কারা-সংস্কার প্রসঙ্গে

কারাগারগুলোকে কার্যকর সংশোধন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হলে কারা-সংস্কার করা জরুরি। যখনই কারাগারকেন্দ্রিক নানান অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা প্রকাশ পায় তখনই বিষয়টি সামনে চলে আসে। কারাগারের ভেতরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তো রয়েছেই। গত ৬ জানুয়ারি কাশিমপুর-১ কারাগারে এক নারীর সঙ্গে কারাবন্দির একান্তে সময় কাটানোর ঘটনায় আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

ঘুষের বিনিময়ে কারাগারে অন্যায়-অনিয়ম করা মামুলি ঘটনায় পরিণত হয়েছে। থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা, স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎÑএমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে টাকার লেনদেন হয় না। দেশের ৬৮টি কারাগারের প্রায় ৮৩ হাজার কারাবন্দির সংশোধনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে কিনা-সেই প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, অনেক কারাবন্দি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে না। অনেকে আগের চেয়ে ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

কারা-সংস্কারের প্রয়োজন অনুভূত হলেও এ নিয়ে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। ১৯৭৮ সালে একবার কারা-সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছিল বলে জানা যায়? জেলকোড সংশোধনে কমিশন ১৮০টি সুপারিশ করেছিল? সুপারিশগুলো আলোর মুখ দেখেনি। ২০১৮ সালে ‘কারাবন্দি সংশোধনমূলক পরিষেবা ও পুনর্বাসন আইন’ করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হলেও এখনও কাজ শেষ হয়নি?

শুধু শাস্তি দেয়াই কারাগারের লক্ষ্য নয়, অপরাধী সংশোধিত হয়ে যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে সেটাও তার লক্ষ্য। কারাগারের পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা এমন হতে হবে যাতে সেটা সত্যিকার অর্থে সংশোধন কেন্দ্রে পরিণত হয়। নৈতিক সংশোধনের পাশাপাশি কারাবন্দিদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে?

জানা গেছে, উন্নত দেশের অনুকরণে কারাবন্দিদের নির্ধারিত সময়ের পর স্ত্রী বা স্বামীর সঙ্গে একান্তে সময় কাটানোর সুযোগ দেয়ার বিষয়ে জরুরি অবস্থার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় একটি প্রস্তাবনা তৈরি করেছিল কারা কর্তৃপক্ষ। তবে এ নিয়ে আর কোন অগ্রগতি হয়নি। অনেকে মনে করছেন, সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে দেশেও এমন ব্যবস্থা চালু করা গেলে সংশোধনাগার হিসেবে কারাগার আরও কার্যকর হবে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করে দেখতে পারে।

সোমবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১৮ মাঘ ১৪২৭, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪২

কারা-সংস্কার প্রসঙ্গে

কারাগারগুলোকে কার্যকর সংশোধন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হলে কারা-সংস্কার করা জরুরি। যখনই কারাগারকেন্দ্রিক নানান অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা প্রকাশ পায় তখনই বিষয়টি সামনে চলে আসে। কারাগারের ভেতরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তো রয়েছেই। গত ৬ জানুয়ারি কাশিমপুর-১ কারাগারে এক নারীর সঙ্গে কারাবন্দির একান্তে সময় কাটানোর ঘটনায় আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

ঘুষের বিনিময়ে কারাগারে অন্যায়-অনিয়ম করা মামুলি ঘটনায় পরিণত হয়েছে। থাকা-খাওয়া, চিকিৎসা, স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎÑএমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে টাকার লেনদেন হয় না। দেশের ৬৮টি কারাগারের প্রায় ৮৩ হাজার কারাবন্দির সংশোধনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে কিনা-সেই প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, অনেক কারাবন্দি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে না। অনেকে আগের চেয়ে ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

কারা-সংস্কারের প্রয়োজন অনুভূত হলেও এ নিয়ে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। ১৯৭৮ সালে একবার কারা-সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছিল বলে জানা যায়? জেলকোড সংশোধনে কমিশন ১৮০টি সুপারিশ করেছিল? সুপারিশগুলো আলোর মুখ দেখেনি। ২০১৮ সালে ‘কারাবন্দি সংশোধনমূলক পরিষেবা ও পুনর্বাসন আইন’ করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হলেও এখনও কাজ শেষ হয়নি?

শুধু শাস্তি দেয়াই কারাগারের লক্ষ্য নয়, অপরাধী সংশোধিত হয়ে যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে সেটাও তার লক্ষ্য। কারাগারের পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনা এমন হতে হবে যাতে সেটা সত্যিকার অর্থে সংশোধন কেন্দ্রে পরিণত হয়। নৈতিক সংশোধনের পাশাপাশি কারাবন্দিদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে?

জানা গেছে, উন্নত দেশের অনুকরণে কারাবন্দিদের নির্ধারিত সময়ের পর স্ত্রী বা স্বামীর সঙ্গে একান্তে সময় কাটানোর সুযোগ দেয়ার বিষয়ে জরুরি অবস্থার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় একটি প্রস্তাবনা তৈরি করেছিল কারা কর্তৃপক্ষ। তবে এ নিয়ে আর কোন অগ্রগতি হয়নি। অনেকে মনে করছেন, সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে দেশেও এমন ব্যবস্থা চালু করা গেলে সংশোধনাগার হিসেবে কারাগার আরও কার্যকর হবে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করে দেখতে পারে।