শেয়ারবাজারে বিশ্বাসের অভাব রয়েছে : অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘শেয়ারবাজারের প্রতি মানুষের বিশ্বাসের অভাব রয়েছে। তবে কেন অভাব, তা আমি জানি না। অনেকেই ফোন করে শেয়ারবাজারের প্রতি বিশ্বাসের অভাবের কথা বলে।’ গতকাল ডিএসইর আয়োজিত ‘স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী : বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের আলোকে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের অর্জন ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলি রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘গত বছরের বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য যা চাওয়া হয়েছিল। তার চেয়ে বেশি দেয়া হয়েছে। আমরা কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ করে দিয়েছি। নগদ লভ্যাংশে উৎসাহিত করেছি। এ সময় আসন্ন বাজেটকে কেন্দ্র করে সবার উপকারে আসবে এমন কোন পরামর্শ থাকলে, তা দেয়া হবে। একটি কোম্পানি বোনাস শেয়ার ১ বছর বা ২ বছর দিতে পারে যা ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য হতে পারে। এর পেছনে অন্য কোন কারণ থাকতে পারে না। এছাড়া অনেক কোম্পানির রিজার্ভ বড় করে, সেই অর্থের ছয়-নয় করে।’

বর্তমানে শেয়ারবাজার অনেক শক্তিশালী উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এই বাজারকে জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’

অনুষ্ঠানে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলি রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ‘শেয়ারবাজারে গুজব ছড়িয়ে কম দামে শেয়ার হাতিয়ে নেয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। যারা গুজব ছড়িয়ে কম দামে শেয়ার হাতিয়ে নিতে চান, সেটা বন্ধ হয়ে যাবে। করোনা আইটি খাতের গুরুত্ব বুঝিয়ে দিয়ে গেছে। আইটি ছাড়া ভবিষ্যতে চলাচল করা অসম্ভব। তাই দেশের শেয়ারবাজারকে পুরোপুরিভাবে আইটিতে রুপান্তর করতে হবে। এর মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়বে। শেয়ারবাজারের আইটি কাঠামো গঠনের জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তারা এজন্য অনুদান দিতে সম্মত হয়েছে। হয়ত সেটা কয়েক মাসের মধ্যে পেয়ে যাব।

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সঠিক ভিশন ও মিশন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে শেয়ারবাজার। এই বাজারকে সবার সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী বাজারে পরিণত করা হবে। শেয়ারবাজারকে এগিয়ে নিতে শুধুমাত্র ইক্যুইটি মার্কেট নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে কমিশন। আমরা অনেক বন্ডের অনুমোদন দিয়েছি। যে বন্ড ফল দিতে শুরু করেছে। আগামীতে বন্ডগুলো লেনদেনে আসতে যাচ্ছে। এছাড়া বিদেশিরা বন্ডে বিনিয়োগ শুরু করেছে।’

সরকারি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) পূনর্গঠনের বিষয়ে ইঙ্গিত করে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘শেয়ারবাজারে আইসিবির অনেক গুরুত্ব। কিন্তু যে উদ্দেশে প্রতিষ্ঠানটি গঠন করা হয়েছে, সেখান থেকে প্রতিষ্ঠানটি অনেক দূরে। ইতোমধ্যে আইসিবিকে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে।’

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। পুঁজিবাজার একটি ভালো অবস্থানে নেয়ার জন্য তৎপর আমরা। এই লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।’

ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘আমরা ১০ বছর ধরে বন্ড মার্কেটের উন্নয়নের জন্য বলে আসছি। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। তবে বর্তমান কমিশন বন্ড মার্কেটের উন্নয়নের দ্রুত কাজ শুরু করে দিয়েছে যা শেয়ারবাজারের উন্নয়নে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে ভালো ভালো কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনতে হবে। তাহলে আমাদের শেয়ারবাজারে বোম্বে শেয়ারবাজারের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।’

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিএসইর অটোমেশন করে দিয়েছেন। তিনি প্রায় বিনাপয়সায় ডিএসইকে ৪ বিঘা জমি দিয়েছেন। যেখানে বর্তমানে ডিএসইর প্রধান কার্যালয়। আপনার (অর্থমন্ত্রী) নেতৃত্বে স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচ্যুয়ালাইজড হয়েছে।’

এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ও আপনার (অর্থমন্ত্রী) অংশগ্রহণে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণের মাধ্যমে শেয়ারবাজারকে বাঁচিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান রকিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী বোনাস শেয়ারে কড়াকড়ি ও নগদ লভ্যাংশে উৎসাহিত করার মাধ্যমে শেয়ারবাজারকে সহযোগিতা করেছেন। এছাড়া কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগের মাধ্যমে যথার্থ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত দক্ষতা ও সততার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি দায়িত্ব নেয়ার শুরুতেই স্টকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠকে তার ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেছিলেন। বর্তমানে বাজার সঠিক পথে রয়েছে।

বুধবার, ২৪ মার্চ ২০২১ , ১০ চৈত্র ১৪২৭ ৯ শাবান ১৪৪২

শেয়ারবাজারে বিশ্বাসের অভাব রয়েছে : অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘শেয়ারবাজারের প্রতি মানুষের বিশ্বাসের অভাব রয়েছে। তবে কেন অভাব, তা আমি জানি না। অনেকেই ফোন করে শেয়ারবাজারের প্রতি বিশ্বাসের অভাবের কথা বলে।’ গতকাল ডিএসইর আয়োজিত ‘স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী : বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের আলোকে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের অর্জন ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলি রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘গত বছরের বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য যা চাওয়া হয়েছিল। তার চেয়ে বেশি দেয়া হয়েছে। আমরা কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ করে দিয়েছি। নগদ লভ্যাংশে উৎসাহিত করেছি। এ সময় আসন্ন বাজেটকে কেন্দ্র করে সবার উপকারে আসবে এমন কোন পরামর্শ থাকলে, তা দেয়া হবে। একটি কোম্পানি বোনাস শেয়ার ১ বছর বা ২ বছর দিতে পারে যা ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য হতে পারে। এর পেছনে অন্য কোন কারণ থাকতে পারে না। এছাড়া অনেক কোম্পানির রিজার্ভ বড় করে, সেই অর্থের ছয়-নয় করে।’

বর্তমানে শেয়ারবাজার অনেক শক্তিশালী উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এই বাজারকে জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’

অনুষ্ঠানে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলি রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ‘শেয়ারবাজারে গুজব ছড়িয়ে কম দামে শেয়ার হাতিয়ে নেয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। যারা গুজব ছড়িয়ে কম দামে শেয়ার হাতিয়ে নিতে চান, সেটা বন্ধ হয়ে যাবে। করোনা আইটি খাতের গুরুত্ব বুঝিয়ে দিয়ে গেছে। আইটি ছাড়া ভবিষ্যতে চলাচল করা অসম্ভব। তাই দেশের শেয়ারবাজারকে পুরোপুরিভাবে আইটিতে রুপান্তর করতে হবে। এর মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়বে। শেয়ারবাজারের আইটি কাঠামো গঠনের জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তারা এজন্য অনুদান দিতে সম্মত হয়েছে। হয়ত সেটা কয়েক মাসের মধ্যে পেয়ে যাব।

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সঠিক ভিশন ও মিশন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে শেয়ারবাজার। এই বাজারকে সবার সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী বাজারে পরিণত করা হবে। শেয়ারবাজারকে এগিয়ে নিতে শুধুমাত্র ইক্যুইটি মার্কেট নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে কমিশন। আমরা অনেক বন্ডের অনুমোদন দিয়েছি। যে বন্ড ফল দিতে শুরু করেছে। আগামীতে বন্ডগুলো লেনদেনে আসতে যাচ্ছে। এছাড়া বিদেশিরা বন্ডে বিনিয়োগ শুরু করেছে।’

সরকারি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) পূনর্গঠনের বিষয়ে ইঙ্গিত করে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘শেয়ারবাজারে আইসিবির অনেক গুরুত্ব। কিন্তু যে উদ্দেশে প্রতিষ্ঠানটি গঠন করা হয়েছে, সেখান থেকে প্রতিষ্ঠানটি অনেক দূরে। ইতোমধ্যে আইসিবিকে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে।’

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। পুঁজিবাজার একটি ভালো অবস্থানে নেয়ার জন্য তৎপর আমরা। এই লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।’

ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘আমরা ১০ বছর ধরে বন্ড মার্কেটের উন্নয়নের জন্য বলে আসছি। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। তবে বর্তমান কমিশন বন্ড মার্কেটের উন্নয়নের দ্রুত কাজ শুরু করে দিয়েছে যা শেয়ারবাজারের উন্নয়নে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে ভালো ভালো কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনতে হবে। তাহলে আমাদের শেয়ারবাজারে বোম্বে শেয়ারবাজারের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।’

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিএসইর অটোমেশন করে দিয়েছেন। তিনি প্রায় বিনাপয়সায় ডিএসইকে ৪ বিঘা জমি দিয়েছেন। যেখানে বর্তমানে ডিএসইর প্রধান কার্যালয়। আপনার (অর্থমন্ত্রী) নেতৃত্বে স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচ্যুয়ালাইজড হয়েছে।’

এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ও আপনার (অর্থমন্ত্রী) অংশগ্রহণে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণের মাধ্যমে শেয়ারবাজারকে বাঁচিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান রকিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী বোনাস শেয়ারে কড়াকড়ি ও নগদ লভ্যাংশে উৎসাহিত করার মাধ্যমে শেয়ারবাজারকে সহযোগিতা করেছেন। এছাড়া কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগের মাধ্যমে যথার্থ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত দক্ষতা ও সততার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি দায়িত্ব নেয়ার শুরুতেই স্টকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠকে তার ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেছিলেন। বর্তমানে বাজার সঠিক পথে রয়েছে।