ফুটবল জাদুকর সামাদ

জোবায়ের আলী জুয়েল

উপমহাদেশে ফুটবলের মহানায়ক ছিলেন ‘সৈয়দ আব্দুস সামাদ’। চোখ ধাঁধানো ড্রিবলিং, বল নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা, প্রতিপক্ষের জালে গোল করার কৃতিত্ব সবকিছুতেই তিনি অনন্য।

পশ্চিমবঙ্গের পুর্ণিয়া জেলায় ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে ‘ফুটবল জাদুকর সামাদ’ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার আর্থিক অবস্থা মোটেই সচ্ছল ছিল না। তার ওপর ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি ছিল তার একান্ত অনূরাগ। ফলে লেখাপড়া তার সপ্তম শ্রেণিতেই শেষ হয়ে যায়। তবে ছোটবেলা থেকে সামাদ অত্যন্ত চটপটে ও বুদ্ধিমান ছিলেন। মাত্র ১১ বছর বয়সে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে সামাদ তার অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্য ও কলাকৌশল প্রদর্শনের মাধ্যমে অবিভক্ত ভারতে ক্রীড়ামোদিদের নয়ণমনি হয়ে উঠেন।

১৯১২ খ্রিস্টাব্দে সামাদ কলকাতার ‘মেইন টাউন ক্লাবের’ পক্ষ হয়ে সর্বপ্রথম ফুটবল খেলা শুরু করেন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর। রংপুরের তাজহাটের প্রখ্যাত সেন্টার ফরওয়ার্ড গোপাল রায় ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত তাজহাট ফুটবল দল গঠন করেন। ‘এ’ দলের বিখ্যাত খেলোয়াড় ছিলেন জাদুকর সামাদ। একবার কুচবিহার মাঠে তাজহাটের সাথে মোহন বাগানের খেলা হয়। প্রথম হাফে তাজহাট এক গোলে হেরেছিল। বিরতির সময় মহারাজা সামাদকে অনুরোধ করেন অন্তত গোলটা শোধ করে দিতে। বিনিময়ে সামাদকে পুরস্কৃত করা হবে। সামাদ ‘এ’ কাজের জন্য মহারাজার হাতের মূল্যবান ঘড়িটি দাবি করেছিলেন। সংকল্পে অটল থেকে সামাদ দ্বিতীয়ার্ধে দুটো গোল করে তার দলকে জয়ী করেছিলেন। শেষ বয়সেও জাদুকর সামাদের কব্জিতে মহারাজার সেই বিখ্যাত রিস্ট ওয়াচটি শোভা পেতো।

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের কিছুদিন পরেই ‘জাদুকর সামাদ’ ভারত থেকে সপরিবারে এদেশে চলে আসেন এবং দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তিনি পার্বতীপুরে রেলওয়ে ডিপার্টমেন্টে ইন্সপেক্টর পদে সরকারি চাকরি করতেন। পার্বতীপুরের সাহেবপাড়া কলোনিতে রেলওয়ে বিভাগের মাঝারি ধরনের একটি বাসা তার বসবাসের জন্য বরাদ্দ ছিল। ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে এই বাসাতেই ফুটবল জাদুকর সামাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সেই যুগে টেলিভিশন বা সংবাদপত্রের এত ছড়াছড়ি ছিল না। ফলে সামাদ সম্পর্কে এবং তার গৌরবোজ্জ্বল খেলোয়াড়ি জীবনের অনেক অজানা কথাই জানা যায় না। বহু দেশের অনেক অভিজ্ঞ ফুটবল সমালোচক মন্তব্য করেছেন, যদি কখনও সর্বকালীন ফুটবল একাদশ বাছাই করা সম্ভব হয় তবে সামাদ নিঃসন্দেহে লেফটআউট নির্বাচিত হবেন।

মঙ্গলবার, ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১৯ মাঘ ১৪২৭, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪২

ফুটবল জাদুকর সামাদ

জোবায়ের আলী জুয়েল

উপমহাদেশে ফুটবলের মহানায়ক ছিলেন ‘সৈয়দ আব্দুস সামাদ’। চোখ ধাঁধানো ড্রিবলিং, বল নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা, প্রতিপক্ষের জালে গোল করার কৃতিত্ব সবকিছুতেই তিনি অনন্য।

পশ্চিমবঙ্গের পুর্ণিয়া জেলায় ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে ‘ফুটবল জাদুকর সামাদ’ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার আর্থিক অবস্থা মোটেই সচ্ছল ছিল না। তার ওপর ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি ছিল তার একান্ত অনূরাগ। ফলে লেখাপড়া তার সপ্তম শ্রেণিতেই শেষ হয়ে যায়। তবে ছোটবেলা থেকে সামাদ অত্যন্ত চটপটে ও বুদ্ধিমান ছিলেন। মাত্র ১১ বছর বয়সে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে সামাদ তার অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্য ও কলাকৌশল প্রদর্শনের মাধ্যমে অবিভক্ত ভারতে ক্রীড়ামোদিদের নয়ণমনি হয়ে উঠেন।

১৯১২ খ্রিস্টাব্দে সামাদ কলকাতার ‘মেইন টাউন ক্লাবের’ পক্ষ হয়ে সর্বপ্রথম ফুটবল খেলা শুরু করেন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর। রংপুরের তাজহাটের প্রখ্যাত সেন্টার ফরওয়ার্ড গোপাল রায় ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত তাজহাট ফুটবল দল গঠন করেন। ‘এ’ দলের বিখ্যাত খেলোয়াড় ছিলেন জাদুকর সামাদ। একবার কুচবিহার মাঠে তাজহাটের সাথে মোহন বাগানের খেলা হয়। প্রথম হাফে তাজহাট এক গোলে হেরেছিল। বিরতির সময় মহারাজা সামাদকে অনুরোধ করেন অন্তত গোলটা শোধ করে দিতে। বিনিময়ে সামাদকে পুরস্কৃত করা হবে। সামাদ ‘এ’ কাজের জন্য মহারাজার হাতের মূল্যবান ঘড়িটি দাবি করেছিলেন। সংকল্পে অটল থেকে সামাদ দ্বিতীয়ার্ধে দুটো গোল করে তার দলকে জয়ী করেছিলেন। শেষ বয়সেও জাদুকর সামাদের কব্জিতে মহারাজার সেই বিখ্যাত রিস্ট ওয়াচটি শোভা পেতো।

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের কিছুদিন পরেই ‘জাদুকর সামাদ’ ভারত থেকে সপরিবারে এদেশে চলে আসেন এবং দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তিনি পার্বতীপুরে রেলওয়ে ডিপার্টমেন্টে ইন্সপেক্টর পদে সরকারি চাকরি করতেন। পার্বতীপুরের সাহেবপাড়া কলোনিতে রেলওয়ে বিভাগের মাঝারি ধরনের একটি বাসা তার বসবাসের জন্য বরাদ্দ ছিল। ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে এই বাসাতেই ফুটবল জাদুকর সামাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সেই যুগে টেলিভিশন বা সংবাদপত্রের এত ছড়াছড়ি ছিল না। ফলে সামাদ সম্পর্কে এবং তার গৌরবোজ্জ্বল খেলোয়াড়ি জীবনের অনেক অজানা কথাই জানা যায় না। বহু দেশের অনেক অভিজ্ঞ ফুটবল সমালোচক মন্তব্য করেছেন, যদি কখনও সর্বকালীন ফুটবল একাদশ বাছাই করা সম্ভব হয় তবে সামাদ নিঃসন্দেহে লেফটআউট নির্বাচিত হবেন।