নদী খননের নামে ধানি জমি কেটে নেয়ার অভিযোগ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে

সরকার ৫২৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নরসিংদীর পলাশ ও শিবপুর থানায় নদী পুনঃখনন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সরকারের উদ্দেশ্য নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দেয়া। কিন্তু সেই সুযোগে একটি প্রভাবশালী মহল সরকারের এই উদ্দেশ্যকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করছে। নদী খননের নামে কৃষকের ধানি জমি জোরপূর্বক দখল এবং কেটে নিয়ে স্থানীয় ইটভাটায় বিক্রি করে কৃষকদের নিঃস্ব করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সকালে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন স্থানীয় কৃষকরা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত এলাকাবাসীর প্রতিনিধি রাবেয়া বসরী বলেন, নদী পুনঃখনন প্রকল্পে নরসিংদী জেলার পলাশ এবং শিবপুর থানার শত শত কৃষক পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। এতে তাদের পথে বসার অবস্থা দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রতি মুহূর্তে জীবন হারানোর শঙ্কায় আজ আমরা ঘুরছি। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, পলাশ ও শিবপুর থানার আলিনগর, চরসিন্দুর, ব্রজেরকান্দী এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী পুনঃখনন প্রকল্প চলমান রয়েছে। সেখানে প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকায় কয়েক হাজার মানুষের কৃষি এবং ধানি জমি রয়েছে। এগুলো তাদের পূর্ব পুরুষের কেনা সম্পতি যা সরকারের সি.এস., আর.এস. এবং এস.এ. খতিয়ানভুক্ত।

সরকারের খাজনা পরিশোধ করার পরও সেই জমি থেকে মাটি খননের কাজ চলমান রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া নদী সীমানার মধ্যে আমাদের জমি না পড়লেও জোর করে ঠিকাদার কোম্পানি নদীর নকশা বহির্ভূত জমি থেকে মাটি তুলে নিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছর ধরে নদী পুনঃখননের নামে প্রায় কয়েক হাজার কৃষকের ধানের জমির মাটি তুলে নিয়ে গেছে। কৃষকের ফসল বাবদ যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তার বাজার মূল্য প্রায় ৫০-৬০ কোটি টাকার বেশি। এর বাইরেও শত শত কোটি টাকার মাটি কেটে নিয়ে গেছে প্রভাবশালী মাটি খেকো সন্ত্রাসীরা। এভাবে পুরো এলাকায় এক ত্রাশের রাজত্ব কায়েম করেছে তারা।

তিনি বলেন, এই খনন কাজে নিয়োজিত মেসার্স ফিউচার ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্ত্বাধিকারী মো. খালেদ হোসেন, স্থানীয় ভূমিদস্যু ও এলাকার প্রভাবশালী মহলের মাধ্যমে নদীর সীমানার বাহিরে গিয়ে স্থানীয় কৃষকদের জমির মাটি রাতের আঁধারে কেটে নিয়ে ইট ভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলে সেখানে এখন আর ফসল হওয়ার সুযোগ নেই। পুরো এলাকা এখন খননের ফলে বিলীন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। স্থানীয়রা বাধা দিতে গেলে প্রতিনিয়ত নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হয়েছে। যারাই প্রতিবাদ করতে গিয়েছে তাদেরই নির্যাতন করেছে ভূমিদস্যু খালেদ। এসব অভিযোগ নিয়ে জেলা প্রশাসন, স্থানীয় থানা, উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে দফায় দফায় যোগাযোগ করা হলেও এর কোন প্রতিকার হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন।

রাবেয়া বলেন, সরকারের সব কাজে সহযোগিতা করব আমরা। কিন্তু ভূমিদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি, আমাদের জমির যথাযথ ক্ষতিপূরণ জমির মালিকদের বুঝিয়ে দেয়ার জন্য প্রধামন্ত্রীর কাছে সাহায্য চাই। সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা উপস্থিত ছিলেন।

শনিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ৭ ফাল্গুন ১৪২৭ ৭ রজব ১৪৪২

নদী খননের নামে ধানি জমি কেটে নেয়ার অভিযোগ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে

সরকার ৫২৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নরসিংদীর পলাশ ও শিবপুর থানায় নদী পুনঃখনন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সরকারের উদ্দেশ্য নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দেয়া। কিন্তু সেই সুযোগে একটি প্রভাবশালী মহল সরকারের এই উদ্দেশ্যকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করছে। নদী খননের নামে কৃষকের ধানি জমি জোরপূর্বক দখল এবং কেটে নিয়ে স্থানীয় ইটভাটায় বিক্রি করে কৃষকদের নিঃস্ব করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সকালে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন স্থানীয় কৃষকরা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত এলাকাবাসীর প্রতিনিধি রাবেয়া বসরী বলেন, নদী পুনঃখনন প্রকল্পে নরসিংদী জেলার পলাশ এবং শিবপুর থানার শত শত কৃষক পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। এতে তাদের পথে বসার অবস্থা দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রতি মুহূর্তে জীবন হারানোর শঙ্কায় আজ আমরা ঘুরছি। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, পলাশ ও শিবপুর থানার আলিনগর, চরসিন্দুর, ব্রজেরকান্দী এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী পুনঃখনন প্রকল্প চলমান রয়েছে। সেখানে প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকায় কয়েক হাজার মানুষের কৃষি এবং ধানি জমি রয়েছে। এগুলো তাদের পূর্ব পুরুষের কেনা সম্পতি যা সরকারের সি.এস., আর.এস. এবং এস.এ. খতিয়ানভুক্ত।

সরকারের খাজনা পরিশোধ করার পরও সেই জমি থেকে মাটি খননের কাজ চলমান রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া নদী সীমানার মধ্যে আমাদের জমি না পড়লেও জোর করে ঠিকাদার কোম্পানি নদীর নকশা বহির্ভূত জমি থেকে মাটি তুলে নিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছর ধরে নদী পুনঃখননের নামে প্রায় কয়েক হাজার কৃষকের ধানের জমির মাটি তুলে নিয়ে গেছে। কৃষকের ফসল বাবদ যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তার বাজার মূল্য প্রায় ৫০-৬০ কোটি টাকার বেশি। এর বাইরেও শত শত কোটি টাকার মাটি কেটে নিয়ে গেছে প্রভাবশালী মাটি খেকো সন্ত্রাসীরা। এভাবে পুরো এলাকায় এক ত্রাশের রাজত্ব কায়েম করেছে তারা।

তিনি বলেন, এই খনন কাজে নিয়োজিত মেসার্স ফিউচার ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্ত্বাধিকারী মো. খালেদ হোসেন, স্থানীয় ভূমিদস্যু ও এলাকার প্রভাবশালী মহলের মাধ্যমে নদীর সীমানার বাহিরে গিয়ে স্থানীয় কৃষকদের জমির মাটি রাতের আঁধারে কেটে নিয়ে ইট ভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলে সেখানে এখন আর ফসল হওয়ার সুযোগ নেই। পুরো এলাকা এখন খননের ফলে বিলীন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। স্থানীয়রা বাধা দিতে গেলে প্রতিনিয়ত নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হয়েছে। যারাই প্রতিবাদ করতে গিয়েছে তাদেরই নির্যাতন করেছে ভূমিদস্যু খালেদ। এসব অভিযোগ নিয়ে জেলা প্রশাসন, স্থানীয় থানা, উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে দফায় দফায় যোগাযোগ করা হলেও এর কোন প্রতিকার হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন।

রাবেয়া বলেন, সরকারের সব কাজে সহযোগিতা করব আমরা। কিন্তু ভূমিদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি, আমাদের জমির যথাযথ ক্ষতিপূরণ জমির মালিকদের বুঝিয়ে দেয়ার জন্য প্রধামন্ত্রীর কাছে সাহায্য চাই। সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থী এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা উপস্থিত ছিলেন।