পাতাল ও উড়াল পথ সমন্বয়ে হবে ঢাকার বৃত্তাকার রেলপথ

সম্ভাব্য ব্যয় ৩২ হাজার কোটি টাকা, স্টেশন ২৪টি

পাতাল ও উড়াল পথ সমন্বয় করে নির্মিত হবে ঢাকার বৃত্তাকার রেলপথ। ঢাকা শহরের ভিতরে প্রবেশ না করে নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে দ্রুত যাতায়াতের জন্য প্রায় ৮০ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার বৃত্তাকার রেলপথ নির্র্মাণ করা হবে। গাজীপুরের টঙ্গী থেকে শুরু হয়ে ঢাকার চারপাশ দিয়ে আবার টঙ্গী স্টেশনে এসে শেষ হবে এই বৃত্তাকার রেলপথ। এরমধ্যে প্রায় ১০ কিলোমিটার রেলপথ হবে পাতাল। বাকি ৭০ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার রেলপথ হবে উড়াল। এই রেলপথের সঙ্গে ৮ পয়েন্টে মেট্রোরেলের সঙ্গে যুক্ত হবে। বৃত্তাকার এই রেলপথে স্টেশন থাকবে ২৪টি। ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ করেছে চীন ও বাংলাদেশের যৌথ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। গতকাল রেল ভবনে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের চূড়ান্ত রিপোর্ট উপস্থাপন করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলো। এ সময় কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল ও পূর্বাচলের পুরো অংশ যুক্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে ডিপিপি তৈরি করে খুব শীঘ্রই পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।

বৃত্তাকার রেলপথ সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম ফিরোজী সংবাদকে বলেন, যানজট নিরসনে ঢাকা শহরের চারপাশ দিয়ে এই সার্কুলার রেলপথটি নির্মাণ করা হবে। বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণে প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান খোঁজা হচ্ছে। বৃত্তাকার এই রেলপথ পরিকল্পনা অনেক আগের। আজ (গতকাল) প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের চূড়ান্ত রিপোর্ট উপস্থাপন করেছে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, বৃত্তাকার রেলপথের সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা। সময় ধরা হয়েছে ৩ বছর। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জাইকা, বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ অন্য আরও কয়েকটি সংস্থা উন্নয়ন-সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে উন্নয়ন-সহযোগীদের কাছ থেকে সাড়া না পেলে নিজস্ব অর্থায়নেই প্রকল্পটির কাজ শুরু করার পরিকল্পনা করছে সরকার।

গাজীপুরের টঙ্গী থেকে শুরু হয়ে আবার টঙ্গী স্টেশনে এসে শেষ হবে এই বৃত্তাকার রেলপথ। এরমধ্যে টঙ্গী, বিশ্ব ইজতেমা, দৌর, উত্তরা, মিরপুর চিড়িয়াখানা, গাবতলী, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ, রায়েরবাজার, কামরাঙ্গীরচর-১, কামরাঙ্গীরচর-২, সদরঘাট, পোস্তগোলা, পাগলা, ফতুল্লা, চাষাঢ়া, চিত্তরঞ্জন, আদমজী, সিদ্ধিরগঞ্জ, ডেমরা, ত্রিমুহনী, বেরায়েত, পূর্বাচল, পূর্বাচল উত্তর, তেরমুখ হয়ে পনুরায় টঙ্গী গিয়ে শেষ হবে। বৃত্তাকার এই রেল নেটওয়ার্ক হবে উচ্চতর বিদ্যুৎ এবং ডাবল লাইন স্ট্যান্ডার্ড গেজসম্পন্ন।

বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণের এই প্রকল্পের প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু হয় ২০১৪ সালে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ২৭ কোটি টাকার ‘সমীক্ষা প্রকল্প’ অনুমোদন দিয়েছিল পরিকল্পনা কমিশন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বৃহৎ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ৩২ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। তবে ভবিষ্যতে এ ব্যয় আরও বাড়তে পারে। এজন্য বিদেশি কোন বিনিয়োগকারী পেলে সরকার তা সানন্দে গ্রহণ করবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানায়।

প্রকল্প সূত্র জানায়, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে জাইকা। এই নিয়ে জাইকার সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি ও ডিটেইল ডিজাইনের কাজ শেষ পর্যায়ে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকা আশপাশের জেলার মানুষ সহজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করতে পাবরে। কেউ যদি নারায়ণগঞ্জ থেকে উত্তরা যেতে চায় তাহলে রাজধানী ভিতরে প্রবেশ না করেই বৃত্তাকার এই রেলপথ ব্যবহার করে সহজেই যাতায়াত করতে পারবেন।

এছাড়া বৃত্তাকার এই রেলপথের সঙ্গে ৮ পয়েন্টে মেট্রোরেলের সঙ্গে যুক্ত হবে। এগুলো হলো-গাজীপুরের টঙ্গী স্টেশনে, আশুলিয়া বেড়িবাঁধে দৌর ব্রিজের কাছে, গাবতলী, শ্যামপুর, চাষাঢ়া, বিরায়েত, পূর্বাচল ও তেরমুখ স্টেশনে মেট্রোরেলের সঙ্গে যুক্ত হবে এই বৃত্তাকার রেলপথটি। বৃত্তাকার এই রেলপথের মধ্যে প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশ মাটির নিচ দিয়ে যাবে। এরমধ্যে কেরানীগঞ্জের-২ স্টেশন থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার পাতাল রেলপথ হবে। এছাড়া মিরপুর চিড়িয়াখানা-গাবতলী পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার রেলপথ মাটির নিচ দিয়ে নির্মাণ করা হবে বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।

বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২১ , ১৪ মাঘ ১৪২৭, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২

পাতাল ও উড়াল পথ সমন্বয়ে হবে ঢাকার বৃত্তাকার রেলপথ

সম্ভাব্য ব্যয় ৩২ হাজার কোটি টাকা, স্টেশন ২৪টি

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

image

পাতাল ও উড়াল পথ সমন্বয় করে নির্মিত হবে ঢাকার বৃত্তাকার রেলপথ। ঢাকা শহরের ভিতরে প্রবেশ না করে নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে দ্রুত যাতায়াতের জন্য প্রায় ৮০ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার বৃত্তাকার রেলপথ নির্র্মাণ করা হবে। গাজীপুরের টঙ্গী থেকে শুরু হয়ে ঢাকার চারপাশ দিয়ে আবার টঙ্গী স্টেশনে এসে শেষ হবে এই বৃত্তাকার রেলপথ। এরমধ্যে প্রায় ১০ কিলোমিটার রেলপথ হবে পাতাল। বাকি ৭০ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার রেলপথ হবে উড়াল। এই রেলপথের সঙ্গে ৮ পয়েন্টে মেট্রোরেলের সঙ্গে যুক্ত হবে। বৃত্তাকার এই রেলপথে স্টেশন থাকবে ২৪টি। ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ করেছে চীন ও বাংলাদেশের যৌথ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। গতকাল রেল ভবনে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের চূড়ান্ত রিপোর্ট উপস্থাপন করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলো। এ সময় কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল ও পূর্বাচলের পুরো অংশ যুক্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে ডিপিপি তৈরি করে খুব শীঘ্রই পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।

বৃত্তাকার রেলপথ সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম ফিরোজী সংবাদকে বলেন, যানজট নিরসনে ঢাকা শহরের চারপাশ দিয়ে এই সার্কুলার রেলপথটি নির্মাণ করা হবে। বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণে প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান খোঁজা হচ্ছে। বৃত্তাকার এই রেলপথ পরিকল্পনা অনেক আগের। আজ (গতকাল) প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের চূড়ান্ত রিপোর্ট উপস্থাপন করেছে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, বৃত্তাকার রেলপথের সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা। সময় ধরা হয়েছে ৩ বছর। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জাইকা, বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ অন্য আরও কয়েকটি সংস্থা উন্নয়ন-সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে উন্নয়ন-সহযোগীদের কাছ থেকে সাড়া না পেলে নিজস্ব অর্থায়নেই প্রকল্পটির কাজ শুরু করার পরিকল্পনা করছে সরকার।

গাজীপুরের টঙ্গী থেকে শুরু হয়ে আবার টঙ্গী স্টেশনে এসে শেষ হবে এই বৃত্তাকার রেলপথ। এরমধ্যে টঙ্গী, বিশ্ব ইজতেমা, দৌর, উত্তরা, মিরপুর চিড়িয়াখানা, গাবতলী, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ, রায়েরবাজার, কামরাঙ্গীরচর-১, কামরাঙ্গীরচর-২, সদরঘাট, পোস্তগোলা, পাগলা, ফতুল্লা, চাষাঢ়া, চিত্তরঞ্জন, আদমজী, সিদ্ধিরগঞ্জ, ডেমরা, ত্রিমুহনী, বেরায়েত, পূর্বাচল, পূর্বাচল উত্তর, তেরমুখ হয়ে পনুরায় টঙ্গী গিয়ে শেষ হবে। বৃত্তাকার এই রেল নেটওয়ার্ক হবে উচ্চতর বিদ্যুৎ এবং ডাবল লাইন স্ট্যান্ডার্ড গেজসম্পন্ন।

বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণের এই প্রকল্পের প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু হয় ২০১৪ সালে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ২৭ কোটি টাকার ‘সমীক্ষা প্রকল্প’ অনুমোদন দিয়েছিল পরিকল্পনা কমিশন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে বৃহৎ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ৩২ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। তবে ভবিষ্যতে এ ব্যয় আরও বাড়তে পারে। এজন্য বিদেশি কোন বিনিয়োগকারী পেলে সরকার তা সানন্দে গ্রহণ করবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানায়।

প্রকল্প সূত্র জানায়, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আগ্রহ প্রকাশ করেছে জাইকা। এই নিয়ে জাইকার সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি ও ডিটেইল ডিজাইনের কাজ শেষ পর্যায়ে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকা আশপাশের জেলার মানুষ সহজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করতে পাবরে। কেউ যদি নারায়ণগঞ্জ থেকে উত্তরা যেতে চায় তাহলে রাজধানী ভিতরে প্রবেশ না করেই বৃত্তাকার এই রেলপথ ব্যবহার করে সহজেই যাতায়াত করতে পারবেন।

এছাড়া বৃত্তাকার এই রেলপথের সঙ্গে ৮ পয়েন্টে মেট্রোরেলের সঙ্গে যুক্ত হবে। এগুলো হলো-গাজীপুরের টঙ্গী স্টেশনে, আশুলিয়া বেড়িবাঁধে দৌর ব্রিজের কাছে, গাবতলী, শ্যামপুর, চাষাঢ়া, বিরায়েত, পূর্বাচল ও তেরমুখ স্টেশনে মেট্রোরেলের সঙ্গে যুক্ত হবে এই বৃত্তাকার রেলপথটি। বৃত্তাকার এই রেলপথের মধ্যে প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশ মাটির নিচ দিয়ে যাবে। এরমধ্যে কেরানীগঞ্জের-২ স্টেশন থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার পাতাল রেলপথ হবে। এছাড়া মিরপুর চিড়িয়াখানা-গাবতলী পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার রেলপথ মাটির নিচ দিয়ে নির্মাণ করা হবে বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়।