দুই পাচারকারী গ্রেপ্তার
ক্রোয়েশিয়ায় পাঠানোর নাম করে ভারতে পাচার করে দেয়া হয় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের এক যুবককে। ওই যুবককে পাচারকারীদের সহযোগীরা আটকে রেখে ইতোমধ্যে পরিবারের কাছে সাড়ে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় মানব পাচারে যুক্ত সাইফুল ইসলাম এবং তার সহযোগী মোবারক উল্লাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩। র্যাব-৩ এর এএসপি বেলায়েত হোসেনের নেতৃত্বে গত শনিবার ফেনীর দাগনভূইয়া এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এখনও পাচারের শিকার নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার গোলাম মাওলার ছেলে ওই যুবককে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
র্যাব-৩ এর এএসপি ফারজানা আক্তার জানান, উচ্চ বেতনে পোল্যান্ডে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পাশাপাশি ভারতে পাচারের অভিযোগে ফেনী থেকে আটক করা হয় মো. মোবারক উল্লাহ (৩৩) এবং মো. সাইফুল ইসলাম (৪২)। তাদের গতকাল দাগনভূইয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। আটক ব্যক্তিরা মানব পাচারকারী গ্রুপের সদস্য। ক্রোয়েশিয়া, পোল্যান্ডসহ ইউরোপীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে লোকজনকে চাকরি দেয়ার কথা বলে টাকা নিয়ে ভারতে পাচার করে।
র্যাব জানায়, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের কেন্দুপাড়ার ভুক্তভোগী মো. গোলাম মাওলা (৭৮) মামলা করেন, বিবাদী মো. মোবারক উল্লাহ (৩৩) এবং মো. সাইফুল ইসলাম (৪২)। বাদীর ছেলেকে উচ্চ বেতনে ৮ ঘণ্টা ডিউটি, থাকা খাওয়া ফ্রি এবং দুই বছর পরে বিমান ভাড়া কোম্পানি দিবে বলে পোল্যান্ডে পাঠানোর প্রলোভন দেখায়। এ জন্য খরচ বাবদ পাঁচ লাখ টাকা মৌখিক প্রস্তাব করলে তিনি (বাদী) প্রথমে ২ লাখ টাকা এবং আবার পরবর্তীতে ডাচ্-বাংলার একাউন্টে আরও ২ লাখ টাকা প্রদান করেন। কিন্তু বিবাদীরা বাদীর ছেলেকে পোল্যান্ডে পাঠাতে পারে নাই। কিছু দিন পরে বাদীর ছেলেকে হাঙ্গেরি পাঠাবে এবং পরবর্তীতে বলে মালদোভা পাঠাবে এইভাবে বাদীর ছেলের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের টালবাহানা করে। তৎক্ষণাৎ বাদী বিবাদীকে বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে চাপ দিলে তখন বিবাদী ক্রোয়েশিয়ার ভিসা লাগানোর কথা বলে বাদীর কাছে হতে বিকাশের মাধ্যমে আরও ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করে। বিবাদীরা বাদীর ছেলেকে ক্রোয়েশিয়া পাঠানোর নাম করে কৌশলে ইন্ডিগো বিমানে করে ভারতে নিয়ে আটক করে রাখে। তারপর বিবাদীরা বাদীর কাছে আরও ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাবী করে। টাকা না দিলে বাদীর ছেলেকে বিক্রি করে দেবে বলে হুমকি দেয়।
র্যাব জানায়, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৩ এর একটি বিশেষ আভিযানিক দল গত শনিবার বিকেলে ফেনী জেলার দাগনভূইয়া থানাধীন জগতপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মানব পাচাকারী চক্রের সদস্য সাইফুল ও মোবারককে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উক্ত গ্রেপ্তারকৃত মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যরা জানায়, তারা মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ক্রোয়েশিয়ায় পাচারের উদ্দেশে বাদীর ছেলেকে ভারতে পাচার করে। তারা দীর্ঘদিন যাবত বিদেশ গমনে ইচ্ছুক যুবকদের উন্নত জীবনযাপনের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত দেশি-বিদেশি পাচারকারীদের সহায়তায় মানব পাচারের মতো জঘন্য অপরাধ করে আসছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকতা বলেন, আটক সাইফুল আগে ক্রোয়েশিয়া ছিল। দেশে এসে সে ক্রোয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানোর কাজে যুক্ত হয়। ক্রোয়েশিয়ায় তার একটি অফিসও আছে। নোয়াখালীর গোলাম মাওলার ছেলেকে ক্রোয়েশিয়ায় পাঠানোর কথা বলে ইতোমধ্যে ভারতে পাচার করা হয়েছে। গোলাম মাওলার ছেলে ভারতে পাচারকারীদের হাতে জিম্মি আছে। তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এ চক্রের আরও একাধিক সদস্য আছে যাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। ধারণা করা হচ্ছে চক্রটি বিপুল লোক বিভিন্ন সময়ে ভারতে পাচার করেছে। এ বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত আছে।
সোমবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২১ , ১১ মাঘ ১৪২৭, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪২
দুই পাচারকারী গ্রেপ্তার
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |
ক্রোয়েশিয়ায় পাঠানোর নাম করে ভারতে পাচার করে দেয়া হয় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের এক যুবককে। ওই যুবককে পাচারকারীদের সহযোগীরা আটকে রেখে ইতোমধ্যে পরিবারের কাছে সাড়ে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় মানব পাচারে যুক্ত সাইফুল ইসলাম এবং তার সহযোগী মোবারক উল্লাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৩। র্যাব-৩ এর এএসপি বেলায়েত হোসেনের নেতৃত্বে গত শনিবার ফেনীর দাগনভূইয়া এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এখনও পাচারের শিকার নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার গোলাম মাওলার ছেলে ওই যুবককে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
র্যাব-৩ এর এএসপি ফারজানা আক্তার জানান, উচ্চ বেতনে পোল্যান্ডে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পাশাপাশি ভারতে পাচারের অভিযোগে ফেনী থেকে আটক করা হয় মো. মোবারক উল্লাহ (৩৩) এবং মো. সাইফুল ইসলাম (৪২)। তাদের গতকাল দাগনভূইয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। আটক ব্যক্তিরা মানব পাচারকারী গ্রুপের সদস্য। ক্রোয়েশিয়া, পোল্যান্ডসহ ইউরোপীয় অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে লোকজনকে চাকরি দেয়ার কথা বলে টাকা নিয়ে ভারতে পাচার করে।
র্যাব জানায়, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের কেন্দুপাড়ার ভুক্তভোগী মো. গোলাম মাওলা (৭৮) মামলা করেন, বিবাদী মো. মোবারক উল্লাহ (৩৩) এবং মো. সাইফুল ইসলাম (৪২)। বাদীর ছেলেকে উচ্চ বেতনে ৮ ঘণ্টা ডিউটি, থাকা খাওয়া ফ্রি এবং দুই বছর পরে বিমান ভাড়া কোম্পানি দিবে বলে পোল্যান্ডে পাঠানোর প্রলোভন দেখায়। এ জন্য খরচ বাবদ পাঁচ লাখ টাকা মৌখিক প্রস্তাব করলে তিনি (বাদী) প্রথমে ২ লাখ টাকা এবং আবার পরবর্তীতে ডাচ্-বাংলার একাউন্টে আরও ২ লাখ টাকা প্রদান করেন। কিন্তু বিবাদীরা বাদীর ছেলেকে পোল্যান্ডে পাঠাতে পারে নাই। কিছু দিন পরে বাদীর ছেলেকে হাঙ্গেরি পাঠাবে এবং পরবর্তীতে বলে মালদোভা পাঠাবে এইভাবে বাদীর ছেলের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের টালবাহানা করে। তৎক্ষণাৎ বাদী বিবাদীকে বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে চাপ দিলে তখন বিবাদী ক্রোয়েশিয়ার ভিসা লাগানোর কথা বলে বাদীর কাছে হতে বিকাশের মাধ্যমে আরও ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করে। বিবাদীরা বাদীর ছেলেকে ক্রোয়েশিয়া পাঠানোর নাম করে কৌশলে ইন্ডিগো বিমানে করে ভারতে নিয়ে আটক করে রাখে। তারপর বিবাদীরা বাদীর কাছে আরও ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাবী করে। টাকা না দিলে বাদীর ছেলেকে বিক্রি করে দেবে বলে হুমকি দেয়।
র্যাব জানায়, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৩ এর একটি বিশেষ আভিযানিক দল গত শনিবার বিকেলে ফেনী জেলার দাগনভূইয়া থানাধীন জগতপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মানব পাচাকারী চক্রের সদস্য সাইফুল ও মোবারককে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উক্ত গ্রেপ্তারকৃত মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যরা জানায়, তারা মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ক্রোয়েশিয়ায় পাচারের উদ্দেশে বাদীর ছেলেকে ভারতে পাচার করে। তারা দীর্ঘদিন যাবত বিদেশ গমনে ইচ্ছুক যুবকদের উন্নত জীবনযাপনের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত দেশি-বিদেশি পাচারকারীদের সহায়তায় মানব পাচারের মতো জঘন্য অপরাধ করে আসছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকতা বলেন, আটক সাইফুল আগে ক্রোয়েশিয়া ছিল। দেশে এসে সে ক্রোয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানোর কাজে যুক্ত হয়। ক্রোয়েশিয়ায় তার একটি অফিসও আছে। নোয়াখালীর গোলাম মাওলার ছেলেকে ক্রোয়েশিয়ায় পাঠানোর কথা বলে ইতোমধ্যে ভারতে পাচার করা হয়েছে। গোলাম মাওলার ছেলে ভারতে পাচারকারীদের হাতে জিম্মি আছে। তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এ চক্রের আরও একাধিক সদস্য আছে যাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। ধারণা করা হচ্ছে চক্রটি বিপুল লোক বিভিন্ন সময়ে ভারতে পাচার করেছে। এ বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত আছে।