অমর একুশে বইমেলা ১৮ মার্চ শুরু

করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় এ বছরের অমর একুশে গ্রন্থমেলা বাতিলের পরিকল্পনা করেছিল বাংলা একাডেমি। তবে শেষ মুহূর্তে এসে জানা গেল এবারও গ্রন্থমেলা হবে। তবে মেলা ফেব্রুয়ারিতে নয়, হবে মার্চে। অমর একুশে গ্রন্থমেলার জন্য ১৮ মার্চ নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী।

বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বইমেলা করার অনুমতি মিলেছে। তবে এবার মেলা প্রতিবছরের মতো ফেব্রুয়ারিতে হচ্ছে না। এ বছরের মেলাটি হবে মার্চে।

হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, করোনা ঝুঁকির কারণেই মেলা পিছিয়ে গেল। সবকিছু বিবেচনায় এবারের মেলা শুরু হবে ১৮ মার্চ। আশা করি, মেলাকে ঘিরে আনন্দ কমবে না। মেলা মার্চে শুরু হলেও আগের মতো এক মাস মেলা চলবে কিনা সে ব্যাপারে এখনও কিছু জানা যায়নি।

তিনি বলেন, আমরা প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী ১৮ মার্চ অমর একুশে গ্রন্থমেলা উদ্বোধন হবে। বইমেলা প্রকাশ্যেই হচ্ছে। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন একুশে বইমেলা শুরু হলেও এবার মহামারীর বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বইমেলার আয়োজন স্থগিত রাখার জন্য ডিসেম্বরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিল বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। পরে ভার্চুয়ালি বইমেলা করার প্রস্তাব এলেও বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি তাতে আপত্তি জানিয়ে বলে, খোলা আকাশের নিচে, বিশাল জায়গাজুড়ে যেভাবে প্রতিবছর হয়ে আসছে, এবারও তারা সেভাবেই একুশে বইমেলায় অংশ নিতে চান। সৃজনশীল বইয়ের প্রকাশকদের ব্যবসার সবচেয়ে বড় মৌসুমই হলো অমর একুশে গ্রন্থমেলা। সেই মেলা আয়োজন না হলে বড় ক্ষতির আশঙ্কায় পড়েন তারা।

দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ গত ১৭ জানুয়ারি জানান, বিলম্বিত হলেও বইমেলা সরাসরিই হবে। সেজন্য ২০ ফেব্রুয়ারি, ৭ মার্চ অথবা ১৭ মার্চ থেকে বইমেলা শুরু করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এ বিষয়ে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই গ্রন্থমেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি ১৮ মার্চ মেলা শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়।এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংস্কৃতি সচিব বদরুল আরেফিন বলেন, গতকাল বিকেলে অফিস টাইমের পর প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে চিঠি এসেছে। আগামী ১৮ মার্চ থেকে বইমেলা করা যাবে।

বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, যদিও মেলা কত দিনের তা চূড়ান্ত হয়নি, তবে আমরা প্রাথমিকভাবে ১৪ এপ্রিল, পহেলা বৈশাখ পর্যন্ত বইমেলা চালিয়ে যাব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। করোনাভাইরাস মহামারীর প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কীভাবে বইমেলা হবে, তার নীতিমালা চূড়ান্ত করতে হবে আমাদের। বইমেলায় স্টল পেতে আগ্রহী প্রকাশকরা ইতোমধ্যে আবেদন জমা দিয়েছেন বাংলা একাডেমিতে। স্টল বরাদ্দের জন্য টাকা জমাদানের তারিখ নির্ধারণের পরই জানা যাবে এবার বইমেলায় কতজন প্রকাশক অংশ নেবেন।

বইমেলায় বিপুল জনসমাগম সামলাতে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিন্যাস নতুন করে সাজাতে হবে বলেও মন্তব্য করেন ফরিদ আহমেদ। আমাদের সবকিছুর আগে স্বাস্থ্যবিধির কথা মাথায় রাখতেই হবে। মেলার বিন্যাস নিয়ে শীঘ্রই বৈঠক করব আমরা। ১৯৭২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির গেইটে চট বিছিয়ে বই বিক্রি শুরু করেন মুক্তধারা প্রকাশনীর মালিক চিত্তরঞ্জন সাহা। ১৯৭৭ সালে তার সঙ্গে আরও অনেকে যোগ দেন।

১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমিকে এ বইমেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত করেন। পরের বছর মেলার সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি। ১৯৮৩ সালে মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকার সময় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ নামে এ মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি নেয়া হলেও তা আর করা যায়নি। পরের বছর ১৯৮৪ সালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘অমর একুশে বইমেলা’র সূচনা হয়। মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের মাস ফেব্রুয়ারিজুড়ে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের এই বইমেলা এখন বাঙালির মননের মেলায় পরিণত হয়। প্রতিবছর ১ ফেব্রুয়ারি এ মেলার পর্দা উঠলেও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ভোট থাকায় গত বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলা একদিন পিছিয়ে ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়।

মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২১ , ১২ মাঘ ১৪২৭, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪২

অমর একুশে বইমেলা ১৮ মার্চ শুরু

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

image

করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় এ বছরের অমর একুশে গ্রন্থমেলা বাতিলের পরিকল্পনা করেছিল বাংলা একাডেমি। তবে শেষ মুহূর্তে এসে জানা গেল এবারও গ্রন্থমেলা হবে। তবে মেলা ফেব্রুয়ারিতে নয়, হবে মার্চে। অমর একুশে গ্রন্থমেলার জন্য ১৮ মার্চ নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। গতকাল এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী।

বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বইমেলা করার অনুমতি মিলেছে। তবে এবার মেলা প্রতিবছরের মতো ফেব্রুয়ারিতে হচ্ছে না। এ বছরের মেলাটি হবে মার্চে।

হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, করোনা ঝুঁকির কারণেই মেলা পিছিয়ে গেল। সবকিছু বিবেচনায় এবারের মেলা শুরু হবে ১৮ মার্চ। আশা করি, মেলাকে ঘিরে আনন্দ কমবে না। মেলা মার্চে শুরু হলেও আগের মতো এক মাস মেলা চলবে কিনা সে ব্যাপারে এখনও কিছু জানা যায়নি।

তিনি বলেন, আমরা প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী ১৮ মার্চ অমর একুশে গ্রন্থমেলা উদ্বোধন হবে। বইমেলা প্রকাশ্যেই হচ্ছে। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন একুশে বইমেলা শুরু হলেও এবার মহামারীর বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বইমেলার আয়োজন স্থগিত রাখার জন্য ডিসেম্বরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিল বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। পরে ভার্চুয়ালি বইমেলা করার প্রস্তাব এলেও বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি তাতে আপত্তি জানিয়ে বলে, খোলা আকাশের নিচে, বিশাল জায়গাজুড়ে যেভাবে প্রতিবছর হয়ে আসছে, এবারও তারা সেভাবেই একুশে বইমেলায় অংশ নিতে চান। সৃজনশীল বইয়ের প্রকাশকদের ব্যবসার সবচেয়ে বড় মৌসুমই হলো অমর একুশে গ্রন্থমেলা। সেই মেলা আয়োজন না হলে বড় ক্ষতির আশঙ্কায় পড়েন তারা।

দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ গত ১৭ জানুয়ারি জানান, বিলম্বিত হলেও বইমেলা সরাসরিই হবে। সেজন্য ২০ ফেব্রুয়ারি, ৭ মার্চ অথবা ১৭ মার্চ থেকে বইমেলা শুরু করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এ বিষয়ে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই গ্রন্থমেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি ১৮ মার্চ মেলা শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়।এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংস্কৃতি সচিব বদরুল আরেফিন বলেন, গতকাল বিকেলে অফিস টাইমের পর প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে চিঠি এসেছে। আগামী ১৮ মার্চ থেকে বইমেলা করা যাবে।

বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, যদিও মেলা কত দিনের তা চূড়ান্ত হয়নি, তবে আমরা প্রাথমিকভাবে ১৪ এপ্রিল, পহেলা বৈশাখ পর্যন্ত বইমেলা চালিয়ে যাব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। করোনাভাইরাস মহামারীর প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কীভাবে বইমেলা হবে, তার নীতিমালা চূড়ান্ত করতে হবে আমাদের। বইমেলায় স্টল পেতে আগ্রহী প্রকাশকরা ইতোমধ্যে আবেদন জমা দিয়েছেন বাংলা একাডেমিতে। স্টল বরাদ্দের জন্য টাকা জমাদানের তারিখ নির্ধারণের পরই জানা যাবে এবার বইমেলায় কতজন প্রকাশক অংশ নেবেন।

বইমেলায় বিপুল জনসমাগম সামলাতে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিন্যাস নতুন করে সাজাতে হবে বলেও মন্তব্য করেন ফরিদ আহমেদ। আমাদের সবকিছুর আগে স্বাস্থ্যবিধির কথা মাথায় রাখতেই হবে। মেলার বিন্যাস নিয়ে শীঘ্রই বৈঠক করব আমরা। ১৯৭২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির গেইটে চট বিছিয়ে বই বিক্রি শুরু করেন মুক্তধারা প্রকাশনীর মালিক চিত্তরঞ্জন সাহা। ১৯৭৭ সালে তার সঙ্গে আরও অনেকে যোগ দেন।

১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমিকে এ বইমেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত করেন। পরের বছর মেলার সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি। ১৯৮৩ সালে মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকার সময় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ নামে এ মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি নেয়া হলেও তা আর করা যায়নি। পরের বছর ১৯৮৪ সালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘অমর একুশে বইমেলা’র সূচনা হয়। মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের মাস ফেব্রুয়ারিজুড়ে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের এই বইমেলা এখন বাঙালির মননের মেলায় পরিণত হয়। প্রতিবছর ১ ফেব্রুয়ারি এ মেলার পর্দা উঠলেও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ভোট থাকায় গত বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলা একদিন পিছিয়ে ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়।