দীর্ঘ ১২ মাস পর টেস্ট ম্যাচ খেলতে নেমে বাংলাদেশ দল প্রথম কয়েকঘণ্টা একটু অস্বস্তিতে থাকার পর সেই অবস্থা কেটে যাবে বলে চট্টগ্রাম টেস্ট শুরুর আগেই অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হেড কোচ ফিল সিমন্স। অভিজ্ঞ এই সাবেক ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারের পূর্ব অনুমানই যেন সত্যি হয়ে দেখা দিয়েছিল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে মুদ্রানিক্ষেপে জয়ী হয়ে টাইগার দলপতি মুমিনুল হক স্পিন সহায়ক উইকেটে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। প্রথম দুই সেশনে দুটো করে উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ দল। দিনের শেষ সেশনে সেই ধারায় লাগাম টানেন বিশ্বসেরা অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তার সঙ্গে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের ওপেনার লিটন দাসও গড়েন প্রতিরোধ। দিনশেষে টাইগারদের স্কোর ৫ উইকেটে ২৪২ রান। এই স্কোরটাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অনভিজ্ঞ দলের বিপক্ষে খুব ভালো বলা যাবে না। আবার দীর্ঘ বিরতির পর মাঠে নেমে উইকেট পতনের বিপরীতে গড়া প্রতিরোধটা একেবারে ফেলনা নয়। অন্যদিকে ক্যারিবিয়ান দলের বোলিং ডিপার্টমেন্ট যেভাবে স্বাগতিক দলের ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরেছিল সেটাও চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে স্পিনার ওয়ারিকানের তিন উইকেট শিকার নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
প্রথম সেশনে মধ্যাহ্ন-বিরতি পর্যন্ত ২৯ ওভারে ২ উইকেটে ৬৯ রান করেছিল বাংলাদেশ। চা-বিরতি পর্যন্ত যেতে যেতে ৫৮ ওভারে ৪ উইকেটে ১৪০ রান তোলে টাইগাররা। অর্থাৎ দ্বিতীয় সেশনে নেই আরও দুই উইকেট। স্বাভাবিকভাবেই প্রথম দুই সেশন শেষে চাপে পড়ে টাইগাররা। এরপর ষষ্ঠ উইকেটে ৯৫ বলে অবিচ্ছিন্ন ৪৯ রান করে দিন শেষে দলকে ভালো অবস্থায় নিয়ে যান সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস। সাকিব ৩৯ ও লিটন ৩৪ রানে অপরাজিত আছেন।
দুই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান সাদমান ইসলাম ও তামিম ইকবাল ইনিংস উদ্বোধনে নামার পর প্রথম ডেলিভারিতেই কাভার দিয়ে সাদমানের ব্যাট থেকে আসে বাউন্ডারি। শুরুটা যে কোনমতেই টেস্ট মেজাজের ব্যাটিং ছিল না তার সাক্ষ্য দিচ্ছে ৪ ওভার শেষে বাংলাদেশের ২৩ রান। এই সময়ে দুই ওপেনারই দুটো করে বাউন্ডারি হাঁকান।
অতিমাত্রায় আগ্রাসী হওয়া নাকি দুই ওপেনারের একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার কিন্তু পঞ্চম ওভারের তৃতীয় বলে বাংলাদেশের সেরা ওপেনারটিকে সাজঘরের পথ দেখায়, সেই বিশ্লেষণ করা যাচ্ছে না। তবে কেমার রোচের বলে মাত্র ৯ রান করা তামিম ইকবাল যেভাবে স্টাম্প খুইয়েছেন, তা মেনে নেয়া যায় না।
দলীয় ২৩ রানে প্রথম উইকেট পতনের পর উইকেটে আসেন আরেক বাঁ-হাতি নাজমুল হোসেন শান্ত। তিনি প্রথম তিনটা বল দেখেশুনে মোকাবিলা করলেও চতুর্থ বলে আর অশান্ত হয়েই সম্ভবত বাউন্ডারি হাঁকিয়ে রানের খাতা খোলেন।
সাদমান-শান্ত জুটি অষ্টাদশ ওভারে দলের স্কোর ৫০-এ নিয়ে যান।
তবে ২৪তম ওভারের প্রথম বলে সাদমানের সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝিতে শান্ত রানআউট হলে জুটিটা ভেঙে যায়। তার ৫৮ বলে ২৫ রানের ইনিংসে ছিল তিনটা বাউন্ডারির মার। দ্বিতীয় উইকেটে সাদমানের সঙ্গে ১১২ বলে ৪৩ রান যোগ করেন শান্ত।
শান্ত’র পর ক্রিজে আসেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। মধ্যাহ্ন বিরতি পর্যন্ত আর কোন উইকেটের পতন ঘটেনি। সাদমান ৩৩ ও মুমিনুল ২ রান নিয়ে দুপুরের আহারের বিরতিতে যান।
বিরতির পর ফিরে সাবধানতার সঙ্গেই খেলছিলেন সাদমান-মুমিনুল। ৪৯তম ওভারের প্রথম বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাঁ-হাতি স্পিনার জোমেল ওয়ারিকানকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সপ্তম টেস্টে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন সাদমান। ২০১৮ সালে মিরপুরে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকেই হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৭৬ রান করেছিলেন তিনি। এরপর ১০টা ইনিংস রান খরায় কাটে তার।
সাদমানের হাফ-সেঞ্চুরি পরপরই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন অধিনায়ক মুমিনুল। ওয়ারিকানের বলে শর্ট মিডউইকেটে জন ক্যাম্পবেলকে ক্যাচ দেন মোমিনুল। ৯৭ বলে ২টি চারের মারে ২৬ রান করেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। সাদমানের সঙ্গে ১৬৭ বল খেলে ৫৩ রান যোগ করেন মোমিনুল।
অধিনায়ককের পতনের পর মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে চা-বিরতিতে যাওয়ার ১০ বল আগে ওয়ারিকানের বলে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েন হাফ বুধবারে সর্বোচ্চ ৫৯ রান করা সাদমান।
সাদমানের পর মুশফিককে সঙ্গ দিতে নামেন সাকিব। মুশফিক ৯ ও ছয় নম্বরে নামা সাকিব আল হাসান ৩ রানে অপরাজিত থেকে চা-বিরতিতে যান। বিরতি থেকে ফিরে দলকে শক্ত ভিত গড়ে দেয়ার চেষ্টা করেন মুশফিক-সাকিব। দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের ব্যাটে ভর করে বাংলাদেশের স্কোর দেড়শ’র কোটা পেরিয়ে যায়। স্পিনার ওয়ারিকানের তৃতীয় শিকার হয়ে মুশফিক (৩৮) ফেরার সময়ে দুইশ’ রানের কোটা থেকে ৭ রান দূরে ১৯৩ রানে টাইগারদের স্কোর। পঞ্চম উইকেটে ১০৮ বলে ৫৯ রান যোগ করেন সাকিব-মুশফিক।
মুশফিকের বিদায়ের পর লিটনকে নিয়ে আর কোন উইকেট না হারিয়ে ভালোভাবে দিন শেষ করেন সাকিব।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৯০ ওভারে ২৪২/৫ (সাদমান ৫৯, তামিম ৯, শান্ত ২৫, মোমিনুল ২৬, মুশফিক ৩৮, সাকিব ৩৯*, লিটন ৩৪*; উইকেট পতন : ১/২৩, ২/৬৬, ৩/১১৯, ৪/১৩৪, ৫/১৯৩, রোচ ১/৪৪, ওয়ারিক্যান ৩/৫৮)।
বৃহস্পতিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২১ মাঘ ১৪২৭, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪২
বিশেষ প্রতিনিধি
দীর্ঘ ১২ মাস পর টেস্ট ম্যাচ খেলতে নেমে বাংলাদেশ দল প্রথম কয়েকঘণ্টা একটু অস্বস্তিতে থাকার পর সেই অবস্থা কেটে যাবে বলে চট্টগ্রাম টেস্ট শুরুর আগেই অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হেড কোচ ফিল সিমন্স। অভিজ্ঞ এই সাবেক ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটারের পূর্ব অনুমানই যেন সত্যি হয়ে দেখা দিয়েছিল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে মুদ্রানিক্ষেপে জয়ী হয়ে টাইগার দলপতি মুমিনুল হক স্পিন সহায়ক উইকেটে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। প্রথম দুই সেশনে দুটো করে উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ দল। দিনের শেষ সেশনে সেই ধারায় লাগাম টানেন বিশ্বসেরা অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তার সঙ্গে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের ওপেনার লিটন দাসও গড়েন প্রতিরোধ। দিনশেষে টাইগারদের স্কোর ৫ উইকেটে ২৪২ রান। এই স্কোরটাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অনভিজ্ঞ দলের বিপক্ষে খুব ভালো বলা যাবে না। আবার দীর্ঘ বিরতির পর মাঠে নেমে উইকেট পতনের বিপরীতে গড়া প্রতিরোধটা একেবারে ফেলনা নয়। অন্যদিকে ক্যারিবিয়ান দলের বোলিং ডিপার্টমেন্ট যেভাবে স্বাগতিক দলের ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরেছিল সেটাও চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে স্পিনার ওয়ারিকানের তিন উইকেট শিকার নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
প্রথম সেশনে মধ্যাহ্ন-বিরতি পর্যন্ত ২৯ ওভারে ২ উইকেটে ৬৯ রান করেছিল বাংলাদেশ। চা-বিরতি পর্যন্ত যেতে যেতে ৫৮ ওভারে ৪ উইকেটে ১৪০ রান তোলে টাইগাররা। অর্থাৎ দ্বিতীয় সেশনে নেই আরও দুই উইকেট। স্বাভাবিকভাবেই প্রথম দুই সেশন শেষে চাপে পড়ে টাইগাররা। এরপর ষষ্ঠ উইকেটে ৯৫ বলে অবিচ্ছিন্ন ৪৯ রান করে দিন শেষে দলকে ভালো অবস্থায় নিয়ে যান সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস। সাকিব ৩৯ ও লিটন ৩৪ রানে অপরাজিত আছেন।
দুই বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান সাদমান ইসলাম ও তামিম ইকবাল ইনিংস উদ্বোধনে নামার পর প্রথম ডেলিভারিতেই কাভার দিয়ে সাদমানের ব্যাট থেকে আসে বাউন্ডারি। শুরুটা যে কোনমতেই টেস্ট মেজাজের ব্যাটিং ছিল না তার সাক্ষ্য দিচ্ছে ৪ ওভার শেষে বাংলাদেশের ২৩ রান। এই সময়ে দুই ওপেনারই দুটো করে বাউন্ডারি হাঁকান।
অতিমাত্রায় আগ্রাসী হওয়া নাকি দুই ওপেনারের একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার কিন্তু পঞ্চম ওভারের তৃতীয় বলে বাংলাদেশের সেরা ওপেনারটিকে সাজঘরের পথ দেখায়, সেই বিশ্লেষণ করা যাচ্ছে না। তবে কেমার রোচের বলে মাত্র ৯ রান করা তামিম ইকবাল যেভাবে স্টাম্প খুইয়েছেন, তা মেনে নেয়া যায় না।
দলীয় ২৩ রানে প্রথম উইকেট পতনের পর উইকেটে আসেন আরেক বাঁ-হাতি নাজমুল হোসেন শান্ত। তিনি প্রথম তিনটা বল দেখেশুনে মোকাবিলা করলেও চতুর্থ বলে আর অশান্ত হয়েই সম্ভবত বাউন্ডারি হাঁকিয়ে রানের খাতা খোলেন।
সাদমান-শান্ত জুটি অষ্টাদশ ওভারে দলের স্কোর ৫০-এ নিয়ে যান।
তবে ২৪তম ওভারের প্রথম বলে সাদমানের সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝিতে শান্ত রানআউট হলে জুটিটা ভেঙে যায়। তার ৫৮ বলে ২৫ রানের ইনিংসে ছিল তিনটা বাউন্ডারির মার। দ্বিতীয় উইকেটে সাদমানের সঙ্গে ১১২ বলে ৪৩ রান যোগ করেন শান্ত।
শান্ত’র পর ক্রিজে আসেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। মধ্যাহ্ন বিরতি পর্যন্ত আর কোন উইকেটের পতন ঘটেনি। সাদমান ৩৩ ও মুমিনুল ২ রান নিয়ে দুপুরের আহারের বিরতিতে যান।
বিরতির পর ফিরে সাবধানতার সঙ্গেই খেলছিলেন সাদমান-মুমিনুল। ৪৯তম ওভারের প্রথম বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাঁ-হাতি স্পিনার জোমেল ওয়ারিকানকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সপ্তম টেস্টে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন সাদমান। ২০১৮ সালে মিরপুরে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকেই হাফ-সেঞ্চুরি তুলে ৭৬ রান করেছিলেন তিনি। এরপর ১০টা ইনিংস রান খরায় কাটে তার।
সাদমানের হাফ-সেঞ্চুরি পরপরই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন অধিনায়ক মুমিনুল। ওয়ারিকানের বলে শর্ট মিডউইকেটে জন ক্যাম্পবেলকে ক্যাচ দেন মোমিনুল। ৯৭ বলে ২টি চারের মারে ২৬ রান করেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। সাদমানের সঙ্গে ১৬৭ বল খেলে ৫৩ রান যোগ করেন মোমিনুল।
অধিনায়ককের পতনের পর মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে চা-বিরতিতে যাওয়ার ১০ বল আগে ওয়ারিকানের বলে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়েন হাফ বুধবারে সর্বোচ্চ ৫৯ রান করা সাদমান।
সাদমানের পর মুশফিককে সঙ্গ দিতে নামেন সাকিব। মুশফিক ৯ ও ছয় নম্বরে নামা সাকিব আল হাসান ৩ রানে অপরাজিত থেকে চা-বিরতিতে যান। বিরতি থেকে ফিরে দলকে শক্ত ভিত গড়ে দেয়ার চেষ্টা করেন মুশফিক-সাকিব। দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের ব্যাটে ভর করে বাংলাদেশের স্কোর দেড়শ’র কোটা পেরিয়ে যায়। স্পিনার ওয়ারিকানের তৃতীয় শিকার হয়ে মুশফিক (৩৮) ফেরার সময়ে দুইশ’ রানের কোটা থেকে ৭ রান দূরে ১৯৩ রানে টাইগারদের স্কোর। পঞ্চম উইকেটে ১০৮ বলে ৫৯ রান যোগ করেন সাকিব-মুশফিক।
মুশফিকের বিদায়ের পর লিটনকে নিয়ে আর কোন উইকেট না হারিয়ে ভালোভাবে দিন শেষ করেন সাকিব।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৯০ ওভারে ২৪২/৫ (সাদমান ৫৯, তামিম ৯, শান্ত ২৫, মোমিনুল ২৬, মুশফিক ৩৮, সাকিব ৩৯*, লিটন ৩৪*; উইকেট পতন : ১/২৩, ২/৬৬, ৩/১১৯, ৪/১৩৪, ৫/১৯৩, রোচ ১/৪৪, ওয়ারিক্যান ৩/৫৮)।