পুলিশের ছদ্মবেশে স্বর্ণ ডাকাতদল

পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারে স্বর্ণ ব্যবসায়ীর স্বর্ণলুটের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ডাকাতরা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তাদের স্বীকারোক্তিতে স্বর্ণ ডাকাতির পরিকল্পনার কাহিনী বেরিয়ে আসছে। ডাকাতির জন্য পরিকল্পনা মতে, দুইটি টিম গঠন করে তারা। এরমধ্যে একটি হলো- পুলিশের আদলে সংঘবদ্ধ ডাকাতদল নিজস্ব ইন্টেলিজেন্স (গোয়েন্দা) টিম। অন্যটি অপারেশন টিম। দুইটি গ্রুপে ১৫ থেকে ২০ সদস্যের ডাকাতদল রয়েছে।

প্রতিটি গ্রুপে প্রধান হিসেবে এক ডাকাত কাজ করছে। পুরান ঢাকার বৃহত্তর স্বর্ণ মার্কেট হিসেবে পরিচিত তাঁতীবাজার ভিত্তিক গোয়েন্দা টিম কাজ করছে। আর গোয়েন্দা দলের নির্দেশ ও পরিকল্পনা মতে, ডাকাতদলের অপারেশন টিপ সড়ক মহাসড়কে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আটক করে নগদ টাকা ও স্বর্ণলঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়। সম্প্রতি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) টিমের হাতে গ্রেপ্তারকৃত স্বর্ণ ডাকাতরা জিজ্ঞাসাবাদে এবং আদালতে স্বীকারোক্তিতে এমন তথ্য দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পিবিআইয়ের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন ঢাকা জেলার পরিদর্শক ও তদন্ত কর্মকর্তা রাশিদুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি গ্রেপ্তারকৃত ৮ ডাকাত পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তার জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, একটি গ্রুপ মূলত তাঁতীবাজারস্থ স্বর্ণ মার্কেটগুলোতে পালাক্রমে গোয়েন্দা কার্যক্রম চালায়। কোন স্বর্ণ ব্যবসায়ী স্বর্ণ ও নগদ টাকা নিয়ে তাঁতীবাজার থেকে বের হয়ে বিভিন্ন স্বর্ণ মার্কেটে বা স্বর্ণের দোকানে বা ঢাকার বাহিরে স্বর্ণ ব্যবসাযীদের কাছে স্বর্ণলঙ্কার সরবরাহ করবে। এমন খোঁজ-খবর সংগ্রহ করে। এরপর ঘটনার সময় স্বর্ণ ব্যবসায়ী বাসা থেকে কখন কিভাবে বের হচ্ছে। স্বর্ণ ও নগদ টাকা কিভাবে নিয়ে চলাচল করছে তা গতিবিধি নজরদারি করছে। এরপর ব্যবসায়ী রওনা হওয়ার পর তারা মুঠোফোনে নিদিষ্ট দূরত্বে গিয়ে পথে ওঁৎ পেতে থাকা অপারেশন টিমের ডাকাতদেরকে ব্যবসায়ী সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে দেয়। তার অন্য পথে সুযোগ বুঝে পুলিশ পরিচয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে আটক করে নগদ টাকা ও স্বর্ণলঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়। ডাকাতি শেষে নিজেরা নিজেদের মধ্যে লুটকৃত স্বর্ণ ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়। গত প্রায় সাত বছর ধরে স্বর্ণ ডাকাত চক্র ৭ থেকে ৮টি স্বর্ণ ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। এ চক্র ঢাকার আশপাশে বিভিন্ন সড়ক ব্যবহার করছে। সারাদেশে এদের নেটওয়ার্ক রয়েছে। তারা মূলত মোটরসাইকেল ব্যবহার করে। তারা মূলত ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি করত। গতকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তারকৃত ৮ ডাকাতের মধ্যে ৭ ডাকাত আদালতে নিজেদেরকে জড়িয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। এ চক্রের আরও ১০ থেকে ১২ ডাকাতকে পিবিআইয়ের তদন্ত টিম খুঁজছে। পিবিআই আরও জানায়, এ ডাকাত চক্র স্বর্ণলঙ্কার লুট করে কোথায় বা কার কাছে বিক্রি করছে। তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য পিবির টিমের অভিযান অব্যাহত আছে বলে তদন্তকারি কর্মকর্তা জানিয়েছে।

পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারস্থ সোনালী গোল্ড হাউজ নামক স্বর্ণের দোকানের মালিক অর্জুন হালদার, পিতা-মৃত সেবক চন্দ্র হালদার, সাং-বাউলীকান্দা, থানা-শিবালয়, জেলা-মানিকগঞ্জ তার পুরাতন কারিকর সুরেশ হালদার, পিতা-সতীশ হালদার, সাং-আটিপাড়া, থানা-কেরানীগঞ্জ মিলে গত বছর ৭ সেপ্টম্বর রাজবাড়ি জেলার পলাশ জুয়েলার্সের মালিক গৌরাঙ্গ ও রাজলক্ষী জুয়েলার্সের মালিক জয়দেবদ্বয়কে স্বর্ণ সরবরাহের উদ্দেশে রওনা হয়। ওই দিন সকাল ৬টার দিকে একটি কালো রংয়ের ট্রাভেল ব্যাগে স্বর্ণের চেইন, কানের দুল, বল চেইন, কানপাশাসহ সর্বমোট ১৬৬.৫৫৩ (একশত ছিষট্টি দশমিক পাঁচশত তিপান্ন) ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার যার সর্বমোট মূল্য অনুমান ১,১৪,৯২,১৫৭ (এক কোটি চৌদ্দ লক্ষ বিরানব্বই হাজার একশত সাতান্ন) টাকাসহ অর্জুন হালদার তার তাঁতীবাজারে অবস্থিত বাসা থেকে রাজবাড়ি যাওয়ার উদ্দেশে বাহির হয়। অর্জুন হালদারের বাসার সামনে আগে থেকেই অপেক্ষারত সুরেশ হালদারকে সঙ্গে নিয়ে পায়ে হেটে তাঁতীবাজার মোড়ে আসেন। সেখান থেকে সাভার পরিবহন বাসে রওনা দিয়ে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে এসে নামেন। গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস পরিবর্তন করে স্বর্ণ ব্যবসায়ী অর্জুন হালদার ও তার সাবেক কারিকর সুরেশ হালদার রাজবাড়ি পরিবহনে উঠেন। একই দিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাসটি সাভার আমিনবাজার অতিক্রম করে বৈদ্যুতিক পাওয়ার প্ল্যান্টের সামনে ফাঁকা জায়গায় পৌঁছালে ৪টি মোটরসাইকেলে ১০/১২ জন অজ্ঞাতনামা মাস্ক পরিহিত ডাকাত বাসটির গতিরোধ করে বাসটি থামিয়ে বাসে উঠে। তারা নিজেদেরকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে উক্ত স্বর্ণ ব্যবসায়ী অর্জুন হালদার ও তার সঙ্গে থাকা সুরেশ হালদারকে টানা হেচড়া করে বাস থেকে নামিয়ে তাদের দু’জনকে আলাদা আলাদা মোটরসাইকেলে উঠিয়ে গাবতলীর দিকে রওনা হয়। অনুমান ২০০ গজ যাওয়ার পর মোটরসাইকেল থামিয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ী অর্জুন হালদারকে নাকে মুখে কিল ঘুষি মেরে রক্তাক্ত জখম করে তার হাতে থাকা স্বর্ণসহ ব্যাগটি এবং নকিয়া মোবাইল ফোন মডেল নং-২১৬ নিয়ে দ্রুতবেগে গাবতলীর দিকে মোটরসাইকেল চালিয়ে চলে যায়। ডাকাতদের বয়স অনুমান ২০-৪৫ বৎসর হবে।

উক্ত ঘটনায় বাদী অর্জুন হালদার গত বছর ১৮ নভেম্বর বিজ্ঞ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি সিআর মামলা দায়ের করেন, যার নম্বর ১৭৬/২০ (সাভার)। বিজ্ঞ আদালত উক্ত সিআর মামলটি অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআই ঢাকা জেলাকে নির্দেশ দেন। উক্ত সিআর মামলাটির অনুসন্ধানকালে ঘটনাটি একটি ডাকাতির ঘটনা বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বাদী অর্জুন হালদারকে সাভার থানায় একটি নিয়মিত মামলা দায়েরের পরামর্শ প্রদান করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাদী অর্জুন হালদার সাভার মডেল থানার মামলা নং-২৮ তারিখ-১৩/১/২০২১, ধারা-৩৯৫/৩৯৭ পেনাল কোড দায়ের করেন।

পিবিআই ঢাকা জেলা গত ১৩ জানুয়ারি (১৩/০১/২০২১) স্ব-উদ্যোগে মামলাটির তদন্তভার অধিগ্রহণ করে এবং উক্ত ইউনিটে কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক (নি.) মো. রাশিদুল ইসলামকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করে। পুলিশ পরিদর্শক (নি.) মো. রাশিদুল ইসলাম মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে শক্তিশালী গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে জানতে পারেন যে, এ ঘটনাটি úুলিশ পরিচয়ে একটি আন্তঃজেলা স্বর্ণ ডাকাতির ঘটনা।

গ্রেপ্তারকৃত আসামি সুরেশ হালদারকে পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে জানান, সে পুলিশ পরিচয়ে সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা স্বর্ণ ডাকাতদলের সক্রিয় সদস্য। সে ও স্বর্ণ ব্যবসায়ী অর্জুন হালদার স্বর্ণ বিক্রি করার জন্য রাজবাড়ি যাওয়ার তথ্য তার সহযোগী ডাকাতদেরকে আগেই পাচার করে। তার পাচার করা তথ্যেরভিত্তিতে ডাকাতদল ভোরে ৩/৪টি মোটরসাইকেলসহ তাঁতীবাজারে অর্জুন হালদারের বাসার পাশে সতর্কতার সঙ্গে অপেক্ষা করতে থাকে। অর্জুন হালদার বাসা থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মো. সোহেল আহম্মেদ পল্লবের নেতৃত্বে সাবেক সেনা সদস্য ফারুক হোসেনসহ ডাকাতদলটি তাকে অনুসরণ করতে থাকে। এরপর পুলিশ পরিচয়ে বাসটির গতিরোধ করে। বাসে উঠে তারা অর্জুন হালদার ও সুরেশকে বাস থেকে টানা হেচড়া করে নামিয়ে নেয় বলে স্বীকার করেছে।

গোয়েন্দা তৎপরতায় এবং আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে গত ১৪ জানুয়ারি পুলিশ পরিচয়ে স্বর্ণ ডাকাত চক্রের সদস্য সুরেশ চন্দ্র হালদার, মিঠুন মজুমদার ওরফে মিঠু, উজ্জল চন্দ্র দাস, মিহির দাসকে গ্রেপ্তার করে। তারা প্রত্যেকে বিজ্ঞ আদালতে ফৌ. কা. বি. ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

গ্রেপ্তারকৃত ডাকাতদের দেয়া তথ্য মতে টানা অভিযান চালিয়ে আসামি শংকরের কাছে হতে বাদীর লুণ্ঠিত স্বর্ণালঙ্কারের মধ্যে ২২ ভরি স্বর্ণ, আসামি মো. সোহেল আহম্মেদ পল্লবের কাছে থেকে লুণ্ঠিত স্বর্ণ বিক্রির ৫,০০,০০০ (পাঁচ লাখ) টাকা, আসামি মিঠুন চৌকিদারের কট থেকে লুণ্ঠিত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে এবং আসামি সাবেক সেনা সদস্য ফারুক হোসেনের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত হিরো হোন্ডা মোটরসাইকেল যার নম্বর ঢাকা মেট্রো ল-২৩-০৩০৭ জব্দ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২১ মাঘ ১৪২৭, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪২

পুলিশের ছদ্মবেশে স্বর্ণ ডাকাতদল

বাকী বিল্লাহ

পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারে স্বর্ণ ব্যবসায়ীর স্বর্ণলুটের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ডাকাতরা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তাদের স্বীকারোক্তিতে স্বর্ণ ডাকাতির পরিকল্পনার কাহিনী বেরিয়ে আসছে। ডাকাতির জন্য পরিকল্পনা মতে, দুইটি টিম গঠন করে তারা। এরমধ্যে একটি হলো- পুলিশের আদলে সংঘবদ্ধ ডাকাতদল নিজস্ব ইন্টেলিজেন্স (গোয়েন্দা) টিম। অন্যটি অপারেশন টিম। দুইটি গ্রুপে ১৫ থেকে ২০ সদস্যের ডাকাতদল রয়েছে।

প্রতিটি গ্রুপে প্রধান হিসেবে এক ডাকাত কাজ করছে। পুরান ঢাকার বৃহত্তর স্বর্ণ মার্কেট হিসেবে পরিচিত তাঁতীবাজার ভিত্তিক গোয়েন্দা টিম কাজ করছে। আর গোয়েন্দা দলের নির্দেশ ও পরিকল্পনা মতে, ডাকাতদলের অপারেশন টিপ সড়ক মহাসড়কে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আটক করে নগদ টাকা ও স্বর্ণলঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়। সম্প্রতি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) টিমের হাতে গ্রেপ্তারকৃত স্বর্ণ ডাকাতরা জিজ্ঞাসাবাদে এবং আদালতে স্বীকারোক্তিতে এমন তথ্য দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পিবিআইয়ের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন ঢাকা জেলার পরিদর্শক ও তদন্ত কর্মকর্তা রাশিদুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি গ্রেপ্তারকৃত ৮ ডাকাত পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তার জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, একটি গ্রুপ মূলত তাঁতীবাজারস্থ স্বর্ণ মার্কেটগুলোতে পালাক্রমে গোয়েন্দা কার্যক্রম চালায়। কোন স্বর্ণ ব্যবসায়ী স্বর্ণ ও নগদ টাকা নিয়ে তাঁতীবাজার থেকে বের হয়ে বিভিন্ন স্বর্ণ মার্কেটে বা স্বর্ণের দোকানে বা ঢাকার বাহিরে স্বর্ণ ব্যবসাযীদের কাছে স্বর্ণলঙ্কার সরবরাহ করবে। এমন খোঁজ-খবর সংগ্রহ করে। এরপর ঘটনার সময় স্বর্ণ ব্যবসায়ী বাসা থেকে কখন কিভাবে বের হচ্ছে। স্বর্ণ ও নগদ টাকা কিভাবে নিয়ে চলাচল করছে তা গতিবিধি নজরদারি করছে। এরপর ব্যবসায়ী রওনা হওয়ার পর তারা মুঠোফোনে নিদিষ্ট দূরত্বে গিয়ে পথে ওঁৎ পেতে থাকা অপারেশন টিমের ডাকাতদেরকে ব্যবসায়ী সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে দেয়। তার অন্য পথে সুযোগ বুঝে পুলিশ পরিচয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে আটক করে নগদ টাকা ও স্বর্ণলঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়। ডাকাতি শেষে নিজেরা নিজেদের মধ্যে লুটকৃত স্বর্ণ ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়। গত প্রায় সাত বছর ধরে স্বর্ণ ডাকাত চক্র ৭ থেকে ৮টি স্বর্ণ ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। এ চক্র ঢাকার আশপাশে বিভিন্ন সড়ক ব্যবহার করছে। সারাদেশে এদের নেটওয়ার্ক রয়েছে। তারা মূলত মোটরসাইকেল ব্যবহার করে। তারা মূলত ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি করত। গতকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তারকৃত ৮ ডাকাতের মধ্যে ৭ ডাকাত আদালতে নিজেদেরকে জড়িয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। এ চক্রের আরও ১০ থেকে ১২ ডাকাতকে পিবিআইয়ের তদন্ত টিম খুঁজছে। পিবিআই আরও জানায়, এ ডাকাত চক্র স্বর্ণলঙ্কার লুট করে কোথায় বা কার কাছে বিক্রি করছে। তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য পিবির টিমের অভিযান অব্যাহত আছে বলে তদন্তকারি কর্মকর্তা জানিয়েছে।

পিবিআই কর্মকর্তারা জানান, পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারস্থ সোনালী গোল্ড হাউজ নামক স্বর্ণের দোকানের মালিক অর্জুন হালদার, পিতা-মৃত সেবক চন্দ্র হালদার, সাং-বাউলীকান্দা, থানা-শিবালয়, জেলা-মানিকগঞ্জ তার পুরাতন কারিকর সুরেশ হালদার, পিতা-সতীশ হালদার, সাং-আটিপাড়া, থানা-কেরানীগঞ্জ মিলে গত বছর ৭ সেপ্টম্বর রাজবাড়ি জেলার পলাশ জুয়েলার্সের মালিক গৌরাঙ্গ ও রাজলক্ষী জুয়েলার্সের মালিক জয়দেবদ্বয়কে স্বর্ণ সরবরাহের উদ্দেশে রওনা হয়। ওই দিন সকাল ৬টার দিকে একটি কালো রংয়ের ট্রাভেল ব্যাগে স্বর্ণের চেইন, কানের দুল, বল চেইন, কানপাশাসহ সর্বমোট ১৬৬.৫৫৩ (একশত ছিষট্টি দশমিক পাঁচশত তিপান্ন) ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার যার সর্বমোট মূল্য অনুমান ১,১৪,৯২,১৫৭ (এক কোটি চৌদ্দ লক্ষ বিরানব্বই হাজার একশত সাতান্ন) টাকাসহ অর্জুন হালদার তার তাঁতীবাজারে অবস্থিত বাসা থেকে রাজবাড়ি যাওয়ার উদ্দেশে বাহির হয়। অর্জুন হালদারের বাসার সামনে আগে থেকেই অপেক্ষারত সুরেশ হালদারকে সঙ্গে নিয়ে পায়ে হেটে তাঁতীবাজার মোড়ে আসেন। সেখান থেকে সাভার পরিবহন বাসে রওনা দিয়ে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে এসে নামেন। গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস পরিবর্তন করে স্বর্ণ ব্যবসায়ী অর্জুন হালদার ও তার সাবেক কারিকর সুরেশ হালদার রাজবাড়ি পরিবহনে উঠেন। একই দিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাসটি সাভার আমিনবাজার অতিক্রম করে বৈদ্যুতিক পাওয়ার প্ল্যান্টের সামনে ফাঁকা জায়গায় পৌঁছালে ৪টি মোটরসাইকেলে ১০/১২ জন অজ্ঞাতনামা মাস্ক পরিহিত ডাকাত বাসটির গতিরোধ করে বাসটি থামিয়ে বাসে উঠে। তারা নিজেদেরকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে উক্ত স্বর্ণ ব্যবসায়ী অর্জুন হালদার ও তার সঙ্গে থাকা সুরেশ হালদারকে টানা হেচড়া করে বাস থেকে নামিয়ে তাদের দু’জনকে আলাদা আলাদা মোটরসাইকেলে উঠিয়ে গাবতলীর দিকে রওনা হয়। অনুমান ২০০ গজ যাওয়ার পর মোটরসাইকেল থামিয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ী অর্জুন হালদারকে নাকে মুখে কিল ঘুষি মেরে রক্তাক্ত জখম করে তার হাতে থাকা স্বর্ণসহ ব্যাগটি এবং নকিয়া মোবাইল ফোন মডেল নং-২১৬ নিয়ে দ্রুতবেগে গাবতলীর দিকে মোটরসাইকেল চালিয়ে চলে যায়। ডাকাতদের বয়স অনুমান ২০-৪৫ বৎসর হবে।

উক্ত ঘটনায় বাদী অর্জুন হালদার গত বছর ১৮ নভেম্বর বিজ্ঞ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি সিআর মামলা দায়ের করেন, যার নম্বর ১৭৬/২০ (সাভার)। বিজ্ঞ আদালত উক্ত সিআর মামলটি অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআই ঢাকা জেলাকে নির্দেশ দেন। উক্ত সিআর মামলাটির অনুসন্ধানকালে ঘটনাটি একটি ডাকাতির ঘটনা বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বাদী অর্জুন হালদারকে সাভার থানায় একটি নিয়মিত মামলা দায়েরের পরামর্শ প্রদান করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাদী অর্জুন হালদার সাভার মডেল থানার মামলা নং-২৮ তারিখ-১৩/১/২০২১, ধারা-৩৯৫/৩৯৭ পেনাল কোড দায়ের করেন।

পিবিআই ঢাকা জেলা গত ১৩ জানুয়ারি (১৩/০১/২০২১) স্ব-উদ্যোগে মামলাটির তদন্তভার অধিগ্রহণ করে এবং উক্ত ইউনিটে কর্মরত পুলিশ পরিদর্শক (নি.) মো. রাশিদুল ইসলামকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করে। পুলিশ পরিদর্শক (নি.) মো. রাশিদুল ইসলাম মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে শক্তিশালী গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে জানতে পারেন যে, এ ঘটনাটি úুলিশ পরিচয়ে একটি আন্তঃজেলা স্বর্ণ ডাকাতির ঘটনা।

গ্রেপ্তারকৃত আসামি সুরেশ হালদারকে পিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদে জানান, সে পুলিশ পরিচয়ে সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা স্বর্ণ ডাকাতদলের সক্রিয় সদস্য। সে ও স্বর্ণ ব্যবসায়ী অর্জুন হালদার স্বর্ণ বিক্রি করার জন্য রাজবাড়ি যাওয়ার তথ্য তার সহযোগী ডাকাতদেরকে আগেই পাচার করে। তার পাচার করা তথ্যেরভিত্তিতে ডাকাতদল ভোরে ৩/৪টি মোটরসাইকেলসহ তাঁতীবাজারে অর্জুন হালদারের বাসার পাশে সতর্কতার সঙ্গে অপেক্ষা করতে থাকে। অর্জুন হালদার বাসা থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মো. সোহেল আহম্মেদ পল্লবের নেতৃত্বে সাবেক সেনা সদস্য ফারুক হোসেনসহ ডাকাতদলটি তাকে অনুসরণ করতে থাকে। এরপর পুলিশ পরিচয়ে বাসটির গতিরোধ করে। বাসে উঠে তারা অর্জুন হালদার ও সুরেশকে বাস থেকে টানা হেচড়া করে নামিয়ে নেয় বলে স্বীকার করেছে।

গোয়েন্দা তৎপরতায় এবং আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে গত ১৪ জানুয়ারি পুলিশ পরিচয়ে স্বর্ণ ডাকাত চক্রের সদস্য সুরেশ চন্দ্র হালদার, মিঠুন মজুমদার ওরফে মিঠু, উজ্জল চন্দ্র দাস, মিহির দাসকে গ্রেপ্তার করে। তারা প্রত্যেকে বিজ্ঞ আদালতে ফৌ. কা. বি. ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

গ্রেপ্তারকৃত ডাকাতদের দেয়া তথ্য মতে টানা অভিযান চালিয়ে আসামি শংকরের কাছে হতে বাদীর লুণ্ঠিত স্বর্ণালঙ্কারের মধ্যে ২২ ভরি স্বর্ণ, আসামি মো. সোহেল আহম্মেদ পল্লবের কাছে থেকে লুণ্ঠিত স্বর্ণ বিক্রির ৫,০০,০০০ (পাঁচ লাখ) টাকা, আসামি মিঠুন চৌকিদারের কট থেকে লুণ্ঠিত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে এবং আসামি সাবেক সেনা সদস্য ফারুক হোসেনের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত হিরো হোন্ডা মোটরসাইকেল যার নম্বর ঢাকা মেট্রো ল-২৩-০৩০৭ জব্দ করা হয়েছে।