সংসদে প্রধানমন্ত্রী

নৌকায় সবাইকে নেব ফুটো করতে দেব না

করোনা আরেকটু নিয়ন্ত্রণে এলে  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে

করোনা পরিস্থিতি আরেকটু নিয়ন্ত্রণে এলেই স্কুল-কলেজ খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। মহামারীর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া অব্যাহত রাখতে সংসদ টেলিভিশন এবং অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘আল্লাহর রহমতে করোনা এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। আরেকটু নিয়ন্ত্রণে আসলেই আমরা স্কুল-কলেজ সব খুলে দেব।’ করোনাকালে সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিবেচনায় টিকা গ্রহণকারীদেরও মাস্ক পরা অব্যহত রাখারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

গতকাল জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনা এবং একাদশ সংসদের একাদশ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। এর আগে সকালে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। রাষ্ট্রপতি সংসদ কক্ষে রাষ্ট্রপতির গ্যালারি থেকে অধিবেশনের শেষ দিনের কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন।

মহামারী মোকাবিলায় সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভ্যাকসিন যারা নিচ্ছেন, তাদেরও কিন্তু মাস্ক পরে থাকতে হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত এটা সারাবিশ্ব থেকে সম্পূর্ণভাবে না যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত সবাইকেই নিরাপদ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’ সরকারের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে ‘নানাভাবে নানা অপপ্রচার’ চালানোর চেষ্টা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি এটা বিশ্বাস করি যে সততা নিয়ে কাজ করলে পরে আর সেই কাজের সুফলটা যখন জনগণ পায়, সেখানেই হচ্ছে তৃপ্তি। আর কেউ যদি আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে, অবশ্যই একটা দেশকে উন্নত করা যায়।’ বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১২ বছর সরকার একটানা ক্ষমতায় থাকায় উন্নয়নকাজ দৃশ্যমান হয়েছে।

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেটার প্রশংসা তো দিতেই পারল না, উল্টো বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু তৈরি করা হয়েছে কেউ উঠবেন না। তাহলে নদীটা পার হবে কিসে মাননীয় স্পিকার? যদি নৌপথে যেতে হয়, তাহলে তো নৌকায়ই চড়তে হবে।’

‘আমাদের নৌকা অনেক বড়, কোন অসুবিধা নাই। সবাইকেই নেব। তবে বেছে নেব, কেউ নৌকায় বসে নৌকা ফুটো না করে, সেটাও দেখব।’ যোগ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুজিবের বাংলায় কেউ গৃহহীন থাকবে না। ইতোমধ্যে ৭০ হাজার গৃহহীনকে ঘর দেয়া হয়েছে। আরও এক লাখ ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এই ঘরগুলো হস্তান্তর করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, যে যাই বলুক।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ এখন আওয়ামী লীগের কাছ থেকে যেহেতু সেবা পেয়েছে, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, দেশের মানুষের কল্যাণ হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে মানুষের আস্থা, বিশ্বাস আওয়ামী লীগ অর্জন করছে। যার প্রতিফলন আমরা দেখলাম আমাদের স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে।’

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য এবং হাসি পায় যে, যাদের গায়ে দুর্নীতির ছাপ, যারা ক্ষমতায় থাকতে বাংলাদেশ পাঁচ-পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, দুর্নীতির দায়ে, এতিমের অর্থ আত্মসাতের দায়ে যাদের কারাবরণ করতে হয়, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি করতে গিয়ে, অস্ত্র পাচার করতে গিয়ে সেই মামলা, গ্রেনেড হামলার মতো প্রকাশ্য দিবালোকে বিরোধী দলকে হত্যা বা আমাকে হত্যার যে প্রচেষ্টা, সেই মামলায় যারা সাজাপ্রাপ্ত, এরা যখন কোন দলের নেতৃত্বে থাকে, সেই দল জনগণের কাজ করবে কীভাবে? ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি যতই বক্তব্য দেক, যত কথাই বলুক, এ ধরনের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি যখন একটা দলের নেতৃত্বে তাদের ওপর মানুষের আস্থা থাকে না, বিশ্বাস থাকে না। মানুষ আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আস্থা ও বিশ্বাস পেয়েছে, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, দেশের মানুষের কল্যাণ হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই মানুষের আস্থা বিশ্বাস আওয়ামী লীগ অর্জন করেছে। যার প্রতিফলন আমরা দেখলাম আমাদের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে।

সামরিক আমলে জনগণের ভোট দেয়ার অধিকার ছিল না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেটা মিলিটারি শাসকেরা ঠিক করে দিত, সেটাই হতো। রেজাল্টও পরিবর্তন করা হতো। অতীতে ভোট চুরির অপরাধে সরকারপ্রধানকে পদত্যাগও করতে হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ এখন আন্তরিকভাবে ভোট দিচ্ছে। আমরা ইভিএমের মাধ্যমে ভোট দিচ্ছি। সেখানে ভোট কারচুপির কোন সুযোগ নেই। যার যার ভোট সে নিজে দিতে পারে। এখন আর সেই ‘দশটা হোন্ডা বিশটা গুণ্ডা নির্বাচন ঠাণ্ডা’ সেই পদ্ধতি নেই। কিংবা ভোট দিতে গিয়ে দেখল ভোট বন্ধ সেটা করা হয় না। তবে মেয়র ইলেকশনেও আমাদের কিছু কিছু জায়গায় কাউন্সিলরদের মধ্যে গোলমাল হয়েছে, সেগুলো আলাদা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে অনেকে কথা বলেছিলেন। টিকা আসার আগে অনেক সমালোচনা, অনেক ব্যঙ্গ হয়েছে। আসলে ভ্যাকসিন এসে নিজেই তার উত্তর দিয়েছে। অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন আমরা ক্রয় করেছি। এই ভ্যাকসিন নেয়ার পর খারাপ কোন রিঅ্যাকশনের কথা শোনা যায়নি। তারপরও আমরা মনিটর করছি। সব ঠিক থাকলে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে গণটিকাদান শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ নিয়ে দেশে প্রশংসা শুনিনি। কিন্তু জাতিসংঘের মহাসচিব প্রশংসা করেছেন।’

সারাদেশে ৫৬০টি মসজিদ তৈরির কার্যক্রম চলছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেখানে ইসলামিক সংস্কৃতির চর্চা ও ইমাম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। ইসলাম ধর্মটা সঠিকভাবে মানুষ জানুক এবং সেটা চর্চা করুক, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এ মসজিদগুলো নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছি।’

রেওয়াজ অনুযায়ী অধিবেশনে সংসদ নেতার সমাপনী বক্তব্যের আগে বক্তব্য দেন বিরোধীদলীয় নেতা। এবারের অধিবেশনে একদিনও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদেরকে দেখা যায়নি। জিএম কাদের করোনা আক্রান্ত হলেও এখন তিনি করোনামুক্ত।

প্রধানমন্ত্রী সমাপনী ভাষণে বিরোধীদলীয় নেতার অনুপস্থিতির কথা তুলে ধরে বলেন, ‘এই অধিবেশন করোনার সময়ে চলছে। যার জন্য হয়তো সব সংসদ সদস্যকে একই সঙ্গে আনা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের বিরোধীদলীয় নেতার এখানে আসার কথা ছিল। কিন্তু তার বাসায় একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে বলে তিনি জনগণের কথা চিন্তা করে এখানে আসেননি। আমরা তার বক্তৃতা শুনতে পারলাম না, এজন্য আমি দুঃখিত। কিন্তু তার ভেতর যে জনগণের প্রতি কল্যাণমূলক চিন্তা তার জন্য তাকে ধন্যবাদ। তিনি আসলে ভালো হতো আমরা তার বক্তব্যও শুনতে পেতাম।’

বুধবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২০ মাঘ ১৪২৭, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪২

সংসদে প্রধানমন্ত্রী

নৌকায় সবাইকে নেব ফুটো করতে দেব না

করোনা আরেকটু নিয়ন্ত্রণে এলে  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে

image

করোনা পরিস্থিতি আরেকটু নিয়ন্ত্রণে এলেই স্কুল-কলেজ খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। মহামারীর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া অব্যাহত রাখতে সংসদ টেলিভিশন এবং অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘আল্লাহর রহমতে করোনা এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। আরেকটু নিয়ন্ত্রণে আসলেই আমরা স্কুল-কলেজ সব খুলে দেব।’ করোনাকালে সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিবেচনায় টিকা গ্রহণকারীদেরও মাস্ক পরা অব্যহত রাখারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

গতকাল জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনা এবং একাদশ সংসদের একাদশ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। এর আগে সকালে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। রাষ্ট্রপতি সংসদ কক্ষে রাষ্ট্রপতির গ্যালারি থেকে অধিবেশনের শেষ দিনের কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন।

মহামারী মোকাবিলায় সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভ্যাকসিন যারা নিচ্ছেন, তাদেরও কিন্তু মাস্ক পরে থাকতে হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত এটা সারাবিশ্ব থেকে সম্পূর্ণভাবে না যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত সবাইকেই নিরাপদ থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’ সরকারের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে ‘নানাভাবে নানা অপপ্রচার’ চালানোর চেষ্টা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি এটা বিশ্বাস করি যে সততা নিয়ে কাজ করলে পরে আর সেই কাজের সুফলটা যখন জনগণ পায়, সেখানেই হচ্ছে তৃপ্তি। আর কেউ যদি আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে, অবশ্যই একটা দেশকে উন্নত করা যায়।’ বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১২ বছর সরকার একটানা ক্ষমতায় থাকায় উন্নয়নকাজ দৃশ্যমান হয়েছে।

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেটার প্রশংসা তো দিতেই পারল না, উল্টো বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন, জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু তৈরি করা হয়েছে কেউ উঠবেন না। তাহলে নদীটা পার হবে কিসে মাননীয় স্পিকার? যদি নৌপথে যেতে হয়, তাহলে তো নৌকায়ই চড়তে হবে।’

‘আমাদের নৌকা অনেক বড়, কোন অসুবিধা নাই। সবাইকেই নেব। তবে বেছে নেব, কেউ নৌকায় বসে নৌকা ফুটো না করে, সেটাও দেখব।’ যোগ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুজিবের বাংলায় কেউ গৃহহীন থাকবে না। ইতোমধ্যে ৭০ হাজার গৃহহীনকে ঘর দেয়া হয়েছে। আরও এক লাখ ঘর নির্মাণের কাজ চলছে। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এই ঘরগুলো হস্তান্তর করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, যে যাই বলুক।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ এখন আওয়ামী লীগের কাছ থেকে যেহেতু সেবা পেয়েছে, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, দেশের মানুষের কল্যাণ হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে মানুষের আস্থা, বিশ্বাস আওয়ামী লীগ অর্জন করছে। যার প্রতিফলন আমরা দেখলাম আমাদের স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে।’

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য এবং হাসি পায় যে, যাদের গায়ে দুর্নীতির ছাপ, যারা ক্ষমতায় থাকতে বাংলাদেশ পাঁচ-পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, দুর্নীতির দায়ে, এতিমের অর্থ আত্মসাতের দায়ে যাদের কারাবরণ করতে হয়, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি করতে গিয়ে, অস্ত্র পাচার করতে গিয়ে সেই মামলা, গ্রেনেড হামলার মতো প্রকাশ্য দিবালোকে বিরোধী দলকে হত্যা বা আমাকে হত্যার যে প্রচেষ্টা, সেই মামলায় যারা সাজাপ্রাপ্ত, এরা যখন কোন দলের নেতৃত্বে থাকে, সেই দল জনগণের কাজ করবে কীভাবে? ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি যতই বক্তব্য দেক, যত কথাই বলুক, এ ধরনের সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি যখন একটা দলের নেতৃত্বে তাদের ওপর মানুষের আস্থা থাকে না, বিশ্বাস থাকে না। মানুষ আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আস্থা ও বিশ্বাস পেয়েছে, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, দেশের মানুষের কল্যাণ হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই মানুষের আস্থা বিশ্বাস আওয়ামী লীগ অর্জন করেছে। যার প্রতিফলন আমরা দেখলাম আমাদের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে।

সামরিক আমলে জনগণের ভোট দেয়ার অধিকার ছিল না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেটা মিলিটারি শাসকেরা ঠিক করে দিত, সেটাই হতো। রেজাল্টও পরিবর্তন করা হতো। অতীতে ভোট চুরির অপরাধে সরকারপ্রধানকে পদত্যাগও করতে হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষ এখন আন্তরিকভাবে ভোট দিচ্ছে। আমরা ইভিএমের মাধ্যমে ভোট দিচ্ছি। সেখানে ভোট কারচুপির কোন সুযোগ নেই। যার যার ভোট সে নিজে দিতে পারে। এখন আর সেই ‘দশটা হোন্ডা বিশটা গুণ্ডা নির্বাচন ঠাণ্ডা’ সেই পদ্ধতি নেই। কিংবা ভোট দিতে গিয়ে দেখল ভোট বন্ধ সেটা করা হয় না। তবে মেয়র ইলেকশনেও আমাদের কিছু কিছু জায়গায় কাউন্সিলরদের মধ্যে গোলমাল হয়েছে, সেগুলো আলাদা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে অনেকে কথা বলেছিলেন। টিকা আসার আগে অনেক সমালোচনা, অনেক ব্যঙ্গ হয়েছে। আসলে ভ্যাকসিন এসে নিজেই তার উত্তর দিয়েছে। অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন আমরা ক্রয় করেছি। এই ভ্যাকসিন নেয়ার পর খারাপ কোন রিঅ্যাকশনের কথা শোনা যায়নি। তারপরও আমরা মনিটর করছি। সব ঠিক থাকলে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে গণটিকাদান শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ নিয়ে দেশে প্রশংসা শুনিনি। কিন্তু জাতিসংঘের মহাসচিব প্রশংসা করেছেন।’

সারাদেশে ৫৬০টি মসজিদ তৈরির কার্যক্রম চলছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেখানে ইসলামিক সংস্কৃতির চর্চা ও ইমাম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। ইসলাম ধর্মটা সঠিকভাবে মানুষ জানুক এবং সেটা চর্চা করুক, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এ মসজিদগুলো নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছি।’

রেওয়াজ অনুযায়ী অধিবেশনে সংসদ নেতার সমাপনী বক্তব্যের আগে বক্তব্য দেন বিরোধীদলীয় নেতা। এবারের অধিবেশনে একদিনও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদেরকে দেখা যায়নি। জিএম কাদের করোনা আক্রান্ত হলেও এখন তিনি করোনামুক্ত।

প্রধানমন্ত্রী সমাপনী ভাষণে বিরোধীদলীয় নেতার অনুপস্থিতির কথা তুলে ধরে বলেন, ‘এই অধিবেশন করোনার সময়ে চলছে। যার জন্য হয়তো সব সংসদ সদস্যকে একই সঙ্গে আনা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের বিরোধীদলীয় নেতার এখানে আসার কথা ছিল। কিন্তু তার বাসায় একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে বলে তিনি জনগণের কথা চিন্তা করে এখানে আসেননি। আমরা তার বক্তৃতা শুনতে পারলাম না, এজন্য আমি দুঃখিত। কিন্তু তার ভেতর যে জনগণের প্রতি কল্যাণমূলক চিন্তা তার জন্য তাকে ধন্যবাদ। তিনি আসলে ভালো হতো আমরা তার বক্তব্যও শুনতে পেতাম।’