পরীক্ষার দাবিতে বাকিরাও পথে

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর ১৭ মার্চ থেকে অন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। যা আজ পর্যন্ত চালু হয়নি। এতে শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়ার আশঙ্কায় পরীক্ষার দাবিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন করছে। এর মধ্যে ঢাকার কলেজ অব হোম ইকোনমিক্সের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। অন্যদিকে, তিন দিনের সময়সীমা বেধে দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আগামী রোববারের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে দেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। তাছাড়া হল খোলার দাবিতে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।

অন্যদিকে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে আগামী শনিবার আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গতকাল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বঙ্গবন্ধুর সমাজ ও রাষ্ট্র ভাবনা শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই কথা জানান।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

পুলিশের বাধার মুখে স্থগিতকৃত পরীক্ষা সচল রাখার দাবিতে আন্দোলন রোববার পর্যন্ত স্থগিত করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল শাহবাগে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি কয়েক দফা পুলিশের বাধা পাওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এসে আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি শুরুর আগে ১০ জন এবং আন্দোলন চলাকালে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। আগামী রোববারের মধ্যে তাদের মুক্তি ও পরীক্ষার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার না করলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সিদ্ধেশ্বরী কলেজের শিক্ষার্থী একে আলামিন বলেন, নূরুর লোক বলে আমাদের ২০-৩০ জন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কিন্তু আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী। আমরা আমাদের যৌক্তিক দাবি নিয়েই আন্দোলন করছি। এর আগে প্রথমে সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী জড়ো হলে সেখান থেকে ১০ জন শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। এরপর আবার ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা মিছিল সহকারে টিএসসি থেকে জাতীয় গণগ্রন্থাগারের সামনে এলে পুলিশের মুখোমুখি হয়।

এ সময় রমনা জোনের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দেন, আটককৃতদের ছেড়ে দেয়া হবে। শাহবাগ চত্বরে অনেক হাসপাতাল রয়েছে, জনজীবনের দুর্ভোগ এড়াতে এই রাস্তা যাতে নির্বিঘœ থাকে তাই আমরা সবাইকে মেসেজ দিচ্ছি এখানে যেন কেউ জড়ো না হয়।

তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে ইনফরমেশন রয়েছে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কিছু বহিরাগতও এখানে রয়েছে। যারা বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে একটা ঝামেলা সৃষ্টি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলানোর পাঁয়তারা করছে। আটককৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তি না দেয়ায় আবার থানার সামনে বিক্ষোভ করতে থাকে শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে বাঁশি বাজিয়ে ধাক্কাধাক্কি করে তাদের সরিয়ে দেয় এবং সেখান থেকে আরও ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি মামুন অর রশিদ জানান, শাহবাগ থানা ওসি মোহাম্মদ মামুন অর রশীদ বলেন, শাহবাগ থেকে আমরা ১৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নিয়েছি। এদের মধ্যে ২/৩ জন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের, যারা অন্য উদ্দেশ্য নিয়ে আন্দোলনে ঢুকে পড়েছে। সবার অভিভাবকদের খোঁজ নেয়া হয়েছে। তারা এলেই আটককৃতদের ছেড়ে দেয়া হবে। উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

ঢাবি : হল খোলার দাবিতে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। গতকাল বিকেলে আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র জুনায়েদ আলম এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আমরা জাতীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মে মাসেই হলে উঠব। আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছি। তবে এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে

শিক্ষার্থীদের একটি অংশ একমত নয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জুনায়েদ আলম বলেন, ওরা আন্দোলনে ছিল না। এখন উসকে দিচ্ছে। ওদের হয়তো নির্দিষ্ট এজেন্ডা আছে। অপরদিকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গণপরিবহন থেকে শুরু করে অফিস-আদালত, হাটবাজার এমনকি ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি সবকিছুই নির্বিঘে্ন পরিচালিত হয়ে আসছে। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম এভাবে আইসোলেটেড করে রাখা অত্যন্ত দুঃখজনক। উচ্চ শিক্ষার্থীদের মনোবল ফিরিয়ে আনতে এবং সুদক্ষ নাগরিক ও রাষ্ট্রীয় সার্ভিস প্রোভাইডার পেতে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম অফলাইনে শুরু করার কোন বিকল্প নেই।

হোম ইকোনমিক্সের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ

পরীক্ষার দাবিতে সড়ক অবরোধ করা রাজধানীর কলেজ অব হোম ইকোনমিক্সের শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। পরীক্ষার দাবিতে গতকাল বেলা ১১টায় শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করেন। পরে দুপুর ১২টায় শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। পরে শিক্ষার্থীরা কলেজের মূল গেটের ভেতরে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যান।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, আজ তাদের পরীক্ষা শুরুর কথা থাকলেও হঠাৎ তা স্থগিত করা হয়।

হোম ইকোনমিক্স কলেজের শিক্ষার্থী তাসনুবা আতিক বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলাম। পুলিশ আমাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। আমাদের লাথি মেরে রাস্তা থেকে উঠিয়ে দিয়েছে। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আমাদের সঙ্গে কথা না বলেই আমাদের ওপর হামলা করেছে পুলিশ।’ শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘২০১৯ সালে শেষ বর্ষের পরীক্ষা আজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত দুইদিন আগে শিক্ষামন্ত্রী সব স্থগিতের ঘোষণা দেন। এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা কলেজের গেটের ভেতর অবস্থান করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। কলেজটির সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

কলেজ অব হোম ইকোনমিক্স ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, কলেজের অধ্যক্ষ বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। তিনি ডিনের মাধ্যমে আমাকে লিখিত পাঠাবেন। আমরা এরপর বিষয়গুলো বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।’

এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করেছেন কলেজ অব হোম ইকোনমিক্সের অধ্যক্ষ ইসমাত রুমিনা। তবে শিক্ষার্থীদের বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে তিনি ফিরে যান। বর্তমানে অধ্যক্ষসহ অন্যান্য শিক্ষকরা কলেজে অবস্থান করছেন।

শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে অধ্যক্ষ প্রফেসর ইসমাত রুমিনা বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের সঙ্গে কথা না বলেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা চাচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রীর পক্ষ থেকে দিক নির্দেশনা আসুক। আমরা অভিযোগগুলো লিখিত আকারে দিতে বলেছি।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পরীক্ষার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে গতকাল দুপুর ১২টায় বিক্ষোভ ও প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী শুধু পরীক্ষা দিতে ক্যাম্পাসে এসেছে। হল খোলা না থাকায় নতুন করে বাসা, কটেজ ভাড়া নিতে হয়েছে তাদের। এই মুহূর্তে এসে পরীক্ষা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত প্রহসন ব্যতীত কিছুই নয়। সামনে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণাও দেন তারা।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান বলেন, বৃহৎ স্বার্থের দিকে লক্ষ্য রেখে পরীক্ষা স্থগিত করতে হয়েছে আমাদের। শিক্ষার্থীদের সাময়িক ক্ষতি হলেও এটা সবার জন্য ভালো হবে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পর এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পূর্ব নির্ধারিত সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের সভাপতিত্বে ডিনস কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান।

বরিশাল

সরকারি সিদ্ধান্তে স্থগিত পরীক্ষাগুলো দ্রুত গ্রহণের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা। হল কিংবা ক্লাস কার্যক্রম চালু না হলেও পরীক্ষা গ্রহণের স্থগিতাদেশ যেন তুলে নেওয়া হয় এ দাবি জানান তারা। গতকাল দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সম্মুখে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে মানববন্ধন করেন তারা। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে পরীক্ষা গ্রহণের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রাজু গাজীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইলিয়াস কবির, অর্থনীতি বিভাগের ইমরান হোসেন প্রমুখ। তারা জানান, করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘ ১১ মাস তারা শিক্ষা-কার্যক্রম থেকে দূরে ছিলেন। এতে সেশনজটের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে গত জানুয়ারি থেকে তাদের পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও হঠাৎ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে চলমান সব পরীক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

তারা আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি তারা সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরীক্ষা স্থগিত করেছে। কিন্তু পরীক্ষা স্থগিত করার ফলে সেশনজটসহ নানা সমস্যায় শিক্ষাজীবন দীর্ঘায়িত হবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান হল কিংবা ক্লাস কার্যক্রম চালু না হলেও পরীক্ষা চলমান রাখার ওপর স্থগিতাদেশ তুলে নেয়া হোক। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনার আলোকে পরীক্ষা কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা যেহেতু দাবি জানিয়েছে তাই পুনরায় পরীক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে আমরা উপর মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করবো।

রাবি

হল না খুলেই স্থগিত পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার দাবি জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়।এসময় ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলোজি, ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স, উদ্ভিদবিজ্ঞান, রসায়ন, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা, গণিত এই ছয়টি বিভাগের শিক্ষার্থীদের দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের হাতে ‘২০১৯ এর সকল পরীক্ষা চালু করতে হবে’, ‘তিন বছর এক বর্ষে থাকবো না থাকবো না’, ‘বাঁচার মতো বাঁচতে চাই, আমাদের অধিকার ফেরত চাই’- লেখা প্লাকার্ড ছিল।শিক্ষার্থীরা বলেন, হল ও ক্যাম্পাস খোলার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। কিন্তু যে পরীক্ষাগুলো চলছিল সেগুলো যেন আবার চালু করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইমতিশান বলেন, শুধুমাত্র পরীক্ষাগুলো নিয়ে নেয়ার দাবি জানাতে এসেছি। যতদিন দাবি মেনে নেয়া হবে না ততদিন আন্দোলন চালিয়ে যাব। তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালে অনার্স-মাস্টার্স শেষ বর্ষের পরীক্ষায় বসার কথা ছিল। এখন আমাদের পরীক্ষাগুলো চলছিল সেসব বন্ধ হয়ে যাওয়াতে বিপদে পড়ে গেলাম।

কুমিল্লা

পরীক্ষার দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলন করছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা।

গতকাল দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের পাদদেশে দ্বিতীয় দিনের মতো মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার দাবি জানিয়ে বলেন, আমাদের দাবি একটাই পরীক্ষা চাই, শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার চাই। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ১১ ব্যাচের শিক্ষার্থী বায়েজিদ বলেন, আমাদের মানববন্ধনের মূল উদ্দেশ্য সেশনজট মুক্ত হওয়া। আমরা একাদশ ব্যাচের ইংরেজি বিভাগ ১৪ মাস ধরে ষষ্ঠ সেমিস্টারে আছি। এটা বেশ দুঃখজনক সংবাদ। এছাড়া যেখানে অন্য সবকিছুই স্বাভাবিক সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় এখনো বন্ধ রাখার কোন ধরনের যৌক্তিকতা দেখি না।এছাড়াও মানববন্ধনের পর উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি জমা দেয়ার কথা জানান তারা। করোনা ভাইরাস মহামারীতে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর গত ২০ ডিসেম্বর থেকে চূড়ান্ত পরীক্ষা নেয়া শুরু করেছিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরবর্তী সময়ে শিক্ষামন্ত্রীর পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ৫৮টি সেমিস্টার পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)

দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১ মার্চের মধ্যে খুলে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন করেন তারা। মানববন্ধন থেকে করোনার টিকা দেয়ার পর ১ মার্চের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি জানানো হয়। রসায়ন বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইকবাল হোসাইনের সঞ্চালনায় দর্শনের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক রিহাজুল ইসলাম রিহান বলেন, এভাবে আর কতদিন বসে থাকব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিকাদান কর্মসূচি আরও দ্রুত সম্পন্ন করা হোক।

বাংলা বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জহির ফয়সাল বলেন, আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ২৬ মাস ধরে একই বর্ষে রয়েছি। এটি অত্যন্ত লজ্জা এবং বেদনার। সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকায় অনেকেই অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় সেশনজট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে করোনা বাধা হলে আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হোক।

মানববন্ধনে সমাপনী বক্তব্যে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা না নিয়ে অনলাইনে পরবর্তী বর্ষের ক্লাস শুরু করা হয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় খুললে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। মে মাসে বিশ্ববিদ্যালয় খুললে পরে আরও বিভিন্ন ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। যার ফলে জট লেগেই থাকবে। তাই অগ্রাধিকারভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকা দিয়ে দ্রুত খুলে দেয়া হোক।

সিলেট

স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবিতে এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরীক্ষা স্থগিতের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা ১১টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনের আয়োজন করেন। কর্মসূচি পালনকালে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এতে নগরের চৌহাট্টা তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীরা দেড় ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন এলাকাটি। মানববন্ধন থেকে শিক্ষার্থীরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলমান মাস্টার্সসহ সব পরীক্ষার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার এবং স্বাস্থ্যসুরক্ষা মেনে দ্রুত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ছাত্রাবাস খুলে দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।

পরে মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করান। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থী এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যক্তিরা।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, সরকার করোনার দোহাই দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে। দেশের অন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রেখে শুধুমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে লাখ লাখ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা অনতিবিলম্বে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করে দিতে দাবি জানান।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের নাজমুস সাকিব, আবদুল্লাহ আল মামুন সুজন, মোস্তাফিজুর রহমান, আখতার হোসেন, তোফায়েল আহমদ, সায়েম আহমদ, তারেক আহমদ, ওয়াহিদুজ্জামান মাসুদ, ফাহাদ আহমদ, জাহিদ হাসান, জাতীয় ছাত্র ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আশরাফ আহমদ, যুগ্ম আহ্বায়ক জুনায়েদ আহমেদ, রাহুল আহমদ, সাবিনা সেবিন প্রমুখ।

শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১ , ১৩ ফাল্গুন ১৪২৭ ১৩ রজব ১৪৪২

পরীক্ষার দাবিতে বাকিরাও পথে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

গতকাল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকালে পুলিশ কয়েকজনকে আটক করে পরে ছেড়ে দেয় -সংবাদ

দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর ১৭ মার্চ থেকে অন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। যা আজ পর্যন্ত চালু হয়নি। এতে শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়ার আশঙ্কায় পরীক্ষার দাবিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন করছে। এর মধ্যে ঢাকার কলেজ অব হোম ইকোনমিক্সের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। অন্যদিকে, তিন দিনের সময়সীমা বেধে দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আগামী রোববারের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে দেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা। তাছাড়া হল খোলার দাবিতে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।

অন্যদিকে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে আগামী শনিবার আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গতকাল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বঙ্গবন্ধুর সমাজ ও রাষ্ট্র ভাবনা শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই কথা জানান।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

পুলিশের বাধার মুখে স্থগিতকৃত পরীক্ষা সচল রাখার দাবিতে আন্দোলন রোববার পর্যন্ত স্থগিত করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল শাহবাগে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি কয়েক দফা পুলিশের বাধা পাওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এসে আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি শুরুর আগে ১০ জন এবং আন্দোলন চলাকালে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। আগামী রোববারের মধ্যে তাদের মুক্তি ও পরীক্ষার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার না করলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সিদ্ধেশ্বরী কলেজের শিক্ষার্থী একে আলামিন বলেন, নূরুর লোক বলে আমাদের ২০-৩০ জন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কিন্তু আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী। আমরা আমাদের যৌক্তিক দাবি নিয়েই আন্দোলন করছি। এর আগে প্রথমে সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী জড়ো হলে সেখান থেকে ১০ জন শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। এরপর আবার ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা মিছিল সহকারে টিএসসি থেকে জাতীয় গণগ্রন্থাগারের সামনে এলে পুলিশের মুখোমুখি হয়।

এ সময় রমনা জোনের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দেন, আটককৃতদের ছেড়ে দেয়া হবে। শাহবাগ চত্বরে অনেক হাসপাতাল রয়েছে, জনজীবনের দুর্ভোগ এড়াতে এই রাস্তা যাতে নির্বিঘœ থাকে তাই আমরা সবাইকে মেসেজ দিচ্ছি এখানে যেন কেউ জড়ো না হয়।

তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে ইনফরমেশন রয়েছে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কিছু বহিরাগতও এখানে রয়েছে। যারা বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে একটা ঝামেলা সৃষ্টি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলানোর পাঁয়তারা করছে। আটককৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তি না দেয়ায় আবার থানার সামনে বিক্ষোভ করতে থাকে শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে বাঁশি বাজিয়ে ধাক্কাধাক্কি করে তাদের সরিয়ে দেয় এবং সেখান থেকে আরও ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি মামুন অর রশিদ জানান, শাহবাগ থানা ওসি মোহাম্মদ মামুন অর রশীদ বলেন, শাহবাগ থেকে আমরা ১৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নিয়েছি। এদের মধ্যে ২/৩ জন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের, যারা অন্য উদ্দেশ্য নিয়ে আন্দোলনে ঢুকে পড়েছে। সবার অভিভাবকদের খোঁজ নেয়া হয়েছে। তারা এলেই আটককৃতদের ছেড়ে দেয়া হবে। উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

ঢাবি : হল খোলার দাবিতে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। গতকাল বিকেলে আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র জুনায়েদ আলম এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আমরা জাতীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মে মাসেই হলে উঠব। আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছি। তবে এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে

শিক্ষার্থীদের একটি অংশ একমত নয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জুনায়েদ আলম বলেন, ওরা আন্দোলনে ছিল না। এখন উসকে দিচ্ছে। ওদের হয়তো নির্দিষ্ট এজেন্ডা আছে। অপরদিকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গণপরিবহন থেকে শুরু করে অফিস-আদালত, হাটবাজার এমনকি ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি সবকিছুই নির্বিঘে্ন পরিচালিত হয়ে আসছে। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম এভাবে আইসোলেটেড করে রাখা অত্যন্ত দুঃখজনক। উচ্চ শিক্ষার্থীদের মনোবল ফিরিয়ে আনতে এবং সুদক্ষ নাগরিক ও রাষ্ট্রীয় সার্ভিস প্রোভাইডার পেতে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম অফলাইনে শুরু করার কোন বিকল্প নেই।

হোম ইকোনমিক্সের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ

পরীক্ষার দাবিতে সড়ক অবরোধ করা রাজধানীর কলেজ অব হোম ইকোনমিক্সের শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। পরীক্ষার দাবিতে গতকাল বেলা ১১টায় শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করেন। পরে দুপুর ১২টায় শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। পরে শিক্ষার্থীরা কলেজের মূল গেটের ভেতরে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যান।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, আজ তাদের পরীক্ষা শুরুর কথা থাকলেও হঠাৎ তা স্থগিত করা হয়।

হোম ইকোনমিক্স কলেজের শিক্ষার্থী তাসনুবা আতিক বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলাম। পুলিশ আমাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। আমাদের লাথি মেরে রাস্তা থেকে উঠিয়ে দিয়েছে। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আমাদের সঙ্গে কথা না বলেই আমাদের ওপর হামলা করেছে পুলিশ।’ শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘২০১৯ সালে শেষ বর্ষের পরীক্ষা আজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত দুইদিন আগে শিক্ষামন্ত্রী সব স্থগিতের ঘোষণা দেন। এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা কলেজের গেটের ভেতর অবস্থান করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। কলেজটির সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

কলেজ অব হোম ইকোনমিক্স ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, কলেজের অধ্যক্ষ বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। তিনি ডিনের মাধ্যমে আমাকে লিখিত পাঠাবেন। আমরা এরপর বিষয়গুলো বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।’

এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করেছেন কলেজ অব হোম ইকোনমিক্সের অধ্যক্ষ ইসমাত রুমিনা। তবে শিক্ষার্থীদের বোঝাতে ব্যর্থ হয়ে তিনি ফিরে যান। বর্তমানে অধ্যক্ষসহ অন্যান্য শিক্ষকরা কলেজে অবস্থান করছেন।

শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে অধ্যক্ষ প্রফেসর ইসমাত রুমিনা বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের সঙ্গে কথা না বলেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা চাচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রীর পক্ষ থেকে দিক নির্দেশনা আসুক। আমরা অভিযোগগুলো লিখিত আকারে দিতে বলেছি।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পরীক্ষার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে গতকাল দুপুর ১২টায় বিক্ষোভ ও প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী শুধু পরীক্ষা দিতে ক্যাম্পাসে এসেছে। হল খোলা না থাকায় নতুন করে বাসা, কটেজ ভাড়া নিতে হয়েছে তাদের। এই মুহূর্তে এসে পরীক্ষা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত প্রহসন ব্যতীত কিছুই নয়। সামনে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণাও দেন তারা।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান বলেন, বৃহৎ স্বার্থের দিকে লক্ষ্য রেখে পরীক্ষা স্থগিত করতে হয়েছে আমাদের। শিক্ষার্থীদের সাময়িক ক্ষতি হলেও এটা সবার জন্য ভালো হবে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পর এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পূর্ব নির্ধারিত সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের সভাপতিত্বে ডিনস কমিটির এক সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান।

বরিশাল

সরকারি সিদ্ধান্তে স্থগিত পরীক্ষাগুলো দ্রুত গ্রহণের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা। হল কিংবা ক্লাস কার্যক্রম চালু না হলেও পরীক্ষা গ্রহণের স্থগিতাদেশ যেন তুলে নেওয়া হয় এ দাবি জানান তারা। গতকাল দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সম্মুখে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে মানববন্ধন করেন তারা। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দেখা করে পরীক্ষা গ্রহণের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রাজু গাজীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইলিয়াস কবির, অর্থনীতি বিভাগের ইমরান হোসেন প্রমুখ। তারা জানান, করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘ ১১ মাস তারা শিক্ষা-কার্যক্রম থেকে দূরে ছিলেন। এতে সেশনজটের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে গত জানুয়ারি থেকে তাদের পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও হঠাৎ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে চলমান সব পরীক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

তারা আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি তারা সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরীক্ষা স্থগিত করেছে। কিন্তু পরীক্ষা স্থগিত করার ফলে সেশনজটসহ নানা সমস্যায় শিক্ষাজীবন দীর্ঘায়িত হবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান হল কিংবা ক্লাস কার্যক্রম চালু না হলেও পরীক্ষা চলমান রাখার ওপর স্থগিতাদেশ তুলে নেয়া হোক। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনার আলোকে পরীক্ষা কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা যেহেতু দাবি জানিয়েছে তাই পুনরায় পরীক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে আমরা উপর মহলের সঙ্গে যোগাযোগ করবো।

রাবি

হল না খুলেই স্থগিত পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার দাবি জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়।এসময় ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলোজি, ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স, উদ্ভিদবিজ্ঞান, রসায়ন, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা, গণিত এই ছয়টি বিভাগের শিক্ষার্থীদের দেখা যায়। শিক্ষার্থীদের হাতে ‘২০১৯ এর সকল পরীক্ষা চালু করতে হবে’, ‘তিন বছর এক বর্ষে থাকবো না থাকবো না’, ‘বাঁচার মতো বাঁচতে চাই, আমাদের অধিকার ফেরত চাই’- লেখা প্লাকার্ড ছিল।শিক্ষার্থীরা বলেন, হল ও ক্যাম্পাস খোলার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। কিন্তু যে পরীক্ষাগুলো চলছিল সেগুলো যেন আবার চালু করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ইমতিশান বলেন, শুধুমাত্র পরীক্ষাগুলো নিয়ে নেয়ার দাবি জানাতে এসেছি। যতদিন দাবি মেনে নেয়া হবে না ততদিন আন্দোলন চালিয়ে যাব। তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালে অনার্স-মাস্টার্স শেষ বর্ষের পরীক্ষায় বসার কথা ছিল। এখন আমাদের পরীক্ষাগুলো চলছিল সেসব বন্ধ হয়ে যাওয়াতে বিপদে পড়ে গেলাম।

কুমিল্লা

পরীক্ষার দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলন করছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা।

গতকাল দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের পাদদেশে দ্বিতীয় দিনের মতো মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার দাবি জানিয়ে বলেন, আমাদের দাবি একটাই পরীক্ষা চাই, শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার চাই। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ১১ ব্যাচের শিক্ষার্থী বায়েজিদ বলেন, আমাদের মানববন্ধনের মূল উদ্দেশ্য সেশনজট মুক্ত হওয়া। আমরা একাদশ ব্যাচের ইংরেজি বিভাগ ১৪ মাস ধরে ষষ্ঠ সেমিস্টারে আছি। এটা বেশ দুঃখজনক সংবাদ। এছাড়া যেখানে অন্য সবকিছুই স্বাভাবিক সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় এখনো বন্ধ রাখার কোন ধরনের যৌক্তিকতা দেখি না।এছাড়াও মানববন্ধনের পর উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি জমা দেয়ার কথা জানান তারা। করোনা ভাইরাস মহামারীতে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর গত ২০ ডিসেম্বর থেকে চূড়ান্ত পরীক্ষা নেয়া শুরু করেছিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরবর্তী সময়ে শিক্ষামন্ত্রীর পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ৫৮টি সেমিস্টার পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)

দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১ মার্চের মধ্যে খুলে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে মানববন্ধন করেন তারা। মানববন্ধন থেকে করোনার টিকা দেয়ার পর ১ মার্চের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবি জানানো হয়। রসায়ন বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইকবাল হোসাইনের সঞ্চালনায় দর্শনের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক রিহাজুল ইসলাম রিহান বলেন, এভাবে আর কতদিন বসে থাকব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিকাদান কর্মসূচি আরও দ্রুত সম্পন্ন করা হোক।

বাংলা বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জহির ফয়সাল বলেন, আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ২৬ মাস ধরে একই বর্ষে রয়েছি। এটি অত্যন্ত লজ্জা এবং বেদনার। সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকায় অনেকেই অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় সেশনজট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে করোনা বাধা হলে আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হোক।

মানববন্ধনে সমাপনী বক্তব্যে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা না নিয়ে অনলাইনে পরবর্তী বর্ষের ক্লাস শুরু করা হয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় খুললে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। মে মাসে বিশ্ববিদ্যালয় খুললে পরে আরও বিভিন্ন ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। যার ফলে জট লেগেই থাকবে। তাই অগ্রাধিকারভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকা দিয়ে দ্রুত খুলে দেয়া হোক।

সিলেট

স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার দাবিতে এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরীক্ষা স্থগিতের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা ১১টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মানববন্ধনের আয়োজন করেন। কর্মসূচি পালনকালে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এতে নগরের চৌহাট্টা তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীরা দেড় ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন এলাকাটি। মানববন্ধন থেকে শিক্ষার্থীরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলমান মাস্টার্সসহ সব পরীক্ষার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার এবং স্বাস্থ্যসুরক্ষা মেনে দ্রুত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ছাত্রাবাস খুলে দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।

পরে মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করান। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থী এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যক্তিরা।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, সরকার করোনার দোহাই দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে। দেশের অন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রেখে শুধুমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে লাখ লাখ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা অনতিবিলম্বে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করে দিতে দাবি জানান।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের নাজমুস সাকিব, আবদুল্লাহ আল মামুন সুজন, মোস্তাফিজুর রহমান, আখতার হোসেন, তোফায়েল আহমদ, সায়েম আহমদ, তারেক আহমদ, ওয়াহিদুজ্জামান মাসুদ, ফাহাদ আহমদ, জাহিদ হাসান, জাতীয় ছাত্র ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আশরাফ আহমদ, যুগ্ম আহ্বায়ক জুনায়েদ আহমেদ, রাহুল আহমদ, সাবিনা সেবিন প্রমুখ।