টিকাদানের পরিকল্পনায় বদল

নিবন্ধনে ধীরগতি, সিরিঞ্জ সংকট

এবার টিকাদানের নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। প্রথমে ঘোষণা দেয়া হয়, প্রতিমাসে ৬০ লাখ মানুষ টিকা পাবেন, গতকাল বলা হয় মাসে ৩৫ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হবে। প্রথম ডোজ দেয়ার আট সপ্তাহ অর্থাৎ দুইমাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, এখন চার সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক পরিচালক সংবাদকে জানিয়েছেন।

নিবন্ধনে ধীরগতি, সিরিঞ্জ সংকট এবং টিকার ‘সাপ্লাই চেইন’ রক্ষায় করোনার টিকাদান পরিকল্পনায় বারবার পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা। তারা বলেন, খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে আরও কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা যেমন চিন্তা করেছিলাম, তেমন নিবন্ধন হচ্ছে না, বাট নট ব্যাড। আমাদের অফিসগুলো, ব্যাংক, পুলিশ, আনসার, আর্মি এখনও নিবন্ধন করেনি। তারা করলে আশা করছি হয়ে যাবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ভারতের উপহার হিসেবে পাঠানো ২০ লাখ এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মাধ্যমে আনা ৫০ লাখ ডোজের একটি অংশের টিকার মেয়াদ আগামী ১৬ এপ্রিল শেষ হবে। এসব টিকা দীর্ঘসময় অব্যবহৃত রাখা যাবে না। এ কারণে দ্বিতীয় ডোজের মেয়াদ আপাতত এগিয়ে এক মাস করা হয়েছে, পরবর্তীতে দ্বিতীয় ডোজের সময় পিছিয়ে নেয়া হবে।’

চার সপ্তাহ পরই দ্বিতীয় ডোজ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম গতকাল সাংবাদিকদের আরও জানান, ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রথম ডোজ দেয়ার চার থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যায়। এ জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে, ৩৫ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ দেয়ার পর দ্রুত দ্বিতীয় ডোজ দিয়ে দেয়া হবে।’

দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার সময় কমিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে কী না- জানতে চাইলে সরকারের করোনা টিকা ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কোর কমিটির সদস্য এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএমএম আলমগীর সংবাদকে বলেন, ‘এ বিষয়ে চেষ্টা চলছে। এই টিকার প্রথম ডোজ নেয়ার চার থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নেয়া যায়। এজন্য আমরা আট সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম। এখন চার সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার চেষ্টা চলছে।’

ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, ‘৭০ লাখ টিকার অর্ধেক দিয়ে বাকি অর্ধেক রেখে এক মাস পর দেব। এতে অন্তত ৩৫ লাখ লোককে আমরা কমপ্লিট ভ্যাকসিনেশনে আনব। একটা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে আমরা সুরক্ষিত করে দিই। প্রথম ডোজ দিলাম, কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ যদি পেতে দেরি হয়, তাহলে পুরো বিষয়টি নষ্ট হয়ে যাবে। এরমধ্যে যদি আমাদের দ্বিতীয় লট চলে আসে, তাহলে আগের পরিকল্পনায় চলে যাব।’

প্রথম মাসে দেয়া হবে ৩৫ লাখ ডোজ :

৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী টিকাদান শুরু করে প্রথম মাসে ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল। এখন তার বদলে সরকার ফেব্রুয়ারিতে ৩৫ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘গতকাল (৩ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে টিকা বিতরণ সম্পর্কিত একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠক থেকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানোর পর পরিকল্পনায় এ পরিবর্তন আনা হয়েছে।’

পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক সরবরাহ পরিস্থিতিও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা চিন্তা করেছি, যদি কোন কারণে সাপ্লাই চেইন অব্যাহত রাখতে না পারি, তাহলে টোটাল ব্যবস্থাপনা ভেস্তে যাবে। সেজন্য আমরা হাতে থাকা টিকা অর্ধেক করে পুরোপুরি কমপ্লিট ডোজ দেয়ার ব্যবস্থা করছি।’

দেশে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকা দেয়া হচ্ছে। প্রত্যেককে এই টিকার দুটি ডোজ দিতে হবে। ইতোমধ্যে চুক্তির আওতায় কেনা ৫০ লাখ ডোজ এবং ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পাঠানো ২০ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসেছে। এখন সরকারের কাছে মোট ৭০ লাখ ডোজ টিকা আছে। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে আগামী জুনের মধ্যে বাকি আড়াই কোটি ডোজ টিকা দেশে পাঠাবে সেরাম ইনস্টিটিউট।

চলতি বছরের প্রথমার্ধে ‘কোভ্যাক্স’ থেকে আরও সোয়া এক কোটি ডোজ করোনার টিকা পেতে পারে বাংলাদেশ। সেটাও সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা হবে বলে জানিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা নেতৃত্বাধীন ‘কোভ্যাক্স’ প্ল্যাটফর্ম জানিয়েছে।

টিকা পাওয়া নিয়ে কোন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘টিকা নিয়ে সারাবিশ্বে অত্যন্ত ক্রুশিয়াল পলিটিক্স চলছে। ইউরোপের কয়েকটি দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সবারই টিকা দরকার। দেশের চাহিদা যদি না মেটাতে পারে, তাহলে সরকার তো অনুমতি দেবে না রপ্তানির। যদিও বেক্সিমকো আমাদের এখনও পর্যন্ত বলছে সঠিক সময়েই তারা টিকা দেবে। তারপরও আমরা সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করছি।’

টিকাদানের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন :

এবিএম খুরশীদ আলম জানিয়েছেন, প্রতি মাসে তিন কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার সক্ষমতা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত ১৯ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকা সংক্রান্ত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান, দেশব্যাপী প্রতিদিন দুই লাখ মানুষকে করোনার টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। মোট সাত হাজার ৩৪৪টি হাসপাতাল কেন্দ্রে করোনার টিকা দেয়া হবে।

প্রথম পর্যায়ে টিকা কর্মসূচি ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। এই পর্যায়ে ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও গতকাল তা ৩৫ হাজার নির্ধারণ করা হয়।

সরকারের টিকাদান পরিকল্পনায় কোনো সীমাবদ্ধতা ছিল কিনা- জানতে চাইলে ‘বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের’ (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব সংবাদকে বলেন, ‘বাস্তবমুখী পরিকল্পনা করতে হবে। তারা যেভাবে পরিকল্পনা সাজিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে প্রতিদিন দুই লাখ লোককে ভ্যাক্সিনেশনের সক্ষমতা নেই, দৈনিক দুই লাখ লোককে ভ্যাকসিন দেয়ার প্রয়োজনও নেই; এতো ভ্যাকসিন পাওয়াও যায়নি। আবার মানুষের মধ্যেও সাড়া নেই।’

ডা. রশিদ-ই মাহবুব আরও বলেন, ‘আমাদের ভ্যাক্সিনেশনের যে প্রোগ্রাম (টিকাদান কর্মসূচি বা ইপিআই) ছিল, প্রত্যেকটি বাড়ি ম্যাপিং করা আছে, কোন বাড়িতে কতজন লোক আছে, পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী আছে, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মী আছে তাদের দিয়ে এটা করা যেত। কিন্তু সেভাবে করা হয়নি। এখন দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে যে পরিমাণ ভ্যাকসিন আছে, সেগুলোই প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। এ কারণে লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে।’

ভারতে দৈনিক ২ লাখ মানুষকে টিকাদান

গত ১৬ জানুয়ারি ভারতে করোনার টিকাদান শুরু হয়। দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ছয়দিনে ১০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হয়। ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৮ দিনে প্রায় ৪০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি ভারতে একদিনে সর্বোচ্চ তিন লাখ ১০ হাজার ৬৩৪ জনকে টিকা দেয়া হয়। এই ১৯ দিনে ভারতে তালিকাভুক্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের ৪৭ শতাংশকে টিকা দেয়া সম্ভব হয়েছে। ভারতে টিকা দেয়ার জন্য সরকারি এবং বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৯২ লাখ ৬১ হাজার ২২৭ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল।

মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মী এবং প্রথম সারির করোনা যোদ্ধা মিলিয়ে প্রায় তিন কোটি মানুষকে করোনা টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে ভারত সরকার।

ইনজেকশন দেয়ার সিরিঞ্জ সংকট

করোনার টিকা দেয়ার জন্য ‘ডিস্পোজেবল সিরিঞ্জ’ সংকটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও সিরিঞ্জ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে জানা গেছে, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ সিরিঞ্জ উৎপাদন হচ্ছে। এখনও প্রচুর সিরিঞ্জ মজুদ আছে।

সিরিঞ্জ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জেএমআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রাজ্জাক সংবাদকে জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আগামী জুনের মধ্যে তাদের কাছে ১০ কোটি পিস সিরিঞ্জ চেয়েছে। করোনার টিকাসহ অন্যান্য প্রয়োজনে তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে গত এক সপ্তাহে এক কোটি ১৬ লাখ সিরিঞ্জ সরবরাহ করেছে। সিরিঞ্জের উৎপাদনও বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রতিটি সিরিঞ্জের মূল্য ভ্যাট ও ট্যাকক্সসহ ৫ টাকা ৫০ পয়সার মতো। তিনি আরও জানান, তার প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন ২ মিলিয়ন সিরিঞ্জ উৎপাদন করার ক্ষমতা আছে। ফলে তার মতে দেশে সিরিঞ্জের সংকট বা অভাব হওয়ার প্রশ্নই উঠে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৭ জানুয়ারি টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। ওইদিনই ‘সুরক্ষা’ ‘ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টিকার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। ইতোমধ্যে সব জেলায় টিকাও পাঠানো হয়েছে। উদ্বোধনের পরই টিকার নিবন্ধনের জন্য সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন (www.surokkha.gov.bd) সীমিত আকারে উন্মুক্ত করা হয়।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশে এখন পর্যন্ত দেড় লাখ মানুষ করোনার টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন। প্রথম দিকে নিবন্ধনের সংখ্যা কম থাকলেও এখন বেড়েছে।’

মন্ত্রী জানান, রাজধানীর ৪৩টি হাসপাতালে ৩৫৪টি বুথে টিকা কার্যক্রম চলবে। মন্ত্রীদের জন্য শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে টিকা নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা চাইলে সেখানে নিতে পারবেন অথবা নিজ নির্বাচনী এলাকাতে টিকা নিতে পারবেন।

মন্ত্রী-এমপিদের ভ্যাকসিন গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যদের (এমপি) টিকা দেয়ার জন্য মহাখালীর শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালকে নির্ধারণ করা হয়েছে।

মন্ত্রী গতকাল ঢাকার জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিভাগ বিভিন্ন শ্রেণীর জন্য বিভিন্ন হাসপাতাল ঠিক করে দিয়েছে। যারা কোর্টের লোকজন, তারা যেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) টিকা দিতে পারেন। আবার সচিবরা আছেন, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আছেন সেটাও ভাগ করে দেয়া আছে।’

কোভ্যাক্স থেকে ১ কোটি ২৭ লাখ ভ্যাকসিন পাবে বাংলাদেশ

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স গাভি পরিচালিত কোভ্যাক্স কর্মসূচি থেকে বাংলাদেশ ১ কোটি ২৭ লাখ ৯২ হাজার ভ্যাকসিন পাবে। গতকাল কোভ্যাক্স’র প্রথম অন্তর্বর্তী বিতরণ পূর্বাভাস প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

কোভ্যাক্সের ২০২১ সালের বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক সরবরাহ পূর্বাভাস ও অন্তর্বর্তী বিতরণ পূর্বাভাসের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রাথমিকভাবে ফাইজার/বায়োএনটেক ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা/অক্সফোর্ড থেকে যে সংখ্যক ভ্যাকসিন কোভ্যাক্স কর্মসূচিতে দেয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছিল সেই তথ্য এখানে যুক্ত করা হয়েছে।

সংস্থাটির ওয়েবসাইট মতে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ডব্লিউএইচও ইইউএল এখনও অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন ওয়ান অনুমোদন দেয়নি। যদিও বর্তমানে এর মূল্যায়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

প্রক্রিয়াধীন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও বর্তমানে সরবরাহের ধারণার ওপর ভিত্তি করে কোভ্যাক্স ২০২১ সালের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রন্তিকে এর অংশীদারদের জন্য একটি সম্ভাব্য সরবরাহ তালিকা তৈরি করেছে।

কোভ্যাক্স কর্মসূচির সব অংশীদারদের সম্মতিক্রমে ও প্রক্রিয়া মেনে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত বরাদ্দ নির্দিষ্ট করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।

শুক্রবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২২ মাঘ ১৪২৭, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪২

টিকাদানের পরিকল্পনায় বদল

নিবন্ধনে ধীরগতি, সিরিঞ্জ সংকট

রাকিব উদ্দিন

image

এবার টিকাদানের নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। প্রথমে ঘোষণা দেয়া হয়, প্রতিমাসে ৬০ লাখ মানুষ টিকা পাবেন, গতকাল বলা হয় মাসে ৩৫ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হবে। প্রথম ডোজ দেয়ার আট সপ্তাহ অর্থাৎ দুইমাস পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল, এখন চার সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক পরিচালক সংবাদকে জানিয়েছেন।

নিবন্ধনে ধীরগতি, সিরিঞ্জ সংকট এবং টিকার ‘সাপ্লাই চেইন’ রক্ষায় করোনার টিকাদান পরিকল্পনায় বারবার পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা। তারা বলেন, খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে আরও কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা যেমন চিন্তা করেছিলাম, তেমন নিবন্ধন হচ্ছে না, বাট নট ব্যাড। আমাদের অফিসগুলো, ব্যাংক, পুলিশ, আনসার, আর্মি এখনও নিবন্ধন করেনি। তারা করলে আশা করছি হয়ে যাবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ভারতের উপহার হিসেবে পাঠানো ২০ লাখ এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মাধ্যমে আনা ৫০ লাখ ডোজের একটি অংশের টিকার মেয়াদ আগামী ১৬ এপ্রিল শেষ হবে। এসব টিকা দীর্ঘসময় অব্যবহৃত রাখা যাবে না। এ কারণে দ্বিতীয় ডোজের মেয়াদ আপাতত এগিয়ে এক মাস করা হয়েছে, পরবর্তীতে দ্বিতীয় ডোজের সময় পিছিয়ে নেয়া হবে।’

চার সপ্তাহ পরই দ্বিতীয় ডোজ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম গতকাল সাংবাদিকদের আরও জানান, ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রথম ডোজ দেয়ার চার থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যায়। এ জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে, ৩৫ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ দেয়ার পর দ্রুত দ্বিতীয় ডোজ দিয়ে দেয়া হবে।’

দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার সময় কমিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে কী না- জানতে চাইলে সরকারের করোনা টিকা ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কোর কমিটির সদস্য এবং রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএমএম আলমগীর সংবাদকে বলেন, ‘এ বিষয়ে চেষ্টা চলছে। এই টিকার প্রথম ডোজ নেয়ার চার থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ নেয়া যায়। এজন্য আমরা আট সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম। এখন চার সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার চেষ্টা চলছে।’

ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, ‘৭০ লাখ টিকার অর্ধেক দিয়ে বাকি অর্ধেক রেখে এক মাস পর দেব। এতে অন্তত ৩৫ লাখ লোককে আমরা কমপ্লিট ভ্যাকসিনেশনে আনব। একটা নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে আমরা সুরক্ষিত করে দিই। প্রথম ডোজ দিলাম, কিন্তু দ্বিতীয় ডোজ যদি পেতে দেরি হয়, তাহলে পুরো বিষয়টি নষ্ট হয়ে যাবে। এরমধ্যে যদি আমাদের দ্বিতীয় লট চলে আসে, তাহলে আগের পরিকল্পনায় চলে যাব।’

প্রথম মাসে দেয়া হবে ৩৫ লাখ ডোজ :

৭ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী টিকাদান শুরু করে প্রথম মাসে ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল। এখন তার বদলে সরকার ফেব্রুয়ারিতে ৩৫ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘গতকাল (৩ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে টিকা বিতরণ সম্পর্কিত একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠক থেকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানোর পর পরিকল্পনায় এ পরিবর্তন আনা হয়েছে।’

পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক সরবরাহ পরিস্থিতিও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা চিন্তা করেছি, যদি কোন কারণে সাপ্লাই চেইন অব্যাহত রাখতে না পারি, তাহলে টোটাল ব্যবস্থাপনা ভেস্তে যাবে। সেজন্য আমরা হাতে থাকা টিকা অর্ধেক করে পুরোপুরি কমপ্লিট ডোজ দেয়ার ব্যবস্থা করছি।’

দেশে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকা দেয়া হচ্ছে। প্রত্যেককে এই টিকার দুটি ডোজ দিতে হবে। ইতোমধ্যে চুক্তির আওতায় কেনা ৫০ লাখ ডোজ এবং ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পাঠানো ২০ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসেছে। এখন সরকারের কাছে মোট ৭০ লাখ ডোজ টিকা আছে। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে আগামী জুনের মধ্যে বাকি আড়াই কোটি ডোজ টিকা দেশে পাঠাবে সেরাম ইনস্টিটিউট।

চলতি বছরের প্রথমার্ধে ‘কোভ্যাক্স’ থেকে আরও সোয়া এক কোটি ডোজ করোনার টিকা পেতে পারে বাংলাদেশ। সেটাও সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা হবে বলে জানিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা নেতৃত্বাধীন ‘কোভ্যাক্স’ প্ল্যাটফর্ম জানিয়েছে।

টিকা পাওয়া নিয়ে কোন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘টিকা নিয়ে সারাবিশ্বে অত্যন্ত ক্রুশিয়াল পলিটিক্স চলছে। ইউরোপের কয়েকটি দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সবারই টিকা দরকার। দেশের চাহিদা যদি না মেটাতে পারে, তাহলে সরকার তো অনুমতি দেবে না রপ্তানির। যদিও বেক্সিমকো আমাদের এখনও পর্যন্ত বলছে সঠিক সময়েই তারা টিকা দেবে। তারপরও আমরা সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করছি।’

টিকাদানের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন :

এবিএম খুরশীদ আলম জানিয়েছেন, প্রতি মাসে তিন কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার সক্ষমতা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত ১৯ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকা সংক্রান্ত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান, দেশব্যাপী প্রতিদিন দুই লাখ মানুষকে করোনার টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। মোট সাত হাজার ৩৪৪টি হাসপাতাল কেন্দ্রে করোনার টিকা দেয়া হবে।

প্রথম পর্যায়ে টিকা কর্মসূচি ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। এই পর্যায়ে ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও গতকাল তা ৩৫ হাজার নির্ধারণ করা হয়।

সরকারের টিকাদান পরিকল্পনায় কোনো সীমাবদ্ধতা ছিল কিনা- জানতে চাইলে ‘বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের’ (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই মাহবুব সংবাদকে বলেন, ‘বাস্তবমুখী পরিকল্পনা করতে হবে। তারা যেভাবে পরিকল্পনা সাজিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে প্রতিদিন দুই লাখ লোককে ভ্যাক্সিনেশনের সক্ষমতা নেই, দৈনিক দুই লাখ লোককে ভ্যাকসিন দেয়ার প্রয়োজনও নেই; এতো ভ্যাকসিন পাওয়াও যায়নি। আবার মানুষের মধ্যেও সাড়া নেই।’

ডা. রশিদ-ই মাহবুব আরও বলেন, ‘আমাদের ভ্যাক্সিনেশনের যে প্রোগ্রাম (টিকাদান কর্মসূচি বা ইপিআই) ছিল, প্রত্যেকটি বাড়ি ম্যাপিং করা আছে, কোন বাড়িতে কতজন লোক আছে, পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী আছে, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মী আছে তাদের দিয়ে এটা করা যেত। কিন্তু সেভাবে করা হয়নি। এখন দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে যে পরিমাণ ভ্যাকসিন আছে, সেগুলোই প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। এ কারণে লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে।’

ভারতে দৈনিক ২ লাখ মানুষকে টিকাদান

গত ১৬ জানুয়ারি ভারতে করোনার টিকাদান শুরু হয়। দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম ছয়দিনে ১০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হয়। ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৮ দিনে প্রায় ৪০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি ভারতে একদিনে সর্বোচ্চ তিন লাখ ১০ হাজার ৬৩৪ জনকে টিকা দেয়া হয়। এই ১৯ দিনে ভারতে তালিকাভুক্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের ৪৭ শতাংশকে টিকা দেয়া সম্ভব হয়েছে। ভারতে টিকা দেয়ার জন্য সরকারি এবং বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৯২ লাখ ৬১ হাজার ২২৭ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল।

মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মী এবং প্রথম সারির করোনা যোদ্ধা মিলিয়ে প্রায় তিন কোটি মানুষকে করোনা টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে ভারত সরকার।

ইনজেকশন দেয়ার সিরিঞ্জ সংকট

করোনার টিকা দেয়ার জন্য ‘ডিস্পোজেবল সিরিঞ্জ’ সংকটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও সিরিঞ্জ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে জানা গেছে, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ সিরিঞ্জ উৎপাদন হচ্ছে। এখনও প্রচুর সিরিঞ্জ মজুদ আছে।

সিরিঞ্জ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জেএমআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রাজ্জাক সংবাদকে জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আগামী জুনের মধ্যে তাদের কাছে ১০ কোটি পিস সিরিঞ্জ চেয়েছে। করোনার টিকাসহ অন্যান্য প্রয়োজনে তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে গত এক সপ্তাহে এক কোটি ১৬ লাখ সিরিঞ্জ সরবরাহ করেছে। সিরিঞ্জের উৎপাদনও বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রতিটি সিরিঞ্জের মূল্য ভ্যাট ও ট্যাকক্সসহ ৫ টাকা ৫০ পয়সার মতো। তিনি আরও জানান, তার প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন ২ মিলিয়ন সিরিঞ্জ উৎপাদন করার ক্ষমতা আছে। ফলে তার মতে দেশে সিরিঞ্জের সংকট বা অভাব হওয়ার প্রশ্নই উঠে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৭ জানুয়ারি টিকাদান কর্মসূচি উদ্বোধন করেন। ওইদিনই ‘সুরক্ষা’ ‘ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টিকার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। ইতোমধ্যে সব জেলায় টিকাও পাঠানো হয়েছে। উদ্বোধনের পরই টিকার নিবন্ধনের জন্য সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন (www.surokkha.gov.bd) সীমিত আকারে উন্মুক্ত করা হয়।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশে এখন পর্যন্ত দেড় লাখ মানুষ করোনার টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন। প্রথম দিকে নিবন্ধনের সংখ্যা কম থাকলেও এখন বেড়েছে।’

মন্ত্রী জানান, রাজধানীর ৪৩টি হাসপাতালে ৩৫৪টি বুথে টিকা কার্যক্রম চলবে। মন্ত্রীদের জন্য শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে টিকা নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারা চাইলে সেখানে নিতে পারবেন অথবা নিজ নির্বাচনী এলাকাতে টিকা নিতে পারবেন।

মন্ত্রী-এমপিদের ভ্যাকসিন গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যদের (এমপি) টিকা দেয়ার জন্য মহাখালীর শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালকে নির্ধারণ করা হয়েছে।

মন্ত্রী গতকাল ঢাকার জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিভাগ বিভিন্ন শ্রেণীর জন্য বিভিন্ন হাসপাতাল ঠিক করে দিয়েছে। যারা কোর্টের লোকজন, তারা যেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) টিকা দিতে পারেন। আবার সচিবরা আছেন, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আছেন সেটাও ভাগ করে দেয়া আছে।’

কোভ্যাক্স থেকে ১ কোটি ২৭ লাখ ভ্যাকসিন পাবে বাংলাদেশ

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স গাভি পরিচালিত কোভ্যাক্স কর্মসূচি থেকে বাংলাদেশ ১ কোটি ২৭ লাখ ৯২ হাজার ভ্যাকসিন পাবে। গতকাল কোভ্যাক্স’র প্রথম অন্তর্বর্তী বিতরণ পূর্বাভাস প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

কোভ্যাক্সের ২০২১ সালের বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক সরবরাহ পূর্বাভাস ও অন্তর্বর্তী বিতরণ পূর্বাভাসের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রাথমিকভাবে ফাইজার/বায়োএনটেক ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা/অক্সফোর্ড থেকে যে সংখ্যক ভ্যাকসিন কোভ্যাক্স কর্মসূচিতে দেয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছিল সেই তথ্য এখানে যুক্ত করা হয়েছে।

সংস্থাটির ওয়েবসাইট মতে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ডব্লিউএইচও ইইউএল এখনও অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন ওয়ান অনুমোদন দেয়নি। যদিও বর্তমানে এর মূল্যায়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

প্রক্রিয়াধীন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও বর্তমানে সরবরাহের ধারণার ওপর ভিত্তি করে কোভ্যাক্স ২০২১ সালের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রন্তিকে এর অংশীদারদের জন্য একটি সম্ভাব্য সরবরাহ তালিকা তৈরি করেছে।

কোভ্যাক্স কর্মসূচির সব অংশীদারদের সম্মতিক্রমে ও প্রক্রিয়া মেনে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত বরাদ্দ নির্দিষ্ট করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।