কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচি সফল হোক

আগের পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনে মাসে ৩৫ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ‘সাপ্লাই চেইন’ রক্ষা করা, মজুদ ৭০ লাখ ডোজ টিকা আর দুই ডোজের মাঝের সময়ের ব্যবধানের হিসাব মিলিয়েই নতুন লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে প্রতিদিন টিকা দিতে হবে প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজার জনকে। এটা কোন সমস্যা নয়। দেশজুড়ে প্রতিদিন দুই লাখ টিকা দেয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। টিকাদান কেন্দ্রের অভাব নেই। ৭ হাজার ৩৪৪টি কেন্দ্রে টিকা দেয়া হবে। নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে টিকার অভাব নেই, টিকা নিতে আগ্রহী মানুষের অভাব দেখা দিয়েছে।

আজ দেশব্যাপী কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। বিশ্বের অনেক দেশ এখনও টিকা পায়নি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষকে সৌভাগ্যবানই বলতে হবে। টিকা সংগ্রহে সরকার কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে। তবে টিকাদান কর্মসূচি আশানুরূপ সাড়া জাগাতে পারেনি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন মাত্র ২ লাখ ৪৫ হাজার জন। একটা সময় ধারণা করা হয়েছিল, দেশে টিকা এলে মানুষের ভিড় সামলানো মুশকিল হবে। এজন্য আগেভাগে অগ্রাধিকারের তালিকা করা হলো। এখন দেখা যাচ্ছে, যে পরিমাণ ভ্যাকসিন আছে, সেগুলো নেয়ার মানুষই নেই। এ অবস্থায় টিকাদান কর্মসূচি সফল হবে কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে।

টিকাদান কর্মসূচি সফল করতে যেটা করা হয়নি সেটা হচ্ছে মানুষকে সচেতন করা। এজন্য পরিকল্পনায় ঘাটতি ও ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকে দুষছেন বিশেষজ্ঞরা। টিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে অনেক বিভ্রান্তি রয়েছে, রটেছে নানা গুজব। মানুষের অসচেতনতা দূর করতে বা গুজব রোধে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। প্রশ্ন উঠেছে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া নিয়েও। দেশের সব মানুষ এখনও ইন্টারনেটের আওতায় আসেননি। অনেকে এর ব্যবহার জানেন না। এ কারণে নিবন্ধনের গতি ধীর হয়েছে।

টার্গেটেড জনগোষ্ঠীকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনা না গেলে বা সময়মতো টিকা দিতে না পারলে হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে। টিকার নির্দিষ্ট একটা মেয়াদ রয়েছে। টিকা সংরক্ষণ করাও কঠিন। কাজেই মানুষকে টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বাড়ি-বাড়ি গিয়ে প্রচার চালাতে হবে। এর উপকারিতা সম্পর্কে মানুষকে বোঝাতে হবে, আশ্বস্ত করতে হবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে। ইন্টারনেটবঞ্চিত বা এর ব্যবহারে অনভ্যস্ত জনগোষ্ঠীর নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে টিকাদান কর্মসূচি বা ইপিআই-এর অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যেতে পারে। গুজবের জবাব পৌঁছে দিতে হবে মানুষের কান পর্যন্ত। প্রচারের সব মাধ্যমকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে হবে। এ লক্ষ্যে সংগঠিত ক্যাম্পেইন করা জরুরি। আমরা কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচির সাফল্য দেখতে চাই। এটাকে সফল করতে হলে টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ, পরিবহন, টিকাদানসহ প্রতিটি স্তরে সম্পূর্ণ ব্যবস্থাপনা হতে হবে সুষ্ঠু।

রবিবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৪ মাঘ ১৪২৭, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২

কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচি সফল হোক

আগের পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনে মাসে ৩৫ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ‘সাপ্লাই চেইন’ রক্ষা করা, মজুদ ৭০ লাখ ডোজ টিকা আর দুই ডোজের মাঝের সময়ের ব্যবধানের হিসাব মিলিয়েই নতুন লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে প্রতিদিন টিকা দিতে হবে প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজার জনকে। এটা কোন সমস্যা নয়। দেশজুড়ে প্রতিদিন দুই লাখ টিকা দেয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। টিকাদান কেন্দ্রের অভাব নেই। ৭ হাজার ৩৪৪টি কেন্দ্রে টিকা দেয়া হবে। নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে টিকার অভাব নেই, টিকা নিতে আগ্রহী মানুষের অভাব দেখা দিয়েছে।

আজ দেশব্যাপী কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। বিশ্বের অনেক দেশ এখনও টিকা পায়নি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষকে সৌভাগ্যবানই বলতে হবে। টিকা সংগ্রহে সরকার কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে। তবে টিকাদান কর্মসূচি আশানুরূপ সাড়া জাগাতে পারেনি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন মাত্র ২ লাখ ৪৫ হাজার জন। একটা সময় ধারণা করা হয়েছিল, দেশে টিকা এলে মানুষের ভিড় সামলানো মুশকিল হবে। এজন্য আগেভাগে অগ্রাধিকারের তালিকা করা হলো। এখন দেখা যাচ্ছে, যে পরিমাণ ভ্যাকসিন আছে, সেগুলো নেয়ার মানুষই নেই। এ অবস্থায় টিকাদান কর্মসূচি সফল হবে কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে।

টিকাদান কর্মসূচি সফল করতে যেটা করা হয়নি সেটা হচ্ছে মানুষকে সচেতন করা। এজন্য পরিকল্পনায় ঘাটতি ও ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকে দুষছেন বিশেষজ্ঞরা। টিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে অনেক বিভ্রান্তি রয়েছে, রটেছে নানা গুজব। মানুষের অসচেতনতা দূর করতে বা গুজব রোধে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। প্রশ্ন উঠেছে নিবন্ধনের প্রক্রিয়া নিয়েও। দেশের সব মানুষ এখনও ইন্টারনেটের আওতায় আসেননি। অনেকে এর ব্যবহার জানেন না। এ কারণে নিবন্ধনের গতি ধীর হয়েছে।

টার্গেটেড জনগোষ্ঠীকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনা না গেলে বা সময়মতো টিকা দিতে না পারলে হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে। টিকার নির্দিষ্ট একটা মেয়াদ রয়েছে। টিকা সংরক্ষণ করাও কঠিন। কাজেই মানুষকে টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বাড়ি-বাড়ি গিয়ে প্রচার চালাতে হবে। এর উপকারিতা সম্পর্কে মানুষকে বোঝাতে হবে, আশ্বস্ত করতে হবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে। ইন্টারনেটবঞ্চিত বা এর ব্যবহারে অনভ্যস্ত জনগোষ্ঠীর নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে টিকাদান কর্মসূচি বা ইপিআই-এর অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যেতে পারে। গুজবের জবাব পৌঁছে দিতে হবে মানুষের কান পর্যন্ত। প্রচারের সব মাধ্যমকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে হবে। এ লক্ষ্যে সংগঠিত ক্যাম্পেইন করা জরুরি। আমরা কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচির সাফল্য দেখতে চাই। এটাকে সফল করতে হলে টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ, পরিবহন, টিকাদানসহ প্রতিটি স্তরে সম্পূর্ণ ব্যবস্থাপনা হতে হবে সুষ্ঠু।