৪র্থ দফায় ৫৫ পৌর নির্বাচন কাল

চতুর্থ ধাপে ৫৫টি পৌরসভায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে কাল। এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। এ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে গতকাল মধ্যরাতে। বিগত তিনটি ধাপসহ চলমান পৌরসভা নির্বাচনে আচরণ বিধি-লঙ্ঘন ও সহিংস ঘটনার প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশন (ইসি) চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে সংঘাত কমাতে নানা উদ্যোগও নিয়েছে। ডিসি, এসপি, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন নির্বাচন কমিশনাররা। সহিংসতার কারণে কালকিনি পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। অন্তত ১২টিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

অবশ্য ইসি আশা করছে, সামনের নির্বাচনগুলোতে বড় ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটবে না। গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এক অনুষ্ঠানে এমন আশা প্রকাশ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য দুই কমিশনার। ওই অনুষ্ঠানে সিইসি কেএম নুরুল হুদা বলেন, ‘আমাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি আছে। কমিশনের ব্যবস্থাপনার দিক থেকে যা যা দরকার, সেগুলো ঠিকঠাক করেছি। আমি আশা করি, এরপর থেকে ভোটগুলো সুষ্ঠু হবে, রক্তপাত হবে না।’

জানা গেছে, চতুর্থ ধাপের পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বিভিন্ন প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছেন। অনেক স্থানে আচরণ বিধি-লঙ্ঘন ও সহিংস ঘটনা ঘটেছে।

গত ৩ জানুযারি চতুর্থ ধাপে ৫৬টি পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করে ইসি। পরে সোনাইমুড়ি ও ত্রিশাল পৌরসভা এ ধাপে যুক্ত হয়। অপরদিকে হাইকোর্টের আদেশে নাটোর পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ফেনীর পরশুরাম পৌরসভায় সব ধরনের পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ায় এখানে ভোটের প্রয়োজন হবে না। জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভায় নির্বাচন কার্যক্রম বন্ধের পর ফের তা চালু হয়। এছাড়া সহিংস ঘটনায় মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভার ভোট স্থগিত করে কমিশন। সবমিলিয়ে গত রোববার ৫৫টিতে ভোট হতে যাচ্ছে।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে কয়েকটি পৌরসভায় ভোট স্থগিত ও পরে চালু হয়েছে। এ কারণে সামষ্টিক পরিসংখ্যান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ইসির। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ৫৫টি পৌরসভায় মেয়র পদে ২২১ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ৭৩ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬১৮ জন প্রার্থী আছেন। এসব পৌরসভায় ৭৯৩টি ভোটকেন্দ্র ও ৪ হাজার ৮৮৭টি ভোটকক্ষ রয়েছে। ভোটার আছেন ১৬ লাখ ৪৭ হাজার ৯৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৮ লাখ ৪২ হাজার ৯৪৫ জন ও নারী ৮ লাখ ৪৪ হাজার ১৫২ জন। তবে সংখ্যা কিছুটা হেরফের হতে পারে।

চতুর্থ ধাপের এ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের ১৬৭টি মোবাইল ও ৫৫টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, ১৬৭টি র‌্যাবের টিম, প্রত্যেক পৌরসভায় গড়ে দুই প্লাটুন বিজিবি ও উপকূলীয় এলাকায় প্রতি পৌরসভায় এক প্লাটুন কোস্টগার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ১২টি পৌরসভায় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে নির্দিষ্ট হারের চেয়ে অতিরিক্ত র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ৫০১ জন নির্বাহী ও ৫৫ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকছেন। ভোটের দিন কেন্দ্রের পাহারায় অস্ত্রসহ ৩ হাজার ১৭২ জন পুলিশ সদস্য ও ৫ হাজার ৫৫১ জন আনসার সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা করেছে নির্বাচন কমিশন।

যে ৫৫টি পৌরসভায় ব্যালটে ভোট : ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকাইল, রাজশাহীর নওহাটা, তানোর ও তাহেরপুর, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, নরসিংদী পৌরসভা, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভা, বরিশালের বানরীপাড়া, শেরপুরের শ্রীবরদী, নাটোরের বড়াইগ্রাম ও নাটোর, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও চন্দাইশ, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর ও করিমগঞ্জ, টাঙ্গাইলের কালিহাতী, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ, যশোরের বাঘারপাড়া, শরীয়তপুরের ডাম্যুডা, জামালপুরের মেলান্দহ, জয়পুরহাটের কালাই, ফরিদপুরের নগরকান্দা ও সিলেটের কানাইঘাট।

যে ৩০টি পৌরসভায় ইভিএমে ভোট : ঠাকুরগাঁও, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, লালমনিরহাট, নরসিংদীর মাধবদী, রাজবাড়ী, বরিশালের মুলাদী, শেরপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, বাগেরহাট, বান্দরবান, সাতক্ষীরা, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট, কুমিল্লার হোমনা এবং দাউদকান্দি, চট্টগ্রামের পটিয়া, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর, টাঙ্গাইলের গোপালপুর, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা, ফেনীর পরশুরাম, চাঁদপুরের কচুয়া, নেত্রকোনা, যশোরের চৌগাছা, রাঙ্গামাটি, মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম, ময়মনসিংহের ফুলপুর, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর, নোয়াখালীর চাটখিল এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি।

ইতোমধ্যে প্রথম ধাপে ২৪টি পৌরসভায় ভোট হয়েছে। ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের ও ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় ধাপের ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ৩০ মাঘ ১৪২৭, ৩০ জমাদিউস সানি ১৪৪২

৪র্থ দফায় ৫৫ পৌর নির্বাচন কাল

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক |

চতুর্থ ধাপে ৫৫টি পৌরসভায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে কাল। এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। এ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে গতকাল মধ্যরাতে। বিগত তিনটি ধাপসহ চলমান পৌরসভা নির্বাচনে আচরণ বিধি-লঙ্ঘন ও সহিংস ঘটনার প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশন (ইসি) চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে সংঘাত কমাতে নানা উদ্যোগও নিয়েছে। ডিসি, এসপি, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন নির্বাচন কমিশনাররা। সহিংসতার কারণে কালকিনি পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। অন্তত ১২টিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

অবশ্য ইসি আশা করছে, সামনের নির্বাচনগুলোতে বড় ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটবে না। গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এক অনুষ্ঠানে এমন আশা প্রকাশ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য দুই কমিশনার। ওই অনুষ্ঠানে সিইসি কেএম নুরুল হুদা বলেন, ‘আমাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি আছে। কমিশনের ব্যবস্থাপনার দিক থেকে যা যা দরকার, সেগুলো ঠিকঠাক করেছি। আমি আশা করি, এরপর থেকে ভোটগুলো সুষ্ঠু হবে, রক্তপাত হবে না।’

জানা গেছে, চতুর্থ ধাপের পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বিভিন্ন প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছেন। অনেক স্থানে আচরণ বিধি-লঙ্ঘন ও সহিংস ঘটনা ঘটেছে।

গত ৩ জানুযারি চতুর্থ ধাপে ৫৬টি পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করে ইসি। পরে সোনাইমুড়ি ও ত্রিশাল পৌরসভা এ ধাপে যুক্ত হয়। অপরদিকে হাইকোর্টের আদেশে নাটোর পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ফেনীর পরশুরাম পৌরসভায় সব ধরনের পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ায় এখানে ভোটের প্রয়োজন হবে না। জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভায় নির্বাচন কার্যক্রম বন্ধের পর ফের তা চালু হয়। এছাড়া সহিংস ঘটনায় মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভার ভোট স্থগিত করে কমিশন। সবমিলিয়ে গত রোববার ৫৫টিতে ভোট হতে যাচ্ছে।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে কয়েকটি পৌরসভায় ভোট স্থগিত ও পরে চালু হয়েছে। এ কারণে সামষ্টিক পরিসংখ্যান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ইসির। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ৫৫টি পৌরসভায় মেয়র পদে ২২১ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ৭৩ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬১৮ জন প্রার্থী আছেন। এসব পৌরসভায় ৭৯৩টি ভোটকেন্দ্র ও ৪ হাজার ৮৮৭টি ভোটকক্ষ রয়েছে। ভোটার আছেন ১৬ লাখ ৪৭ হাজার ৯৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৮ লাখ ৪২ হাজার ৯৪৫ জন ও নারী ৮ লাখ ৪৪ হাজার ১৫২ জন। তবে সংখ্যা কিছুটা হেরফের হতে পারে।

চতুর্থ ধাপের এ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের ১৬৭টি মোবাইল ও ৫৫টি স্ট্রাইকিং ফোর্স, ১৬৭টি র‌্যাবের টিম, প্রত্যেক পৌরসভায় গড়ে দুই প্লাটুন বিজিবি ও উপকূলীয় এলাকায় প্রতি পৌরসভায় এক প্লাটুন কোস্টগার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ১২টি পৌরসভায় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে নির্দিষ্ট হারের চেয়ে অতিরিক্ত র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া ৫০১ জন নির্বাহী ও ৫৫ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকছেন। ভোটের দিন কেন্দ্রের পাহারায় অস্ত্রসহ ৩ হাজার ১৭২ জন পুলিশ সদস্য ও ৫ হাজার ৫৫১ জন আনসার সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা করেছে নির্বাচন কমিশন।

যে ৫৫টি পৌরসভায় ব্যালটে ভোট : ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকাইল, রাজশাহীর নওহাটা, তানোর ও তাহেরপুর, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, নরসিংদী পৌরসভা, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভা, বরিশালের বানরীপাড়া, শেরপুরের শ্রীবরদী, নাটোরের বড়াইগ্রাম ও নাটোর, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও চন্দাইশ, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর ও করিমগঞ্জ, টাঙ্গাইলের কালিহাতী, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ, যশোরের বাঘারপাড়া, শরীয়তপুরের ডাম্যুডা, জামালপুরের মেলান্দহ, জয়পুরহাটের কালাই, ফরিদপুরের নগরকান্দা ও সিলেটের কানাইঘাট।

যে ৩০টি পৌরসভায় ইভিএমে ভোট : ঠাকুরগাঁও, রাজশাহীর গোদাগাড়ী, লালমনিরহাট, নরসিংদীর মাধবদী, রাজবাড়ী, বরিশালের মুলাদী, শেরপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ, বাগেরহাট, বান্দরবান, সাতক্ষীরা, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট, কুমিল্লার হোমনা এবং দাউদকান্দি, চট্টগ্রামের পটিয়া, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর, টাঙ্গাইলের গোপালপুর, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা, ফেনীর পরশুরাম, চাঁদপুরের কচুয়া, নেত্রকোনা, যশোরের চৌগাছা, রাঙ্গামাটি, মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম, ময়মনসিংহের ফুলপুর, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর, নোয়াখালীর চাটখিল এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি।

ইতোমধ্যে প্রথম ধাপে ২৪টি পৌরসভায় ভোট হয়েছে। ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের ও ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় ধাপের ভোট অনুষ্ঠিত হবে।