বন্ধুর সঙ্গে বেরিয়ে অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়া শিক্ষার্থীর বন্ধু মর্তুজা রায়হান চৌধুরী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মারা যাওয়া ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে রায়হানের সম্পর্ক ছিল বলে তিনি স্বীকার করেছেন। এর আগে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া মর্তুজা চৌধুরীকে গত শুক্রবার আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। গতকাল নুহাদ আলম তাফসিরকে পুলিশ আদালতে হাজির করে। আদালত তাফসিরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি আবদুল লতিফ বলেন, ওই শিক্ষার্থীর বন্ধু মর্তুজা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সার্বিক পরিস্থিতি, ভিডিও ফুটেজ ও অন্যান্য সাক্ষপ্রমাণ যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। জবানবন্দিতে তিনি ওই তরুণীর সঙ্গে একবার শারীরিক সম্পর্ক হওয়ার কথা স্বীকার করেন। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বন্ধুত্বের সম্পর্ক ধরে তাদের মধ্যে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে। তবে তাদের বন্ধু তাফসিরের সঙ্গে মদপান বা অন্যান্য ঘটনার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে তাকে আদালত কারাগারে রাখার নির্দেশ দেন।
আদালত সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন, ইউল্যাবে একই বিভাগে পড়াশুনা করার কারণে মর্তুজার সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। গত ২৮ জানুয়ারি বিকেলে দেখা করার পরিকল্পনা করেছিলেন। এদিন বিকেলে তারা হাতিরপুলের মোতালিব প্লাজার সামনে একত্রিত হন। সেখানে তাদের সঙ্গে দেখা হয় তাদের বন্ধু আরাফাতের। সেখানে আরাফাত তাদের গুলশানে একটি রেস্টুরেন্টে দাওয়াত আছে বলে নিমন্ত্রণ দেন। গুলশানে যাওয়ার পর আরাফত তাদের জানান, রেস্টুরেন্টের লোকেশন একটু বদল হয়েছে। উত্তরায় ৩ নম্বর সেক্টরে ব্যাম্বু স্যুট রেস্টুরেন্টে তারা মিলিত হবেন। সন্ধ্যার আগে তারা ব্যাম্বু স্যুট রেস্টুরেন্টে মিলিত হন।
সেখানে তাদের সঙ্গে যোগ দেন বন্ধু ফারজানা জামান নেহা ও সাফায়েত জামিল। রেস্টুরেন্টে তারা ৫ জন একত্রিত হয়ে মদপান করেন। মদ সরবরাহ করে সাফায়েত জামিল। একপর্যায়ে নেহা অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং রেস্টুরেন্টের টয়লেটে গিয়ে বমি করে। তখন নেহা ও সাফায়েত চলে যায়। রেস্টুরেন্টে আরাফাত, রায়হান ও ওই তরুণী মদপান করেন। একপর্যায়ে ওই তরুণী টয়লেটে গিয়ে বমি করে। সেই অবস্থা দেখে মর্তুজা ও আরাফাত ওই তরুণীকে নিয়ে একসঙ্গে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে একটি উবার নেয়। উবারে ওই তরুণী ও রায়হানকে গুলশান-২ এ নামিয়ে দেয় আরাফাত।
গুলশান-২ এ নেমে ওই তরুণী বলে, সে বাসায় যাবে না, তাকে তার বান্ধবী তাফসিরের বাসায় নিয়ে যেতে। তখন তারা দু’জন মিলে মোহাম্মদপুর হোমস লিমিটেডের ৯ নম্বর বিল্ডিংয়ের বাসায় যায়। সেই বাসায় তাফসির তার মা’র সঙ্গে থাকত। তবে সেদিন তাফসির একা ছিল। ২৮ তারিখ রাতে তারা তাফসিরের বাসায় ঢুকে। এর পরপরই ওই তরুণী বমি করে। সেই বমি পরিষ্কার করে তাফসির ও রায়হান। এরপর মর্তুজা ও তরুণীকে এক রুমে রেখে অন্য রুমে চলে যায় তাফসির। রাতে মর্তুজা ওই তরুণীর সঙ্গে একবার শারীরিক সম্পর্ক হয়। এর পরদিন ভোরে তরুণীকে ওই বাসায় রেখে তিনি তার পিসি কালচার হাউজিং এলাকার ৯, প্রবাল হাউজিংয়ের ৫ম তলায় তাদের নিজেদের ফ্ল্যাটে চলে যায়। ২৯ জানুয়ারি দুপুরে তিনি তাফসিরের বাসায় এসে তরুণীর খোঁজ-খবর নিয়ে যান। ওইদিন মধ্যরাতে তরুণীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাফসিরে এক বন্ধু বাসায় যায়। ওই বন্ধু তরুণীকে প্রথমে ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা না থাকায় ৪০ মিনিট পর তাকে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে আইসিইউতে রাখা হয় তরুণীকে। তখন মর্তুজা তরুণীর বাবাকে ফোন করে এ বিষয়ে জানায়। ৩০ জানুয়ারি দুপুরে তার বাবা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন। ওইদিন রাতে তার বাবা থানায় একটি মামলা করেন। পরদিন ৩১ জানুয়ারি ওই তরুণী মারা যাওয়ার পর পুলিশ তাকে আটক করে। আটক করার পর জানতে পারেন, তাদের আরেক বন্ধু আরাফাত ২৯ জানুয়ারি মোহাম্মদপুর সিটি হাসপাতালে মারা যায়।
রবিবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৪ মাঘ ১৪২৭, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২
আদালত বার্তা পরিবেশক
বন্ধুর সঙ্গে বেরিয়ে অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়া শিক্ষার্থীর বন্ধু মর্তুজা রায়হান চৌধুরী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মারা যাওয়া ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে রায়হানের সম্পর্ক ছিল বলে তিনি স্বীকার করেছেন। এর আগে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া মর্তুজা চৌধুরীকে গত শুক্রবার আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। গতকাল নুহাদ আলম তাফসিরকে পুলিশ আদালতে হাজির করে। আদালত তাফসিরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি আবদুল লতিফ বলেন, ওই শিক্ষার্থীর বন্ধু মর্তুজা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সার্বিক পরিস্থিতি, ভিডিও ফুটেজ ও অন্যান্য সাক্ষপ্রমাণ যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। জবানবন্দিতে তিনি ওই তরুণীর সঙ্গে একবার শারীরিক সম্পর্ক হওয়ার কথা স্বীকার করেন। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বন্ধুত্বের সম্পর্ক ধরে তাদের মধ্যে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে। তবে তাদের বন্ধু তাফসিরের সঙ্গে মদপান বা অন্যান্য ঘটনার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে তাকে আদালত কারাগারে রাখার নির্দেশ দেন।
আদালত সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন, ইউল্যাবে একই বিভাগে পড়াশুনা করার কারণে মর্তুজার সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। গত ২৮ জানুয়ারি বিকেলে দেখা করার পরিকল্পনা করেছিলেন। এদিন বিকেলে তারা হাতিরপুলের মোতালিব প্লাজার সামনে একত্রিত হন। সেখানে তাদের সঙ্গে দেখা হয় তাদের বন্ধু আরাফাতের। সেখানে আরাফাত তাদের গুলশানে একটি রেস্টুরেন্টে দাওয়াত আছে বলে নিমন্ত্রণ দেন। গুলশানে যাওয়ার পর আরাফত তাদের জানান, রেস্টুরেন্টের লোকেশন একটু বদল হয়েছে। উত্তরায় ৩ নম্বর সেক্টরে ব্যাম্বু স্যুট রেস্টুরেন্টে তারা মিলিত হবেন। সন্ধ্যার আগে তারা ব্যাম্বু স্যুট রেস্টুরেন্টে মিলিত হন।
সেখানে তাদের সঙ্গে যোগ দেন বন্ধু ফারজানা জামান নেহা ও সাফায়েত জামিল। রেস্টুরেন্টে তারা ৫ জন একত্রিত হয়ে মদপান করেন। মদ সরবরাহ করে সাফায়েত জামিল। একপর্যায়ে নেহা অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং রেস্টুরেন্টের টয়লেটে গিয়ে বমি করে। তখন নেহা ও সাফায়েত চলে যায়। রেস্টুরেন্টে আরাফাত, রায়হান ও ওই তরুণী মদপান করেন। একপর্যায়ে ওই তরুণী টয়লেটে গিয়ে বমি করে। সেই অবস্থা দেখে মর্তুজা ও আরাফাত ওই তরুণীকে নিয়ে একসঙ্গে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে একটি উবার নেয়। উবারে ওই তরুণী ও রায়হানকে গুলশান-২ এ নামিয়ে দেয় আরাফাত।
গুলশান-২ এ নেমে ওই তরুণী বলে, সে বাসায় যাবে না, তাকে তার বান্ধবী তাফসিরের বাসায় নিয়ে যেতে। তখন তারা দু’জন মিলে মোহাম্মদপুর হোমস লিমিটেডের ৯ নম্বর বিল্ডিংয়ের বাসায় যায়। সেই বাসায় তাফসির তার মা’র সঙ্গে থাকত। তবে সেদিন তাফসির একা ছিল। ২৮ তারিখ রাতে তারা তাফসিরের বাসায় ঢুকে। এর পরপরই ওই তরুণী বমি করে। সেই বমি পরিষ্কার করে তাফসির ও রায়হান। এরপর মর্তুজা ও তরুণীকে এক রুমে রেখে অন্য রুমে চলে যায় তাফসির। রাতে মর্তুজা ওই তরুণীর সঙ্গে একবার শারীরিক সম্পর্ক হয়। এর পরদিন ভোরে তরুণীকে ওই বাসায় রেখে তিনি তার পিসি কালচার হাউজিং এলাকার ৯, প্রবাল হাউজিংয়ের ৫ম তলায় তাদের নিজেদের ফ্ল্যাটে চলে যায়। ২৯ জানুয়ারি দুপুরে তিনি তাফসিরের বাসায় এসে তরুণীর খোঁজ-খবর নিয়ে যান। ওইদিন মধ্যরাতে তরুণীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাফসিরে এক বন্ধু বাসায় যায়। ওই বন্ধু তরুণীকে প্রথমে ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা না থাকায় ৪০ মিনিট পর তাকে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে আইসিইউতে রাখা হয় তরুণীকে। তখন মর্তুজা তরুণীর বাবাকে ফোন করে এ বিষয়ে জানায়। ৩০ জানুয়ারি দুপুরে তার বাবা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন। ওইদিন রাতে তার বাবা থানায় একটি মামলা করেন। পরদিন ৩১ জানুয়ারি ওই তরুণী মারা যাওয়ার পর পুলিশ তাকে আটক করে। আটক করার পর জানতে পারেন, তাদের আরেক বন্ধু আরাফাত ২৯ জানুয়ারি মোহাম্মদপুর সিটি হাসপাতালে মারা যায়।