শিশুদের প্রতি সদয় হোন

পরিবারের ছোট বা শিশুরা আয়নায় সৃষ্ট প্রতিবিম্বের মতো। তারাও পরিবারের বড়দের ঠিক একইভাবে অনুসরণ-অনুকরণ করে যেমনটি আয়নায় সৃষ্ট প্রতিবিম্বটি করে। এখন আমরা ছোটদের সাথে যে ধরনের আচরণ বা ব্যবহার করবো তারাও এক সময় ঠিক একই আচরণ বা ব্যবহার করবে তার অগ্রজ বা অনুজদের সাথে! বর্তমান সময়ে মানুষ করার নামে শিশুদের নির্যাতনের খবর প্রায়ই শোনা যায়। কখনো বাবা-মা, কখনো স্কুলের শিক্ষক কিংবা মাদ্রাসার হুজুররা শিশুদের পেটায়। শুরু হয় বকাবকি দিয়ে। এরপর চড়-থাপ্পড়, খুন্তির খোঁচা, কানমলা, স্কেলের বাড়ি, বেতের বাড়ি- এমন আরও হাজারো রকম শাস্তি! হাজারো কাজের চাপ, টাকা-পয়সার টানাটানি, আবার অনেক সময় নেহায়েত অভ্যাসের বশেও বাবা-মা ছেলেমেয়ের ওপর এমন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। আমি, আপনি বা আমাদের চেনাশোনা অনেকের জীবনেই এমন ঘটনা ঘটেছে, ঘটে চলেছে।

প্রশ্ন হলো, এমন শাস্তি কি সত্যিই কাজে দেয়? বাচ্চাকে গায়ের জোরে কি সত্যিই কিছু শেখানো যায়? জোর করে খাওয়ানো, পড়তে বসানো, খেলতে বারণ করা-এ সব কি আসলেই কোন কাজে আসে? বাস্তবতা হলো, এতে সন্তানের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে, বাড়ে উভয়পক্ষের মানসিক যন্ত্রণা, দ্বন্দ্ব। বাচ্চারা হতাশ হয়, অপরিপক্ব থাকা অবস্থায়ই তারা হেরে যেতে শেখে। তাদের জীবনটা বিবর্ণ হয়ে যায়। এক সময় যখন এসব শিশু বড় হয় তখন যে আচরণ তারা বড়দের থেকে পেয়ে এসেছে সেই আচরণের পুনরাবৃত্তি করে অনুজদের সাথে। যখন বড় হয়, তারা অগ্রজদের প্রতি ক্ষিপ্র হয় এবং তাদের সাথে বিরূপ আচরণ করে।

শিশুরা হচ্ছে গাছের চারার মতো। একটি চারাকে যদি পরিপক্ব বৃক্ষে পরিণত করতে হয় তবে সেই চারাটিকে যতœ করতে হয়। সঠিক সময়ে পানি দিতে হয়। আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। পর্যাপ্ত আলো-বাতাস-বায়ুর ব্যবস্থা রাখতে হয়। তা না হলে চারাটি পরিপক্ব বৃক্ষে পরিণত হবে না। বরং অল্প সময়ে ঝরে যাবে। ঠিক তেমনি একটি শিশুকে যদি সভ্য মানুষে পরিণত করতে হয় তবে তাকেও যতœ করতে হবে, ভালবাসা আর স্নেহ দিয়ে আগলে রাখতে হবে। ভুল করলে সেটা বুঝিয়ে দিতে হবে। খেলার ছলে শেখানোর পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। কখনোই তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করা যাবে না। তাদের গায়ে বেত্রাঘাত বা চড়-থাপ্পড় মারা যাবে না।

মুন্সী মুহাম্মদ জুয়েল

আরও খবর

রবিবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ২৪ মাঘ ১৪২৭, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪২

শিশুদের প্রতি সদয় হোন

পরিবারের ছোট বা শিশুরা আয়নায় সৃষ্ট প্রতিবিম্বের মতো। তারাও পরিবারের বড়দের ঠিক একইভাবে অনুসরণ-অনুকরণ করে যেমনটি আয়নায় সৃষ্ট প্রতিবিম্বটি করে। এখন আমরা ছোটদের সাথে যে ধরনের আচরণ বা ব্যবহার করবো তারাও এক সময় ঠিক একই আচরণ বা ব্যবহার করবে তার অগ্রজ বা অনুজদের সাথে! বর্তমান সময়ে মানুষ করার নামে শিশুদের নির্যাতনের খবর প্রায়ই শোনা যায়। কখনো বাবা-মা, কখনো স্কুলের শিক্ষক কিংবা মাদ্রাসার হুজুররা শিশুদের পেটায়। শুরু হয় বকাবকি দিয়ে। এরপর চড়-থাপ্পড়, খুন্তির খোঁচা, কানমলা, স্কেলের বাড়ি, বেতের বাড়ি- এমন আরও হাজারো রকম শাস্তি! হাজারো কাজের চাপ, টাকা-পয়সার টানাটানি, আবার অনেক সময় নেহায়েত অভ্যাসের বশেও বাবা-মা ছেলেমেয়ের ওপর এমন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। আমি, আপনি বা আমাদের চেনাশোনা অনেকের জীবনেই এমন ঘটনা ঘটেছে, ঘটে চলেছে।

প্রশ্ন হলো, এমন শাস্তি কি সত্যিই কাজে দেয়? বাচ্চাকে গায়ের জোরে কি সত্যিই কিছু শেখানো যায়? জোর করে খাওয়ানো, পড়তে বসানো, খেলতে বারণ করা-এ সব কি আসলেই কোন কাজে আসে? বাস্তবতা হলো, এতে সন্তানের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে, বাড়ে উভয়পক্ষের মানসিক যন্ত্রণা, দ্বন্দ্ব। বাচ্চারা হতাশ হয়, অপরিপক্ব থাকা অবস্থায়ই তারা হেরে যেতে শেখে। তাদের জীবনটা বিবর্ণ হয়ে যায়। এক সময় যখন এসব শিশু বড় হয় তখন যে আচরণ তারা বড়দের থেকে পেয়ে এসেছে সেই আচরণের পুনরাবৃত্তি করে অনুজদের সাথে। যখন বড় হয়, তারা অগ্রজদের প্রতি ক্ষিপ্র হয় এবং তাদের সাথে বিরূপ আচরণ করে।

শিশুরা হচ্ছে গাছের চারার মতো। একটি চারাকে যদি পরিপক্ব বৃক্ষে পরিণত করতে হয় তবে সেই চারাটিকে যতœ করতে হয়। সঠিক সময়ে পানি দিতে হয়। আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। পর্যাপ্ত আলো-বাতাস-বায়ুর ব্যবস্থা রাখতে হয়। তা না হলে চারাটি পরিপক্ব বৃক্ষে পরিণত হবে না। বরং অল্প সময়ে ঝরে যাবে। ঠিক তেমনি একটি শিশুকে যদি সভ্য মানুষে পরিণত করতে হয় তবে তাকেও যতœ করতে হবে, ভালবাসা আর স্নেহ দিয়ে আগলে রাখতে হবে। ভুল করলে সেটা বুঝিয়ে দিতে হবে। খেলার ছলে শেখানোর পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। কখনোই তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করা যাবে না। তাদের গায়ে বেত্রাঘাত বা চড়-থাপ্পড় মারা যাবে না।

মুন্সী মুহাম্মদ জুয়েল