লন্ডনে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য : নেপথ্য কারিগরের কথা

আকাশ চৌধুরী

দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাংচুর হয়েছে। মৌলবাদীদের অপতৎপরতা অব্যাহত আছে। তবু থেমে নেই ভাস্কর্য নির্মাণ। বিশেষ করে মুজিববর্ষ উপলক্ষে এ স্থাপন কাজের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো- যে ব্যক্তিটির জন্য আমরা একটা স্বাধীন দেশে বসবাস করতে পারছি, যার জন্য আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারছি, সেই মহান নেতার ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা মৌলবাদী গোষ্ঠী কী করে পায়!

আমরা প্রায়ই লক্ষ্য করি এখনো এই বাংলার তরুণরা এ দেশের প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে তেমন অবগত নয়। যদিও এ লক্ষ্যে সরকার অনেক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু মানেই লাল-সবুজ পতাকা- এটা এখন শুধু আমাদের দেশেই নয়; ছেয়ে গেছে গোটা বিশ্বে। আর আজকে যে ভাস্কর্য স্থাপন বা নির্মাণ নিয়ে এতো হইচই- এ ষড়যন্ত্র কি শুধু দেশেই? না, এ গোষ্ঠীটি পৃথিবীর যেখানে রয়েছে সেখানেই তাদের অবস্থান থেকে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। যেটা হয়েছিল যুক্তরাজ্যের লন্ডনে। বাংলাদেশ হাইকমিশন যেখানে এটা স্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে ব্যক্তি উদ্যোগে আফছার খান সাদেক নামের এক আওয়ামী লীগ নেতা তা করে দেখিয়ে দিয়েছেন কতটুকু তিনি মুজিবপ্রেমী।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিষয়টি আজ থেকে বারো বছর আগে অর্থাৎ ২০০৯ সালে তার মাথায় আসে। তখনও মৌলবাদী গোষ্ঠী তাতে নানাভাবে বাধার সৃষ্টি করে। এ বিষয়ে মামলাও হয়। সব ঝড়-ঝাপটা ডিঙিয়ে আফছার খান সাদেক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি স্থাপন করতে সক্ষম হন। আজ পৃথিবীর সব পর্যটক ভাস্কর্যটির সামনে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। জানতে পারছেন বাংলাদেশ নামের একটি দেশ ও জাতির পিতা সম্পর্কে।

ইস্ট লন্ডনে বসবাসকারী লন্ডন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা আফছার খান সাদেক ২০০৯ সাল থেকে একক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন জাতির পিতার ভাস্কর্য স্থাপনের অনুমোদনের জন্য। পূর্ব লন্ডনের সিডনি স্ট্রিটে নিজ বাড়ির সামনে স্ব-উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করেন আফছার খান সাদেক। ২০১৪ সালে তিনি ভাস্কর্য স্থাপনের অনুমতি পান। ২০১৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভাস্কর্য উন্মুক্ত করা হয় সর্বসাধারণের জন্য। উন্মুক্ত করেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি ও বাংলাদেশ হাইকমিশনার নাজমুল কাউনাইনসহ কমিউনিটির হাজারও মানুষ।

এর পরপরই মুজিব বিরোধীরা মামলা দিয়েছিল আফছার খান সাদেকের বিরুদ্ধে। ভাস্কর্য এক মাসের মধ্যে তুলে ফেলতে হবে বলে এনফোর্সমেন্ট নোটিশ জারি করে। আফছার খান নিরুপায়। পারমিশন থাকা অবস্থায় এ অন্যায়; তিনি কী করবেন এখন। তিনি শেখ রেহানার সহযোগিতা চাইলেন, হাইকমিশনের সহযোগিতা চাইলেন; সহযোগিতা পেলেনও। কোন কথাই তারা শুনলো না। শেষমেশ আপিল করলেন উচ্চ আদালতে। উচ্চ আদালত রায় দিলেনÑ এটা লোফুল আইনানুগ ডেভেলপমেন্ট। এ ভাস্কর্য আইনকানুন মেনেই হয়েছে, এটা থাকবে আজীবন। রায় আসে ২০১৭ সালের জুন মাসে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ঘিরে সিসিটিভি আছে। ইংল্যান্ডের টুরিস্ট গাইড ব্লুবেইজ হেরিজেকসনে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।

আফছার খান সাদেক মুজিব পাগল। তিনি বলেছেন, লন্ডনে যে বাড়িতে তিনি থাকেন সেটা বঙ্গবন্ধু হাউস হবে। হয়তো করোনার জন্য হচ্ছে না, তবে অচিরেই হবে। আফছার খান সাদেক আমাদের ইতিহাসের অংশীদার করছেন, আমার জীবদ্দশায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য লন্ডনে দেখতে পেলামÑ এর চেয়ে বড় পাওয়া কী আছে।

আর যে দেশের জন্য বঙ্গবন্ধু সপরিবারে প্রাণ দিলেন সেই দেশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয়- এর চাইতে দুঃখের কী আছে।

[লেখক : সাংবাদিক]

বৃহস্পতিবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২১ মাঘ ১৪২৭, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪২

লন্ডনে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য : নেপথ্য কারিগরের কথা

আকাশ চৌধুরী

image

দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাংচুর হয়েছে। মৌলবাদীদের অপতৎপরতা অব্যাহত আছে। তবু থেমে নেই ভাস্কর্য নির্মাণ। বিশেষ করে মুজিববর্ষ উপলক্ষে এ স্থাপন কাজের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো- যে ব্যক্তিটির জন্য আমরা একটা স্বাধীন দেশে বসবাস করতে পারছি, যার জন্য আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারছি, সেই মহান নেতার ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা মৌলবাদী গোষ্ঠী কী করে পায়!

আমরা প্রায়ই লক্ষ্য করি এখনো এই বাংলার তরুণরা এ দেশের প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে তেমন অবগত নয়। যদিও এ লক্ষ্যে সরকার অনেক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু মানেই লাল-সবুজ পতাকা- এটা এখন শুধু আমাদের দেশেই নয়; ছেয়ে গেছে গোটা বিশ্বে। আর আজকে যে ভাস্কর্য স্থাপন বা নির্মাণ নিয়ে এতো হইচই- এ ষড়যন্ত্র কি শুধু দেশেই? না, এ গোষ্ঠীটি পৃথিবীর যেখানে রয়েছে সেখানেই তাদের অবস্থান থেকে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। যেটা হয়েছিল যুক্তরাজ্যের লন্ডনে। বাংলাদেশ হাইকমিশন যেখানে এটা স্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে ব্যক্তি উদ্যোগে আফছার খান সাদেক নামের এক আওয়ামী লীগ নেতা তা করে দেখিয়ে দিয়েছেন কতটুকু তিনি মুজিবপ্রেমী।

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিষয়টি আজ থেকে বারো বছর আগে অর্থাৎ ২০০৯ সালে তার মাথায় আসে। তখনও মৌলবাদী গোষ্ঠী তাতে নানাভাবে বাধার সৃষ্টি করে। এ বিষয়ে মামলাও হয়। সব ঝড়-ঝাপটা ডিঙিয়ে আফছার খান সাদেক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি স্থাপন করতে সক্ষম হন। আজ পৃথিবীর সব পর্যটক ভাস্কর্যটির সামনে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। জানতে পারছেন বাংলাদেশ নামের একটি দেশ ও জাতির পিতা সম্পর্কে।

ইস্ট লন্ডনে বসবাসকারী লন্ডন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা আফছার খান সাদেক ২০০৯ সাল থেকে একক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন জাতির পিতার ভাস্কর্য স্থাপনের অনুমোদনের জন্য। পূর্ব লন্ডনের সিডনি স্ট্রিটে নিজ বাড়ির সামনে স্ব-উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করেন আফছার খান সাদেক। ২০১৪ সালে তিনি ভাস্কর্য স্থাপনের অনুমতি পান। ২০১৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর ভাস্কর্য উন্মুক্ত করা হয় সর্বসাধারণের জন্য। উন্মুক্ত করেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি ও বাংলাদেশ হাইকমিশনার নাজমুল কাউনাইনসহ কমিউনিটির হাজারও মানুষ।

এর পরপরই মুজিব বিরোধীরা মামলা দিয়েছিল আফছার খান সাদেকের বিরুদ্ধে। ভাস্কর্য এক মাসের মধ্যে তুলে ফেলতে হবে বলে এনফোর্সমেন্ট নোটিশ জারি করে। আফছার খান নিরুপায়। পারমিশন থাকা অবস্থায় এ অন্যায়; তিনি কী করবেন এখন। তিনি শেখ রেহানার সহযোগিতা চাইলেন, হাইকমিশনের সহযোগিতা চাইলেন; সহযোগিতা পেলেনও। কোন কথাই তারা শুনলো না। শেষমেশ আপিল করলেন উচ্চ আদালতে। উচ্চ আদালত রায় দিলেনÑ এটা লোফুল আইনানুগ ডেভেলপমেন্ট। এ ভাস্কর্য আইনকানুন মেনেই হয়েছে, এটা থাকবে আজীবন। রায় আসে ২০১৭ সালের জুন মাসে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ঘিরে সিসিটিভি আছে। ইংল্যান্ডের টুরিস্ট গাইড ব্লুবেইজ হেরিজেকসনে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।

আফছার খান সাদেক মুজিব পাগল। তিনি বলেছেন, লন্ডনে যে বাড়িতে তিনি থাকেন সেটা বঙ্গবন্ধু হাউস হবে। হয়তো করোনার জন্য হচ্ছে না, তবে অচিরেই হবে। আফছার খান সাদেক আমাদের ইতিহাসের অংশীদার করছেন, আমার জীবদ্দশায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য লন্ডনে দেখতে পেলামÑ এর চেয়ে বড় পাওয়া কী আছে।

আর যে দেশের জন্য বঙ্গবন্ধু সপরিবারে প্রাণ দিলেন সেই দেশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয়- এর চাইতে দুঃখের কী আছে।

[লেখক : সাংবাদিক]