মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি ও খুনিদের শাস্তি দাবি
মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি ও খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়ে গতকাল শাহজাদপুরে সাংবাদিক আবদুল হাকিম শিমুল হত্যার চতুর্থ বর্ষ পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে শাহজাদপুরে কর্মরত সাংবাদিকদের ব্যানারে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মসূচির মধ্যে ছিল, সকালে শাহজাদপুর প্রেসক্লাব কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাচ ধারণ, শিমুলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, শোক র্যালি, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ। এদিন সকাল ১১টায় প্রেসক্লাব চত্বর থেকে শোক র্যালি বের হয়ে পৌর এলাকার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। র্যালি শেষে উপজেলা পরিষদ চত্বরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন শাহজাদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি সংবাদ প্রতিনিধি বিমল কুন্ডু। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শফিকুজ্জামান শফি, কালের কন্ঠ প্রতিনিধি আতাউর রহমান পিন্টু, নয়াদিগন্ত প্রতিনিধি আবুল কাশেম, যুগান্তর প্রতিনিধি মুমীদুজ্জামান জাহান, করতোয়া প্রতিনিধি সাগর বসাক, এশিয়ান টিভির ওমর ফারুক, যায়যায়দিন প্রতিনিধি এমএ জাফর লিটন, প্রতিদিনের সংবাদ প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান তুহিন, দিনকাল প্রতিনিধি আল-আমিন হোসেন, সমকাল প্রতিনিধি কোরবান আলী লাবলু, নিহত সাংবাদিক শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম, মামা আবদুল মজিদ মন্ডল, ভাই আবদুল কালাম আজাদ প্রমুখ। বক্তারা বলেন, আসামিদের নানা কৌশল ও ষড়যন্ত্রের কারণে দীর্ঘ ৪ বছরেও শিমুল হত্যা মামলার বিচার কাজ শুরু হয়নি।
তারা শিমুল হত্যা মামলা বিচার নিয়ে সংশয় ও উদ্বেগ প্রকাশ করে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি ও খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মাননীয় প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
জানা গেছে, স্থানীয় সাংবাদিক ও নিহতের পরিবারের সদস্যদের দাবির মুখে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর ২০১৯ সালে ৪ জুলাই আইন মন্ত্রণালয় চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে শিমুল হত্যা মামলাটি রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের প্রজ্ঞাপন জারি করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ কোর্ট (বিচারিক আদালত) থেকে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।
এক পর্যায়ে ২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট আসামি পক্ষ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের একটি আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আপিল করলে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ শিমুল হত্যা মামলার কার্যক্রম ৬ মাসের জন্য স্থগিত করে রুল জারি করেন। হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে নিহত সাংবাদিক শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ৬ সপ্তাহের মধ্যে রুল নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চকে নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রায় ১৫ মাস অতিবাহিত হলেও অদ্যবধি চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। এদিকে ৪ বছরেও শিমুল হত্যার বিচার শুরু না হওয়ায় স্থানীয় সাংবাদিক ও তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে নানা সংশয় ও হতাশা দেখা দিয়েছে। শোক র্যালি ও সমাবেশে উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা, নিহত শিমুলের পরিবারের সদস্যরা, সাংবাদিক শিমুল স্মৃতি সংসদদের সদস্যরাসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ২ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকারি কলেজ শাখার ছাত্রলীগ সভাপতি বিজয় মাহমুদকে মারধর করে হাত-পা ভেঙে দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাবেক পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুর সমর্থকদের সঙ্গে বিজয় মাহমুদের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলাকালে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাবেক পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুর শটগানের গুলিতে দৈনিক সমকাল শাহজাদপুর প্রতিনিধি সাংবাদিক আবদুল হাকিম শিমুল মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন।
পরদিন উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল হাসপাতাল থেকে ঢাকা নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম থানায় হত্যামামলা দায়ের করেন। একই বছরের ২ মে পুলিশ হালিমুল হক মিরুকে প্রধান আসামি করে ৩৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।
বৃহস্পতিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২১ মাঘ ১৪২৭, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪২
মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি ও খুনিদের শাস্তি দাবি
প্রতিনিধি, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ)
মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি ও খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়ে গতকাল শাহজাদপুরে সাংবাদিক আবদুল হাকিম শিমুল হত্যার চতুর্থ বর্ষ পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে শাহজাদপুরে কর্মরত সাংবাদিকদের ব্যানারে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মসূচির মধ্যে ছিল, সকালে শাহজাদপুর প্রেসক্লাব কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাচ ধারণ, শিমুলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, শোক র্যালি, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ। এদিন সকাল ১১টায় প্রেসক্লাব চত্বর থেকে শোক র্যালি বের হয়ে পৌর এলাকার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। র্যালি শেষে উপজেলা পরিষদ চত্বরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন শাহজাদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি সংবাদ প্রতিনিধি বিমল কুন্ডু। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শফিকুজ্জামান শফি, কালের কন্ঠ প্রতিনিধি আতাউর রহমান পিন্টু, নয়াদিগন্ত প্রতিনিধি আবুল কাশেম, যুগান্তর প্রতিনিধি মুমীদুজ্জামান জাহান, করতোয়া প্রতিনিধি সাগর বসাক, এশিয়ান টিভির ওমর ফারুক, যায়যায়দিন প্রতিনিধি এমএ জাফর লিটন, প্রতিদিনের সংবাদ প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান তুহিন, দিনকাল প্রতিনিধি আল-আমিন হোসেন, সমকাল প্রতিনিধি কোরবান আলী লাবলু, নিহত সাংবাদিক শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম, মামা আবদুল মজিদ মন্ডল, ভাই আবদুল কালাম আজাদ প্রমুখ। বক্তারা বলেন, আসামিদের নানা কৌশল ও ষড়যন্ত্রের কারণে দীর্ঘ ৪ বছরেও শিমুল হত্যা মামলার বিচার কাজ শুরু হয়নি।
তারা শিমুল হত্যা মামলা বিচার নিয়ে সংশয় ও উদ্বেগ প্রকাশ করে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি ও খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মাননীয় প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
জানা গেছে, স্থানীয় সাংবাদিক ও নিহতের পরিবারের সদস্যদের দাবির মুখে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর ২০১৯ সালে ৪ জুলাই আইন মন্ত্রণালয় চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে শিমুল হত্যা মামলাটি রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের প্রজ্ঞাপন জারি করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ কোর্ট (বিচারিক আদালত) থেকে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।
এক পর্যায়ে ২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট আসামি পক্ষ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের একটি আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আপিল করলে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ শিমুল হত্যা মামলার কার্যক্রম ৬ মাসের জন্য স্থগিত করে রুল জারি করেন। হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে নিহত সাংবাদিক শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ৬ সপ্তাহের মধ্যে রুল নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চকে নির্দেশ দেন। কিন্তু প্রায় ১৫ মাস অতিবাহিত হলেও অদ্যবধি চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। এদিকে ৪ বছরেও শিমুল হত্যার বিচার শুরু না হওয়ায় স্থানীয় সাংবাদিক ও তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে নানা সংশয় ও হতাশা দেখা দিয়েছে। শোক র্যালি ও সমাবেশে উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা, নিহত শিমুলের পরিবারের সদস্যরা, সাংবাদিক শিমুল স্মৃতি সংসদদের সদস্যরাসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ২ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকারি কলেজ শাখার ছাত্রলীগ সভাপতি বিজয় মাহমুদকে মারধর করে হাত-পা ভেঙে দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাবেক পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুর সমর্থকদের সঙ্গে বিজয় মাহমুদের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলাকালে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাবেক পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুর শটগানের গুলিতে দৈনিক সমকাল শাহজাদপুর প্রতিনিধি সাংবাদিক আবদুল হাকিম শিমুল মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন।
পরদিন উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল হাসপাতাল থেকে ঢাকা নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় শিমুলের স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম থানায় হত্যামামলা দায়ের করেন। একই বছরের ২ মে পুলিশ হালিমুল হক মিরুকে প্রধান আসামি করে ৩৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।