হোমিও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে চলছে অভিযান
বিষাক্ত অ্যালকোহল পানে মৃত্যুর মিছিল যেন থামছে না। প্রতিদিন বেড়েই চলেছে মৃত্যুর সংখ্যা। বিষাক্ত অ্যালকোহল পানে অসুস্থ হয়ে বাড়িতে অথবা হাসপাতাল ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। এ পর্যন্ত জেলায় ২০ জনের অধিক মৃত্যু হয়েছে।
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ২০ জন বলা হলেও এর সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। পুলিশ বলছে, তারা এ পর্যন্ত ১০ জনের ময়নাতদন্তে ব্যবস্থা নিয়েছে। বিষাক্ত অ্যালকোহল পানে মৃত্যুর মিছিলে যোগ হওয়া আরও ৫ জনের নাম পাওয়া গেছে এরা হলো- বগুড়া সারিয়াকান্দিতে লাজু (২৭) ও ইউসুফ (৪০), শহরের কৈপাড়া এলাকার রামচন্দ্র (৬০), শাজাহানপুরের আহাদ আলী (৪০) ও মেহেদী হাসান (২৫)। মঙ্গলবার থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত এই ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ বিভাগ নিশ্চিত হয়েছে যে রেকটিফায়েড স্পিরিটের সঙ্গে বিষাক্ত মিথানলের মিশ্রণ তৈরি করে বিক্রি করার কারণেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। মিথানল আসবাবপত্র (ফার্নিচার) রং করার কাজে ব্যবহৃত হয়।
মূলত হোমিও ব্যবসার আড়ালেই এ ধরনের বিষাক্ত মদ তৈরি হয়ে আসছিল। এছাড়া এই বিষাক্ত মদ তৈরির অন্যতম উপকরণ রেকটিফাইড স্পিরিট হোমিও ওষুধ তৈরির জন্য হোমিও প্রতিষ্ঠানগুলো আনার পর এর এটি নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় থাকছে। অধিক লাভের জন্য রেকটিফাইড স্পিরিটের সঙ্গে কম মূল্যের মিথানল মেশানোর কারণে এটি বিষাক্ত হয়ে পড়ে। অন্যদিকে অধিক মুনাফার জন্য বিষাক্ত মিথানল মিশ্রিত মদ ব্যবসার সঙ্গে আবার উঠে এসেছে এক সময়ে বগুড়ার প্রভাবশালী বিএনপি নেতা নুর মোহাম্মদের নাম। তিনি এখন ঢাকায় থাকেন। তার পারুল হোমিও নামে তার একটি হোমিও ল্যাব বগুড়ার ফুলবাড়ি এলাকায় রয়েছে। ব্যবসা করেন শত কোটি টাকার। এখন তার খোঁজ চলছে।
এদিকে বিষাক্ত মদপানের মৃত্যুর ঘটনার পর পুলিশ রেকটিফাইড স্পিরিট বিক্রেতা হোমিও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। এ ঘটানায় পুলিশ মঙ্গলবার রাতে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এরা হলো-পারুল হোমিও ল্যাবরেটরিজের নুরুন্নবী (৫৮), মুন হোমিও হলের আবদুল খালেক (৫৫), হাসান হোমিও ফার্মেসির আবু জুয়েল (৩৫) করতোয়া হোমিও হলের শহিদুল আলম সবুর (৫৫)। বুধবার দিনভর পুলিশ এসব কথিত হোমিও ল্যবরেটরিতে অভিযান চালিয়ে স্পিরিট দিয়ে মদ তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম আটক করে।
রোববার থেকে বগুড়ার বিভিন্নস্থানে বিষাক্ত মদপানে মৃত্যু ও অসুস্থ হওয়ার ঘটনা ঘটতে থাকে। হাসপাতালের মর্গে লাশের সারি পড়ে যায়। মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়তে থাকায় এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে তোলপাড়। পুলিশ জানায়, এ পর্যন্ত তারা ৫টি হোমিও প্রতিষ্ঠানকে বিষাক্ত মদ বিক্রির বিষয়ে চিহ্নিত করেছে। তারা রেকটিফাইড স্পিরিটের সঙ্গে মিথানল মিশ্রণ করে বলে তদন্তে জানতে পেরেছন। এসব প্রতিষ্ঠান হলো- শহরের ফুলবাড়ি এলাকার একই পরিবারের পারুল ও পুনম হোমিও ল্যাবরোটরিজ, হোটেল পট্টি এলাকার হাসান হোমিও, গালাপট্টি এলাকার মুন হোমিও এবং চেলোপাড়া এলাকার করতোয়া হোমিও হল। রাতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সদর থানা পুলিশ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। এছাড়া বুধবার দিনভর শহরের বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে স্পিরিট ও মদ তৈরির সরঞ্জাম আটক করে।
পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ বিভাগ জানিয়েছে, তারা প্রাথমিক তদন্তে দেখেছেন পারুল হোমিও থেকে বেশি বিষাক্ত মদের চালান হয়েছে। তারা আরও জানিয়েছেন, রেকটিফাইড স্পিরিটের সঙ্গে মিথানল মেশানোর কারণেই বিষাক্ত মদ তৈরি হয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে বগুড়ার ৮টি হোমিও ফার্মেসির রেকটিফাইড স্পিরিট তৈরির অনুমোদন রয়েছে। মাদকদ্রব নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে তাদের তালিকা রয়েছে। বিভিন্ন ডিসট্রিলারি থেকে হোমিও প্রতিষ্ঠানগুলো ওষুধ ডায়ালোশনের জন্য রেকটিফায়েড স্পিরিট মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়ে উত্তোলন করে। এতে পারুল হোমিও ল্যাবের সবচেয়ে বেশি ৪শ’ লিটার রেকটিফাইড স্পিরিট উত্তোলনের লিমিট রয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক মেহেদী হাসান জানান, এর বাইরে হোমিও প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশ থেকে রেকটিফাইড স্পিরিট আমদানি করছে। এছাড়া রং করার কাজের ব্যবহৃত মিথানল স্পিরিটও আমদানি করা হয়। তবে রেকিটিফাইড স্পিরিটের তুলনায় এর দাম অর্ধেক।
আবার দেশীয় ডিস্ট্রিলারির স্পিরিটের চেয়ে আমদানি করা স্পিরিটের দাম অনেক স্বস্তা। এজন্য হোমিও ল্যাবরেটরির নামে শত শত ব্যারেল রেকটিফাইড স্পিরিট আমদানি করা হচ্ছে। এক হোমিও ব্যবসায়ী জানান, গত জুন মাসে তিনি ও ঢাকার কয়েকটি হোমিও প্রতিষ্ঠান প্রায় ৫শ’ ব্যারেল রেকিটিফাইড স্পিরিট আমদানি করেন। তিনি বগুড়ায় আনেন ১৪ ব্যারেল। মাদক নিয়ন্ত্রণ বিভাগ সূত্র জানায়, দেশীয় রেকটিফাইড স্পিরিটের প্রতি লিটার প্রায় সাড়ে ৪শ’ টাকা আর মিথানল স্পিরিটের দাম প্রতি লিটার ১২০ টাকার মতো। একারনে অধিক মুনাফার জন্য রিকটিফাইড স্পিরিটের সঙ্গে মিথানল মিশিয়ে হোমিও ব্যবসার আড়ালে বিষাক্ত মদ বিক্রি করছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে রেকটিফাইড স্পিরিট নিয়ে আসার পর এ ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকছে না।
বৃহস্পতিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২১ মাঘ ১৪২৭, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪২
হোমিও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে চলছে অভিযান
প্রতিনিধি, বগুড়া
বিষাক্ত অ্যালকোহল পানে মৃত্যুর মিছিল যেন থামছে না। প্রতিদিন বেড়েই চলেছে মৃত্যুর সংখ্যা। বিষাক্ত অ্যালকোহল পানে অসুস্থ হয়ে বাড়িতে অথবা হাসপাতাল ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। এ পর্যন্ত জেলায় ২০ জনের অধিক মৃত্যু হয়েছে।
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ২০ জন বলা হলেও এর সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। পুলিশ বলছে, তারা এ পর্যন্ত ১০ জনের ময়নাতদন্তে ব্যবস্থা নিয়েছে। বিষাক্ত অ্যালকোহল পানে মৃত্যুর মিছিলে যোগ হওয়া আরও ৫ জনের নাম পাওয়া গেছে এরা হলো- বগুড়া সারিয়াকান্দিতে লাজু (২৭) ও ইউসুফ (৪০), শহরের কৈপাড়া এলাকার রামচন্দ্র (৬০), শাজাহানপুরের আহাদ আলী (৪০) ও মেহেদী হাসান (২৫)। মঙ্গলবার থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত এই ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ বিভাগ নিশ্চিত হয়েছে যে রেকটিফায়েড স্পিরিটের সঙ্গে বিষাক্ত মিথানলের মিশ্রণ তৈরি করে বিক্রি করার কারণেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। মিথানল আসবাবপত্র (ফার্নিচার) রং করার কাজে ব্যবহৃত হয়।
মূলত হোমিও ব্যবসার আড়ালেই এ ধরনের বিষাক্ত মদ তৈরি হয়ে আসছিল। এছাড়া এই বিষাক্ত মদ তৈরির অন্যতম উপকরণ রেকটিফাইড স্পিরিট হোমিও ওষুধ তৈরির জন্য হোমিও প্রতিষ্ঠানগুলো আনার পর এর এটি নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় থাকছে। অধিক লাভের জন্য রেকটিফাইড স্পিরিটের সঙ্গে কম মূল্যের মিথানল মেশানোর কারণে এটি বিষাক্ত হয়ে পড়ে। অন্যদিকে অধিক মুনাফার জন্য বিষাক্ত মিথানল মিশ্রিত মদ ব্যবসার সঙ্গে আবার উঠে এসেছে এক সময়ে বগুড়ার প্রভাবশালী বিএনপি নেতা নুর মোহাম্মদের নাম। তিনি এখন ঢাকায় থাকেন। তার পারুল হোমিও নামে তার একটি হোমিও ল্যাব বগুড়ার ফুলবাড়ি এলাকায় রয়েছে। ব্যবসা করেন শত কোটি টাকার। এখন তার খোঁজ চলছে।
এদিকে বিষাক্ত মদপানের মৃত্যুর ঘটনার পর পুলিশ রেকটিফাইড স্পিরিট বিক্রেতা হোমিও প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। এ ঘটানায় পুলিশ মঙ্গলবার রাতে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এরা হলো-পারুল হোমিও ল্যাবরেটরিজের নুরুন্নবী (৫৮), মুন হোমিও হলের আবদুল খালেক (৫৫), হাসান হোমিও ফার্মেসির আবু জুয়েল (৩৫) করতোয়া হোমিও হলের শহিদুল আলম সবুর (৫৫)। বুধবার দিনভর পুলিশ এসব কথিত হোমিও ল্যবরেটরিতে অভিযান চালিয়ে স্পিরিট দিয়ে মদ তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম আটক করে।
রোববার থেকে বগুড়ার বিভিন্নস্থানে বিষাক্ত মদপানে মৃত্যু ও অসুস্থ হওয়ার ঘটনা ঘটতে থাকে। হাসপাতালের মর্গে লাশের সারি পড়ে যায়। মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়তে থাকায় এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে তোলপাড়। পুলিশ জানায়, এ পর্যন্ত তারা ৫টি হোমিও প্রতিষ্ঠানকে বিষাক্ত মদ বিক্রির বিষয়ে চিহ্নিত করেছে। তারা রেকটিফাইড স্পিরিটের সঙ্গে মিথানল মিশ্রণ করে বলে তদন্তে জানতে পেরেছন। এসব প্রতিষ্ঠান হলো- শহরের ফুলবাড়ি এলাকার একই পরিবারের পারুল ও পুনম হোমিও ল্যাবরোটরিজ, হোটেল পট্টি এলাকার হাসান হোমিও, গালাপট্টি এলাকার মুন হোমিও এবং চেলোপাড়া এলাকার করতোয়া হোমিও হল। রাতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সদর থানা পুলিশ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। এছাড়া বুধবার দিনভর শহরের বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে স্পিরিট ও মদ তৈরির সরঞ্জাম আটক করে।
পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ বিভাগ জানিয়েছে, তারা প্রাথমিক তদন্তে দেখেছেন পারুল হোমিও থেকে বেশি বিষাক্ত মদের চালান হয়েছে। তারা আরও জানিয়েছেন, রেকটিফাইড স্পিরিটের সঙ্গে মিথানল মেশানোর কারণেই বিষাক্ত মদ তৈরি হয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে বগুড়ার ৮টি হোমিও ফার্মেসির রেকটিফাইড স্পিরিট তৈরির অনুমোদন রয়েছে। মাদকদ্রব নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে তাদের তালিকা রয়েছে। বিভিন্ন ডিসট্রিলারি থেকে হোমিও প্রতিষ্ঠানগুলো ওষুধ ডায়ালোশনের জন্য রেকটিফায়েড স্পিরিট মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়ে উত্তোলন করে। এতে পারুল হোমিও ল্যাবের সবচেয়ে বেশি ৪শ’ লিটার রেকটিফাইড স্পিরিট উত্তোলনের লিমিট রয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক মেহেদী হাসান জানান, এর বাইরে হোমিও প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশ থেকে রেকটিফাইড স্পিরিট আমদানি করছে। এছাড়া রং করার কাজের ব্যবহৃত মিথানল স্পিরিটও আমদানি করা হয়। তবে রেকিটিফাইড স্পিরিটের তুলনায় এর দাম অর্ধেক।
আবার দেশীয় ডিস্ট্রিলারির স্পিরিটের চেয়ে আমদানি করা স্পিরিটের দাম অনেক স্বস্তা। এজন্য হোমিও ল্যাবরেটরির নামে শত শত ব্যারেল রেকটিফাইড স্পিরিট আমদানি করা হচ্ছে। এক হোমিও ব্যবসায়ী জানান, গত জুন মাসে তিনি ও ঢাকার কয়েকটি হোমিও প্রতিষ্ঠান প্রায় ৫শ’ ব্যারেল রেকিটিফাইড স্পিরিট আমদানি করেন। তিনি বগুড়ায় আনেন ১৪ ব্যারেল। মাদক নিয়ন্ত্রণ বিভাগ সূত্র জানায়, দেশীয় রেকটিফাইড স্পিরিটের প্রতি লিটার প্রায় সাড়ে ৪শ’ টাকা আর মিথানল স্পিরিটের দাম প্রতি লিটার ১২০ টাকার মতো। একারনে অধিক মুনাফার জন্য রিকটিফাইড স্পিরিটের সঙ্গে মিথানল মিশিয়ে হোমিও ব্যবসার আড়ালে বিষাক্ত মদ বিক্রি করছে। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে রেকটিফাইড স্পিরিট নিয়ে আসার পর এ ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকছে না।