী স্বার্থন্বেষী একাধিক মহল এমন সুযোগ কাজে লাগিয়ে কাঁকড়া নিধন করে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছেন এ সম্পদকে। তবে, মৎস্য বিভাগ, বন বিভাগ ও প্রশাসন সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে প্রাকৃতিক এ সম্পদ রক্ষা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া আহরণ অব্যাহত থাকলে উৎপাদন ব্যবস্থা চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি গভীর সঙ্কটের মুখে পড়বে প্রাকৃতিক এই সম্পদ। তাই কাঁকড়া সম্পদ রক্ষায় সম্মিলিত ভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা খুবই জরুরী। ততে, চলতি প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া আহরণ, মজুদ ও বিকিকিনি বন্ধ থাকলেও পূর্ব সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা থেকে কাঁকড়া আহরণ অব্যাহত রেখেছেন এক শ্রেণীর অসাধু জেলে চক্র। অভিযোগ উঠেছে, কাঁকড়া আহরণ নিষিদ্ধ মৌসুমেও শুটকি পল্লী দুবলা টহল ফাঁড়ির (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা প্রলাদ চন্দ্র রায়, রামপাল ও মংলা এলাকার প্রায় অর্ধশত জেলেদের কাছ থেকে প্রতি গোনে (১৫ দিনে) দুই হাজার টাকা করে উৎকোচ নিয়ে চারু ব্যবহারের মাধ্যমে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা হতে কাঁকড়া আহরণে জেলেদের সহয়তা করে যাচ্ছেন। এছাড়া পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ কার্যালয়ের সম্মুখে স্থানীয় শরণখোলা বাজারে একাধিক ব্যবসায়ী প্রতি দিন সুন্দরবনের ৮-১০ মণ কাঁকড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় চালান করে আসলেও নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বনরক্ষীরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বনের নদ-নদী ও জলাভূমিতে বেড়ে ওঠা সব ধরনের কাঁকড়া আহরণ চলতি বছরের ১,জানুয়ারি থেকে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আহরণ নিষিদ্ধ করে বন বিভাগ। তাদের মতে, চলতি বছরের ‘জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাস সুন্দরবনের নদ-নদী ও জলাভূমিতে বেড়ে ওঠা দেশের রপ্তানি পণ্য শিলা কাঁকড়াসহ সব ধরনের কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম। এ সময়ের মধ্যে মা কাঁকড়ার ডিম থেকে প্রচুর পরিমাণ কাঁকড়া জন্ম নেয়। মা কাঁকড়া রক্ষার জন্যই প্রতিবছরের এই সময়ে সুন্দরবন থেকে জেলেদের কাঁকড়া আহরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হয়ে যায়। কাঁকড়া আহরণের সবচেয়ে বড় ভাণ্ডার সুন্দরবন। মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁকড়া নদী বা খালে বেড়ে উঠলেও এর প্রজনন হয় সাগরের মোহনা বা গভীর সাগরে। তাই এই সময় কাকড়া ডিম দেয়ার উদ্দেশ্যে গভীর সাগরের দিকে ছুটতে থাকে। তাছাড়া প্রজনন মৌসুমে পানি থেকে সাগরের পানি গরম এবং নদীর পানির থেকে সাগরের পানির লবণাক্ততা বেশি হয়ে থাকে। এসব কারণে নদী খাল থেকে কাঁকড়া সাগর মোহনায় ছুটতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কাঁকড়া সাগরে ছুটে যাওয়ার মুহূর্তে যাতে তাদের কেউ ধরতে না পারে সেজন্য কাঁকড়ার অভায়ারণ্য সুন্দরনের মা কাঁকড়া রক্ষায় প্রতিবছর এই নিষেধাজ্ঞা দেয় বন বিভাগ। এছাড়া মা কাঁকড়া যখন ডিম দেয় তখন তাদের ধরা খুবই সহজ। ওই মুহূর্তে তারা ক্ষুধার্থ ও দুর্বল থাকে। তাদের সামনে যে কোন খাবার দেয়া হলে তা দ্রুত খাওয়ার জন্য এগিয়ে আসে। যার ফলে প্রজনন মৌমুমে খুব সহজেই জেলেরা কাঁকড়া শিকার করতে পারেন। তবে এ বিষয়ে শরণখোলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মি. বিনয় কুমার রায় বলেন, প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া নিধন পুরোপুরি বন্ধ করা না গেলে উৎপাদন চরম ভাবে ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি এ সম্পদ হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে, কাঁকড়ার প্রজননসহ প্রাকৃতিক এ সম্পদ রক্ষায় সম্মিলিত পদক্ষেপ জরুরী। তবে, জানতে চাইলে দুবলা ফাঁড়ির কর্মকর্তা বলেন , সুন্দরবনজুড়ে কাকড়া আহরন পুরোপুরি বন্ধ। সেক্ষেত্রে কাউকে কোন সহয়তা করা হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে, পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের (ডি.এফ.ও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, প্রজনন মৌসুমে কোন জেলেকে কাঁকড়া আহরণে অনুমতি দেন না বন-বিভাগ। কিছু অসাধু জেলে বেশি লাভের আশায় এমন কাজ করতে পারে । তবে, যারাই এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকুক না কেন খোঁজ-খবর নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।