করোনার প্রভাব

হাজার কোটি টাকা লোকসানের মুখে কুয়াকাটার পর্যটন ব্যবসায়ীরা

পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট ব্যবসায়ীদের পর্যটন মৌসুমের শেষ দিকেও লোকসান গুণতে হচ্ছে। সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এই সময়টা পর্যটন খাতের ভরা মৌসুম। পর্যটন নির্ভর ব্যবসায়ীরা সারাবছর অপেক্ষায় থাকে এ সময়ের জন্য। আর এ সময়ের পুরোটা জুড়েই প্রাণঘাতী করোনার প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। অন্যান্য বছরে এই সময় কুয়াকাটার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় থাকলেও এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। যার ফলে সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটার ব্যবসায়ীদের হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে এমনটাই দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।

বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা প্রতিরোধে কুয়াকাটার আবাসিক হোটেলগুলো স্বাস্থবিধি মেনে পর্যটক রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ নানা উদ্যোগ নিলেও করোনাভাইরাসের প্রভাবে আশানুরূপ পর্যটক আসছে না। কুয়াকাটায় ছোট-বড় আবাসিক হোটেলের সংখ্যা দেড় শতাধিক। হোটেলগুলোতে ১০ হাজারেরও বেশি পর্যটক গড়ে অবস্থান করতে পারেন। কিন্তু এ বছর পুরো মৌসুমে হোটেল-মোটেলের ৮০ শতাংশ রুম সব সময় খালি ছিল। কোন কোন হোটেলে দৈনিক ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত লোকসান গুণছেন। খরচ কমাতে ছাঁটাই করা হয়েছে হোটেলের কর্মচারী। প্রতিদিনই ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।

কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট বোট মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি জনি আলমগীর বলেন, মূল সিজনেই আমাদের বিপদে পড়তে হলো। করোনার কারণে আমার ৫ লক্ষাধিক টাকা ক্ষতি হয়েছে। জমানো টাকা শেষ হয়ে গেছে। কোন রকম আমাদের দিন চলে।

সিকদার রিসোর্টের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ওসানভিউ হোটেলের অপারেশন ম্যানেজার মো. আল আমিন খান (উজ্জ্বল) বলেন, কুয়াকাটায় দিন দিন পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন অভিজাত হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে। লাভের আশা করে এসব স্থাপনা তৈরি করা হয়েছিল তাতে লাভ না হয়ে উল্টো লোকসানে পড়তে হলো প্রাণঘাতী করোনার কারণে।

আবাসিক হোটেল খান প্যালেসের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মো. রাসেল খান বলেন, ‘৩০% রুম রিজার্ভ হয় বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার। বিশেষ ছাড়েও আশানুরূপ পর্যটক পাচ্ছি না।’

ঘরোয়া রেস্তোরাঁর পরিচালক মো. কবির বলেন, ‘পর্যটক না থাকায় আমাদের প্রতিদিন লোকসান হচ্ছে। লাভের কথা বাদই দিলাম, ঘরভাড়া, কর্মচারী বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছি।’

কুয়াকাটা আচারের স্বত্বাধীকারী মো. মিরাজ বলেন, ‘পর্যটক না আসায় বেচা-কেনা ভালো হয় না। স্থানীয় পর্যটকরা তেমন একটা আচার ক্রয় করে না। যারা আসেন তারা আবার আচার কিনে না।’

মা শুঁটকি ঘরের পরিচালক মো. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘গত বছরের শুঁটকি এখনও ঘরে পড়ে আছে। পর্যটক না আশায় আমার ৬-৭ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।’

বাউফল কাঁকড়া ফ্রাইয়ের পরিচালক মো. জামাল ব্যাপারী বলেন, ‘আমাদের ব্যবসা ৬ মাসের। বাকি ৬ মাস আমরা অন্য কাজ করি। পুরো মৌসুম তো শেষ হয়ে গেল। পর্যটক না আশায় আমাদের প্রতিদিন ২/৩ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।’

কুয়াকাটা পর্যটননির্ভর ও হোটেল-মোটেল এবং রিসোর্টের ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আ. মোতালেব শরীফ। তিনি আরও বলেন, ‘লোকাল কিছু পর্যটক আসে কুয়াকাটায়। রাত্রি যাপন করে না। আবাসিক হোটেলে থাকার পর্যটকদের পরিমাণ একেবারেই কম। কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় থাকে সুন্দরবনের পূর্বাংশ ফাতরারবন, চর বিজয়। আর এসব যায়গায় যেতে স্পিডবোড আর ফাইবারের বোটে যেতে হয়। কিন্তু করোনার প্রভাবে পর্যটক না থাকায় সারাদিন ঘাটে বাঁধা থাকে এসব স্পিডবোট ও ফাইবারের বোটগুলো। খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে মালিক ও চালকদের।’

রবিবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৪ মাঘ ১৪২৭, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২

করোনার প্রভাব

হাজার কোটি টাকা লোকসানের মুখে কুয়াকাটার পর্যটন ব্যবসায়ীরা

কাজী সাঈদ, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী)

image

পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট ব্যবসায়ীদের পর্যটন মৌসুমের শেষ দিকেও লোকসান গুণতে হচ্ছে। সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এই সময়টা পর্যটন খাতের ভরা মৌসুম। পর্যটন নির্ভর ব্যবসায়ীরা সারাবছর অপেক্ষায় থাকে এ সময়ের জন্য। আর এ সময়ের পুরোটা জুড়েই প্রাণঘাতী করোনার প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। অন্যান্য বছরে এই সময় কুয়াকাটার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় থাকলেও এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। যার ফলে সাগরকন্যা খ্যাত কুয়াকাটার ব্যবসায়ীদের হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে এমনটাই দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।

বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা প্রতিরোধে কুয়াকাটার আবাসিক হোটেলগুলো স্বাস্থবিধি মেনে পর্যটক রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ নানা উদ্যোগ নিলেও করোনাভাইরাসের প্রভাবে আশানুরূপ পর্যটক আসছে না। কুয়াকাটায় ছোট-বড় আবাসিক হোটেলের সংখ্যা দেড় শতাধিক। হোটেলগুলোতে ১০ হাজারেরও বেশি পর্যটক গড়ে অবস্থান করতে পারেন। কিন্তু এ বছর পুরো মৌসুমে হোটেল-মোটেলের ৮০ শতাংশ রুম সব সময় খালি ছিল। কোন কোন হোটেলে দৈনিক ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত লোকসান গুণছেন। খরচ কমাতে ছাঁটাই করা হয়েছে হোটেলের কর্মচারী। প্রতিদিনই ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।

কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট বোট মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি জনি আলমগীর বলেন, মূল সিজনেই আমাদের বিপদে পড়তে হলো। করোনার কারণে আমার ৫ লক্ষাধিক টাকা ক্ষতি হয়েছে। জমানো টাকা শেষ হয়ে গেছে। কোন রকম আমাদের দিন চলে।

সিকদার রিসোর্টের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ওসানভিউ হোটেলের অপারেশন ম্যানেজার মো. আল আমিন খান (উজ্জ্বল) বলেন, কুয়াকাটায় দিন দিন পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন অভিজাত হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে। লাভের আশা করে এসব স্থাপনা তৈরি করা হয়েছিল তাতে লাভ না হয়ে উল্টো লোকসানে পড়তে হলো প্রাণঘাতী করোনার কারণে।

আবাসিক হোটেল খান প্যালেসের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মো. রাসেল খান বলেন, ‘৩০% রুম রিজার্ভ হয় বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার। বিশেষ ছাড়েও আশানুরূপ পর্যটক পাচ্ছি না।’

ঘরোয়া রেস্তোরাঁর পরিচালক মো. কবির বলেন, ‘পর্যটক না থাকায় আমাদের প্রতিদিন লোকসান হচ্ছে। লাভের কথা বাদই দিলাম, ঘরভাড়া, কর্মচারী বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছি।’

কুয়াকাটা আচারের স্বত্বাধীকারী মো. মিরাজ বলেন, ‘পর্যটক না আসায় বেচা-কেনা ভালো হয় না। স্থানীয় পর্যটকরা তেমন একটা আচার ক্রয় করে না। যারা আসেন তারা আবার আচার কিনে না।’

মা শুঁটকি ঘরের পরিচালক মো. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘গত বছরের শুঁটকি এখনও ঘরে পড়ে আছে। পর্যটক না আশায় আমার ৬-৭ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।’

বাউফল কাঁকড়া ফ্রাইয়ের পরিচালক মো. জামাল ব্যাপারী বলেন, ‘আমাদের ব্যবসা ৬ মাসের। বাকি ৬ মাস আমরা অন্য কাজ করি। পুরো মৌসুম তো শেষ হয়ে গেল। পর্যটক না আশায় আমাদের প্রতিদিন ২/৩ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।’

কুয়াকাটা পর্যটননির্ভর ও হোটেল-মোটেল এবং রিসোর্টের ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আ. মোতালেব শরীফ। তিনি আরও বলেন, ‘লোকাল কিছু পর্যটক আসে কুয়াকাটায়। রাত্রি যাপন করে না। আবাসিক হোটেলে থাকার পর্যটকদের পরিমাণ একেবারেই কম। কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় থাকে সুন্দরবনের পূর্বাংশ ফাতরারবন, চর বিজয়। আর এসব যায়গায় যেতে স্পিডবোড আর ফাইবারের বোটে যেতে হয়। কিন্তু করোনার প্রভাবে পর্যটক না থাকায় সারাদিন ঘাটে বাঁধা থাকে এসব স্পিডবোট ও ফাইবারের বোটগুলো। খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে মালিক ও চালকদের।’