স্বদেশে ফেরার আশা হারাচ্ছে রোহিঙ্গারা

মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আবার ঝুলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে রোহিঙ্গারা। যার কারণে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফেরা নিয়ে আশা হারাচ্ছে।

প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে কক্সবাজারের উখিয়া শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত রোহিঙ্গা হামিদুর রহমান (৭০) বলেন, মায়ানমার মিলিটারির নির্যাতনের মুখে আমরা ২০১৭ সালে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছি।

সম্প্রতি সময়ে আমরা শুনতে পেয়েছিলাম মায়ানমার সরকার কিছু রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। এ খবর শুনে আমাদের মনে আবার নিজ দেশে ফিরতে স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু হঠাৎ শুনতে পাই মায়ানমার সেনাবাহিনী অং সান সু চিসহ বেশকজন বড় নেতাকে আটক করেছে। তখন থেকে দেশে ফেরার আশা আবার হারাতে বসেছি। কারণ দীর্ঘদিন ধরে বার্মা সেনাবাহিনী আমাদের উপর নির্যাতন করে আসছে। শেষ পর্যন্ত দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। আবার এখন তাদের হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব। তাই আমরা দেশে ফিরে যাওয়া অনিশ্চিত মনে করছি। যে দেশের সেনার হাতে সরকার নিরাপদ নয় সেখানে আমরা কিভাবে নিরাপদ থাকব।

রোহিঙ্গা নেতা আইয়ুবুল ইসলাম (৪৬) বলেন, সহায় সম্পদ সব হারিয়ে প্রাণে বাঁচার জন্য বউ-বাচ্চা নিয়ে বাংলাদেশ আশ্রয় নিয়েছি। গত দুয়েকদিন ধরে আমরা টিভিতে বার্মা সরকারে আটক হওয়ার খবর শুনতে পাচ্ছি। আমরা জানি না দেশে কি হচ্ছে। কোন দিকে যাচ্ছে আমাদের ভাগ্য। বাংলাদেশ সরকার যেহেতু আমাদের আশ্রয় দিয়েছে তাই বর্তমানে তারা আমাদের অভিভাবক। তারা আমাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করে আমাদের দেশে ফিরিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবে বলে আশাবাদী।

আয়াছ নামের এক রোহিঙ্গা তরুণ জানায়, সু চি সরকারকে গ্রেপ্তারের কারণে আমাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টা জটিল হবে বলে মনে হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব নেতাদের সহযোগিতা ছাড়া আমাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। বিভিন্নভাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশ সরকার বার বার চেষ্টা করছে আমাদের দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে।

এদিকে ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর গত সাড়ে তিন বছরেও একজন রোহিঙ্গাকেও রাখাইনে ফেরত পাঠানো যায়নি। ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠাতে মায়ানমারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ। দুই দফা তারিখ ঠিক করেও রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরানো যায়নি। প্রথম দফায় ২০১৮ সালের নভেম্বরে এবং দ্বিতীয় দফায় ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট এ উদ্যোগ ভেস্তে যায়। করোনার কারণে প্রায় এক বছর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা বন্ধ থাকার পর গত ১৯ জানুয়ারি চীনের উদ্যোগে সর্বশেষ ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়।

উল্লেখ্য, বর্তমানে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মায়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পড়ে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে মায়ানমারের দেন দরবার চলছে।

বৃহস্পতিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২১ মাঘ ১৪২৭, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪২

স্বদেশে ফেরার আশা হারাচ্ছে রোহিঙ্গারা

জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার

মায়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আবার ঝুলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে রোহিঙ্গারা। যার কারণে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফেরা নিয়ে আশা হারাচ্ছে।

প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে কক্সবাজারের উখিয়া শরণার্থী শিবিরে বসবাসরত রোহিঙ্গা হামিদুর রহমান (৭০) বলেন, মায়ানমার মিলিটারির নির্যাতনের মুখে আমরা ২০১৭ সালে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছি।

সম্প্রতি সময়ে আমরা শুনতে পেয়েছিলাম মায়ানমার সরকার কিছু রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। এ খবর শুনে আমাদের মনে আবার নিজ দেশে ফিরতে স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু হঠাৎ শুনতে পাই মায়ানমার সেনাবাহিনী অং সান সু চিসহ বেশকজন বড় নেতাকে আটক করেছে। তখন থেকে দেশে ফেরার আশা আবার হারাতে বসেছি। কারণ দীর্ঘদিন ধরে বার্মা সেনাবাহিনী আমাদের উপর নির্যাতন করে আসছে। শেষ পর্যন্ত দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। আবার এখন তাদের হাতে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব। তাই আমরা দেশে ফিরে যাওয়া অনিশ্চিত মনে করছি। যে দেশের সেনার হাতে সরকার নিরাপদ নয় সেখানে আমরা কিভাবে নিরাপদ থাকব।

রোহিঙ্গা নেতা আইয়ুবুল ইসলাম (৪৬) বলেন, সহায় সম্পদ সব হারিয়ে প্রাণে বাঁচার জন্য বউ-বাচ্চা নিয়ে বাংলাদেশ আশ্রয় নিয়েছি। গত দুয়েকদিন ধরে আমরা টিভিতে বার্মা সরকারে আটক হওয়ার খবর শুনতে পাচ্ছি। আমরা জানি না দেশে কি হচ্ছে। কোন দিকে যাচ্ছে আমাদের ভাগ্য। বাংলাদেশ সরকার যেহেতু আমাদের আশ্রয় দিয়েছে তাই বর্তমানে তারা আমাদের অভিভাবক। তারা আমাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করে আমাদের দেশে ফিরিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবে বলে আশাবাদী।

আয়াছ নামের এক রোহিঙ্গা তরুণ জানায়, সু চি সরকারকে গ্রেপ্তারের কারণে আমাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টা জটিল হবে বলে মনে হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব নেতাদের সহযোগিতা ছাড়া আমাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। বিভিন্নভাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশ সরকার বার বার চেষ্টা করছে আমাদের দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে।

এদিকে ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর গত সাড়ে তিন বছরেও একজন রোহিঙ্গাকেও রাখাইনে ফেরত পাঠানো যায়নি। ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠাতে মায়ানমারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ। দুই দফা তারিখ ঠিক করেও রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরানো যায়নি। প্রথম দফায় ২০১৮ সালের নভেম্বরে এবং দ্বিতীয় দফায় ২০১৯ সালের ২২ আগস্ট এ উদ্যোগ ভেস্তে যায়। করোনার কারণে প্রায় এক বছর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা বন্ধ থাকার পর গত ১৯ জানুয়ারি চীনের উদ্যোগে সর্বশেষ ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়।

উল্লেখ্য, বর্তমানে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মায়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পড়ে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে মায়ানমারের দেন দরবার চলছে।