বিলুপ্ত প্রায় ৬৪ প্রজাতির মাছের মধ্যে ২৪টি প্রজাতিকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটি। মৎস্য বিজ্ঞানীরা যে ২৪ প্রজাতির মাছ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে পাবদা, গুলশা টেংরা, গুজি আইড়, চিতল, ফলি, মহাশোল, বৈরালি, বারাচাটা, গুতুম, কুচিয়া, ভাগনা, খলিশা ও গজার প্রভৃতি। এসব প্রজাতির মাছের উৎপাদন সম্প্রসারণ ও মাঠপর্যায়ের মাছ চাষিদের কাছে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মৎস্য বিজ্ঞানীরা একে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক বলে মনে করছেন। দেশের ৬৪ প্রজাতির মাছকে ‘বিপন্ন বা বিলুপ্তপ্রায় বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। প্রজাতির মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে অস্তিত্ব রক্ষাসহ উৎপাদন সম্প্রসারণেও সক্ষম হয়েছে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটি। মাঠ পর্যায়ে মৎস্য চাষিদের কাছে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে এসব মাছের উন্নত চাষ পদ্ধতি মৎস্য অধিধপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ২০২১-২৫ সময়কালে ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দেশের মৎস্য অভায়াশ্রম এলাকায় সংকটাপন্ন মাছের প্রজাতির সংখ্যা ৫০% হ্রাস করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ব্যপারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শম রেজাউল করিম জানান, বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় সব প্রজাতির মাছকে ফিরিয়ে আনতে আমাদের বিজ্ঞানীরা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে অস্তিত্ব সংকটে থাকা সব দেশীয় মাছ পুনরুদ্ধার করে জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার কথাও জানান তিনি।
বিপন্ন ২৪টি প্রজাতি পুনরুদ্ধারের ফলে দেশে মাছ উৎপাদনে এসব প্রযুক্তি যথেষ্ট ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। আগামীতে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধিতে তা আরও সহায়ক হবে বলে মৎস্য বিজ্ঞানীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। ২০১৮-১৯ সালে দেশে মাছের উৎপাদন ছিল ৪৩ লাখ ৮৫ হাজার টন। যার মধ্যে চাষকৃত মাছের উৎপাদনই প্রায় ২৫ লাখ টন। দেশের মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যে প্রাণিজ আমিষের প্রায় ৬০ শতাংশই যোগান দেয় মাছ।
মৎস্য অধিদপ্তরের মতে, বর্তমানে দৈনিক গড় ৬০ গ্রাম চাহিদার বিপরীতে ৬২.৫৮ গ্রাম মাছ গ্রহণ করছে দেশের মানুষ। বর্তমানে জিডিপিতে মৎস্য সেক্টরের অবদান ৩.৫০%। আর কৃষিজ আয়ের ২৫.৭২% আসছে মৎস্য উপখাত থেকে। গত ৫ বছরে মৎস্য খাতে গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৬.২৮%। পাশাপাশি দেশের ১২% বা প্রায়ে পৌনে ২ কোটি মানুষ কোন না কোনভাবে মৎস্য সেক্টর থেকে জীবিকা নির্বাহ করছে। যার মধ্যে প্রায় ১৫ লাখ নারী।
তবে আমাদের নিকট প্রতিবেশী দেশ সীমান্তের ওপারে অভিন্ন নদ-নদী সমূহের পানি একতরফা প্রত্যাহারের ফলে দেশের অনেক বিল ও হাওরে বছরের প্রায় অর্ধেক সময়ে প্রয়োজনীয় পানি থাকাছে না। এটাই দেশীয় মাছের বিভিন্ন প্রজাতি বিলুপ্তির অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে। অনেক বিল ও হাওরের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার ফলে ইতিপূর্বে প্রায় ৩৫টি দেশীয় প্রজাতির মাছ চীরদিনের মতো হারিয়ে যেতে বসেছিল বলেও মৎস্য বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। এমনকি সীমান্তের ওপারে পনির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের ফলে শুধু নদ-নদীই নয় দেশের প্রায় সব বিল ও জলাশয়ও ক্রমশ মূল চরিত্র হারাতে বসেছে। আইইউসিএন-এর মতে এর ফলে ৩৫ প্রজাতির দেশীয় মাছের অস্তিত্ব ইতিপূর্বেই বিপন্ন হয়ে যায়। তবে বিপদগ্রস্ত মাছের মোট সংখ্যা ৬৪ বলে আইইউসিএন জানিয়েছে।
বিপন্ন এসব মাছের মধ্যে মহাশোল, নান্দিনা, গনিয়া, দেশি সরপুটি, শোল, গজার, বাইম, গুতুম, চিতল, ফলি, বাঙ্গনা, খলিশা, চান্দা, নাপিত, চেওয়া এবং রাণিসহ আরও বেশ কয়েটি প্রজাতির দেশীয় মিঠা পানির মাছ রয়েছে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, মলা, ঢেলা, পুটি, বাইম, টেংরা, খলিশা, পাবদা, শিং, মাগুর, কেচকি ও চান্দা জাতের মাছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ ও আয়োডিনের মতো মানবদেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় খনিজপদার্থ রয়েছে। এসব খনিজপদার্থ মানবদেহে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ রক্ত শূন্যতা,গলগন্ড ও অন্ধত্ব রোগ প্রতিরোধে বিশেষ সহায়ক। কিন্তু নানা কারণে মাছের প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র হওয়ায় দেশের ৬৪ প্রজাতির মাছ বিপন্ন হয়ে পড়েছিল।
মৎস্য বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এনামুল হক জানান, নদী, হাওর ও বিলে সাম্প্রতিককালে দেশীয় মাছের অবমুক্তির সঙ্গে মৎস্য অধিদপ্তর দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাছের অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিরও উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিটিউট ময়মনসিংহ স্বাদু পানি গবেষণা কেন্দ্রের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির আরও কয়েকটি উপকেন্দ্রেও বিপন্ন মাছের অস্তিত্ব রক্ষায় গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২১ , ১৪ মাঘ ১৪২৭, ১৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২
মানবেন্দ্র বটব্যাল, বরিশাল
বিলুপ্ত প্রায় ৬৪ প্রজাতির মাছের মধ্যে ২৪টি প্রজাতিকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটি। মৎস্য বিজ্ঞানীরা যে ২৪ প্রজাতির মাছ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে পাবদা, গুলশা টেংরা, গুজি আইড়, চিতল, ফলি, মহাশোল, বৈরালি, বারাচাটা, গুতুম, কুচিয়া, ভাগনা, খলিশা ও গজার প্রভৃতি। এসব প্রজাতির মাছের উৎপাদন সম্প্রসারণ ও মাঠপর্যায়ের মাছ চাষিদের কাছে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মৎস্য বিজ্ঞানীরা একে অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক বলে মনে করছেন। দেশের ৬৪ প্রজাতির মাছকে ‘বিপন্ন বা বিলুপ্তপ্রায় বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। প্রজাতির মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে অস্তিত্ব রক্ষাসহ উৎপাদন সম্প্রসারণেও সক্ষম হয়েছে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটি। মাঠ পর্যায়ে মৎস্য চাষিদের কাছে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে এসব মাছের উন্নত চাষ পদ্ধতি মৎস্য অধিধপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ২০২১-২৫ সময়কালে ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দেশের মৎস্য অভায়াশ্রম এলাকায় সংকটাপন্ন মাছের প্রজাতির সংখ্যা ৫০% হ্রাস করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ব্যপারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শম রেজাউল করিম জানান, বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় সব প্রজাতির মাছকে ফিরিয়ে আনতে আমাদের বিজ্ঞানীরা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে অস্তিত্ব সংকটে থাকা সব দেশীয় মাছ পুনরুদ্ধার করে জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার কথাও জানান তিনি।
বিপন্ন ২৪টি প্রজাতি পুনরুদ্ধারের ফলে দেশে মাছ উৎপাদনে এসব প্রযুক্তি যথেষ্ট ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। আগামীতে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধিতে তা আরও সহায়ক হবে বলে মৎস্য বিজ্ঞানীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। ২০১৮-১৯ সালে দেশে মাছের উৎপাদন ছিল ৪৩ লাখ ৮৫ হাজার টন। যার মধ্যে চাষকৃত মাছের উৎপাদনই প্রায় ২৫ লাখ টন। দেশের মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যে প্রাণিজ আমিষের প্রায় ৬০ শতাংশই যোগান দেয় মাছ।
মৎস্য অধিদপ্তরের মতে, বর্তমানে দৈনিক গড় ৬০ গ্রাম চাহিদার বিপরীতে ৬২.৫৮ গ্রাম মাছ গ্রহণ করছে দেশের মানুষ। বর্তমানে জিডিপিতে মৎস্য সেক্টরের অবদান ৩.৫০%। আর কৃষিজ আয়ের ২৫.৭২% আসছে মৎস্য উপখাত থেকে। গত ৫ বছরে মৎস্য খাতে গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৬.২৮%। পাশাপাশি দেশের ১২% বা প্রায়ে পৌনে ২ কোটি মানুষ কোন না কোনভাবে মৎস্য সেক্টর থেকে জীবিকা নির্বাহ করছে। যার মধ্যে প্রায় ১৫ লাখ নারী।
তবে আমাদের নিকট প্রতিবেশী দেশ সীমান্তের ওপারে অভিন্ন নদ-নদী সমূহের পানি একতরফা প্রত্যাহারের ফলে দেশের অনেক বিল ও হাওরে বছরের প্রায় অর্ধেক সময়ে প্রয়োজনীয় পানি থাকাছে না। এটাই দেশীয় মাছের বিভিন্ন প্রজাতি বিলুপ্তির অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে। অনেক বিল ও হাওরের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার ফলে ইতিপূর্বে প্রায় ৩৫টি দেশীয় প্রজাতির মাছ চীরদিনের মতো হারিয়ে যেতে বসেছিল বলেও মৎস্য বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। এমনকি সীমান্তের ওপারে পনির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের ফলে শুধু নদ-নদীই নয় দেশের প্রায় সব বিল ও জলাশয়ও ক্রমশ মূল চরিত্র হারাতে বসেছে। আইইউসিএন-এর মতে এর ফলে ৩৫ প্রজাতির দেশীয় মাছের অস্তিত্ব ইতিপূর্বেই বিপন্ন হয়ে যায়। তবে বিপদগ্রস্ত মাছের মোট সংখ্যা ৬৪ বলে আইইউসিএন জানিয়েছে।
বিপন্ন এসব মাছের মধ্যে মহাশোল, নান্দিনা, গনিয়া, দেশি সরপুটি, শোল, গজার, বাইম, গুতুম, চিতল, ফলি, বাঙ্গনা, খলিশা, চান্দা, নাপিত, চেওয়া এবং রাণিসহ আরও বেশ কয়েটি প্রজাতির দেশীয় মিঠা পানির মাছ রয়েছে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, মলা, ঢেলা, পুটি, বাইম, টেংরা, খলিশা, পাবদা, শিং, মাগুর, কেচকি ও চান্দা জাতের মাছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ ও আয়োডিনের মতো মানবদেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় খনিজপদার্থ রয়েছে। এসব খনিজপদার্থ মানবদেহে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ রক্ত শূন্যতা,গলগন্ড ও অন্ধত্ব রোগ প্রতিরোধে বিশেষ সহায়ক। কিন্তু নানা কারণে মাছের প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র হওয়ায় দেশের ৬৪ প্রজাতির মাছ বিপন্ন হয়ে পড়েছিল।
মৎস্য বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এনামুল হক জানান, নদী, হাওর ও বিলে সাম্প্রতিককালে দেশীয় মাছের অবমুক্তির সঙ্গে মৎস্য অধিদপ্তর দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাছের অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিরও উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
মৎস্য গবেষণা ইনিস্টিটিউট ময়মনসিংহ স্বাদু পানি গবেষণা কেন্দ্রের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির আরও কয়েকটি উপকেন্দ্রেও বিপন্ন মাছের অস্তিত্ব রক্ষায় গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।