আন্তঃনগর বিজয় এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার জন্য তদন্ত প্রতিবেদনে ‘ইন্টারন্যাল সিগন্যাল সিস্টেম’ কে দায়ী করা হয়েছে। মালবাহী ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনার জন্য প্রকৌশল বিভাগকে অর্ধেক ও যান্ত্রিক ত্রুটি অর্ধেক, উদ্ধারকারী রিলিফ ট্রেনের টুলস ইঞ্জিন দুর্ঘটনার জন্যও ‘ইন্টারন্যাল সিগন্যাল সিস্টেম’ দায়ী বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। পরপর চার ট্রেন দুর্ঘটনার এক বছরেও গৌরীপুর রেলওয়ে জংশনের ৫৫ বছরের পুরনো ‘ইন্টারন্যাল সিগন্যাল সিস্টেম’ পরিবর্তন হয়নি।
বিষয়টি গত রোববার নিশ্চিত করেন গৌরীপুর জংশনের স্টেশন মাস্টার মো. আবদুর রশিদ। তিনি জানান, ‘ইন্টারন্যাল সিগন্যাল সিস্টেম’ পরিবর্তনের জন্য তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও আমরা লিখিতভাবে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবারপত্র দিয়ে বিষয়টি অবহিত করেছি। কিছু মেরামত হয়েছে, তবে পরিবর্তন হয়নি। তদন্ত দলের প্রধান বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিবহন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম জানান, গৌরীপুর ও শ্যামগঞ্জ রেলওয়ে জংশনের ইন্টারন্যাল সিগন্যাল সিস্টেম ৫৫ বছরের পুরাতন। গৌরীপুর জংশনের ইন্টারন্যাল সিগন্যাল সিস্টেমের সমস্যার কারণে আন্তঃনগর বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। তিনি আরো জানান, এ দুটো স্টেশনের সিগন্যাল সিস্টেম পরিবর্তনের জন্য পত্র দেয়া হয়েছে। সিগন্যাল সিস্টেম আধুনিকায়ন (কম্পিউটারাইজ) করার কার্যক্রমও শুরু করা হবে। আন্তঃনগর বিজয় এক্সপ্রেস গতবছর জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ বুধবার রাতে গৌরীপুর জংশনের আউটার সিগন্যাল অতিক্রমের সময় লাইনচ্যুত। এ ঘটনার জন্য তদন্ত কমিটির অপর সদস্যরা হলেন সিগন্যাল বিভাগের কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন, সহকারী প্রকৌশলী সুকুমার রায় ও এএমাই কর্মকর্তা সাজিদ হাসান নির্জন।
অপরদিকে জানুয়ারি মাসের ১৮ তারিখ শুক্রবার সন্ধ্যা ৫টা ২০ মিনিটে জামালপুরের তারাকান্দিগামী সার বোঝাই মালবাহী ট্রেনের বগি গৌরীপুরে লাইনচ্যুত হয়। মালবাহী ট্রেনের বগি উদ্ধার করতে এসে উদ্ধারকারী রিলিফ ট্রেনের টুলস ইঞ্জিনও ওইদিন রাত ১০টা ৩০মিনিটে লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটে। জানুয়ারি মাসের ২০ তারিখ সোমবার জারিয়া থেকে ময়মনসিংহগামী জারিয়া লোকাল ট্রেনের ইঞ্জিন ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জে বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে, লাইনচ্যুত হয়। এসব দুর্ঘটনা কারণ অনুসন্ধানে ৬ তদন্তের উচ্চপর্যায়ের বিভাগীয় প্রতিনিধি দল সে বছর ২০ জানুয়ারি দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। প্রতিনিধি দলের প্রধান ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বীরেন্দ্র নাথ মজুমদার। প্রতিনিধি দলে ছিলেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী তানভিরুল ইসলাম, বিভাগীয় প্রকৌশলী (ওয়ান) মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বিভাগীয় পরিবহন প্রকৌশলী ময়েনুল ইসলাম, বিভাগীয় সঙ্কেত প্রকৌশলী আবুহেনা মোস্তফা আলম, বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম।
দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের এক বছর অতিক্রম করলেও সমস্যা সমাধানের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। রোববার (২৪ জানুয়ারি ২০২১) রেলওয়ে জংশনে সরজমিনে দেখা যায়, ৫৫ বছরের পুরোনো সেই ‘ইন্টারন্যাল সিগন্যাল সিস্টেম’-এ স্টেশনের কার্যক্রম চলছে। অপরদিকে চারটি রেলপথ গৌরীপুর থেকে জারিয়া, মোহনগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ, প্রত্যেকটি রেললাইনে পাথর স্বল্পতা রয়েছে। শ্যামগঞ্জ আউটার সিগন্যালের দু’পাশে অবৈধ স্থাপনা রেল চলাচলেও বিঘœ ঘটচ্ছে। রেলক্রসিং পারাপারে একেরপর এক দুুর্ঘটনা ঘটলেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না। গৌরীপুর জংশনের ৬টি রেললাইনের মধ্যে ৩টি বিকল, একটি মাটির নিচে তলিয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে গৌরীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদ মজিবুর রহমান ফকির বলেন, দুর্ঘটনা ঘটলে কয়েকদিন তৎপরতা থাকে, তারপর আর কোন খোঁজখবর নেই। এরকম তদন্ত কমিটি আর উদাসীনতায় জড়িতদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২১ , ১৪ মাঘ ১৪২৭, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২
প্রতিনিধি, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)
আন্তঃনগর বিজয় এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার জন্য তদন্ত প্রতিবেদনে ‘ইন্টারন্যাল সিগন্যাল সিস্টেম’ কে দায়ী করা হয়েছে। মালবাহী ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনার জন্য প্রকৌশল বিভাগকে অর্ধেক ও যান্ত্রিক ত্রুটি অর্ধেক, উদ্ধারকারী রিলিফ ট্রেনের টুলস ইঞ্জিন দুর্ঘটনার জন্যও ‘ইন্টারন্যাল সিগন্যাল সিস্টেম’ দায়ী বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। পরপর চার ট্রেন দুর্ঘটনার এক বছরেও গৌরীপুর রেলওয়ে জংশনের ৫৫ বছরের পুরনো ‘ইন্টারন্যাল সিগন্যাল সিস্টেম’ পরিবর্তন হয়নি।
বিষয়টি গত রোববার নিশ্চিত করেন গৌরীপুর জংশনের স্টেশন মাস্টার মো. আবদুর রশিদ। তিনি জানান, ‘ইন্টারন্যাল সিগন্যাল সিস্টেম’ পরিবর্তনের জন্য তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও আমরা লিখিতভাবে ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবারপত্র দিয়ে বিষয়টি অবহিত করেছি। কিছু মেরামত হয়েছে, তবে পরিবর্তন হয়নি। তদন্ত দলের প্রধান বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিবহন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম জানান, গৌরীপুর ও শ্যামগঞ্জ রেলওয়ে জংশনের ইন্টারন্যাল সিগন্যাল সিস্টেম ৫৫ বছরের পুরাতন। গৌরীপুর জংশনের ইন্টারন্যাল সিগন্যাল সিস্টেমের সমস্যার কারণে আন্তঃনগর বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। তিনি আরো জানান, এ দুটো স্টেশনের সিগন্যাল সিস্টেম পরিবর্তনের জন্য পত্র দেয়া হয়েছে। সিগন্যাল সিস্টেম আধুনিকায়ন (কম্পিউটারাইজ) করার কার্যক্রমও শুরু করা হবে। আন্তঃনগর বিজয় এক্সপ্রেস গতবছর জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ বুধবার রাতে গৌরীপুর জংশনের আউটার সিগন্যাল অতিক্রমের সময় লাইনচ্যুত। এ ঘটনার জন্য তদন্ত কমিটির অপর সদস্যরা হলেন সিগন্যাল বিভাগের কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেন, সহকারী প্রকৌশলী সুকুমার রায় ও এএমাই কর্মকর্তা সাজিদ হাসান নির্জন।
অপরদিকে জানুয়ারি মাসের ১৮ তারিখ শুক্রবার সন্ধ্যা ৫টা ২০ মিনিটে জামালপুরের তারাকান্দিগামী সার বোঝাই মালবাহী ট্রেনের বগি গৌরীপুরে লাইনচ্যুত হয়। মালবাহী ট্রেনের বগি উদ্ধার করতে এসে উদ্ধারকারী রিলিফ ট্রেনের টুলস ইঞ্জিনও ওইদিন রাত ১০টা ৩০মিনিটে লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটে। জানুয়ারি মাসের ২০ তারিখ সোমবার জারিয়া থেকে ময়মনসিংহগামী জারিয়া লোকাল ট্রেনের ইঞ্জিন ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জে বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে, লাইনচ্যুত হয়। এসব দুর্ঘটনা কারণ অনুসন্ধানে ৬ তদন্তের উচ্চপর্যায়ের বিভাগীয় প্রতিনিধি দল সে বছর ২০ জানুয়ারি দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। প্রতিনিধি দলের প্রধান ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বীরেন্দ্র নাথ মজুমদার। প্রতিনিধি দলে ছিলেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী তানভিরুল ইসলাম, বিভাগীয় প্রকৌশলী (ওয়ান) মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বিভাগীয় পরিবহন প্রকৌশলী ময়েনুল ইসলাম, বিভাগীয় সঙ্কেত প্রকৌশলী আবুহেনা মোস্তফা আলম, বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম।
দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের এক বছর অতিক্রম করলেও সমস্যা সমাধানের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। রোববার (২৪ জানুয়ারি ২০২১) রেলওয়ে জংশনে সরজমিনে দেখা যায়, ৫৫ বছরের পুরোনো সেই ‘ইন্টারন্যাল সিগন্যাল সিস্টেম’-এ স্টেশনের কার্যক্রম চলছে। অপরদিকে চারটি রেলপথ গৌরীপুর থেকে জারিয়া, মোহনগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ, প্রত্যেকটি রেললাইনে পাথর স্বল্পতা রয়েছে। শ্যামগঞ্জ আউটার সিগন্যালের দু’পাশে অবৈধ স্থাপনা রেল চলাচলেও বিঘœ ঘটচ্ছে। রেলক্রসিং পারাপারে একেরপর এক দুুর্ঘটনা ঘটলেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কোন উদ্যোগ নিচ্ছেন না। গৌরীপুর জংশনের ৬টি রেললাইনের মধ্যে ৩টি বিকল, একটি মাটির নিচে তলিয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে গৌরীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদ মজিবুর রহমান ফকির বলেন, দুর্ঘটনা ঘটলে কয়েকদিন তৎপরতা থাকে, তারপর আর কোন খোঁজখবর নেই। এরকম তদন্ত কমিটি আর উদাসীনতায় জড়িতদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।