বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ‘নন-প্রফিট’ অর্গানাইজেশন, তাই আয়কর প্রত্যাহারের দাবি

মেডিকেল কলেজগুলোকে নন-প্রফিট অর্গানাইজেশন দাবি করে আসন্ন বাজেটে মেডিকেল কলেজগুলোর ওপর বিদ্যমান ১৫ শতাংশ আয়কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর সংগঠন প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)। তবে তাদের এই দাবিকে অযৌক্তিক হিসেবে আখ্যায়িত করেন এনবিআর চেয়ারম্যান। গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে প্রাক বাজেট আলোচনা সভায় এই দাবি জানায় সংগঠনটি।

দাবির পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে বিপিএমসিএ সভাপতি এমএ মবিন খান বলেন, ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা শিক্ষা নিশ্চিত করছে। দেশের শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবা খাতে অলাভজনক ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ২০১০ সালের আগ পর্যন্ত এ খাতে কোন আয়কর আরোপ হয়নি। কিন্তু ২০১০ সালে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর ওপর ১৫ শতাংশ আয়কর ধার্য হয়েছে। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর ওপর থেকে তা রহিত করার জন্য আমরা সুপারিশ করছি।’

করোনা মহামারী শুরুর পর সেবা অব্যাহত রেখে সব রোগীর চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি লেটেক্স ও ভিনাইল সার্জিক্যাল হ্যান্ড গ্লাভসের ওপর আরোপিত টোটাল ট্যাক্স ইনসিডেন্ট ৩৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ মওকুফ করারও দাবি জানান।

এছাড়া, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ব্যবহৃত ব্লাড ব্যাংক, রেফ্রিজারেটর, পেমেন্ট মনিটর, অ্যানেস্থেশিয়া ভেন্টিলেটর, আইসিইউ ভেন্টিলেটর আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাট ও ট্যাক্সে রেয়াত প্রদান, মেডিকেল কলেজের আমানতের ওপর ব্যাংক সুদের কর অব্যাহতি, স্বাস্থ্যসেবা খাতের জন্য এ বছর আলাদা বাজেট প্রণয়ন এবং হাসপাতাল নির্মাণে ব্যবহৃত পণ্য আমদানিতে সব কর, শুল্ক বা আগাম আয়কর অব্যাহতির সুপারিশ করেছে বিপিএমসিএ।

এসব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে আমাদের সব সময় সাপোর্ট ছিল। তবে অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন থাকি। সব সময় অসাধু ব্যবসায়ীরা ভালো সুযোগের অবৈধ সুবিধা নেয়। ব্যবসার জন্য তারা আইনগত রাস্তা তৈরি করে। সেজন্য আমরা চাইলেও না অনেক কিছু দিতে পারি না। ঢাকার বাইরে মফস্বল এলাকায় ভালো মানের হাসপাতাল করলে কর বেনিফিট দিতে পারি কিনা তা দেখব। আমরা চাই স্বাস্থ্যসেবা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ুক।

এক প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা নন-প্রফিট অর্গানাইজেশন। অথচ ব্যাংক হিসাবে হিউজ অর্থ শো করে। এত অর্থ থাকলে তাকে আমরা নন-প্রফিট অর্গানাইজেশন বলব কি-না। আর যদি অ্যাকাউন্টে প্রফিট না থাকে তাহলে এমনিতেই কর আসবে না।’

সভায় অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও বিপিএমসিএ সভাপতি এমএ মুবিন, ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ ঢাকার চেয়ারম্যান ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, পপুলার মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. মঈনুল আহসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। আর রাজস্ব বোর্ডের পক্ষে আয়কর নীতির সদস্য মো. আলমগীর হোসেন, শুল্ক ও ভ্যাট প্রশাসন বিভাগের সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম, এনবিআরের শুল্ক নীতি ও আইসিটি বিভাগের সদস্য সৈয়দ গোলাম কিবরীয়াসহ বাজেটসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৃহস্পতিবার, ০৪ মার্চ ২০২১ , ১৯ ফাল্গুন ১৪২৭ ১৯ রজব ১৪৪২

বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ‘নন-প্রফিট’ অর্গানাইজেশন, তাই আয়কর প্রত্যাহারের দাবি

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

মেডিকেল কলেজগুলোকে নন-প্রফিট অর্গানাইজেশন দাবি করে আসন্ন বাজেটে মেডিকেল কলেজগুলোর ওপর বিদ্যমান ১৫ শতাংশ আয়কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে দেশের বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর সংগঠন প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ)। তবে তাদের এই দাবিকে অযৌক্তিক হিসেবে আখ্যায়িত করেন এনবিআর চেয়ারম্যান। গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে প্রাক বাজেট আলোচনা সভায় এই দাবি জানায় সংগঠনটি।

দাবির পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করে বিপিএমসিএ সভাপতি এমএ মবিন খান বলেন, ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা শিক্ষা নিশ্চিত করছে। দেশের শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবা খাতে অলাভজনক ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ২০১০ সালের আগ পর্যন্ত এ খাতে কোন আয়কর আরোপ হয়নি। কিন্তু ২০১০ সালে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর ওপর ১৫ শতাংশ আয়কর ধার্য হয়েছে। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর ওপর থেকে তা রহিত করার জন্য আমরা সুপারিশ করছি।’

করোনা মহামারী শুরুর পর সেবা অব্যাহত রেখে সব রোগীর চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি লেটেক্স ও ভিনাইল সার্জিক্যাল হ্যান্ড গ্লাভসের ওপর আরোপিত টোটাল ট্যাক্স ইনসিডেন্ট ৩৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ মওকুফ করারও দাবি জানান।

এছাড়া, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ব্যবহৃত ব্লাড ব্যাংক, রেফ্রিজারেটর, পেমেন্ট মনিটর, অ্যানেস্থেশিয়া ভেন্টিলেটর, আইসিইউ ভেন্টিলেটর আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাট ও ট্যাক্সে রেয়াত প্রদান, মেডিকেল কলেজের আমানতের ওপর ব্যাংক সুদের কর অব্যাহতি, স্বাস্থ্যসেবা খাতের জন্য এ বছর আলাদা বাজেট প্রণয়ন এবং হাসপাতাল নির্মাণে ব্যবহৃত পণ্য আমদানিতে সব কর, শুল্ক বা আগাম আয়কর অব্যাহতির সুপারিশ করেছে বিপিএমসিএ।

এসব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে আমাদের সব সময় সাপোর্ট ছিল। তবে অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন থাকি। সব সময় অসাধু ব্যবসায়ীরা ভালো সুযোগের অবৈধ সুবিধা নেয়। ব্যবসার জন্য তারা আইনগত রাস্তা তৈরি করে। সেজন্য আমরা চাইলেও না অনেক কিছু দিতে পারি না। ঢাকার বাইরে মফস্বল এলাকায় ভালো মানের হাসপাতাল করলে কর বেনিফিট দিতে পারি কিনা তা দেখব। আমরা চাই স্বাস্থ্যসেবা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ুক।

এক প্রশ্নের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা নন-প্রফিট অর্গানাইজেশন। অথচ ব্যাংক হিসাবে হিউজ অর্থ শো করে। এত অর্থ থাকলে তাকে আমরা নন-প্রফিট অর্গানাইজেশন বলব কি-না। আর যদি অ্যাকাউন্টে প্রফিট না থাকে তাহলে এমনিতেই কর আসবে না।’

সভায় অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও বিপিএমসিএ সভাপতি এমএ মুবিন, ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ ঢাকার চেয়ারম্যান ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, পপুলার মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. মঈনুল আহসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। আর রাজস্ব বোর্ডের পক্ষে আয়কর নীতির সদস্য মো. আলমগীর হোসেন, শুল্ক ও ভ্যাট প্রশাসন বিভাগের সদস্য মো. সাইফুল ইসলাম, এনবিআরের শুল্ক নীতি ও আইসিটি বিভাগের সদস্য সৈয়দ গোলাম কিবরীয়াসহ বাজেটসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।