উৎসবের পরিবেশেও উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নির্বাচনে গতকাল সোমবার ছিল শেষ দিনের প্রচারণা। প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা চোখে পড়ার মতই প্রচার চালালেন শেষ দিন। বেশ একটা উৎসবমুখর পরিবেশ। ভোটাররাও উৎফুল্ল। কিন্তু এরপরও ভোটারদের মধ্যে ভোট নিয়ে আছে শঙ্কা, ভয়। প্রার্থীদেরও আছে শঙ্কা। এই শঙ্কা প্রকাশ করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। আওয়ামী লীগ সমর্থিত এক কাউন্সিলর প্রার্থীর বাসায় হামলার ও গুলিবর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের বাসায় পুলিশের তল্লাশি এবং গ্রেপ্তার অভিযান চলছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। বাকলিয়া থানা মহিলা দলের সভানেত্রী মরিয়মকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

কিছু শঙ্কার কথা জানালেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামানও। তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে যা যা করা দরকার, ইসি তাই করবে। তবে শঙ্কা যে নেই, তা নয়। কিন্তু শঙ্কার ভাবনা থেকে আমরা অতিরিক্ত সতর্ক থাকব। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন যেই করুক না কেন, আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

তবে এই নিরাপত্তা ব্যাবস্থার কারণে যেন ভোটারদের সতস্ফুর্তি নষ্ট না হয় সে বিষয়টিও দেখা হবে বলে জানালেন হাসানুজ্জামান। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আমাদের নির্দেশনা আছে, যেন অহেতুক কাউকে হয়রানি না করা হয়। নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মাঠে নামছেন। সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করতে তাদের সব ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

ভোটাররা কি বলছেন

২৯নং পশ্চিম মাদারবাড়ি ওয়ার্ডের ভোটার নিলুফা ইয়াসমিন জানান, ‘বিগত সাতদিন থেকে আনন্দ লাগছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট দিব বলে।’ তবে তিনি সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কার কথা জানালেন। একই কথা বললেন ৩৬নং গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডের বৃদ্ধ ভোটার আবুল কালাম। তিনি বলেন, ‘গত সংসদ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখি আমার নিজের ভোট অন্যজনে দিয়ে ফেলেছে, ভোট দিতে পারিনি।’ এবারও তিনি ভোট কেন্দ্রে যাবেন। যদি তার ভোট কেউ দিয়ে ফেলে এ জীবনে আর ভোট কেন্দ্রে যাবেন না বলে জানালেন তিনি।

গতকাল সকালে ২১নং জামালখান ওয়ার্ডের নতুন ভোটার ইসলামিয়া কলেজেছাত্র আরিফ হোসেন বলেন, ‘এই প্রথম ভোট দিব। তাই ভোটের দিনের অপেক্ষায় আছি। অনেক আনন্দ লাগছে ভোট দিব বলে।’ তিনি কাকে ভোট দিবেন তাও ঠিক করে ফেলেছেন, বললেন, ‘আমার পছন্দের প্রার্র্থী রয়েছে। তাকেই ভোট দিব।’

কাউন্সিলর প্রার্থীর বাসায় গুলিবর্ষণ

৩৩নং ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মো. সালাউদ্দিনের বাসায় হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল ভোররাত ৩টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটনায় নগরের কোতোয়ালি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে বলে জানান নগর ছাত্রলীগের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক।

মো. সালাউদ্দিন জানান, ‘ঘটনার সময় আমি বাসায় ছিলাম না। খবর পেয়ে দ্রুত বাসায় যাই। পুলিশকে খবর দেয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শটগানের ৬টি ও পিস্তলের ৩টি গুলির খোসা উদ্ধার করেছে। কাপড়ে মুখ বাঁধা একদল সন্ত্রাসী আমার বাসায় অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় তারা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে।’

কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা গুলির খোসা, আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করে দেখছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

গ্রেফতার আতঙ্কে বিএনপি

চসিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছে বিএনপি ও দলটির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এদিকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থক ও নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নির্বাচন পরিবেশ নষ্ট করার অভিযোগ তুলেছেন বিএনপি। সেই সঙ্গে গভীর রাতে পুলিশ ঢুকে বিএনপির নিরীহ নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় গিয়ে হানাসহ ধরপাকড় করে নিয়ে এসে গায়েবি মামলায় অভিযুক্ত করছে বলে অভিযোগ করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

বিএনপির ৩৪ প্রার্থী ২৩৮ মামলা কাঁধে নিয়ে ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। ভাঙচুর, সহিংসতা, হত্যাসহ নানা মামলা আছে তাদের বিরুদ্ধে। সেই তালিকায় মেয়র প্রার্থী নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের পাশাপাশি রয়েছেন ৫ নারী ও ২৮ সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী।

জানা গেছে, গত রোববার রাত থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাসায় পুলিশের তল্লাশি এবং গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। গতকাল রাত তিনটায় বাকলিয়া এলাকা থেকে বাকলিয়া থানা মহিলা দলের সভানেত্রী মরিয়মকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। মরিয়মের স্বামী বলেছেন, ‘আমার স্ত্রীর নামে কোন মামলা নেই। শুধু বিএনপি করার কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ এছাড়া নগরীর কোতোয়ালি, পতেঙ্গা, ডবলমুরিং, চাঁন্দগাও থানা এলাকাসহ কয়েকটি এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের বাসায় পুলিশি হয়রানি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

নির্বাচনী কর্মকর্তাদের আশ্বাস

তবে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চসিক নির্বাচনের রিটানিং অফিসার। তিনি বলেছেন, ‘ কোন ধরনের সহিংসতা ছাড়া ভোট গ্রহণ শেষ করা ইসির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলেও শান্তিপূর্ণ সব কার্যক্রমে সফল হবে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি।’ আগামীকাল সকাল ৮টা থেকে বিকেলে ৪টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে সিটির ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

দুই দলের যত অভিযোগ

এদিকে আওয়ামী লীগ বারবার ইসিতে অভিযোগ করেছে, বিএনপি বহিরাগত সন্ত্রাসীদের এনেছে নাশকতা সৃষ্টির জন্য। এদিক বিএনপিও একই অভিযোগ করেছে ইসিতে।

প্রার্থী ও ভোটারদের ভেতর নির্বাচনী সহিংসতাসহ নির্বাচনকেন্দ্রিক অপরাধের যেসব শঙ্কা রয়েছে, তা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে নির্বাচন কমিশন। সেজন্য নির্বাচন নির্বিঘে্ন করতে ইসির নির্দেশে নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত শনিবার থেকেই বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এছাড়া ভোটাধিকার প্রয়োগে কোন ভোটারকে কেন্দ্রে আসা-যাওয়ার পথে কেউ বাধা দিলে বা ভয়ভীতি, অস্ত্র, শক্তি প্রদর্শন করলে তৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সহিম সতাপ্রবণ এলাকার কেন্দ্রগুলোকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। তবে পুলিশের দৃষ্টিতে ‘ঝুকিপূর্ণ’ নয় কিছু কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নগরীর চার প্রবেশ পথে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। পুলিশ কমিশনার নিজেই রাতে বের হয়ে থানা পুলিশের কার্যক্রম নজরদারি করছেন।

শেষ দিনের প্রচারণা

এদিকে গতকাল শেষ দিনে প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম চৌধুরী এবং বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেনসহ ৭ মেয়র প্রার্থী এবং ২২৫ জন কাউন্সিলর প্রার্থী শেষ মুহূর্তে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। গতানুগতিক প্রচার-প্রচারণার বাইরে এবার প্রত্যেক প্রার্থীর প্রচারণায় যুক্ত হয়েছে ভিন্নমাত্রা। ডিজিটাল প্রচারণায় পেয়েছে শৈল্পিক রূপ। ডিজিটাল প্রচারণার মাধ্যমে সশরীরে না গেলেও প্রার্থীরা ঠিকই পৌঁছে যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। শুধু মিছিল-স্লোগানে থেমে থাকেননি প্রার্থী এবং কর্মী-সমর্থকরা। বিনোদন জগতের জনপ্রিয় শিল্পীদের কণ্ঠে ছিল মন মাতানো গান। কোন প্রার্থী কোন মার্কায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আর তাদের প্রতিশ্রুতির কথা পৌঁছে গেছে ভোটারদের কাছে।

ইভিএমে ভোটের অনুশীলন

এদিকে গতকাল ৭৩৫টি কেন্দ্রে অনুশীলনমূলক (মক) ভোট সম্পন্ন হয়। সকাল ১০টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ভোটারদের ইভিএম-এ ভোট দেয়ার পদ্ধতি শিখিয়ে দেন প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তারা। এব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানান, এবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সব কেন্দ্রে (৭৩৫টি) ইভিএম-এ ভোটগ্রহণ হবে। ‘এজন্য আমাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে। ভোটাররা ইভিএম-এ কিভাবে ভোট দেবেন-সেই পদ্ধতি ভোটারদের আগে জানিয়ে দেয়ার জন্য আমরা অনুশীলনমূলক (মক) ভোটের আয়োজন করেছি। ভোটাররা সরেজমিন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে কিভাবে ভোট দেবেন এবং তিনি যেই জায়গায় ভোট দিচ্ছেন তা ঠিক মতো দিচ্ছেন কিনা সব জেনেছেন- এই মক ভোটিংয়ের সময়।’

জানা গেছে, চসিক নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে ৭৩৫টি কেন্দ্রে এবং ৪ হাজার ৮৮৬টি বুথে। এরমধ্যে অস্থায়ী ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ২টি, অস্থায়ী বুথের সংখ্যা ৭৬৪টি। ভোটগ্রহণের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৭৩৫ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ৪ হাজার ৮৮৬ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এবং ৯ হাজার ৭৭২ জন পোলিং কর্মকর্তা।

নির্বাচনী প্রস্তুতি

চসিক নির্বাচনে ৭ জন মেয়র প্রার্থীসহ মোট ২৩৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আসন্ন নির্বাচনে প্রায় ৫৭ শতাংশ কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নগরীর বাইরে হাটহাজারী থানা এলাকার একটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে সেই কেন্দ্রকেও ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জেলা পুলিশ। আর নগরীর ৭২৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪১০টি কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ও ৩১৩টি ভোট কেন্দ্রকে ‘সাধারণ’ হিসাবে চিহ্নিত করেছে নগর পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রেখে নির্বাচন সম্পন্ন করতে নয় হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। এর বাইরে থাকবে আনসার বাহিনীর সদস্য। নির্বাচনে দায়িত্বপালনে পুলিশ সদস্যরা আসবেন দেশের বিভিন্ন এলাকা থাকে। তাদের অন্তত চারদিন অবস্থান করতে হবে। বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য রাখতে নগর পুলিশের চার জোনে সুবিধাজনক স্থানে চাহিদা অনুযায়ী কমিউনিটি সেন্টার নির্ধারণ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (সিএমপি) সালেহ মোহাম্মদ তানভীর জানান, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোন ভোটকেন্দ্রকে আমরা ‘ঝুকিপূর্ণ’ হিসেবে দেখছি না। তবে কিছু ভোটকেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নগরীর ৭২৩টি কেন্দ্রের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪১০টি কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ও ৩১৩টি কেন্দ্রকে ‘সাধারণ’ হিসেবে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এদিকে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে বাড়তি কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে প্রসঙ্গে নগর পুলিশের বিশেষ শাখার উপকমিশনার (ডিসি) আবদুল ওয়ারিশ জানান, গুরুত্বপূর্ণ’ কেন্দ্রগুলোতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সবকিছুই করা হবে। কোন ধরনের সহিংসতা কিংবা অঘটন ছাড়া সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পন্ন করতে আমাদের চেষ্টা থাকবে। জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক জানান, পাহাড়তলী ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্রের ভোটের দায়িত্ব পালন করবে জেলা পুলিশ। ওই কেন্দ্রটিকে আমার ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি। সেখানে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন থাকবে।

নির্বাচনে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি দায়িত্ব পালন করবে। সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১৬ জন করে এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন করে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার, বিজিবি ও র‌্যাব। ইভিএমের কারিগরি সহায়তায় প্রতি ভোটকেন্দ্রে সশস্ত্র বাহিনীর দু’জন করে সদস্য নিয়োগ থাকবেন।

নৌকার প্রচারণায় রিয়াজ-ফেরদৌস-পূর্ণিমা

আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীর পক্ষে গতকালও প্রচারণায় নেমেছিলেন তারকারা। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট চট্টগ্রাম জেলার উদ্যোগে ভোট চেয়ে এই নির্বাচনী প্রচারণা চালান চিত্রনায়ক রিয়াজ, ফেরদৌস, সায়মন, চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা, অরুণা বিশ্বাস, অভিনেত্রী বিজরী বরকতুল্লাহ, তানভীন সুইটিসহ তারকারা।

বিএনপিরও জমজমাট প্রচারণা

শেষ দিনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন দিনব্যাপী জামালখান, এনায়েত বাজার ও আলকরণ ওর্য়াডে গণসংযোগ করেন। তিনি নেতাকর্মী সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে গণসংযোগ শুরু করে পুরাতন বিমান অফিস রোড, আসকার দিঘীরপাড়, হেমসেন লেইন, মোমিন রোড, বৌদ্ধমন্দির, এনায়েত বাজার, তিন পুলের মাথা, আমতল, নিউ মার্কেট মোড়, স্টেশন রোড, বিআরটিসি মোড়, বাটালী রোড, লাভলেইন, কাজীর দেউড়ি হয়ে দলীয় কার্যালয়ে এসে শেষ হয়।

মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২১ , ১২ মাঘ ১৪২৭, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪২

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন : কাল ভোট

উৎসবের পরিবেশেও উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা

নিরুপম দাশগুপ্ত, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নির্বাচনে গতকাল সোমবার ছিল শেষ দিনের প্রচারণা। প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা চোখে পড়ার মতই প্রচার চালালেন শেষ দিন। বেশ একটা উৎসবমুখর পরিবেশ। ভোটাররাও উৎফুল্ল। কিন্তু এরপরও ভোটারদের মধ্যে ভোট নিয়ে আছে শঙ্কা, ভয়। প্রার্থীদেরও আছে শঙ্কা। এই শঙ্কা প্রকাশ করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। আওয়ামী লীগ সমর্থিত এক কাউন্সিলর প্রার্থীর বাসায় হামলার ও গুলিবর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের বাসায় পুলিশের তল্লাশি এবং গ্রেপ্তার অভিযান চলছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। বাকলিয়া থানা মহিলা দলের সভানেত্রী মরিয়মকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

কিছু শঙ্কার কথা জানালেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামানও। তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে যা যা করা দরকার, ইসি তাই করবে। তবে শঙ্কা যে নেই, তা নয়। কিন্তু শঙ্কার ভাবনা থেকে আমরা অতিরিক্ত সতর্ক থাকব। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন যেই করুক না কেন, আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

তবে এই নিরাপত্তা ব্যাবস্থার কারণে যেন ভোটারদের সতস্ফুর্তি নষ্ট না হয় সে বিষয়টিও দেখা হবে বলে জানালেন হাসানুজ্জামান। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আমাদের নির্দেশনা আছে, যেন অহেতুক কাউকে হয়রানি না করা হয়। নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মাঠে নামছেন। সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করতে তাদের সব ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

ভোটাররা কি বলছেন

২৯নং পশ্চিম মাদারবাড়ি ওয়ার্ডের ভোটার নিলুফা ইয়াসমিন জানান, ‘বিগত সাতদিন থেকে আনন্দ লাগছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট দিব বলে।’ তবে তিনি সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কার কথা জানালেন। একই কথা বললেন ৩৬নং গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডের বৃদ্ধ ভোটার আবুল কালাম। তিনি বলেন, ‘গত সংসদ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখি আমার নিজের ভোট অন্যজনে দিয়ে ফেলেছে, ভোট দিতে পারিনি।’ এবারও তিনি ভোট কেন্দ্রে যাবেন। যদি তার ভোট কেউ দিয়ে ফেলে এ জীবনে আর ভোট কেন্দ্রে যাবেন না বলে জানালেন তিনি।

গতকাল সকালে ২১নং জামালখান ওয়ার্ডের নতুন ভোটার ইসলামিয়া কলেজেছাত্র আরিফ হোসেন বলেন, ‘এই প্রথম ভোট দিব। তাই ভোটের দিনের অপেক্ষায় আছি। অনেক আনন্দ লাগছে ভোট দিব বলে।’ তিনি কাকে ভোট দিবেন তাও ঠিক করে ফেলেছেন, বললেন, ‘আমার পছন্দের প্রার্র্থী রয়েছে। তাকেই ভোট দিব।’

কাউন্সিলর প্রার্থীর বাসায় গুলিবর্ষণ

৩৩নং ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মো. সালাউদ্দিনের বাসায় হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল ভোররাত ৩টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটনায় নগরের কোতোয়ালি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে বলে জানান নগর ছাত্রলীগের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক।

মো. সালাউদ্দিন জানান, ‘ঘটনার সময় আমি বাসায় ছিলাম না। খবর পেয়ে দ্রুত বাসায় যাই। পুলিশকে খবর দেয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শটগানের ৬টি ও পিস্তলের ৩টি গুলির খোসা উদ্ধার করেছে। কাপড়ে মুখ বাঁধা একদল সন্ত্রাসী আমার বাসায় অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় তারা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে।’

কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা গুলির খোসা, আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করে দেখছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

গ্রেফতার আতঙ্কে বিএনপি

চসিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছে বিএনপি ও দলটির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এদিকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থক ও নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নির্বাচন পরিবেশ নষ্ট করার অভিযোগ তুলেছেন বিএনপি। সেই সঙ্গে গভীর রাতে পুলিশ ঢুকে বিএনপির নিরীহ নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় গিয়ে হানাসহ ধরপাকড় করে নিয়ে এসে গায়েবি মামলায় অভিযুক্ত করছে বলে অভিযোগ করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

বিএনপির ৩৪ প্রার্থী ২৩৮ মামলা কাঁধে নিয়ে ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। ভাঙচুর, সহিংসতা, হত্যাসহ নানা মামলা আছে তাদের বিরুদ্ধে। সেই তালিকায় মেয়র প্রার্থী নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের পাশাপাশি রয়েছেন ৫ নারী ও ২৮ সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী।

জানা গেছে, গত রোববার রাত থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাসায় পুলিশের তল্লাশি এবং গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। গতকাল রাত তিনটায় বাকলিয়া এলাকা থেকে বাকলিয়া থানা মহিলা দলের সভানেত্রী মরিয়মকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। মরিয়মের স্বামী বলেছেন, ‘আমার স্ত্রীর নামে কোন মামলা নেই। শুধু বিএনপি করার কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ এছাড়া নগরীর কোতোয়ালি, পতেঙ্গা, ডবলমুরিং, চাঁন্দগাও থানা এলাকাসহ কয়েকটি এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের বাসায় পুলিশি হয়রানি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

নির্বাচনী কর্মকর্তাদের আশ্বাস

তবে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চসিক নির্বাচনের রিটানিং অফিসার। তিনি বলেছেন, ‘ কোন ধরনের সহিংসতা ছাড়া ভোট গ্রহণ শেষ করা ইসির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলেও শান্তিপূর্ণ সব কার্যক্রমে সফল হবে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি।’ আগামীকাল সকাল ৮টা থেকে বিকেলে ৪টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে সিটির ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

দুই দলের যত অভিযোগ

এদিকে আওয়ামী লীগ বারবার ইসিতে অভিযোগ করেছে, বিএনপি বহিরাগত সন্ত্রাসীদের এনেছে নাশকতা সৃষ্টির জন্য। এদিক বিএনপিও একই অভিযোগ করেছে ইসিতে।

প্রার্থী ও ভোটারদের ভেতর নির্বাচনী সহিংসতাসহ নির্বাচনকেন্দ্রিক অপরাধের যেসব শঙ্কা রয়েছে, তা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে নির্বাচন কমিশন। সেজন্য নির্বাচন নির্বিঘে্ন করতে ইসির নির্দেশে নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত শনিবার থেকেই বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এছাড়া ভোটাধিকার প্রয়োগে কোন ভোটারকে কেন্দ্রে আসা-যাওয়ার পথে কেউ বাধা দিলে বা ভয়ভীতি, অস্ত্র, শক্তি প্রদর্শন করলে তৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সহিম সতাপ্রবণ এলাকার কেন্দ্রগুলোকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। তবে পুলিশের দৃষ্টিতে ‘ঝুকিপূর্ণ’ নয় কিছু কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নগরীর চার প্রবেশ পথে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। পুলিশ কমিশনার নিজেই রাতে বের হয়ে থানা পুলিশের কার্যক্রম নজরদারি করছেন।

শেষ দিনের প্রচারণা

এদিকে গতকাল শেষ দিনে প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম চৌধুরী এবং বিএনপির ডা. শাহাদাত হোসেনসহ ৭ মেয়র প্রার্থী এবং ২২৫ জন কাউন্সিলর প্রার্থী শেষ মুহূর্তে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। গতানুগতিক প্রচার-প্রচারণার বাইরে এবার প্রত্যেক প্রার্থীর প্রচারণায় যুক্ত হয়েছে ভিন্নমাত্রা। ডিজিটাল প্রচারণায় পেয়েছে শৈল্পিক রূপ। ডিজিটাল প্রচারণার মাধ্যমে সশরীরে না গেলেও প্রার্থীরা ঠিকই পৌঁছে যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। শুধু মিছিল-স্লোগানে থেমে থাকেননি প্রার্থী এবং কর্মী-সমর্থকরা। বিনোদন জগতের জনপ্রিয় শিল্পীদের কণ্ঠে ছিল মন মাতানো গান। কোন প্রার্থী কোন মার্কায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আর তাদের প্রতিশ্রুতির কথা পৌঁছে গেছে ভোটারদের কাছে।

ইভিএমে ভোটের অনুশীলন

এদিকে গতকাল ৭৩৫টি কেন্দ্রে অনুশীলনমূলক (মক) ভোট সম্পন্ন হয়। সকাল ১০টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ভোটারদের ইভিএম-এ ভোট দেয়ার পদ্ধতি শিখিয়ে দেন প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তারা। এব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান জানান, এবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সব কেন্দ্রে (৭৩৫টি) ইভিএম-এ ভোটগ্রহণ হবে। ‘এজন্য আমাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে। ভোটাররা ইভিএম-এ কিভাবে ভোট দেবেন-সেই পদ্ধতি ভোটারদের আগে জানিয়ে দেয়ার জন্য আমরা অনুশীলনমূলক (মক) ভোটের আয়োজন করেছি। ভোটাররা সরেজমিন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে কিভাবে ভোট দেবেন এবং তিনি যেই জায়গায় ভোট দিচ্ছেন তা ঠিক মতো দিচ্ছেন কিনা সব জেনেছেন- এই মক ভোটিংয়ের সময়।’

জানা গেছে, চসিক নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে ৭৩৫টি কেন্দ্রে এবং ৪ হাজার ৮৮৬টি বুথে। এরমধ্যে অস্থায়ী ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ২টি, অস্থায়ী বুথের সংখ্যা ৭৬৪টি। ভোটগ্রহণের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৭৩৫ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ৪ হাজার ৮৮৬ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এবং ৯ হাজার ৭৭২ জন পোলিং কর্মকর্তা।

নির্বাচনী প্রস্তুতি

চসিক নির্বাচনে ৭ জন মেয়র প্রার্থীসহ মোট ২৩৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আসন্ন নির্বাচনে প্রায় ৫৭ শতাংশ কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নগরীর বাইরে হাটহাজারী থানা এলাকার একটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে সেই কেন্দ্রকেও ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জেলা পুলিশ। আর নগরীর ৭২৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪১০টি কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ও ৩১৩টি ভোট কেন্দ্রকে ‘সাধারণ’ হিসাবে চিহ্নিত করেছে নগর পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রেখে নির্বাচন সম্পন্ন করতে নয় হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে। এর বাইরে থাকবে আনসার বাহিনীর সদস্য। নির্বাচনে দায়িত্বপালনে পুলিশ সদস্যরা আসবেন দেশের বিভিন্ন এলাকা থাকে। তাদের অন্তত চারদিন অবস্থান করতে হবে। বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য রাখতে নগর পুলিশের চার জোনে সুবিধাজনক স্থানে চাহিদা অনুযায়ী কমিউনিটি সেন্টার নির্ধারণ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (সিএমপি) সালেহ মোহাম্মদ তানভীর জানান, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কোন ভোটকেন্দ্রকে আমরা ‘ঝুকিপূর্ণ’ হিসেবে দেখছি না। তবে কিছু ভোটকেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। নগরীর ৭২৩টি কেন্দ্রের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৪১০টি কেন্দ্রকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ও ৩১৩টি কেন্দ্রকে ‘সাধারণ’ হিসেবে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এদিকে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে বাড়তি কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে প্রসঙ্গে নগর পুলিশের বিশেষ শাখার উপকমিশনার (ডিসি) আবদুল ওয়ারিশ জানান, গুরুত্বপূর্ণ’ কেন্দ্রগুলোতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সবকিছুই করা হবে। কোন ধরনের সহিংসতা কিংবা অঘটন ছাড়া সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পন্ন করতে আমাদের চেষ্টা থাকবে। জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক জানান, পাহাড়তলী ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্রের ভোটের দায়িত্ব পালন করবে জেলা পুলিশ। ওই কেন্দ্রটিকে আমার ‘গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি। সেখানে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন থাকবে।

নির্বাচনে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি দায়িত্ব পালন করবে। সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১৬ জন করে এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন করে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের দায়িত্ব পালন করবে পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার, বিজিবি ও র‌্যাব। ইভিএমের কারিগরি সহায়তায় প্রতি ভোটকেন্দ্রে সশস্ত্র বাহিনীর দু’জন করে সদস্য নিয়োগ থাকবেন।

নৌকার প্রচারণায় রিয়াজ-ফেরদৌস-পূর্ণিমা

আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীর পক্ষে গতকালও প্রচারণায় নেমেছিলেন তারকারা। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট চট্টগ্রাম জেলার উদ্যোগে ভোট চেয়ে এই নির্বাচনী প্রচারণা চালান চিত্রনায়ক রিয়াজ, ফেরদৌস, সায়মন, চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা, অরুণা বিশ্বাস, অভিনেত্রী বিজরী বরকতুল্লাহ, তানভীন সুইটিসহ তারকারা।

বিএনপিরও জমজমাট প্রচারণা

শেষ দিনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন দিনব্যাপী জামালখান, এনায়েত বাজার ও আলকরণ ওর্য়াডে গণসংযোগ করেন। তিনি নেতাকর্মী সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে গণসংযোগ শুরু করে পুরাতন বিমান অফিস রোড, আসকার দিঘীরপাড়, হেমসেন লেইন, মোমিন রোড, বৌদ্ধমন্দির, এনায়েত বাজার, তিন পুলের মাথা, আমতল, নিউ মার্কেট মোড়, স্টেশন রোড, বিআরটিসি মোড়, বাটালী রোড, লাভলেইন, কাজীর দেউড়ি হয়ে দলীয় কার্যালয়ে এসে শেষ হয়।