করের আওতায় আনা হবে প্রতিটি লিমিটেড কোম্পানিকে

করহার না বাড়িয়ে করের আওতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর অংশ হিসেবে ২০২০ সালে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এই টাস্কফোর্স গত ছয় মাসে ৬৫ হাজারের বেশি কোম্পানিকে করের আওতায় এনেছে। এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে প্রতিটি লিমিটেড কোম্পানিকে করের আওতায় আনা হবে।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছর কোম্পানির রিটার্ন বেড়েছে ৩৫ দশমিক ২১ শতাংশ, যেখানে ২০১৯-২০ অর্থবছর ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৯১ শতাংশ। শুধু ই-টিআইএন আর রিটার্ন দাখিল নয়, চলতি অর্থবছর কোম্পানি আয়করের পরিমাণ বাড়বে ৫০০ থেকে এক হাজার কোটি টাকা। আর আগামী অর্থবছর বাড়বে দুই থেকে তিন হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের গঠিত টাস্কফোর্স কমিটির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এদিকে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তরের (আরজেএসসি) হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৫৫টি। এরমধ্যে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি তিন হাজার ৫৩২টি ও প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি এক লাখ ৭৫ হাজার ৯৩২টি। আর এনবিআরের হিসাবে, লিমিটেড কোম্পানি এক লাখ ৭৬ হাজার ৪০০। এরমধ্যে ই-টিআইএন রয়েছে ৭৬ হাজার ও রিটার্ন দেয় ৩৫ হাজার। ৯৮ হাজার ৪০০ লিমিটেড কোম্পানি টিআইএন নেয়নি, রিটার্নও দেয় না। এসব কোম্পানিকে ই-টিআইএন ও রিটার্ন নিশ্চিত করতে গত বছরের ১৯ আগস্ট এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) এর পরিচালক মো. শাব্বির আহমদকে টিম লিডার করে সাত সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়।

রাজস্ব বৃদ্ধির তাগিদ দিতে সম্প্রতি সেরা করদাতাদের ট্যাক্স কার্ড ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রীও করের আওতা বৃদ্ধির বিষয়ে তাগিদ দেন। তিনি বলেন, দেশের কর জিডিপির অনুপাত ১৫ থেকে ১৭ শতাংশে উন্নীত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। নতুন নতুন খাত বের করতে হবে। প্রত্যক্ষ কর আরও বাড়াতে হবে। রেট না কমালে করের আওতায় বাড়বে না। মোট কথা খাত বৃদ্ধি করতে হবে। সেটা করতে পারলে আমারা লক্ষ্য পৌঁছতে পারব। আগে কর নিয়ে মানুষের মধ্যে অনেক ভয়ভীতি ছিল। সেই ভীতি এখন অনেকটাই দূর হয়েছে। এখন কর আহরণ সিস্টেম উন্নত করা দরকার। এটা করতে পারলে জনগণ করের আওতায় চলে আসবে।

টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৫২ কোম্পানি ই-টিআইএন নিয়েছে। যেখানে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ছিল ৭৭ হাজার ৮১৭, ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ৭১ হাজার ১৯০, ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ৬৪ হাজার ৭৫৪, ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ৫৮ হাজার ৩৫ ও ২০১৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ছিল ৫২ হাজার ৪৮০টি। আর চলতি অর্থবছর (১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) প্রায় ছয়মাসে কোম্পানি হিসেবে নতুন ই-টিআইএন নিয়েছে ৫৭ হাজার ৫৩৫টি। যেখানে ২০১৯-২০ অর্থবছর নিয়েছে ৬ হাজার ৬২৭, ২০১৮-১৯ অর্থবছর ৬ হাজার ৪৩৬, ২০১৭-১৮ অর্থবছর ৬ হাজার ৭১৯ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছর ৫ হাজার ৫৫৫।

টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, চলতি অর্থবছর ছয় মাসে ঢাকায় কোম্পানি রিটার্ন দাখিল হয়েছে ৩০ হাজার ৮৯৪টি। যেখানে ২০১৯-২০ অর্থবছর দাখিল হয় ২২ হাজার ৮৪৯টি ও ২০১৮-১৯ অর্থবছর ২২ হাজার ৬৪৪টি। রিটার্ন দাখিলের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে কর অঞ্চল-১২। এ কর অঞ্চলে কোম্পানির রিটার্ন দাখিল প্রবৃদ্ধি ৫০ দশমিক ৩ শতাংশ। এরপরে রয়েছে কর অঞ্চল-৪, ঢাকা ৪৫ দশমিক ১ শতাংশ। এছাড়া কর অঞ্চল-১৪, ঢাকা ৪৩ দশমিক ৯ শতাংশ, কর অঞ্চল-১৫, ঢাকা ৪৩ দশমিক ১ শতাংশ, কর অঞ্চল-৫, ঢাকা ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ, কর অঞ্চল-৮, ঢাকা ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ, কর অঞ্চল-৭, ঢাকা ৩৪ দশমিক ৮ শতাংশ, কর অঞ্চল-১৩, ঢাকা ৩৩ দশমিক ৬ শতাংশ, কর অঞ্চল-১০, ঢাকা ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ ও কর অঞ্চল-২, ঢাকা ৩০ দশমিক ৭ শতাংশ।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (করনীতি) আলমগীর হোসেন বলেন, আমাদের টাস্কফোর্স কাজ করছে। তারা একটি প্রতিবেদনও দিয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, আরও করদাতা কোম্পানি করজালের আওতায় আসবে। কাজ চলছে, সামনে আরও ভালো কিছু দেখতে পাবেন।

শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১৩ ফাল্গুন ১৪২৭ ১৩ রজব ১৪৪২

করের আওতায় আনা হবে প্রতিটি লিমিটেড কোম্পানিকে

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক |

image

করহার না বাড়িয়ে করের আওতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর অংশ হিসেবে ২০২০ সালে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এই টাস্কফোর্স গত ছয় মাসে ৬৫ হাজারের বেশি কোম্পানিকে করের আওতায় এনেছে। এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে প্রতিটি লিমিটেড কোম্পানিকে করের আওতায় আনা হবে।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছর কোম্পানির রিটার্ন বেড়েছে ৩৫ দশমিক ২১ শতাংশ, যেখানে ২০১৯-২০ অর্থবছর ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৯১ শতাংশ। শুধু ই-টিআইএন আর রিটার্ন দাখিল নয়, চলতি অর্থবছর কোম্পানি আয়করের পরিমাণ বাড়বে ৫০০ থেকে এক হাজার কোটি টাকা। আর আগামী অর্থবছর বাড়বে দুই থেকে তিন হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের গঠিত টাস্কফোর্স কমিটির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এদিকে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তরের (আরজেএসসি) হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৫৫টি। এরমধ্যে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি তিন হাজার ৫৩২টি ও প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি এক লাখ ৭৫ হাজার ৯৩২টি। আর এনবিআরের হিসাবে, লিমিটেড কোম্পানি এক লাখ ৭৬ হাজার ৪০০। এরমধ্যে ই-টিআইএন রয়েছে ৭৬ হাজার ও রিটার্ন দেয় ৩৫ হাজার। ৯৮ হাজার ৪০০ লিমিটেড কোম্পানি টিআইএন নেয়নি, রিটার্নও দেয় না। এসব কোম্পানিকে ই-টিআইএন ও রিটার্ন নিশ্চিত করতে গত বছরের ১৯ আগস্ট এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) এর পরিচালক মো. শাব্বির আহমদকে টিম লিডার করে সাত সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়।

রাজস্ব বৃদ্ধির তাগিদ দিতে সম্প্রতি সেরা করদাতাদের ট্যাক্স কার্ড ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রীও করের আওতা বৃদ্ধির বিষয়ে তাগিদ দেন। তিনি বলেন, দেশের কর জিডিপির অনুপাত ১৫ থেকে ১৭ শতাংশে উন্নীত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। নতুন নতুন খাত বের করতে হবে। প্রত্যক্ষ কর আরও বাড়াতে হবে। রেট না কমালে করের আওতায় বাড়বে না। মোট কথা খাত বৃদ্ধি করতে হবে। সেটা করতে পারলে আমারা লক্ষ্য পৌঁছতে পারব। আগে কর নিয়ে মানুষের মধ্যে অনেক ভয়ভীতি ছিল। সেই ভীতি এখন অনেকটাই দূর হয়েছে। এখন কর আহরণ সিস্টেম উন্নত করা দরকার। এটা করতে পারলে জনগণ করের আওতায় চলে আসবে।

টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৫২ কোম্পানি ই-টিআইএন নিয়েছে। যেখানে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ছিল ৭৭ হাজার ৮১৭, ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ৭১ হাজার ১৯০, ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ৬৪ হাজার ৭৫৪, ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ৫৮ হাজার ৩৫ ও ২০১৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ছিল ৫২ হাজার ৪৮০টি। আর চলতি অর্থবছর (১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) প্রায় ছয়মাসে কোম্পানি হিসেবে নতুন ই-টিআইএন নিয়েছে ৫৭ হাজার ৫৩৫টি। যেখানে ২০১৯-২০ অর্থবছর নিয়েছে ৬ হাজার ৬২৭, ২০১৮-১৯ অর্থবছর ৬ হাজার ৪৩৬, ২০১৭-১৮ অর্থবছর ৬ হাজার ৭১৯ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছর ৫ হাজার ৫৫৫।

টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, চলতি অর্থবছর ছয় মাসে ঢাকায় কোম্পানি রিটার্ন দাখিল হয়েছে ৩০ হাজার ৮৯৪টি। যেখানে ২০১৯-২০ অর্থবছর দাখিল হয় ২২ হাজার ৮৪৯টি ও ২০১৮-১৯ অর্থবছর ২২ হাজার ৬৪৪টি। রিটার্ন দাখিলের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে কর অঞ্চল-১২। এ কর অঞ্চলে কোম্পানির রিটার্ন দাখিল প্রবৃদ্ধি ৫০ দশমিক ৩ শতাংশ। এরপরে রয়েছে কর অঞ্চল-৪, ঢাকা ৪৫ দশমিক ১ শতাংশ। এছাড়া কর অঞ্চল-১৪, ঢাকা ৪৩ দশমিক ৯ শতাংশ, কর অঞ্চল-১৫, ঢাকা ৪৩ দশমিক ১ শতাংশ, কর অঞ্চল-৫, ঢাকা ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ, কর অঞ্চল-৮, ঢাকা ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ, কর অঞ্চল-৭, ঢাকা ৩৪ দশমিক ৮ শতাংশ, কর অঞ্চল-১৩, ঢাকা ৩৩ দশমিক ৬ শতাংশ, কর অঞ্চল-১০, ঢাকা ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ ও কর অঞ্চল-২, ঢাকা ৩০ দশমিক ৭ শতাংশ।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (করনীতি) আলমগীর হোসেন বলেন, আমাদের টাস্কফোর্স কাজ করছে। তারা একটি প্রতিবেদনও দিয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, আরও করদাতা কোম্পানি করজালের আওতায় আসবে। কাজ চলছে, সামনে আরও ভালো কিছু দেখতে পাবেন।