কমাতে হবে সমুদ্রদূষণ

নাজমুন্নাহার নিপা

মহাবিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক শক্তি ও সম্পদের আধার হচ্ছে সমুদ্র। একদিকে যেমন পৃথিবীতে মানুষের বংশ-বিস্তার ক্রমশ বাড়ছে অন্যদিকে সমুদ্রের ওপর মানুষের নির্ভরশীলতাও বাড়ছে। কিন্তু বিভিন্ন প্রকার দূষণের কবলে পড়ে দিন দিন সমুদ্র তার স্বরূপ হারাচ্ছে এবং দূষণের করাল গ্রাসে পরিণত হচ্ছে।

সমুদ্রকে দূষিত করে এমন প্রধান জিনিসগুলো হলো- বায়ুবাহিত ধুলাবালি, ট্যাংকার এবং অন্যান্য জাহাজ থেকে নির্গমনকৃত বর্জ্য, বিভিন্ন প্লাস্টিক বর্জ্য, পলিথিন ইত্যাদি। বায়ুমণ্ডলে প্রকাশিত দূষকগুলো বৃষ্টিপাতের কারণে সরাসরি সমুদ্রের তলদেশে গিয়ে পড়ে এবং উপকূলীয় নদীগুলোর মধ্য দিয়ে সমুদ্রের মধ্যে প্রবাহিত হয়, ফলে অবশেষে সমুদ্র অনেকগুলো বর্জ্যরে ডাম্পিং পয়েন্টে পরিণত হয়।

শিল্প উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। এ ধরনের দূষণের কারণে সমুদ্রের পানির অম্লতা বাড়ে এবং সামুদ্রিক প্রাণী ও উদ্ভিদকূল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। সামুদ্রিক প্রাণীর মধ্যে বিভিন্ন রোগের বিস্তারও ঘটছে।

জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে মহাসাগরের পরিবেশ বদলে দিচ্ছে এবং সামুদ্রিক প্রাণীদের জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব ফেলছেÑ তা নিয়ে সর্বশেষ কয়েকটি গবেষণার ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা সায়েন্স সাময়িকীর একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। এটির সহ-লেখক কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক উইলিয়াম চেউং বলেন, সমুদ্রের সব প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতি এবং সম্পদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়বে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২১০০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে সীমিত রাখার লক্ষ্যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন ব্যাপক হারে কমাতে হবে। মহাসাগরের ভবিষ্যৎ অবস্থা কেমন হবে, তা নির্ভর করছে আগামী দশকগুলোতে কী পরিমাণ কার্বন নির্গমন হবে- তার ওপর। মহাসাগরের সামগ্রিক পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি রোধ করতে চাইলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনের পরিমাণ অবিলম্বে কমিয়ে আনতে হবে।

গবেষণায় নেতৃত্ব দেন ফ্রান্সের জাতীয় বিজ্ঞান গবেষণাকেন্দ্রের (সিএনআরএস) অধ্যাপক জ্যঁ-পিয়ের গাত্তুসো। তিনি বলেন, কার্বন নির্গমন কমানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলে মাছ তাদের বর্তমান আবাস ছেড়ে ৬৫ শতাংশ দ্রুত অন্যত্র চলে যাবে। পরিণামে জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুসংস্থানের কার্যক্রমে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটবে।

পৃথিবীর প্রাণিকূলের বসবাসযোগ্য ৯০ শতাংশ এলাকাজুড়ে রয়েছে মহাসাগর। এ সুবিশাল স্থানে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবগুলো ঠেকানোর জন্য বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর গড় তাপমাত্রার বৃদ্ধি সর্বোচ্চ দুই ডিগ্রিতে সীমিত রাখার ব্যাপারে বিভিন্ন দেশের সরকারকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।

বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ না করলে মহাসাগরগুলোয় বসবাসকারী প্রাণী ও উদ্ভিদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। সামুদ্রিক মাছ তুলনামূলক ঠাণ্ডা পানির খোঁজ করতে বাধ্য হবে। ধ্বংস হবে মূল্যবান প্রবালদ্বীপগুলো। সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক এক গবেষণায় এসব সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

প্রখ্যাত সমুদ্র বিজ্ঞানী ডা. জ্যাকুয়েস পিকার্ডের মতে, বর্তমান দূষণের হার বজায় থাকলে অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীর সমুদ্রে কোন প্রাণীর অস্তিত্বই থাকবে না। আমেরিকার ‘ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স’র মতে, বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য গ্রিন হাউজ গ্যাসের দ্বিগুণ বৃদ্ধির ফলে বর্তমান শতকে পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা গড়ে ১.৫ ডিগ্রি থেকে ৪.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বৃদ্ধি পাবে। হিসাব করে বলা হয়েছে, গ্রিন হাউজ গ্যাসের প্রভাব না থাকলে আজ পৃথিবীর তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড কম হতো।

১৯৮৭ সালে পৃথিবীর মানুষ মোট ৫.৭ গিগা টন (এক গিগা টন হলো ১০০ কোটি টনের সমান) কার্বন বাতাসে ছেড়েছে। জাতিসংঘের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছেÑ এ ব্যাপারে শিল্পোন্নত দেশগুলোকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। কারণ তারাই এ সমস্যার সূত্রপাত ঘটিয়েছে। মানুষের তৈরি কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিক্ষেপের তিন-চতুর্থাংশই তাদের।

নিক্ষিপ্ত বিষাক্ত পদার্থের মধ্যে তামা, নিকেল, কোবাল্ট এবং ম্যাঙ্গানিজ খনন সাধারণত পরিবেশের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক। পোকা-মাকড় মারার ওষুধ, ডিডিটি এবং বিভিন্ন ধরনের ইনস্যুলেশনে ব্যবহৃত ক্লোরিন জাতীয় উপাদান সমুদ্রের পক্ষে ক্ষতিকারক। ডিডিটি ইত্যাদি পৃথিবীতে ফসলের ক্ষতি রোধ করার জন্য, পোকা-মাকড়, মাছি মারার জন্য প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করা হয়। বৃষ্টির পানি ধুয়ে শেষ পর্যন্ত গিয়ে জমা হয় সমুদ্রে। কারণ বাতাসে পারমাণবিক পরীক্ষার ফলে যে তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায় তার অনেকটা সমুদ্রে মিশে যায়।

আমাদের পার্শ্ববর্তী জনবহুল দেশ ভারতও বিপুল পরিমাণে আবর্জনা সমুদ্রে নিক্ষেপ করছে। আরব সাগরে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তৈলবাহী ট্যাংকারদের যাত্রাপথ। ভারতের চারপাশের সাগরে প্রচুর পরিমাণে আবর্জনা নিক্ষিপ্ত হয়ে সমুদ্রকে দূষিত করছে। অনেকের মতে, যা করা দরকার তা হলো, সমুদ্র দূষণ রোধে সক্ষম এক শক্তিশালী কেন্দ্রীয় কমিটি যার নিষেধাজ্ঞা সব দেশ শুনবে এবং কার্যকর করবে।

আমরা জানি, বাংলাদেশ ভাতের দেশ এবং আমাদের একমাত্র সমুদ্র হলো বঙ্গোপসাগর। আমাদের সব নদীগুলোর যাত্রাপথ দিয়ে শেষ হয়েছে সমুদ্রে। দিনশেষে এ নদীগুলোর মাধ্যমে প্রবাহমান বর্জ্য সব সাগরে জমা হয়। অথচ এ সাগর আমাদের মৎস্য চাহিদার অনেকাংশ পূরণ করে। অন্যদিকে বাংলাদেশের সমগ্র বাণিজ্য বঙ্গোপসাগরের ওপর নির্ভরশীল। তাই আমাদের মহামূল্যবান সম্পদকে আমাদের রক্ষা না করার বিকল্প নেই। এজন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইন, সামুদ্রিক পরিবহন ও পর্যটন এবং সমুদ্র সম্পদ আইনের কঠোর বাস্তবায়ন করতে হবে।

[লেখক : শিক্ষার্থী, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ]

nipasheikh13@gmail.com

সোমবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২১ , ১১ মাঘ ১৪২৭, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪২

কমাতে হবে সমুদ্রদূষণ

নাজমুন্নাহার নিপা

মহাবিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক শক্তি ও সম্পদের আধার হচ্ছে সমুদ্র। একদিকে যেমন পৃথিবীতে মানুষের বংশ-বিস্তার ক্রমশ বাড়ছে অন্যদিকে সমুদ্রের ওপর মানুষের নির্ভরশীলতাও বাড়ছে। কিন্তু বিভিন্ন প্রকার দূষণের কবলে পড়ে দিন দিন সমুদ্র তার স্বরূপ হারাচ্ছে এবং দূষণের করাল গ্রাসে পরিণত হচ্ছে।

সমুদ্রকে দূষিত করে এমন প্রধান জিনিসগুলো হলো- বায়ুবাহিত ধুলাবালি, ট্যাংকার এবং অন্যান্য জাহাজ থেকে নির্গমনকৃত বর্জ্য, বিভিন্ন প্লাস্টিক বর্জ্য, পলিথিন ইত্যাদি। বায়ুমণ্ডলে প্রকাশিত দূষকগুলো বৃষ্টিপাতের কারণে সরাসরি সমুদ্রের তলদেশে গিয়ে পড়ে এবং উপকূলীয় নদীগুলোর মধ্য দিয়ে সমুদ্রের মধ্যে প্রবাহিত হয়, ফলে অবশেষে সমুদ্র অনেকগুলো বর্জ্যরে ডাম্পিং পয়েন্টে পরিণত হয়।

শিল্প উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। এ ধরনের দূষণের কারণে সমুদ্রের পানির অম্লতা বাড়ে এবং সামুদ্রিক প্রাণী ও উদ্ভিদকূল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। সামুদ্রিক প্রাণীর মধ্যে বিভিন্ন রোগের বিস্তারও ঘটছে।

জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে মহাসাগরের পরিবেশ বদলে দিচ্ছে এবং সামুদ্রিক প্রাণীদের জীবনযাত্রার ওপর প্রভাব ফেলছেÑ তা নিয়ে সর্বশেষ কয়েকটি গবেষণার ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা সায়েন্স সাময়িকীর একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। এটির সহ-লেখক কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক উইলিয়াম চেউং বলেন, সমুদ্রের সব প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতি এবং সম্পদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়বে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২১০০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে সীমিত রাখার লক্ষ্যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন ব্যাপক হারে কমাতে হবে। মহাসাগরের ভবিষ্যৎ অবস্থা কেমন হবে, তা নির্ভর করছে আগামী দশকগুলোতে কী পরিমাণ কার্বন নির্গমন হবে- তার ওপর। মহাসাগরের সামগ্রিক পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি রোধ করতে চাইলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনের পরিমাণ অবিলম্বে কমিয়ে আনতে হবে।

গবেষণায় নেতৃত্ব দেন ফ্রান্সের জাতীয় বিজ্ঞান গবেষণাকেন্দ্রের (সিএনআরএস) অধ্যাপক জ্যঁ-পিয়ের গাত্তুসো। তিনি বলেন, কার্বন নির্গমন কমানোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলে মাছ তাদের বর্তমান আবাস ছেড়ে ৬৫ শতাংশ দ্রুত অন্যত্র চলে যাবে। পরিণামে জীববৈচিত্র্য ও বাস্তুসংস্থানের কার্যক্রমে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটবে।

পৃথিবীর প্রাণিকূলের বসবাসযোগ্য ৯০ শতাংশ এলাকাজুড়ে রয়েছে মহাসাগর। এ সুবিশাল স্থানে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবগুলো ঠেকানোর জন্য বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর গড় তাপমাত্রার বৃদ্ধি সর্বোচ্চ দুই ডিগ্রিতে সীমিত রাখার ব্যাপারে বিভিন্ন দেশের সরকারকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।

বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ না করলে মহাসাগরগুলোয় বসবাসকারী প্রাণী ও উদ্ভিদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। সামুদ্রিক মাছ তুলনামূলক ঠাণ্ডা পানির খোঁজ করতে বাধ্য হবে। ধ্বংস হবে মূল্যবান প্রবালদ্বীপগুলো। সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক এক গবেষণায় এসব সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

প্রখ্যাত সমুদ্র বিজ্ঞানী ডা. জ্যাকুয়েস পিকার্ডের মতে, বর্তমান দূষণের হার বজায় থাকলে অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীর সমুদ্রে কোন প্রাণীর অস্তিত্বই থাকবে না। আমেরিকার ‘ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স’র মতে, বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও অন্যান্য গ্রিন হাউজ গ্যাসের দ্বিগুণ বৃদ্ধির ফলে বর্তমান শতকে পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা গড়ে ১.৫ ডিগ্রি থেকে ৪.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বৃদ্ধি পাবে। হিসাব করে বলা হয়েছে, গ্রিন হাউজ গ্যাসের প্রভাব না থাকলে আজ পৃথিবীর তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড কম হতো।

১৯৮৭ সালে পৃথিবীর মানুষ মোট ৫.৭ গিগা টন (এক গিগা টন হলো ১০০ কোটি টনের সমান) কার্বন বাতাসে ছেড়েছে। জাতিসংঘের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছেÑ এ ব্যাপারে শিল্পোন্নত দেশগুলোকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। কারণ তারাই এ সমস্যার সূত্রপাত ঘটিয়েছে। মানুষের তৈরি কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিক্ষেপের তিন-চতুর্থাংশই তাদের।

নিক্ষিপ্ত বিষাক্ত পদার্থের মধ্যে তামা, নিকেল, কোবাল্ট এবং ম্যাঙ্গানিজ খনন সাধারণত পরিবেশের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক। পোকা-মাকড় মারার ওষুধ, ডিডিটি এবং বিভিন্ন ধরনের ইনস্যুলেশনে ব্যবহৃত ক্লোরিন জাতীয় উপাদান সমুদ্রের পক্ষে ক্ষতিকারক। ডিডিটি ইত্যাদি পৃথিবীতে ফসলের ক্ষতি রোধ করার জন্য, পোকা-মাকড়, মাছি মারার জন্য প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করা হয়। বৃষ্টির পানি ধুয়ে শেষ পর্যন্ত গিয়ে জমা হয় সমুদ্রে। কারণ বাতাসে পারমাণবিক পরীক্ষার ফলে যে তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায় তার অনেকটা সমুদ্রে মিশে যায়।

আমাদের পার্শ্ববর্তী জনবহুল দেশ ভারতও বিপুল পরিমাণে আবর্জনা সমুদ্রে নিক্ষেপ করছে। আরব সাগরে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তৈলবাহী ট্যাংকারদের যাত্রাপথ। ভারতের চারপাশের সাগরে প্রচুর পরিমাণে আবর্জনা নিক্ষিপ্ত হয়ে সমুদ্রকে দূষিত করছে। অনেকের মতে, যা করা দরকার তা হলো, সমুদ্র দূষণ রোধে সক্ষম এক শক্তিশালী কেন্দ্রীয় কমিটি যার নিষেধাজ্ঞা সব দেশ শুনবে এবং কার্যকর করবে।

আমরা জানি, বাংলাদেশ ভাতের দেশ এবং আমাদের একমাত্র সমুদ্র হলো বঙ্গোপসাগর। আমাদের সব নদীগুলোর যাত্রাপথ দিয়ে শেষ হয়েছে সমুদ্রে। দিনশেষে এ নদীগুলোর মাধ্যমে প্রবাহমান বর্জ্য সব সাগরে জমা হয়। অথচ এ সাগর আমাদের মৎস্য চাহিদার অনেকাংশ পূরণ করে। অন্যদিকে বাংলাদেশের সমগ্র বাণিজ্য বঙ্গোপসাগরের ওপর নির্ভরশীল। তাই আমাদের মহামূল্যবান সম্পদকে আমাদের রক্ষা না করার বিকল্প নেই। এজন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আইন, সামুদ্রিক পরিবহন ও পর্যটন এবং সমুদ্র সম্পদ আইনের কঠোর বাস্তবায়ন করতে হবে।

[লেখক : শিক্ষার্থী, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ]

nipasheikh13@gmail.com